দুদক নখদন্তযুক্ত হবে কি?-সংসদীয় কমিটির সুপারিশ
সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সরকারের কাছ থেকে আগাম অনুমতির প্রয়োজন হবে না বলে অভিমত দিয়েছে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) আইন পর্যালোচনায় গঠিত কমিটি। এটা ইতিবাচক ঘটনা বটে, কিন্তু অনেকে সমুদ্রে গিয়ে এক বালতি পানি ঢেলে দেওয়ার সঙ্গেও তুলনা করতে পারেন।
তাতে পানি বাড়ে বটে, মালুম পাওয়া যায় না। এ রকমের একটি মামুলি সুপারিশ করতে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করার কোনো দরকার ছিল না। আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় কমিটি গত আড়াই বছরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে মনোভাব দেখিয়েছে, তাতে কমিটির কাছ থেকে বৈপ্লবিক সুপারিশ আশা করা অরণ্যে রোদন মাত্র।
দুদক আইন সংশোধনের বিষয়টি সংসদের বিবেচনাধীন বলেই পুনর্গঠিত দুদক কাজেকর্মে গতি সঞ্চার করতে পারছে না—তা মোটেই সত্য নয়। সামগ্রিকভাবে এক-এগারোর গোড়ার দিকে দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ধরনের জনমত ও জনচেতনা সৃষ্টি হয়েছিল এবং রাষ্ট্র যেভাবে তার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল, তা এখন বলা চলে শূন্যের কোঠায়।
দেশে যত সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, প্রায় সবখানেই দুর্নীতির মচ্ছব চলছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ধরার কাজ শুধু দুদকেরও নয়। আমরা এ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সাড়াশব্দ লক্ষ করিনি। এ ক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকারের গত আড়াই বছরের সঙ্গে জোট সরকারের ‘অন্ধকার যুগের’ তফাত খুঁজে পাওয়া কঠিন। সে কারণেই সংসদীয় কমিটির বোধোদয়কে আমরা ঘটা করে বাহবা দিতে অপারগ। বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে তাঁরা দুর্নীতি দমনে যে জ্ঞানের ভান্ডার সঞ্চয় করে এনেছেন, তার যে বয়ান আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, তাতে ভরসা কম। কারণ ন্যায়পাল যখন থেকেও নেই তখন দুদককে খুব সহজেই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের দেহে প্রতিস্থাপন করা যেত। এ ব্যাপারে দাবিও ছিল। সংসদীয় কমিটি তাতে কর্ণপাত করেনি।
আমরা স্মরণ রাখব, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরে সরকারের অনুমতি লাগবে কি লাগবে না—এই কূটতর্ক একটি পাকিস্তানি ব্যাধি। পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরাও একসময় বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকার দরকার নেই। ব্যুরোর কাছে থাকা উচিত। এ নিয়ে সেই ১৯৫৮ সাল থেকে বহু ধরনের পরিপত্র দুদকের হাতে মজুদ আছে। জেনারেল এরশাদও একদা এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছিলেন। কিন্তু তার ফল কী হয়েছিল, তা দেশবাসীর জানা। সুতরাং সংসদীয় কমিটির এই বোধোদয় সর্বগ্রাসী দুর্নীতির আগ্রাসন প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। তাদের সুপারিশ কার্যকর হলেও দুদক যে নখদন্তযুক্ত হবে, তার নিশ্চয়তা কী?
অতএব কমিটির উচিত হবে, দুদককে সংবিধানে স্থান দেওয়া এবং তার অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো দুদকেরও জবাবদিহি থাকবে সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে, কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে নয়।
দুদক আইন সংশোধনের বিষয়টি সংসদের বিবেচনাধীন বলেই পুনর্গঠিত দুদক কাজেকর্মে গতি সঞ্চার করতে পারছে না—তা মোটেই সত্য নয়। সামগ্রিকভাবে এক-এগারোর গোড়ার দিকে দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ধরনের জনমত ও জনচেতনা সৃষ্টি হয়েছিল এবং রাষ্ট্র যেভাবে তার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল, তা এখন বলা চলে শূন্যের কোঠায়।
দেশে যত সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, প্রায় সবখানেই দুর্নীতির মচ্ছব চলছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ধরার কাজ শুধু দুদকেরও নয়। আমরা এ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সাড়াশব্দ লক্ষ করিনি। এ ক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকারের গত আড়াই বছরের সঙ্গে জোট সরকারের ‘অন্ধকার যুগের’ তফাত খুঁজে পাওয়া কঠিন। সে কারণেই সংসদীয় কমিটির বোধোদয়কে আমরা ঘটা করে বাহবা দিতে অপারগ। বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে তাঁরা দুর্নীতি দমনে যে জ্ঞানের ভান্ডার সঞ্চয় করে এনেছেন, তার যে বয়ান আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, তাতে ভরসা কম। কারণ ন্যায়পাল যখন থেকেও নেই তখন দুদককে খুব সহজেই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের দেহে প্রতিস্থাপন করা যেত। এ ব্যাপারে দাবিও ছিল। সংসদীয় কমিটি তাতে কর্ণপাত করেনি।
আমরা স্মরণ রাখব, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরে সরকারের অনুমতি লাগবে কি লাগবে না—এই কূটতর্ক একটি পাকিস্তানি ব্যাধি। পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরাও একসময় বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকার দরকার নেই। ব্যুরোর কাছে থাকা উচিত। এ নিয়ে সেই ১৯৫৮ সাল থেকে বহু ধরনের পরিপত্র দুদকের হাতে মজুদ আছে। জেনারেল এরশাদও একদা এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছিলেন। কিন্তু তার ফল কী হয়েছিল, তা দেশবাসীর জানা। সুতরাং সংসদীয় কমিটির এই বোধোদয় সর্বগ্রাসী দুর্নীতির আগ্রাসন প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। তাদের সুপারিশ কার্যকর হলেও দুদক যে নখদন্তযুক্ত হবে, তার নিশ্চয়তা কী?
অতএব কমিটির উচিত হবে, দুদককে সংবিধানে স্থান দেওয়া এবং তার অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো দুদকেরও জবাবদিহি থাকবে সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে, কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে নয়।
No comments