আয়কর মেলা-সরকারি প্রতিষ্ঠানও পারে

সরকারি দফতরগুলোতে জনসাধারণের ভোগান্তি-হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আয়কর ও রাজস্ব বিভাগ সম্পর্কে এ অভিযোগের মাত্রা যেন আরও বেশি। অথচ এই বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে বৃহস্পতিবার দারুণ সাড়া জাগিয়ে শেষ করল আয়কর মেলা-২০১১। প্রতিটি মেলাতেই করদাতাদের বিপুল সমাবেশ।


এমনকি হরতালের দিনেও। রাজপথে লোক নেই, কিন্তু পকেটের অর্থ সরকারের হাতে তুলে দিতে লম্বা লাইন স্টলে স্টলে_ নিঃসন্দেহে এটি নতুন অভিজ্ঞতা। কেউ নতুন টিআইএন নম্বর নিয়েছেন, কেউ আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। সবার একই অভিজ্ঞতা_ কোনো ঝামেলা ছাড়াই কাজ হচ্ছে। ঘুষ দিতে হয় না; অহেতুক বসে থাকারও প্রয়োজন পড়েনি। আজ নয়, কাল আসুন বলেও কেউ বিদায় করেনি। অথচ প্রায় সব সরকারি অফিসে কাজের জন্য গেলেই এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। মেলার অভিজ্ঞতা থেকে একটি উপসংহারই টানা চলে_ আমরাও পারি। এবারের মেলায় রিটার্ন জমা পড়েছে ৬২ হাজারের বেশি। কর আদায় হয়েছে ৪১৪ কোটি টাকা। সর্বত্রই তাগিদ এসেছে_ মেলার সময় আরও বাড়ানো এবং পরিসর বৃদ্ধির। আগামীতে জেলা পর্যায়ে এর আয়োজন হতে পারে। অনেক উপজেলাতেও এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। সেখানেও মেলার আয়োজন করা যায়। কর দিতে অনেকে উৎসাহ দেখাচ্ছেন এবং স্বেচ্ছায় নিজেদের নিবন্ধন করছেন। এটাও লক্ষণীয়, যে কর বিভাগের কর্মীদের সম্পর্কে সচ্ছল জনগোষ্ঠীর নানা অভিযোগ, তারাই সুচারুরূপে কয়েকটি দিন দায়িত্ব পালন করে করদাতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করতে পেরেছে। তাহলে সারা বছর এ ধরনের সেবা দিতে সমস্যা কোথায়? অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। ব্যক্তিগত আয় বাড়ছে। এ অবস্থায় কর-নেটওয়ার্ক প্রসারিত হওয়াই স্বাভাবিক। আয়কর বিভাগের কাজ হবে সম্ভাব্য কম সময়ে এবং ভোগান্তির মাত্রা নূ্যনতম পর্যায়ে রেখে জনসাধারণকে সেবা প্রদান করা। এতে সরকারের আয় বাড়বে, যা সরকারের হাতে জোগান দেবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য অপরিহার্য অর্থের। আর এভাবে হাতে অর্থর্ এলে রাজস্ব বিভাগের কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোও সম্ভব হবে। অর্থনৈতিক প্রণোদনা অবশ্যই থাকা চাই। আয়কর মেলার আয়োজনে যুক্ত সবাই ধন্যবাদ পেতেই পারে।

No comments

Powered by Blogger.