ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর টিভিতে মুখ দেখানোর গল্প
আগের দুই পাতায় আপনারা শুনেছেন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের দৌড়ে ফার্স্ট হয়ে মন্ত্রী হওয়ার গল্প। এবার শুনুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়ার টিভিতে মুখ দেখানোর গল্প। এই গল্প পড়িলে আপনি জানিতে পারিবেন কী করিলে সামান্য বুদ্ধির জোরে বারবার টিভিতে মুখ দেখানো যায়, যদিও উপায়গুলো বাতলে দিয়েছিলেন পটুয়াখালী-৩ সংসদীয়
আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ গোলাম মাওলা রনীই। আবুলের মন্ত্রী হওয়ার অতিনাটকীয় গল্পের তোড়ে যদিও মো. শাহজাহান মিয়ার এই গল্প খুব বেশি প্রচার পায়নি, তবে বাজি ধরে বলা যায়, এই গল্পও আপনাকে কম আনন্দ দেবে না। এ বিষয়ে তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের সঙ্গে গোলাম মাওলা রনীর কথোপকথনের পুরোটাই রস+আলোর পাঠকদের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলো।
দেখা গেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নমিনেশন দিয়ে চমক দিলেন। আমাদের মতো নতুন লোকজনদের নমিনেশন দিলেন। তো, সবাই পাস করে আসল। এটা একটা বড় সাকসেস ছিল তার জন্য। এখন আমরা নতুন যারা আসছি তারা কে কতটা ভালো করছি এটা আগামী নির্বাচনে দেখা যাবে আর কি। এর আগে বোঝা যাবে না।
দ্বিতীয়ত যেটা হলো, এই যে মন্ত্রিপরিষদে যাঁরা মন্ত্রী হলেন, এটা তাঁদের জন্য একটা আশ্চর্য বিষয় ছিল। এটা তাঁরা কখনো স্বপ্নে কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা মন্ত্রী। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন।
যেদিন মন্ত্রিপরিষদে শপথ হয়, সেদিন এক মিনিট আগেও কিন্তু কেউ জানত না কে হচ্ছেন কে হচ্ছেন না। এবং কয়জন মন্ত্রী হবেন সে অনুযায়ী চেয়ার দেওয়া হলো এবং প্রত্যেকটা চেয়ারের সামনে নাম দেওয়া হলো।
এখন দলে যাঁরা সিনিয়র নেতা, তাঁরা প্রথমে খুব স্ব-উৎসাহে চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেলেন। যাওয়ার পর দেখেন যে সেখানে তাঁদের নাম নেই। বিমর্ষভাবে তাঁরা ফিরে এলেন। এসে দেখলেন যে তাঁদের জন্য চেয়ার খালি নেই। তাঁরা যে বসবেন সে অবস্থা নেই। তাঁরা এগিয়ে গেলেন। বিচারপতিদের যে চেয়ার খালি ছিল, সেখানে গিয়ে বসলেন।
আমার জেলাতে মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আছেন জনাব শাহজাহান সাহেব। উনি আমাকে সকালবেলা ফোন করে বললেন, বাবা, কী ব্যাপার? আজকে যাবা না?
আমি বললাম, হ্যাঁ চাচা, যাব। উনি আবার বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। আমি একটু দুষ্টামি করে বললাম যে, চাচা, আপনার কী হয়েছে আজকে? আপনার কণ্ঠে কেমন যেন মন্ত্রী মন্ত্রী ভাব এসে গেছে।
—বাবা, কও কী?
তারপর তিনি সোজা আমার অফিসে চলে এলেন। বললেন, বাবা, তোমাকে আসল কথা বলি। আমি কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার জন্যই গ্রাম থেকে আসছি এবং তোমার চাচিকেও নিয়ে আসছি। আমি বললাম, তাহলে চলেন, আমরা আগে আগে যাই। তিনিও বললেন, আগে যেতে হবে। কারণ হলো, যেদিন আমরা পার্লামেন্টে ছিলাম ওই দিন টেলিভিশনে তোমার ছবিও দেখা যায়নি, আমার ছবিও দেখা যায়নি। এলাকার লোকজন হাসি-তামাশা করছে। আজকে গিয়ে একটু আগে বসতে হবে, যেন ছবিটা দেখা যায়।
জিল্লুর রহমান (সঞ্চালক): তখনো তিনি কেবিনেট সেক্রেটারির পদ পাননি?
—না, না, কেউ পায়নি। তো, যা হোক, আমরা গেলাম। যাওয়ার পর চাচা এবং আমি একদম সবার আগে গিয়ে বসলাম। তো, বসার পরে যখন মন্ত্রীদের নাম লেখা হলো, তিনি বললেন, বাবা, তুমি দেখে আসো আমার নামটা আছে নাকি।
আমি বললাম, আমি যেতে পারব না, গেলে আমার সিট তো দখল হয়ে যাবে। আপনি কি রাখতে পারবেন? আপনি বুড়া মানুষ।
তিনি বললেন, তুমি আমাকে কী মনে করছ? আমি ৪০ বছর যাবৎ রাজনীতি করি। আমি পৌরসভার মেয়র ছিলাম, এর আগেরবারও মেয়র ছিলাম। তুমি যাও। যা থাকে ভাগ্যে। রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে, তোমার সিট যাবে না। আমি বললাম, ঠিক আছে। আমি গিয়ে দেখলাম তাঁর নাম নাই। এসে বললাম, চাচা, নাম নাই।
তিনি বললেন, কাজটা হলো কী! এখন তোমার চাচিরে ক্যামনে মুখ দেখাব আমি! বরিশাল বিভাগের আর কারও নাম আছে? তোফায়েল ভাই বা অন্য কেউ?
আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, এইবার কাজের কাজ হয়েছে। আমি বলব, আমার কী দোষ? তোফায়েল সাহেবেরই হয় নাই, তো আমি কে? ভালো হইছে না?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তো, এইভাবে কতক্ষণ বসে রইলাম। হঠাৎ বললেন, মন্ত্রী হই নাই ঠিক আছে। কিন্তু টেলিভিশনে দেখা যাবে তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ, যাবে।
হঠাৎ করে দেখি মুখ কালো তাঁর।
বললাম, কী হইছে? দেখলাম তাঁর সামনে লম্বা কইরা একজন লোক বসছে। আমি ভাবলাম গালিভার ট্র্যাভেলস বসছে। আসলে আমাদের রাজশাহী বিভাগের খায়রুল সাহেব বসছেন।
চাচা বললেন, ও এত লম্বা, আমাকে তো দেখা যাবে না। কী করা যায়?
আমি বললাম, বুদ্ধি আছে। আমাদের চার থেকে পাঁচবার দাঁড়াতে হবে এবং বসতে হবে। যখন দাঁড়ানো হয় তখন আপনি করবেন কি—সবার আগে দাঁড়িয়ে যাবেন। আর যখন বসার দরকার হয় তখন সবার পরে বসবেন। তিনি বললেন, যা বুদ্ধি তোমার! অসুবিধা নাই। হয়ে যাবে।
এখন সেই লোক করেন কি—সবার আগে দাঁড়ান, আর সবার পরে বসেন। সবাই বসার পরেও তিনি আরও ২০-৩০ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকেন। লোকজন আরও গালাগালি করছে, এই মিয়া বসেন বসেন।
এই অবস্থা চলছে। তো, চলার পরে আমরা মন্ত্রীসন্ত্রী না হয়ে হোটেলে যখন আসলাম তখন তাঁর স্ত্রী বললেন, আজকেও তো তোমাদেরকে টেলিভিশনে দেখা যায় নাই। চাচা বললেন, কী করব বলো। রনীর কথামতো দাঁড়াইছি সবার আগে, বসছি সবার পরে।
এবং প্রত্যেকটা লোক গালাগালি করে। তার পরেও যদি দেখা না যায়, কী করব বলো?
এখন চিন্তা করেন যে তিনি যদি একটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান! এই লোক...
সঞ্চালক (জিল্লুর রহমান): পরে মন্ত্রী হয়েছিলেন তো উনি?
গোলাম মাওলা রনী: ইয়েস। দ্যাট ইস দ্য টক। তিনি যদি পরবর্তীতে একটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান, তিনি কতটুকু পারফরম করতে পারবেন? ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।
দেখা গেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নমিনেশন দিয়ে চমক দিলেন। আমাদের মতো নতুন লোকজনদের নমিনেশন দিলেন। তো, সবাই পাস করে আসল। এটা একটা বড় সাকসেস ছিল তার জন্য। এখন আমরা নতুন যারা আসছি তারা কে কতটা ভালো করছি এটা আগামী নির্বাচনে দেখা যাবে আর কি। এর আগে বোঝা যাবে না।
দ্বিতীয়ত যেটা হলো, এই যে মন্ত্রিপরিষদে যাঁরা মন্ত্রী হলেন, এটা তাঁদের জন্য একটা আশ্চর্য বিষয় ছিল। এটা তাঁরা কখনো স্বপ্নে কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা মন্ত্রী। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন।
যেদিন মন্ত্রিপরিষদে শপথ হয়, সেদিন এক মিনিট আগেও কিন্তু কেউ জানত না কে হচ্ছেন কে হচ্ছেন না। এবং কয়জন মন্ত্রী হবেন সে অনুযায়ী চেয়ার দেওয়া হলো এবং প্রত্যেকটা চেয়ারের সামনে নাম দেওয়া হলো।
এখন দলে যাঁরা সিনিয়র নেতা, তাঁরা প্রথমে খুব স্ব-উৎসাহে চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেলেন। যাওয়ার পর দেখেন যে সেখানে তাঁদের নাম নেই। বিমর্ষভাবে তাঁরা ফিরে এলেন। এসে দেখলেন যে তাঁদের জন্য চেয়ার খালি নেই। তাঁরা যে বসবেন সে অবস্থা নেই। তাঁরা এগিয়ে গেলেন। বিচারপতিদের যে চেয়ার খালি ছিল, সেখানে গিয়ে বসলেন।
আমার জেলাতে মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আছেন জনাব শাহজাহান সাহেব। উনি আমাকে সকালবেলা ফোন করে বললেন, বাবা, কী ব্যাপার? আজকে যাবা না?
আমি বললাম, হ্যাঁ চাচা, যাব। উনি আবার বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। আমি একটু দুষ্টামি করে বললাম যে, চাচা, আপনার কী হয়েছে আজকে? আপনার কণ্ঠে কেমন যেন মন্ত্রী মন্ত্রী ভাব এসে গেছে।
—বাবা, কও কী?
তারপর তিনি সোজা আমার অফিসে চলে এলেন। বললেন, বাবা, তোমাকে আসল কথা বলি। আমি কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার জন্যই গ্রাম থেকে আসছি এবং তোমার চাচিকেও নিয়ে আসছি। আমি বললাম, তাহলে চলেন, আমরা আগে আগে যাই। তিনিও বললেন, আগে যেতে হবে। কারণ হলো, যেদিন আমরা পার্লামেন্টে ছিলাম ওই দিন টেলিভিশনে তোমার ছবিও দেখা যায়নি, আমার ছবিও দেখা যায়নি। এলাকার লোকজন হাসি-তামাশা করছে। আজকে গিয়ে একটু আগে বসতে হবে, যেন ছবিটা দেখা যায়।
জিল্লুর রহমান (সঞ্চালক): তখনো তিনি কেবিনেট সেক্রেটারির পদ পাননি?
—না, না, কেউ পায়নি। তো, যা হোক, আমরা গেলাম। যাওয়ার পর চাচা এবং আমি একদম সবার আগে গিয়ে বসলাম। তো, বসার পরে যখন মন্ত্রীদের নাম লেখা হলো, তিনি বললেন, বাবা, তুমি দেখে আসো আমার নামটা আছে নাকি।
আমি বললাম, আমি যেতে পারব না, গেলে আমার সিট তো দখল হয়ে যাবে। আপনি কি রাখতে পারবেন? আপনি বুড়া মানুষ।
তিনি বললেন, তুমি আমাকে কী মনে করছ? আমি ৪০ বছর যাবৎ রাজনীতি করি। আমি পৌরসভার মেয়র ছিলাম, এর আগেরবারও মেয়র ছিলাম। তুমি যাও। যা থাকে ভাগ্যে। রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে, তোমার সিট যাবে না। আমি বললাম, ঠিক আছে। আমি গিয়ে দেখলাম তাঁর নাম নাই। এসে বললাম, চাচা, নাম নাই।
তিনি বললেন, কাজটা হলো কী! এখন তোমার চাচিরে ক্যামনে মুখ দেখাব আমি! বরিশাল বিভাগের আর কারও নাম আছে? তোফায়েল ভাই বা অন্য কেউ?
আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, এইবার কাজের কাজ হয়েছে। আমি বলব, আমার কী দোষ? তোফায়েল সাহেবেরই হয় নাই, তো আমি কে? ভালো হইছে না?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তো, এইভাবে কতক্ষণ বসে রইলাম। হঠাৎ বললেন, মন্ত্রী হই নাই ঠিক আছে। কিন্তু টেলিভিশনে দেখা যাবে তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ, যাবে।
হঠাৎ করে দেখি মুখ কালো তাঁর।
বললাম, কী হইছে? দেখলাম তাঁর সামনে লম্বা কইরা একজন লোক বসছে। আমি ভাবলাম গালিভার ট্র্যাভেলস বসছে। আসলে আমাদের রাজশাহী বিভাগের খায়রুল সাহেব বসছেন।
চাচা বললেন, ও এত লম্বা, আমাকে তো দেখা যাবে না। কী করা যায়?
আমি বললাম, বুদ্ধি আছে। আমাদের চার থেকে পাঁচবার দাঁড়াতে হবে এবং বসতে হবে। যখন দাঁড়ানো হয় তখন আপনি করবেন কি—সবার আগে দাঁড়িয়ে যাবেন। আর যখন বসার দরকার হয় তখন সবার পরে বসবেন। তিনি বললেন, যা বুদ্ধি তোমার! অসুবিধা নাই। হয়ে যাবে।
এখন সেই লোক করেন কি—সবার আগে দাঁড়ান, আর সবার পরে বসেন। সবাই বসার পরেও তিনি আরও ২০-৩০ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকেন। লোকজন আরও গালাগালি করছে, এই মিয়া বসেন বসেন।
এই অবস্থা চলছে। তো, চলার পরে আমরা মন্ত্রীসন্ত্রী না হয়ে হোটেলে যখন আসলাম তখন তাঁর স্ত্রী বললেন, আজকেও তো তোমাদেরকে টেলিভিশনে দেখা যায় নাই। চাচা বললেন, কী করব বলো। রনীর কথামতো দাঁড়াইছি সবার আগে, বসছি সবার পরে।
এবং প্রত্যেকটা লোক গালাগালি করে। তার পরেও যদি দেখা না যায়, কী করব বলো?
এখন চিন্তা করেন যে তিনি যদি একটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান! এই লোক...
সঞ্চালক (জিল্লুর রহমান): পরে মন্ত্রী হয়েছিলেন তো উনি?
গোলাম মাওলা রনী: ইয়েস। দ্যাট ইস দ্য টক। তিনি যদি পরবর্তীতে একটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান, তিনি কতটুকু পারফরম করতে পারবেন? ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।
No comments