কলকাতার চিঠি-মমতার বালা ছিনতাই এবং by অমর সাহা
এমনটা স্বপ্নেও ভাবেননি পশ্চিমবঙ্গের ‘জনতার মুখ্যমন্ত্রী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁর হাত থেকে সোনার বালা ছিনতাই—ভাবা যায়? তা-ই ঘটে গেল বুধবার বিকেলে। শুধু বালা নয়, ছিনতাই হয়েছে হাতের ঘড়িটিও। ভাগ্য ভালো, সেটি উদ্ধার করা গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাঁ হাতে ছিল ঘড়ি আর ডান হাতে ছিল মায়ের দেওয়া সোনার বালা। সত্যিই নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে থেকেও মমতাকে খোয়াতে হলো তাঁর সোনার বালাটি।
না, এ নিয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি মমতা বা তাঁর দল। ফলে তদন্তের আর তেমন পথ রইল না পুলিশের। তবু নিয়মমাফিক তদন্ত করছে। তবে এ চুরির দায় চাপাতে একদম ভুল করেনি মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথামতে, দোষ চাপিয়ে দিয়েছে সিপিএমের ঘাড়ে। তবে সিপিএম সাফ বলে দিয়েছে, ভিড়ের মধ্যে যে মহিলা মমতার পা জড়িয়ে ধরেছিলেন, তাঁর ছবি কিন্তু কলকাতার বিভিন্ন দৈনিকে ছাপা হয়েছে। সেই সূত্র আর ছবি ধরে জানা গেছে, ওই মহিলা ছিলেন তৃণমূলের কর্মী। আর তাঁর পরনে ছিল মমতার প্রিয় রং সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি আর সবুজ রঙের ব্লাউজ। তবু তৃণমূল নাছোড়বান্দা, অভিযোগ তুলে বলেছে, এটা সিপিএমের পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত। মমতাকে হেনস্তা করার অপকৌশল। স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে পরিকল্পনা করে রাস্তায় ফেলে আঘাত করার চক্রান্ত করা হয়েছিল।’ কিন্তু কি তা-ই?
তাকানো যাক পেছনের দিকে। ঘটনার দিনটি ছিল বুধবার। স্থান বারাসাতের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ। বারাসাত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হেডকোয়ার্টার। এদিন মমতা আসেন এখানে জেলার উন্নয়ন নিয়ে এক বৈঠকে যোগ দিতে। কলকাতা-লাগোয়া বারাসাতে জনতার নেত্রী আসছেন, সুতরাং সাজ সাজ রব। অভ্যর্থনার জন্য সড়কে সড়কে তোরণ, ব্যাপক আয়োজন। মমতা যথারীতি বৈঠক করেন জেলার নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কজন মন্ত্রীও। বৈঠক সেরে বিকেলে যখন তিনি বের হন, তখন বাইরে অপেক্ষা করছেন তৃণমূলের প্রচুর মহিলা কর্মী ও সমর্থক। সবারই অপেক্ষা, নেত্রীর পা ছুঁয়ে একবারের জন্য প্রণাম করা। আশীর্বাদ নেওয়া। তখন চারদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা। এ সময় হঠাৎ চার-পাঁচজন মহিলা মমতার সামনে আসেন। এক মহিলা এসে পা জড়িয়ে ধরে ওপরে তোলার চেষ্টা করেন মমতাকে। আরেক মহিলা হাত ধরে টান দেন। মমতা কিছু বোঝার আগেই ওই মহিলাদের হাত থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড়িয়ে নেন পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা। এরপর সেখান থেকে হাঁটতে শুরু করেন মমতা। হঠাৎ চোখ পড়ে তাঁর বাঁ হাতের দিকে। দেখেন, ঘড়িটি নেই। তারপর ডান হাতের দিকে চোখ পড়তেই দেখেন, সোনার বালাটিও উধাও। যদিও পরে উদ্ধার হয় ঘড়িটি। কিন্তু কীভাবে, তা আর জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি সোনার বালাটি।
ঘটনা জানাজানি হতেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ততক্ষণে মমতার সোনার বালা ও ঘড়ি ছিনতাইয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করেননি মমতা। থানায়ও কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। ওই দিন অবশ্য বারাসাতের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর হাতের বালা ছিনতাই হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে সিপিএমের হাত।
যদিও এ ঘটনার পর পা ধরতে যাওয়া ওই মহিলা প্রীতি মণ্ডলের (ছবি দেখে শনাক্ত) খোঁজ পায় পুলিশ। প্রীতি মণ্ডল তিন সন্তানের জননী। ঘটনার পর প্রীতি মণ্ডল পুলিশের ভয়ে গা-ঢাকা দেন। বারাসাতের স্বরোজ পার্কের শ্বশুরবাড়ি এবং ঘোলায় বাপের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ খোঁজ পায়নি প্রীতি মণ্ডলের। তবে প্রীতি মণ্ডল পরে সাংবাদিকদের টেলিফোনে জানিয়েছেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত সমস্যা এবং একটি চাকরির প্রত্যাশায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি দরখাস্ত নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। পা ধরে তাঁর কাছে অনুনয়-বিনয় করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ঘড়ি বা বালা ছিনতাই সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আমার হাতের শাখাটিও ভেঙে যায়। আমি নিজে চোটও পাই।’ মমতার সফরসঙ্গী রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবে ওই মহিলা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। গোটা বিষয়টি পুলিশের তদন্ত করে দেখা উচিত।
সিপিএমের নেতা ও সাবেক সাংসদ অমিতাভ নন্দী তৃণমূলের এ দাবিকে নস্যাৎ করে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দল কতটা উচ্ছৃঙ্খল, এ ঘটনাই তা প্রমাণ করে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। অন্যদিকে উত্তর চব্বিশ পরগনার পুলিশ সুপার চম্বক ভট্টাচার্য বলেছেন, এ নিয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
সিপিএম এ ঘটনার পর বলেছে, বালা-কাণ্ডের তদন্তে নামলে তৃণমূলেরই মুখ পুড়তে পারে। তাই তো রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, ‘আমরা কোনো অভিযোগ করছি না। পুলিশ যদি করে তো করবে।’
সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তি বলেছে, প্রীতি মণ্ডল তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। সবুজ ব্লাউজ আর সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি পরে তিনি সেদিন জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে হাজির হয়েছিলেন। তাঁর ছবিও বেরিয়েছে সংবাদপত্রে। প্রীতি আরও বলেছেন, ধস্তাধস্তিতে তাঁর হাতের শাখাও ভেঙে গেছে। পুলিশ এখন দ্বিতীয় মহিলাকে খোঁজ করছে, যিনি মমতার হাত ধরে টান দিয়েছিলেন। আর তৃণমূলের দাবি, প্রীতি মণ্ডলের দাদা গৌতম মণ্ডল সিপিএমের একজন সক্রিয় কর্মী।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
না, এ নিয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি মমতা বা তাঁর দল। ফলে তদন্তের আর তেমন পথ রইল না পুলিশের। তবু নিয়মমাফিক তদন্ত করছে। তবে এ চুরির দায় চাপাতে একদম ভুল করেনি মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথামতে, দোষ চাপিয়ে দিয়েছে সিপিএমের ঘাড়ে। তবে সিপিএম সাফ বলে দিয়েছে, ভিড়ের মধ্যে যে মহিলা মমতার পা জড়িয়ে ধরেছিলেন, তাঁর ছবি কিন্তু কলকাতার বিভিন্ন দৈনিকে ছাপা হয়েছে। সেই সূত্র আর ছবি ধরে জানা গেছে, ওই মহিলা ছিলেন তৃণমূলের কর্মী। আর তাঁর পরনে ছিল মমতার প্রিয় রং সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি আর সবুজ রঙের ব্লাউজ। তবু তৃণমূল নাছোড়বান্দা, অভিযোগ তুলে বলেছে, এটা সিপিএমের পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত। মমতাকে হেনস্তা করার অপকৌশল। স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে পরিকল্পনা করে রাস্তায় ফেলে আঘাত করার চক্রান্ত করা হয়েছিল।’ কিন্তু কি তা-ই?
তাকানো যাক পেছনের দিকে। ঘটনার দিনটি ছিল বুধবার। স্থান বারাসাতের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ। বারাসাত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হেডকোয়ার্টার। এদিন মমতা আসেন এখানে জেলার উন্নয়ন নিয়ে এক বৈঠকে যোগ দিতে। কলকাতা-লাগোয়া বারাসাতে জনতার নেত্রী আসছেন, সুতরাং সাজ সাজ রব। অভ্যর্থনার জন্য সড়কে সড়কে তোরণ, ব্যাপক আয়োজন। মমতা যথারীতি বৈঠক করেন জেলার নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কজন মন্ত্রীও। বৈঠক সেরে বিকেলে যখন তিনি বের হন, তখন বাইরে অপেক্ষা করছেন তৃণমূলের প্রচুর মহিলা কর্মী ও সমর্থক। সবারই অপেক্ষা, নেত্রীর পা ছুঁয়ে একবারের জন্য প্রণাম করা। আশীর্বাদ নেওয়া। তখন চারদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা। এ সময় হঠাৎ চার-পাঁচজন মহিলা মমতার সামনে আসেন। এক মহিলা এসে পা জড়িয়ে ধরে ওপরে তোলার চেষ্টা করেন মমতাকে। আরেক মহিলা হাত ধরে টান দেন। মমতা কিছু বোঝার আগেই ওই মহিলাদের হাত থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড়িয়ে নেন পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা। এরপর সেখান থেকে হাঁটতে শুরু করেন মমতা। হঠাৎ চোখ পড়ে তাঁর বাঁ হাতের দিকে। দেখেন, ঘড়িটি নেই। তারপর ডান হাতের দিকে চোখ পড়তেই দেখেন, সোনার বালাটিও উধাও। যদিও পরে উদ্ধার হয় ঘড়িটি। কিন্তু কীভাবে, তা আর জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি সোনার বালাটি।
ঘটনা জানাজানি হতেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ততক্ষণে মমতার সোনার বালা ও ঘড়ি ছিনতাইয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করেননি মমতা। থানায়ও কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। ওই দিন অবশ্য বারাসাতের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর হাতের বালা ছিনতাই হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে সিপিএমের হাত।
যদিও এ ঘটনার পর পা ধরতে যাওয়া ওই মহিলা প্রীতি মণ্ডলের (ছবি দেখে শনাক্ত) খোঁজ পায় পুলিশ। প্রীতি মণ্ডল তিন সন্তানের জননী। ঘটনার পর প্রীতি মণ্ডল পুলিশের ভয়ে গা-ঢাকা দেন। বারাসাতের স্বরোজ পার্কের শ্বশুরবাড়ি এবং ঘোলায় বাপের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ খোঁজ পায়নি প্রীতি মণ্ডলের। তবে প্রীতি মণ্ডল পরে সাংবাদিকদের টেলিফোনে জানিয়েছেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত সমস্যা এবং একটি চাকরির প্রত্যাশায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি দরখাস্ত নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। পা ধরে তাঁর কাছে অনুনয়-বিনয় করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ঘড়ি বা বালা ছিনতাই সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আমার হাতের শাখাটিও ভেঙে যায়। আমি নিজে চোটও পাই।’ মমতার সফরসঙ্গী রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবে ওই মহিলা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। গোটা বিষয়টি পুলিশের তদন্ত করে দেখা উচিত।
সিপিএমের নেতা ও সাবেক সাংসদ অমিতাভ নন্দী তৃণমূলের এ দাবিকে নস্যাৎ করে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দল কতটা উচ্ছৃঙ্খল, এ ঘটনাই তা প্রমাণ করে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। অন্যদিকে উত্তর চব্বিশ পরগনার পুলিশ সুপার চম্বক ভট্টাচার্য বলেছেন, এ নিয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
সিপিএম এ ঘটনার পর বলেছে, বালা-কাণ্ডের তদন্তে নামলে তৃণমূলেরই মুখ পুড়তে পারে। তাই তো রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, ‘আমরা কোনো অভিযোগ করছি না। পুলিশ যদি করে তো করবে।’
সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তি বলেছে, প্রীতি মণ্ডল তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। সবুজ ব্লাউজ আর সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি পরে তিনি সেদিন জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে হাজির হয়েছিলেন। তাঁর ছবিও বেরিয়েছে সংবাদপত্রে। প্রীতি আরও বলেছেন, ধস্তাধস্তিতে তাঁর হাতের শাখাও ভেঙে গেছে। পুলিশ এখন দ্বিতীয় মহিলাকে খোঁজ করছে, যিনি মমতার হাত ধরে টান দিয়েছিলেন। আর তৃণমূলের দাবি, প্রীতি মণ্ডলের দাদা গৌতম মণ্ডল সিপিএমের একজন সক্রিয় কর্মী।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments