গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংকট-ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

অন্তহীন বিড়ম্বনায় জনজীবনকে পিষে মারার চিত্র এ দেশে নতুন কিছু নয়। কিন্তু কখনো কখনো এ চিত্র এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে জনজীবনে তা বাড়তি উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। এবারও রমজানের প্রাক্কালে তাই দেখা যাচ্ছে। রমজান মাসে ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নগর-মহানগরে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংকটের ভীতি সংগত কারণেই তাড়া করছে।


জনজীবনের জন্য অপরিহার্য এসব বিষয় সম্প্রতি এমনিতেই জনবিড়ম্বনা অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং রমজানে তা প্রকট রূপ ধারণ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের তরফে ইতিমধ্যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত হয়েছে_রমজানে যাতে এসব বিষয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস না ওঠে, সে প্রচেষ্টা তাদের অব্যাহত আছে। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে।
রমজান শুরু না হতেই রাজধানীসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে গ্যাস-পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা গেলেও সম্প্রতি লোডশেডিং আবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একদিকে চলছে অত্যধিক গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের মাত্রাতিরিক্ত নেতিবাচক রূপ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। লোডশেডিং এবং গ্যাসের রেশনিং ব্যবস্থা নিয়েও কথা আছে বিস্তর। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবেই রমজানে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে। শতভাগ গ্যাস না পেলে ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে_এও তারা জানিয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ ঘাটতি দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াটে পেঁৗছবে। সরকার রমজানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে প্রথম রমজান থেকে সিএনজি স্টেশনগুলোতে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিল্প-কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। রমজানে রিরোলিং মিলসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানায় ইফতারির সময় ও গভীর রাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ আংশিক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও জনজীবন স্বস্তিদায়ক হবে_এমন বার্তা মিলছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, যার অপছায়া পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতেও। এদিক কেটে ওদিকে দেওয়া_এ সবই সাময়িক পরিত্রাণের দাওয়াই। এমনটি কোনো শুভ পরিস্থিতির ইঙ্গিত নয়।
বিদ্যুৎ আধুনিক সভ্যতা, জীবনযাপন ও উৎপাদন ব্যবস্থার চাকা গতিশীল, তথা উন্নয়নের জন্য এক অপরিহার্য উপাদান। বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই কথাবার্তা হচ্ছে। সম্প্রতি এ খাতে খানিকটা আশার আলোও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে এর সুফল স্থিতিশীল করা যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণেরও কিছু নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি পানি সংকটও তীব্র হচ্ছে_এটিই স্বাভাবিক। এ সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে রমজানে পানি সরবরাহকারী সরকারি সংস্থাকে পরিকল্পিতভাবে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। পাইপলাইনের পাশাপাশি গাড়ির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা চাই। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় পানি সরবরাহের সমস্যা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। রমজানে জনজীবন ভোগান্তি ও বিড়ম্বনামুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার, সব কিছুই করতে হবে ত্বরিত গতিতে। উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় গতিশীলতা, স্বচ্ছতা আনার পাশাপাশি দায়বদ্ধতার বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে স্মরণে রাখতে হবে। রমজানে চাহিদা বাড়বে_এটি জানা কথা। সে মোতাবেক উন্নত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা চাই। অপচয় রোধে জনসচেতনতাও দরকার। যেহেতু সংকটের রূপ আমাদের চেনাজানা, সেহেতু সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে, সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.