পবিত্র কোরআনের আলো-ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিচার মীমাংসায়ও কোরআনের বিধান অনুসরণ করার নির্দেশ
৪৮। ওয়াআনযালনা-ইলাইকাল কিতা-বা বিলহাক্কি মুসাদ্দিক্কা লি্লমা-বাইনা ইয়াদাইহি মিনাল কিতা-বি ওয়ামুহাইমিনান আ'লাইহি ফাহ্কুম্ বাইনাহুম্ বিমা- আনযালা ল্লা-হু ওয়ালা-তাত্তাবি' আহ্ওয়া-আহুম আ'ম্মা-জা-আকা মিনাল হাক্ক; লিকুলি্লন জাআ'লনা- মিনকুম শিরআ'তাওঁ ওয়ামিনহা-জা-; ওয়ালাও শা-আ ল্লা-হু লাজাআ'লাকুম্ উম্মাতাওঁ ওয়া-হিদাতাওঁ ওয়ালা-কিল্ লিইয়াবলুওয়াকুম্ ফী মা-আ-তা-কুম ফাছতাবিক্বুল খাইরা-ত; ইলা ল্লা-হি মারজিউ'কুম জামীআ'ন ফাইউনাবি্বউকুম্ বিমা-কুনতুম ফীহি তাখতালিফূন।
৪৯। ওয়াআনিহ্কুম বাইনাহুম্ বিমা-আনযালা ল্লা-হু ওয়ালা-তাত্তাবি' আহ্ওয়া-আহুম ওয়াহ্যারহুম আইঁয়াফতিনূকা আ'ম্ববা'দ্বি মা-আনযালা ল্লা-হু ইলাইক; ফাইন তাওয়াল্লাও ফা'লাম আন্নামা- ইউরীদু ল্লা-হু আইঁইউসীবাহুম বিবা'দ্বি যুনূবিহিম; ওয়াইন্না কাছিরাম্মিনান্ন্না-ছি লাফা-ছিক্বূন। [সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৪৫-৪৭]
অনুবাদ : ৪৮. (হে মুহাম্মদ) আমি সত্যকে তুলে ধরার জন্য আপনার প্রতি কিতাব (কোরআন) নাজিল করেছি। আর সত্যায়ন করেছি আগের কিতাবের, যা কিছু এর সামনে রয়েছে এবং এসবের সংরক্ষকও করে দিয়েছি। সুতরাং আপনি তাদের পারস্পরিক বিষয়ে আল্লাহ কর্তৃক নাজিল করা এই কিতাব অনুযায়ীই ফয়সালা দেবেন। আর সত্য জ্ঞান লাভের পর আপনি তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করবেন না। (হে মানব জাতি) আমি তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট শরিয়ত ও পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছি! আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ তিনি তোমাদের যে ধর্ম দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করে নিতে চান। সুতরাং তোমরা কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও। কারণ তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তোমরা এখানে যেসব বিষয় নিয়ে মতবিরোধ করছ, সেসব তিনি তখন অবশ্যই জানিয়ে দেবেন। ৪৯. (আমার আদেশ হলো) আপনি এদের পারস্পরিক ব্যাপারে এই প্রেরিত কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবেন, আর তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করবেন না। আর এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন যেন তারা আপনাকে আল্লাহ প্রেরিত কোনো নির্দেশের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
এরপর যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তায়ালা তাদের নিজেদের পাপের জন্য তাদের বিপদগ্রস্ত করতে চান। আর মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই তো পাপাচারী।
ব্যাখ্যা : এই আয়াত দুটিতেও মদিনা রাষ্ট্রে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিচর ফয়সালার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। কোরআন যে এর পূর্ববর্তী তাওরাত ও ইনজিলকে সত্যায়ন করে এ কথা এর আগেও অনেকবার বলা হয়েছে। এ আয়াতে বিশেষভাবে বলা হচ্ছে, কোরআনের পূর্ববর্তী তাওরাত ও ইনজিলের জন্য মুহাইমেন অর্থাৎ এই কোরআনের পূর্ববর্তী তাওরাত ও ইনজিলের জন্য সংরক্ষণকারীও। পূর্ববর্তী কিতাবগুলোয় যেসব জ্ঞান, উপদেশ এবং বিধিবিধান রয়েছে, এর সবই অত্যন্ত আমানতদারীর সঙ্গে কোরআনে বিদ্যমান। এসব কিতাবের বর্তমান সংকলনে যদি কোরআনের বিপরীত কিছু দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে এগুলো বানোয়াট।
এই আয়াত দুটিতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিচার ফয়সালা ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম দিকে এটা রাসুলের জন্য ঐচ্ছিক ছিল যে তিনি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিচার হয়তো নিজেই মীমাংসা করতেন অথবা তাদের সমাজের বিচারকদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এই আয়াতে সেই অবস্থার পরিবর্তন করে রাসুল (সা.)-কে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তিনি যেন নিজেই নিজের শরিয়ত অনুযায়ী এসব বিচার ফয়সালা করেন।
৪৯ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : কতিপয় ইহুদি সরদার ও আলেম একবার রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করল যে তারা কওমের সরদার ও জ্ঞানী ব্যক্তি, তারা যার অনুগত হবে কওমের সবাই তার অনুগত হবে। এই প্রসঙ্গ থেকে তারা কওমের কতগুলো মামলার প্রসঙ্গ তোলেন। তারা আবদার তোলেন, মামলাগুলোতে রাসুল (সা.) যদি তাদের পক্ষে রায় দেন, তবে তারা রাসুল (সা.)-এর নবুয়ত মেনে নেবে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বিচার মীমাংসার ক্ষেত্রে তাঁর নাজিল করা বিধান অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো তদবিরকারীর তদবিরের দ্বারা বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ৪৮. (হে মুহাম্মদ) আমি সত্যকে তুলে ধরার জন্য আপনার প্রতি কিতাব (কোরআন) নাজিল করেছি। আর সত্যায়ন করেছি আগের কিতাবের, যা কিছু এর সামনে রয়েছে এবং এসবের সংরক্ষকও করে দিয়েছি। সুতরাং আপনি তাদের পারস্পরিক বিষয়ে আল্লাহ কর্তৃক নাজিল করা এই কিতাব অনুযায়ীই ফয়সালা দেবেন। আর সত্য জ্ঞান লাভের পর আপনি তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করবেন না। (হে মানব জাতি) আমি তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট শরিয়ত ও পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছি! আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ তিনি তোমাদের যে ধর্ম দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করে নিতে চান। সুতরাং তোমরা কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও। কারণ তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তোমরা এখানে যেসব বিষয় নিয়ে মতবিরোধ করছ, সেসব তিনি তখন অবশ্যই জানিয়ে দেবেন। ৪৯. (আমার আদেশ হলো) আপনি এদের পারস্পরিক ব্যাপারে এই প্রেরিত কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবেন, আর তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করবেন না। আর এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন যেন তারা আপনাকে আল্লাহ প্রেরিত কোনো নির্দেশের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
এরপর যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তায়ালা তাদের নিজেদের পাপের জন্য তাদের বিপদগ্রস্ত করতে চান। আর মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই তো পাপাচারী।
ব্যাখ্যা : এই আয়াত দুটিতেও মদিনা রাষ্ট্রে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিচর ফয়সালার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। কোরআন যে এর পূর্ববর্তী তাওরাত ও ইনজিলকে সত্যায়ন করে এ কথা এর আগেও অনেকবার বলা হয়েছে। এ আয়াতে বিশেষভাবে বলা হচ্ছে, কোরআনের পূর্ববর্তী তাওরাত ও ইনজিলের জন্য মুহাইমেন অর্থাৎ এই কোরআনের পূর্ববর্তী তাওরাত ও ইনজিলের জন্য সংরক্ষণকারীও। পূর্ববর্তী কিতাবগুলোয় যেসব জ্ঞান, উপদেশ এবং বিধিবিধান রয়েছে, এর সবই অত্যন্ত আমানতদারীর সঙ্গে কোরআনে বিদ্যমান। এসব কিতাবের বর্তমান সংকলনে যদি কোরআনের বিপরীত কিছু দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে এগুলো বানোয়াট।
এই আয়াত দুটিতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিচার ফয়সালা ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম দিকে এটা রাসুলের জন্য ঐচ্ছিক ছিল যে তিনি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিচার হয়তো নিজেই মীমাংসা করতেন অথবা তাদের সমাজের বিচারকদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এই আয়াতে সেই অবস্থার পরিবর্তন করে রাসুল (সা.)-কে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তিনি যেন নিজেই নিজের শরিয়ত অনুযায়ী এসব বিচার ফয়সালা করেন।
৪৯ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : কতিপয় ইহুদি সরদার ও আলেম একবার রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করল যে তারা কওমের সরদার ও জ্ঞানী ব্যক্তি, তারা যার অনুগত হবে কওমের সবাই তার অনুগত হবে। এই প্রসঙ্গ থেকে তারা কওমের কতগুলো মামলার প্রসঙ্গ তোলেন। তারা আবদার তোলেন, মামলাগুলোতে রাসুল (সা.) যদি তাদের পক্ষে রায় দেন, তবে তারা রাসুল (সা.)-এর নবুয়ত মেনে নেবে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বিচার মীমাংসার ক্ষেত্রে তাঁর নাজিল করা বিধান অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো তদবিরকারীর তদবিরের দ্বারা বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments