সাময়িক প্রসঙ্গ-কেন জামায়াতের এ অপারেশন? by মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান
জামায়াত-শিবিরের এ ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে অন্যতম কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কর্মকাণ্ড রুদ্ধ করা। ১৯ তারিখের কর্মসূচির মূল বক্তব্যই ছিল এটি। তারা জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবলম্বন করে সরকারকে বা দেশবাসীকে বোঝাতে চায়, বন্দি জামায়াত নেতাদের মুক্তি না দিলে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হব২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ছাত্র হলে ইসলামী ছাত্রশিবির রাত দেড়টার দিকে একযোগে আক্রমণ চালায়। তখন এসএম হলের আবাসিক ছাত্র (গণিত বিভাগ) ফারুক হোসেনকে হত্যা করে ছাত্রশিবির তাকে হল সংলগ্ন ম্যানহোলে ফেলে রাখে এবং রুহুল আমিন, কাওসার, ফিরোজ ও জনির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে এবং হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। আরও বেশ কিছু ছাত্র সেদিন গুরুতর আহত হয়। হামলার সময় হলে প্রহরারত পুলিশ হল ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এই হামলার বিষয়ে কোনো গোয়েন্দা রিপোর্ট পূর্ব থেকে ছিল না বলে জানা যায় এবং রাজশাহীতে তখন এমন কথা চালু হয়েছিল যে, শিবির ক্যাডাররা পুলিশের কাছ থেকে ১ ঘণ্টার জন্য ক্যাম্পাস লিজ নিয়েছিল। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে রাবির ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এস তাহের আহমেদকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাঙ্কে রেখে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক তাহের আহমেদ হত্যাকাণ্ডে রাবির তৎকালীন শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহী যুক্ত ছিল বলে পুলিশের চার্জশিটে উল্লেখ ছিল। কিন্তু সে আইনের মারপ্যাঁচে আদালত থেকে খালাস পায়।
২০১০-এর ৯ ফেব্রুয়ারির পর সরকার জামায়াত-শিবিরের বিষয়ে কঠোর মনোভাব পোষণ করে এবং এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও পরে প্রায় সবাই জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। একই সঙ্গে সরকারও ছাত্রশিবিরের বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হতে থাকে। শিবিরকর্মীরা অনেকেই নবাগত ছাত্রলীগের সঙ্গে আত্তীকৃত হয়ে যায়। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার জামায়াত-শিবিরকে সার্বিকভাবে দমন করার পরিবর্তে তাদের মুরবি্ব ও চিহ্নিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস্দের গ্রেফতার করে। এই গ্রেফতারের আগে জামায়াত অবশ্য হুঙ্কার দিয়ে বলেছিল, নিজামী-মুজাহিদ গ্রেফতার হলে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এমনকি সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করার পরও চট্টগ্রামে ঢিলেঢালা হরতাল ছাড়া কিছুই ঘটেনি। তখন হয়তো গোয়েন্দারা তৎপর ছিলেন। এ কারণেই তারা কোনো বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে পারেনি। রাজশাহীতে ফারুক হত্যার পর সরকারি অ্যাকশনে আপাতদৃষ্টিতে জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক অবস্থা ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে জাতীয় পর্যায়ে তারা কিছু বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু গত সোমবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল পূর্বনির্ধারিত। বিষয়টি সরকারের জানা ছিল। কিন্তু জামায়াত আবার জঙ্গি হয়ে উঠল কেন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হলো কেন_ এ প্রশ্ন সর্বত্র। এ বিষয়টি সংক্ষিপ্ত হলেও ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদী জেলে থাকা সত্ত্বেও জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি যে কত বেশি তা প্রমাণ করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল। পুলিশের ওপর হামলা, সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধন, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের মাধ্যমে তারা তাদের অস্তিত্ব ও ক্ষমতা প্রদর্শনে সফল হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতো এবারও গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। কারণ মানুষের জানমাল ধ্বংসের জন্য কোনো অপশক্তির ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা গোয়েন্দা বাহিনীর কাজ। কিন্তু বারবার এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
জামায়াত-শিবিরের এ ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে অন্যতম কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কর্মকাণ্ড রুদ্ধ করা। ১৯ তারিখের কর্মসূচির মূল বক্তব্যই ছিল এটি। তারা জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবলম্বন করে সরকারকে বা দেশবাসীকে বোঝাতে চায়, বন্দি জামায়াত নেতাদের মুক্তি না দিলে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হবে। এ জন্য '৭১-এ তারা যা করেছে, প্রয়োজনে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটাবে।
সম্প্রতি উইকিলিকস্ যেসব তথ্য প্রদান করছে, তার সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা এ মুহূর্তে দুরূহ। তবুও উইকিলিকস্রে তথ্যমতে, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের একটি প্রতীকী বিচার করতে চায়। গত পরশু জামায়াতের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে আটককৃতদের প্রতীকী বিচার করতে বাধ্য হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান জামায়াতের পক্ষে, তবে দুর্বলভাবে। শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিএনপিকে তাদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিতে বাধ্য করবে বলে জামায়াত নেতারা মনে করে থাকতে পারেন। কারণ ২৭ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবির বিষয়টি যাতে স্থান পায়, জামায়াত সেই লক্ষ্য নিয়েও এ জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে থাকতে পারে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, মূল্য পরিস্থিতি ও তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল একটি অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টায় জামায়াতকে সঙ্গে নেওয়া যে আবশ্যক, সেটা প্রমাণ করাও হয়তো জামায়াতের উদ্দেশ্য।
সরকারের ২ বছর ৯ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পথে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা ছাড়া জামায়াত-শিবির বড় কোনো 'অপারেশনে' যায়নি। ইতিমধ্যে প্রশাসনে নিম্নতম স্তর থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় সুর পাল্টে জামায়াত কর্মীরা তাদের অবস্থান শক্ত করেছে। সংবিধানে বিসমিল্লাহ্ ও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখায় তাদের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ তারা হয়তো মনে করছে, তাদের ভয়েই সরকার উপর্যুক্ত বিষয় দুটি সংবিধান থেকে অপসারণ করতে পারেনি। পুলিশের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াতপন্থি কর্মকর্তা নেই_ তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না। এ জন্য প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি করাও তাদের উদ্দেশ্য বলে মনে হয়। সোমবার জামায়াত-শিবিরের অ্যাকশনে পুলিশ যেভাবে নাকাল হয়েছে তাতে তাদের মনোবল কিছুটা হলেও ভেঙে পড়েছে। অতএব এটিও জামায়াতিদের একটি টার্গেট ছিল বলে মনে করা যেতে পারে।
১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানি ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ যেসব অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার সব ক'টিই গোয়েন্দা নজরদারি এড়িয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণগত ত্রুটি, অযোগ্যতা; নাকি সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে ঘটনা কেউ কেউ ঘটাতে সহায়তা করছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ সব ঘটনাই ঘটেছে দেশের সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির বিপরীতে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জীবন সংশয় নিয়ে একাধিক মন্ত্রী যে কথা বলছেন তাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটাকে আমলে নেওয়া অতীব জরুরি এবং গোয়েন্দাদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। তদুপরি জামায়াত-শিবিরকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে না দেখে একটি জঙ্গিবাদী সংগঠন বলে মূল্যায়ন করাও জরুরি। তা না হলে দেশের বড় ধরনের সর্বনাশ হবে।
ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান :উপ-উপাচার্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
২০১০-এর ৯ ফেব্রুয়ারির পর সরকার জামায়াত-শিবিরের বিষয়ে কঠোর মনোভাব পোষণ করে এবং এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও পরে প্রায় সবাই জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। একই সঙ্গে সরকারও ছাত্রশিবিরের বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হতে থাকে। শিবিরকর্মীরা অনেকেই নবাগত ছাত্রলীগের সঙ্গে আত্তীকৃত হয়ে যায়। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার জামায়াত-শিবিরকে সার্বিকভাবে দমন করার পরিবর্তে তাদের মুরবি্ব ও চিহ্নিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস্দের গ্রেফতার করে। এই গ্রেফতারের আগে জামায়াত অবশ্য হুঙ্কার দিয়ে বলেছিল, নিজামী-মুজাহিদ গ্রেফতার হলে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এমনকি সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করার পরও চট্টগ্রামে ঢিলেঢালা হরতাল ছাড়া কিছুই ঘটেনি। তখন হয়তো গোয়েন্দারা তৎপর ছিলেন। এ কারণেই তারা কোনো বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে পারেনি। রাজশাহীতে ফারুক হত্যার পর সরকারি অ্যাকশনে আপাতদৃষ্টিতে জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক অবস্থা ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে জাতীয় পর্যায়ে তারা কিছু বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু গত সোমবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল পূর্বনির্ধারিত। বিষয়টি সরকারের জানা ছিল। কিন্তু জামায়াত আবার জঙ্গি হয়ে উঠল কেন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হলো কেন_ এ প্রশ্ন সর্বত্র। এ বিষয়টি সংক্ষিপ্ত হলেও ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদী জেলে থাকা সত্ত্বেও জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি যে কত বেশি তা প্রমাণ করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল। পুলিশের ওপর হামলা, সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধন, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের মাধ্যমে তারা তাদের অস্তিত্ব ও ক্ষমতা প্রদর্শনে সফল হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতো এবারও গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। কারণ মানুষের জানমাল ধ্বংসের জন্য কোনো অপশক্তির ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা গোয়েন্দা বাহিনীর কাজ। কিন্তু বারবার এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
জামায়াত-শিবিরের এ ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে অন্যতম কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কর্মকাণ্ড রুদ্ধ করা। ১৯ তারিখের কর্মসূচির মূল বক্তব্যই ছিল এটি। তারা জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবলম্বন করে সরকারকে বা দেশবাসীকে বোঝাতে চায়, বন্দি জামায়াত নেতাদের মুক্তি না দিলে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হবে। এ জন্য '৭১-এ তারা যা করেছে, প্রয়োজনে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটাবে।
সম্প্রতি উইকিলিকস্ যেসব তথ্য প্রদান করছে, তার সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা এ মুহূর্তে দুরূহ। তবুও উইকিলিকস্রে তথ্যমতে, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের একটি প্রতীকী বিচার করতে চায়। গত পরশু জামায়াতের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে আটককৃতদের প্রতীকী বিচার করতে বাধ্য হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান জামায়াতের পক্ষে, তবে দুর্বলভাবে। শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিএনপিকে তাদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিতে বাধ্য করবে বলে জামায়াত নেতারা মনে করে থাকতে পারেন। কারণ ২৭ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবির বিষয়টি যাতে স্থান পায়, জামায়াত সেই লক্ষ্য নিয়েও এ জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে থাকতে পারে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, মূল্য পরিস্থিতি ও তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল একটি অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টায় জামায়াতকে সঙ্গে নেওয়া যে আবশ্যক, সেটা প্রমাণ করাও হয়তো জামায়াতের উদ্দেশ্য।
সরকারের ২ বছর ৯ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পথে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা ছাড়া জামায়াত-শিবির বড় কোনো 'অপারেশনে' যায়নি। ইতিমধ্যে প্রশাসনে নিম্নতম স্তর থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় সুর পাল্টে জামায়াত কর্মীরা তাদের অবস্থান শক্ত করেছে। সংবিধানে বিসমিল্লাহ্ ও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখায় তাদের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ তারা হয়তো মনে করছে, তাদের ভয়েই সরকার উপর্যুক্ত বিষয় দুটি সংবিধান থেকে অপসারণ করতে পারেনি। পুলিশের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াতপন্থি কর্মকর্তা নেই_ তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না। এ জন্য প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি করাও তাদের উদ্দেশ্য বলে মনে হয়। সোমবার জামায়াত-শিবিরের অ্যাকশনে পুলিশ যেভাবে নাকাল হয়েছে তাতে তাদের মনোবল কিছুটা হলেও ভেঙে পড়েছে। অতএব এটিও জামায়াতিদের একটি টার্গেট ছিল বলে মনে করা যেতে পারে।
১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানি ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ যেসব অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার সব ক'টিই গোয়েন্দা নজরদারি এড়িয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণগত ত্রুটি, অযোগ্যতা; নাকি সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে ঘটনা কেউ কেউ ঘটাতে সহায়তা করছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ সব ঘটনাই ঘটেছে দেশের সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির বিপরীতে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জীবন সংশয় নিয়ে একাধিক মন্ত্রী যে কথা বলছেন তাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটাকে আমলে নেওয়া অতীব জরুরি এবং গোয়েন্দাদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। তদুপরি জামায়াত-শিবিরকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে না দেখে একটি জঙ্গিবাদী সংগঠন বলে মূল্যায়ন করাও জরুরি। তা না হলে দেশের বড় ধরনের সর্বনাশ হবে।
ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান :উপ-উপাচার্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments