পবিত্র কোরআনের আলো-মুনাফিকরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে অসৎ উদ্দেশ্যে

৫০. আফাহুক্মাল জা-হিলিয়্যাতি ইয়াব্গূন; ওয়া মান্ আহ্ছানু মিনাল্লা-হি হুকমান লিক্বাওমিইঁ ইঊকি্বনূন। ৫১. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ লা-তাত্তাখিযুল ইয়াহূদা ওয়ান্নাসা-রা আওলিইয়া-আ বা'দ্বুহুম আওলিইয়া-উ বা'দ্ব; ওয়া মান ইয়াতাওয়াল্লাহুম্ মিনকুম্ ফাইন্নাহূ মিনহুম; ইন্না ল্লাহা লা-ইয়াহ্দিল ক্বাওমায্ যা-লিমীন।


৫২. ফাতারাল্লাযীনা ফী ক্বুলূবিহিম্ মারাদ্বুন ইউছা-রিঊ'না ফীহিম ইয়াক্বূলূনা তাখশা আন তুসীবানা দায়িরাহ; ফাআ'ছাল্লাহু আন ইয়া'তিইয়া বিলফাত্হি আও আমরিম্ মিন ই'নদিহী ফাইউসবিহূ আ'লা মা আছার্রূ ফী আনফুছিহিম না-দিমীন।
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৫০-৫৩]
অনুবাদ
৫০. তবে কি তারা আবার অন্ধকার যুগের বিচারব্যবস্থা তালাশ করছে? অথচ আল্লাহ ছাড়া আর কে উত্তম বিচারক হতে পারে বিশ্বাসী জাতির জন্য!
৫১. হে ইমানদাররা! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো না। এরা নিজেরা একে অপরের বন্ধু; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এদের কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয়, তাহলে সে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা জালেম জাতিকে পথ প্রদর্শন করেন না।
৫২. সুতরাং যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তাদের আপনি দেখবেন খুব দ্রুতগতিতে সেদিকেই যাচ্ছে। তারা বলে, 'আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে কোনো বিপর্যয় এসে আমাদের ওপর পতিত হয়।' পরে হয়তো আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য বিজয় এনে দেবেন, অথবা তাঁর তরফ থেকে অন্য কিছু সৌভাগ্য দান করবেন। তখন এসব লোক নিজেদের মনের ভেতর যে কপটতা লুকিয়ে রেখেছিল তার জন্য ভীষণ অনুতপ্ত হবে।
ব্যাখ্যা
৫০ নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এখানে সমাজের বিভিন্ন অপরাধকর্মের বিচার-ফয়সালার প্রশ্নে মুসলমানরা যাতে অতীতের অন্ধকার যুগের অন্যায্য বিচারের দিকে ফিরে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। বিচার-ফয়সালার ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করাই উত্তম পন্থা, সেটা আবারও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৫১ ও ৫২ নম্বর আয়াত দুটির শানেনুজুুল এ রকম_ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক পরাজয় ঘটলে মুনাফিকরা ভাবল, ইহুদিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা দরকার। বিশেষ করে ইহুদিরা ছিল সম্পদশালী এবং মদিনার ব্যবসা-বাণিজ্য তারাই নিয়ন্ত্রণ করত। তারা ছিল মহাজন। তারা মদিনার লোকদের ঋণ দিত। মুনাফিকরা ভাবত, প্রয়োজনে বিপদ-আপদে তাদের কাছেই আশ্রয় নিতে হবে। এরপর ইহুদিরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, তখন মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাদের পক্ষ অবলম্বন করল। অজুহাত হিসেবে সে বলল, আমি আশঙ্কা করছি, অভাব-অনটনের সময় এদের সাহায্য ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই। আসলে সে মনে করত, মুসলমানদের পরাজয় ঘটলে সে তার দলবল নিয়ে ইহুদিদের কাছে আশ্রয় নেবে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতগুলো নাজিল হয়। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের নির্দেশ দিচ্ছেন তারা যেন ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না রাখে। বন্ধুত্ব না রাখার অর্থ তাদের এমনিতেই হিংসা করা বা শত্রুতা সৃষ্টি করা নয়। বরং এর অর্থ সেই সময়ে ইসলাম ও মুসলমানদের সংকট চলছিল সেই পরিস্থিতিতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের খপ্পরে না পড়া। যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে বলতে মুনাফিকদের বোঝানো হয়েছে। মুনাফিকরা যুক্তি দেখাত ইহুদিদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া বা ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকার বিষয়। কিন্তু তাদের অন্তরে ছিল আসলে মুনাফিকির রোগ। তারা প্রকৃত ইমানদার ছিল না এবং সত্য ও ন্যায়ের ব্যাপারে তাদের কোনো অঙ্গীকার ছিল না। তারা ছিল দুর্বল চরিত্রের অধিকারী।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.