বিশেষ সাক্ষাৎকার-ট্রানজিটে ভারতের যে লাভ তার অর্ধেক আমাদের চাই by মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ
পরিবহন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ রহমতউল্লাহর জন্ম ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ১৯৬২ সালে বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিক ডিজাইনে মাস্টার ডিগ্রি ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন পরিবহন পরিকল্পনার ওপর।
এরপর পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ১৯৭৮ সালে যোগ দেন ইউএন-এসকাপের পরিবহন ও অবকাঠামো বিভাগে। সেখানে ২২ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি অবসর নেন ২০০০ সালে। এর পর থেকে তিনি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। রহমতউল্লাহ দেশের পরিবহনসংক্রান্ত নানা নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং করে চলেছেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান, রাহীদ এজাজ ও জাহাঙ্গীর শাহ
প্রথম আলো কোনো রকম প্রস্তুতি অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াই ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হচ্ছে। এর বিনিময়ে কোনো মাশুলও নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় ট্রানজিটের ক্ষেত্রে অবকাঠামোর জন্য বিনিয়োগ-ব্যয়, পরিবহন-ব্যয় এবং পরিবেশগত ক্ষতি ইত্যাদি হিসাব করে ট্রানজিট মাশুল ধরা হয়। বিশ্বব্যাপী এই নিয়ম চালু আছে। ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো তো আমাদের করতেই হবে। সেই সঙ্গে বাড়তি যেটি করতে হবে তা হলো, এই ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তার একটি অংশ আদায় করা। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কলকাতা থেকে ঘুরপথে কোনো পণ্য উত্তর-পূর্ব ভারতে নিতে ১০০ ডলার খরচ হলো। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নিতে সেই খরচ কমে দাঁড়াল ৬০ ডলার। এখন এই যে ভারতের ৪০ ডলার সাশ্রয় হলো, তার অর্ধেক ২০ ডলার অন্তত বাংলাদেশের পাওয়া উচিত। এটি তো ডব্লিউটিওতে নেই। এটি হতে হবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে।
প্রথম আলো এ ব্যাপারে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যে কোর কমিটি গঠিত হয়েছিল, আপনিও তার একজন সদস্য। কমিটি সরকারের কাছে কী সুপারিশ করেছে?
রহমতউল্লাহ কোর কমিটির প্রতিবেদনে ডব্লিউটিওর আওতায় যেসব বিষয় দেখার কথা, সেগুলোই আছে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় বিষয়টি কোর কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। আমি নিজে কোর কমিটির সদস্য হলেও সে সময় দেশে ছিলাম না। এর আগে আমি যে গবেষণামূলক প্রতিবেদন তৈরি করি, তাতে কিন্তু ভারতের সাশ্রয়ের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেছিলাম। এই সুবিধাটা আমরা কেন চাইছি? কারণ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গেলে ভারত লাভবান হবে। আমরা বাড়তি কোনো মাশুল ধার্য করার কথা বলছি না। বলছি সুবিধার অংশ দিতে। এ ব্যাপারে দুই পক্ষকে একটা সমঝোতায় আসতে হবে।
প্রথম আলো নেপাল ও ভুটানে যেসব বাংলাদেশি পণ্য যায়, কিংবা ওই দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে ভারতের ওপর দিয়ে, সে ক্ষেত্রে কী ধরনের মাশুল নেওয়া হয়?
রহমতউল্লাহ ভারত নেপাল বা ভুটানের কাছ থেকে কোনো মাশুল নেয় না। তারা ভূমি আবদ্ধ দেশ বলে নেপাল ও ভুটানকে এই সহায়তা দিচ্ছে।
প্রথম আলো আশুগঞ্জকে যখন পোর্ট অফ কল ঘোষণা করা হলো, তখন বলা হয়েছিল সহজ শর্তে ভারতীয় ঋণে এই বন্দর উন্নয়ন করা হবে এবং সে উদ্দেশ্যে ২৩১ কোটি টাকার প্রকল্পও তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত দিল্লির চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এ অবস্থায় নিয়মিত ট্রানজিট দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন?
রহমতউল্লাহ এ কথা ঠিক, আমরা বলতে পারতাম, যেহেতু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি, রাস্তাঘাট ঠিক নেই—এ অবস্থায় ট্রানজিট দিতে পারব না। তা ছাড়া ট্রানজিট মাশুলের বিষয়টিও নির্ধারিত হয়নি।
আশুগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কটি এশীয় মহাসড়কের অংশ; কিন্তু এর পরের রাস্তা খুবই নাজুক। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে অবকাঠামো তৈরির আগে কেন সরকার ট্রানজিট দিতে গেল? ট্রানজিট দেওয়ার আগে অনেকগুলো বিষয় নিষ্পত্তি হওয়ার প্রয়োজন ছিল। সরকার ট্রানজিট মাশুল নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি করেছে। কমিটি কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে, মার্চ নাগাদ মাশুল চূড়ান্ত হবে।
প্রথম আলো এখন কীভাবে ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে দেওয়া হচ্ছে?
রহমতউল্লাহ এখন যে ট্রানজিট যাচ্ছে তা হলো নৌ প্রটোকল ২০০৯ সালের সংশোধনীর অধীনে। এ প্রটোকলের আওতায় মাশুল আদায়ের সুযোগ নেই। তা ছাড়া ভারতের কাছ থেকে কী হারে ট্রানজিট মাশুল আদায় করা হবে সেটিও কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি। এ অবস্থায় ট্রানজিট মাশুলের বিকল্প হতে পারে ব্যাংক গ্যারান্টি। পরবর্তীকালে সেটি সমন্বয় করে নেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া হলেও ট্রানজিট মাশুল তার অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সেটি বলা হয়নি।
তাই অবকাঠামো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ট্রানজিট না দেওয়াই শ্রেয়। কেননা অবকাঠামো না হলে আমাদের ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হবে। অবকাঠামো হলে আমরা এর ব্যয়টা নির্ধারণ করতে পারি, না হলে সেটি কীভাবে নির্ধারণ করব? যেহেতু অবকাঠামো নেই, এখন সময় বেশি লাগছে, খরচ বেশি পড়ছে। আমরা যেটি করছি তা হচ্ছে আধাআধিভাবে। এরপরও যদি ভারতকে ট্রানজিট দিতেই হয়, তাহলে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে সেটি করা যেতে পারে, যা হবে অন্তর্বর্তীকালীন। পরীক্ষামূলকভাবে এটি হবে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো নির্মাণের কাজটিও ত্বরান্বিত করতে হবে।
প্রথম আলো অবকাঠামো নির্মাণে কত সময় লাগবে বলে আপনার ধারণা?
রহমতউল্লাহ বর্তমানে যে অবস্থায় রাস্তাঘাট আছে, তাতে অবকাঠামো নির্মাণে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। আশুগঞ্জে একটি কনটেইনার বন্দর করতে হবে। রাস্তাঘাটগুলো ঠিক করতে হবে।
প্রথম আলো পণ্য পরিবহনে সড়কপথের চেয়ে রেলপথ অনেক কম ক্ষতিকর এবং ঝুঁকিও কম। ট্রানজিটের ক্ষেত্রে রেলওয়েকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না কেন?
রহমতউল্লাহ রেলপথের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনে কিছু বিধিনিষেধ আছে। প্রতিদিন ২৪টি ট্রেনের বেশি যেতে পারবে না। কী ধরনের পরিবহনের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়া হবে, সে ব্যাপারেও একটি কমিটি কাজ করছে। তবে চূড়ান্ত সমাধান হলো, যমুনায় দ্বিতীয় রেলসেতু করা। আমরা চাই, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহন হোক এবং আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হই। কিন্তু অবকাঠামো সুবিধা না থাকলে ভারত আগ্রহী হবে না।
পূর্বাঞ্চলের রেলপথের সমস্যা হলো সংযোগ না থাকা। আখাউড়া-আগরতলা কিংবা কুলাউড়া-মহিষাশনের মধ্যেও সংযোগ নেই। প্রথমটি ভারতের করে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয়টি আমাদেরই করতে হবে।
প্রথম আলো ট্রানজিট নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি এগোলো না কেন?
রহমতউল্লাহ সরকারের আন্তরিকতার অভাব আছে বলব না, তবে আমরা যখন ট্রানজিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি, তখন কাজটা আরও জোরেশোরে হওয়া উচিত ছিল।
প্রথম আলো নানা পর্যায়ে বলা হয়েছিল ট্রানজিট দিলে আমাদের বিশাল অঙ্কের লাভ হবে। কিন্তু এখন লাভের পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণা এ ব্যাপারে কী বলে?
রহমতউল্লাহ লাভবান হব। তবে তার আগে আমাদের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে। পরিবহন ব্যয় ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। এরপর এ বিষয়ে যে কমিটি কাজ করছে, তাদের উচিত হবে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে লাভ ভাগাভাগির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা।
প্রথম আলো ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কী পরিমাণ ভারতীয় পণ্য পরিবহন হবে বলে মনে করছেন?
রহমতউল্লাহ আমরা হিসাব করেছিলাম, বছরে ১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্য ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাবে। যদি সেটি ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনও হয়, তাও কম নয়। এটি ছিল আমাদের একটি রক্ষণশীল হিসাব। উত্তর-পূর্ব ভারত একটি ভূমিবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের বন্দরসুবিধা নেই, মূল ভূমি থেকে অনেক দূরে। বাংলাদেশ থেকে সহজে পণ্য গেলে সেখানে বিনিয়োগ বাড়বে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশেও নতুন কলকারখানা গড়ে উঠবে।
ভারতের সঙ্গে আলোচনার একটি বিষয় হবে যে আমাদের বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। তাদের কাঁচামাল ব্যবহার করে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিল্পকারখানা করবেন।
প্রথম আলো ভারত ট্রানজিট সুবিধা পেতে কোন কোন রুটকে প্রাধান্য দিতে চায়?
রহমতউল্লাহ আশুগঞ্জ বন্দর অবকাঠামো নির্মিত হলে নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে। কিন্তু কেবল আশুগঞ্জের ওপর নির্ভর করলে তো হবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ভারত যেসব পণ্য পরিবহন করতে চাইছে, সেগুলোর জন্য রেলপথকেই ব্যবহার করতে হবে।
প্রথম আলো ট্রানজিটের ব্যাপারে উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম রাজ্য আসামের আগ্রহ আছে কেমন?
রহমতউল্লাহ আসাম রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা খুবই আগ্রহী। আসামের বৃহত্তর অংশ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ট্রেন সংযোগ রয়েছে। কিন্তু সিলেট সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পণ্য আনা-নেওয়া বাংলাদেশের ওপর দিয়ে করাটা অনেক বেশি সুবিধাজনক।
প্রথম আলো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে কেবল ভারত নয়, নেপাল ও ভুটানেও পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
রহমতউল্লাহ মংলার অবকাঠামো উন্নত নয়। তবে এ বন্দর থেকে আবার পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। নেপালে সম্প্রতি সারের চালান গেছে। ভুটানও এখান থেকে পণ্য পরিবহন করতে আগ্রহী। আমরা এর অবকাঠামো উন্নত করতে পারলে অতিরিক্ত আয় করতে পারব।
প্রথম আলো অনেকের আশঙ্কা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ট্রানজিট সুবিধা দিলে সেখানে বাংলাদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে যাবে।
রহমতউল্লাহ আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত পণ্যের মান রক্ষা করতে পারি, তাহলে বাজার হারানোর আশঙ্কা নেই। কেননা, ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে পণ্য আনতে অনেক দেরি হবে। আমরা তার চেয়ে কম দামে দিতে পারব। আমরা যদি সেসব কারখানা সীমান্ত অঞ্চলে করতে পারি, তাহলে খরচ আরও কম হবে। এ ব্যাপারে এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাও হয়েছে, তাঁরা বলেছেন আশঙ্কা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের পণ্যের মান ঠিক রাখতে হবে।
প্রথম আলো সরকার বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছে এবং এর সুবিধা দেশীয় পরিবহন মালিকেরা পাচ্ছেন। বিদেশি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সেই ভর্তুকি যোগ করা হবে কি না?
রহমতউল্লাহ আলাদা করে হয়তো করা যাবে না। কিন্তু মাশুলটি এমনভাবে করতে হবে যাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই। কোনো কোনো মাশুল অপরিবর্তিত থাকবে, আবার কোনোটি পরিবর্তনযোগ্য। তবে জ্বালানি, পরিবহন ভাড়ার বিষয়টি যেহেতু পরিবর্তনযোগ্য, সেহেতু মাশুলের বিষয়টিও অপরিবর্তিত থাকার কারণ নেই। সময়ে সময়ে বসে ঠিক করতে হবে। পরিবেশগত ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রেও তাই।
প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান যে অবকাঠামো আছে, তাতে কি এখনই ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন?
রহমতউল্লাহ বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ৪০ শতাংশ কাজের সুবিধা এখনো অব্যবহূত। তা ছাড়া কনটেইনার ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাতে স্বল্প সময়ে পণ্য খালাস করা যাচ্ছে। এর ফলে বন্দরের দক্ষতা ও ক্ষমতা বেড়েছে। নিউমুরিং নতুন বন্দর ছাড়াও কর্ণফুলীতে আরেকটি কনটেইনার টার্মিনাল করছে সরকার।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১.৫ মিলিয়ন টন পণ্য আনা-নেওয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকায় আসে ৭০ শতাংশ, যার ৯০ শতাংশ আসে সড়কপথে, মাত্র ১০ শতাংশ রেলওয়েতে। এর প্রধান কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে সিঙ্গেল ট্রাক, ডাবল ট্রাক নেই। ট্রানজিটের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে হলে ট্রেনের ডাবল ট্রাক করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার সহায়তায় ভালো ট্রেনলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে আশা করি। এটি হলে অনেক বেশি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এ ব্যাপারেও কাজ হচ্ছে। সেই সঙ্গে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু করতে হবে।
প্রথম আলো এই মধ্যবর্তী সময়ে কি আমরা অপেক্ষা করব, না ট্রানজিট বন্ধ থাকবে?
রহমতউল্লাহ আমরা মনে করি, এই মধ্যবর্তী সময়ে আমাদের সীমিত পর্যায়ে ট্রানজিট দেওয়া যেতে পারে। আমাদের প্রতিবেদনেও শুরুতে ১০ শতাংশ ট্রানজিট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আশুগঞ্জ নৌবন্দরের নির্মাণের কাজটি হলে ট্রানজিটের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
রহমতউল্লাহ আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান, রাহীদ এজাজ ও জাহাঙ্গীর শাহ
প্রথম আলো কোনো রকম প্রস্তুতি অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াই ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হচ্ছে। এর বিনিময়ে কোনো মাশুলও নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় ট্রানজিটের ক্ষেত্রে অবকাঠামোর জন্য বিনিয়োগ-ব্যয়, পরিবহন-ব্যয় এবং পরিবেশগত ক্ষতি ইত্যাদি হিসাব করে ট্রানজিট মাশুল ধরা হয়। বিশ্বব্যাপী এই নিয়ম চালু আছে। ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো তো আমাদের করতেই হবে। সেই সঙ্গে বাড়তি যেটি করতে হবে তা হলো, এই ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তার একটি অংশ আদায় করা। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কলকাতা থেকে ঘুরপথে কোনো পণ্য উত্তর-পূর্ব ভারতে নিতে ১০০ ডলার খরচ হলো। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নিতে সেই খরচ কমে দাঁড়াল ৬০ ডলার। এখন এই যে ভারতের ৪০ ডলার সাশ্রয় হলো, তার অর্ধেক ২০ ডলার অন্তত বাংলাদেশের পাওয়া উচিত। এটি তো ডব্লিউটিওতে নেই। এটি হতে হবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে।
প্রথম আলো এ ব্যাপারে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যে কোর কমিটি গঠিত হয়েছিল, আপনিও তার একজন সদস্য। কমিটি সরকারের কাছে কী সুপারিশ করেছে?
রহমতউল্লাহ কোর কমিটির প্রতিবেদনে ডব্লিউটিওর আওতায় যেসব বিষয় দেখার কথা, সেগুলোই আছে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় বিষয়টি কোর কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। আমি নিজে কোর কমিটির সদস্য হলেও সে সময় দেশে ছিলাম না। এর আগে আমি যে গবেষণামূলক প্রতিবেদন তৈরি করি, তাতে কিন্তু ভারতের সাশ্রয়ের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেছিলাম। এই সুবিধাটা আমরা কেন চাইছি? কারণ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গেলে ভারত লাভবান হবে। আমরা বাড়তি কোনো মাশুল ধার্য করার কথা বলছি না। বলছি সুবিধার অংশ দিতে। এ ব্যাপারে দুই পক্ষকে একটা সমঝোতায় আসতে হবে।
প্রথম আলো নেপাল ও ভুটানে যেসব বাংলাদেশি পণ্য যায়, কিংবা ওই দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে ভারতের ওপর দিয়ে, সে ক্ষেত্রে কী ধরনের মাশুল নেওয়া হয়?
রহমতউল্লাহ ভারত নেপাল বা ভুটানের কাছ থেকে কোনো মাশুল নেয় না। তারা ভূমি আবদ্ধ দেশ বলে নেপাল ও ভুটানকে এই সহায়তা দিচ্ছে।
প্রথম আলো আশুগঞ্জকে যখন পোর্ট অফ কল ঘোষণা করা হলো, তখন বলা হয়েছিল সহজ শর্তে ভারতীয় ঋণে এই বন্দর উন্নয়ন করা হবে এবং সে উদ্দেশ্যে ২৩১ কোটি টাকার প্রকল্পও তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত দিল্লির চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এ অবস্থায় নিয়মিত ট্রানজিট দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন?
রহমতউল্লাহ এ কথা ঠিক, আমরা বলতে পারতাম, যেহেতু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি, রাস্তাঘাট ঠিক নেই—এ অবস্থায় ট্রানজিট দিতে পারব না। তা ছাড়া ট্রানজিট মাশুলের বিষয়টিও নির্ধারিত হয়নি।
আশুগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কটি এশীয় মহাসড়কের অংশ; কিন্তু এর পরের রাস্তা খুবই নাজুক। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে অবকাঠামো তৈরির আগে কেন সরকার ট্রানজিট দিতে গেল? ট্রানজিট দেওয়ার আগে অনেকগুলো বিষয় নিষ্পত্তি হওয়ার প্রয়োজন ছিল। সরকার ট্রানজিট মাশুল নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি করেছে। কমিটি কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে, মার্চ নাগাদ মাশুল চূড়ান্ত হবে।
প্রথম আলো এখন কীভাবে ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে দেওয়া হচ্ছে?
রহমতউল্লাহ এখন যে ট্রানজিট যাচ্ছে তা হলো নৌ প্রটোকল ২০০৯ সালের সংশোধনীর অধীনে। এ প্রটোকলের আওতায় মাশুল আদায়ের সুযোগ নেই। তা ছাড়া ভারতের কাছ থেকে কী হারে ট্রানজিট মাশুল আদায় করা হবে সেটিও কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি। এ অবস্থায় ট্রানজিট মাশুলের বিকল্প হতে পারে ব্যাংক গ্যারান্টি। পরবর্তীকালে সেটি সমন্বয় করে নেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া হলেও ট্রানজিট মাশুল তার অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সেটি বলা হয়নি।
তাই অবকাঠামো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ট্রানজিট না দেওয়াই শ্রেয়। কেননা অবকাঠামো না হলে আমাদের ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হবে। অবকাঠামো হলে আমরা এর ব্যয়টা নির্ধারণ করতে পারি, না হলে সেটি কীভাবে নির্ধারণ করব? যেহেতু অবকাঠামো নেই, এখন সময় বেশি লাগছে, খরচ বেশি পড়ছে। আমরা যেটি করছি তা হচ্ছে আধাআধিভাবে। এরপরও যদি ভারতকে ট্রানজিট দিতেই হয়, তাহলে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে সেটি করা যেতে পারে, যা হবে অন্তর্বর্তীকালীন। পরীক্ষামূলকভাবে এটি হবে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো নির্মাণের কাজটিও ত্বরান্বিত করতে হবে।
প্রথম আলো অবকাঠামো নির্মাণে কত সময় লাগবে বলে আপনার ধারণা?
রহমতউল্লাহ বর্তমানে যে অবস্থায় রাস্তাঘাট আছে, তাতে অবকাঠামো নির্মাণে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। আশুগঞ্জে একটি কনটেইনার বন্দর করতে হবে। রাস্তাঘাটগুলো ঠিক করতে হবে।
প্রথম আলো পণ্য পরিবহনে সড়কপথের চেয়ে রেলপথ অনেক কম ক্ষতিকর এবং ঝুঁকিও কম। ট্রানজিটের ক্ষেত্রে রেলওয়েকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না কেন?
রহমতউল্লাহ রেলপথের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনে কিছু বিধিনিষেধ আছে। প্রতিদিন ২৪টি ট্রেনের বেশি যেতে পারবে না। কী ধরনের পরিবহনের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়া হবে, সে ব্যাপারেও একটি কমিটি কাজ করছে। তবে চূড়ান্ত সমাধান হলো, যমুনায় দ্বিতীয় রেলসেতু করা। আমরা চাই, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহন হোক এবং আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হই। কিন্তু অবকাঠামো সুবিধা না থাকলে ভারত আগ্রহী হবে না।
পূর্বাঞ্চলের রেলপথের সমস্যা হলো সংযোগ না থাকা। আখাউড়া-আগরতলা কিংবা কুলাউড়া-মহিষাশনের মধ্যেও সংযোগ নেই। প্রথমটি ভারতের করে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয়টি আমাদেরই করতে হবে।
প্রথম আলো ট্রানজিট নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি এগোলো না কেন?
রহমতউল্লাহ সরকারের আন্তরিকতার অভাব আছে বলব না, তবে আমরা যখন ট্রানজিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি, তখন কাজটা আরও জোরেশোরে হওয়া উচিত ছিল।
প্রথম আলো নানা পর্যায়ে বলা হয়েছিল ট্রানজিট দিলে আমাদের বিশাল অঙ্কের লাভ হবে। কিন্তু এখন লাভের পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণা এ ব্যাপারে কী বলে?
রহমতউল্লাহ লাভবান হব। তবে তার আগে আমাদের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে। পরিবহন ব্যয় ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। এরপর এ বিষয়ে যে কমিটি কাজ করছে, তাদের উচিত হবে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে লাভ ভাগাভাগির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা।
প্রথম আলো ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কী পরিমাণ ভারতীয় পণ্য পরিবহন হবে বলে মনে করছেন?
রহমতউল্লাহ আমরা হিসাব করেছিলাম, বছরে ১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্য ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাবে। যদি সেটি ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনও হয়, তাও কম নয়। এটি ছিল আমাদের একটি রক্ষণশীল হিসাব। উত্তর-পূর্ব ভারত একটি ভূমিবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের বন্দরসুবিধা নেই, মূল ভূমি থেকে অনেক দূরে। বাংলাদেশ থেকে সহজে পণ্য গেলে সেখানে বিনিয়োগ বাড়বে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশেও নতুন কলকারখানা গড়ে উঠবে।
ভারতের সঙ্গে আলোচনার একটি বিষয় হবে যে আমাদের বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। তাদের কাঁচামাল ব্যবহার করে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিল্পকারখানা করবেন।
প্রথম আলো ভারত ট্রানজিট সুবিধা পেতে কোন কোন রুটকে প্রাধান্য দিতে চায়?
রহমতউল্লাহ আশুগঞ্জ বন্দর অবকাঠামো নির্মিত হলে নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে। কিন্তু কেবল আশুগঞ্জের ওপর নির্ভর করলে তো হবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ভারত যেসব পণ্য পরিবহন করতে চাইছে, সেগুলোর জন্য রেলপথকেই ব্যবহার করতে হবে।
প্রথম আলো ট্রানজিটের ব্যাপারে উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম রাজ্য আসামের আগ্রহ আছে কেমন?
রহমতউল্লাহ আসাম রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা খুবই আগ্রহী। আসামের বৃহত্তর অংশ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ট্রেন সংযোগ রয়েছে। কিন্তু সিলেট সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পণ্য আনা-নেওয়া বাংলাদেশের ওপর দিয়ে করাটা অনেক বেশি সুবিধাজনক।
প্রথম আলো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে কেবল ভারত নয়, নেপাল ও ভুটানেও পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
রহমতউল্লাহ মংলার অবকাঠামো উন্নত নয়। তবে এ বন্দর থেকে আবার পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। নেপালে সম্প্রতি সারের চালান গেছে। ভুটানও এখান থেকে পণ্য পরিবহন করতে আগ্রহী। আমরা এর অবকাঠামো উন্নত করতে পারলে অতিরিক্ত আয় করতে পারব।
প্রথম আলো অনেকের আশঙ্কা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ট্রানজিট সুবিধা দিলে সেখানে বাংলাদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে যাবে।
রহমতউল্লাহ আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত পণ্যের মান রক্ষা করতে পারি, তাহলে বাজার হারানোর আশঙ্কা নেই। কেননা, ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে পণ্য আনতে অনেক দেরি হবে। আমরা তার চেয়ে কম দামে দিতে পারব। আমরা যদি সেসব কারখানা সীমান্ত অঞ্চলে করতে পারি, তাহলে খরচ আরও কম হবে। এ ব্যাপারে এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাও হয়েছে, তাঁরা বলেছেন আশঙ্কা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের পণ্যের মান ঠিক রাখতে হবে।
প্রথম আলো সরকার বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছে এবং এর সুবিধা দেশীয় পরিবহন মালিকেরা পাচ্ছেন। বিদেশি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সেই ভর্তুকি যোগ করা হবে কি না?
রহমতউল্লাহ আলাদা করে হয়তো করা যাবে না। কিন্তু মাশুলটি এমনভাবে করতে হবে যাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই। কোনো কোনো মাশুল অপরিবর্তিত থাকবে, আবার কোনোটি পরিবর্তনযোগ্য। তবে জ্বালানি, পরিবহন ভাড়ার বিষয়টি যেহেতু পরিবর্তনযোগ্য, সেহেতু মাশুলের বিষয়টিও অপরিবর্তিত থাকার কারণ নেই। সময়ে সময়ে বসে ঠিক করতে হবে। পরিবেশগত ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রেও তাই।
প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান যে অবকাঠামো আছে, তাতে কি এখনই ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন?
রহমতউল্লাহ বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ৪০ শতাংশ কাজের সুবিধা এখনো অব্যবহূত। তা ছাড়া কনটেইনার ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাতে স্বল্প সময়ে পণ্য খালাস করা যাচ্ছে। এর ফলে বন্দরের দক্ষতা ও ক্ষমতা বেড়েছে। নিউমুরিং নতুন বন্দর ছাড়াও কর্ণফুলীতে আরেকটি কনটেইনার টার্মিনাল করছে সরকার।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১.৫ মিলিয়ন টন পণ্য আনা-নেওয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকায় আসে ৭০ শতাংশ, যার ৯০ শতাংশ আসে সড়কপথে, মাত্র ১০ শতাংশ রেলওয়েতে। এর প্রধান কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে সিঙ্গেল ট্রাক, ডাবল ট্রাক নেই। ট্রানজিটের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে হলে ট্রেনের ডাবল ট্রাক করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার সহায়তায় ভালো ট্রেনলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে আশা করি। এটি হলে অনেক বেশি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এ ব্যাপারেও কাজ হচ্ছে। সেই সঙ্গে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু করতে হবে।
প্রথম আলো এই মধ্যবর্তী সময়ে কি আমরা অপেক্ষা করব, না ট্রানজিট বন্ধ থাকবে?
রহমতউল্লাহ আমরা মনে করি, এই মধ্যবর্তী সময়ে আমাদের সীমিত পর্যায়ে ট্রানজিট দেওয়া যেতে পারে। আমাদের প্রতিবেদনেও শুরুতে ১০ শতাংশ ট্রানজিট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আশুগঞ্জ নৌবন্দরের নির্মাণের কাজটি হলে ট্রানজিটের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
রহমতউল্লাহ আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments