কলেজ ক্যাম্পাসে নৃশংস খুন-দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার করুন
নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তাও একেবারে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে। পটুয়াখালী এ কে এম কলেজ ক্যাম্পাসে শত শত ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের সামনে এই বর্বর হত্যাকাণ্ড হয়। নিহত শাহাদত ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের চালক। আর প্রকাশিত খবর অনুযায়ী খুনি-সন্ত্রাসীরা ওই কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান সিকদারের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। কিছু দিন আগে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সময় শাহাদতের সঙ্গে হাসানদের বাগ্বিতণ্ডা হয়েছিল গাড়ির সাইড দেওয়া নিয়ে। যেকোনো রাস্তায় এ দেশে সাইড দেওয়া বা ওভারটেক করা নিয়ে রোজ বাগ্বিতণ্ডার অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে। বাগ্বিতণ্ডার পর যে যার পথে চলে যায় গাড়ি নিয়ে, এতেই চিন্তার ইতি ঘটে। কিন্তু হাসান সিকদার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণেই ক্ষমতার দম্ভে উন্মত্ত হয়ে যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তাতে কোনো দ্বিমত নেই। ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় সে খুনি-সন্ত্রাসী হয়েছে, নাকি খুনি-সন্ত্রাসী ছিল বলেই নেতা হতে পেরেছে_আমাদের তা জানা নেই। আমরা সন্ত্রাসীদের দুঃসাহস দেখে স্তম্ভিত। কারণ, খুনি এমন বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে যে সমাজে, যেখানে সাধারণ নিরীহ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নটিই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। শত শত ছাত্র ও কলেজ শিক্ষক অসহায় দাঁড়িয়ে আছেন, খুনিদের ঠেকানোর মতো সাহস করেননি কেউ। তাহলে কি বলা যায়, রাজনৈতিক পরিচয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাতে গোটা সমাজ অসহায়ভাবে জিম্মি হয়ে আছে! এ কথা কেউ অস্বীকার করলেও কিছু যায়-আসে না, বাস্তবতা তাই এবং পটুয়াখালীর এ কে এম কলেজের ক্যাম্পাসে দুপুর ১২টায় সংঘটিত ঘটনা এর জ্বলন্ত প্রমাণ। কি জানি, অপরাধীদের মনে কী এমন কোনো সুপ্ত আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে দলীয় পরিচয়ের জোরেই তারা আইনশৃঙ্খলার শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে। যদি এমন হয়, তবে তা সত্যিই ভয় ও দুশ্চিন্তার বিষয়। শাহাদতকে খুনিরা ডেকে এনেছিল কলেজে তাদের মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা করা হবে_এ কথা বলে। বিবাদ মিটে যাবে, এ ভরসায় সরল মনে এসেছিল শাহাদত। কিন্তু আহা! কী যে দাপট, খুন করার জন্য স্কুলের খোলা মাঠকে বেছে নিল তারা! এমন ভয়ংকর খুনিরা যদি সমাজে সদম্ভে বিচরণ করে তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের কী উপায় হবে? আশা করি, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভাববেন। শাহাদতের খুনিদের অবশ্যই অনতিবিলম্বে বিচার করে প্রমাণ করতে হবে, সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক তার মুক্তি নেই। এটা বস্তুত সরকারেরই বারংবার উচ্চারিত ঘোষণা। আর সরকারকে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দিতে হবে।
No comments