তুষার কান্তি বসাক-ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি খোলা চিঠি-হিন্দুরা কাকে ভোট দেয়, কেন দেয়
মতবিনিময় সভায় বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'হিন্দুরা কেন আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় খুঁজে বের করতে হবে'। এ-সংক্রান্ত খবরটি ১৭ জুলাই কালের কণ্ঠের শেষের পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি পড়ে আমার মনে হলো, দেরিতে হলেও বিএনপির মহাসচিবের বোধোদয় হয়েছে এবং তাঁরা বাংলাদেশের ভোটার এবং নাগরিক হিসেবে হিন্দুদের নিয়ে ভাববার প্রয়োজন বোধ করছেন।
এই অনুভূতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজস্ব অভিব্যক্তি না দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি, তা জানা না গেলেও ভাবতে হবে যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, সেহেতু তাঁর বক্তব্যটি বিএনপিরই দলীয় বক্তব্য। আমি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে তাঁর বক্তব্যটি গুরুত্বসহকারে পড়েছি। পড়ে আমার কেন যেন মনে হয়েছে, এতে কিছু আত্মঘাতী বক্তব্য যেমন আছে, তেমনি কিছু বাস্তবধর্মী বক্তব্যও তিনি দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে গত ৪০ বছরেও বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেনি। এখানে তিনি এবং তাঁর দল হিন্দুদের হৃদয়ে আত্মার নীরব কান্নার যে প্রতিধ্বনি আছে তা থেকে অনেক দূরে সরে আছেন। তাই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার থেকে বিএনপি বঞ্চিত হয় এবং আওয়ামী লীগকে হিন্দুরা ভোট দেয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জানা উচিত যে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সম-অধিকার ও সমমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। ১৯৭২-এর অক্টোবরে শারদীয় দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিনে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলো পরিকল্পিত হামলার শিকার হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলে শঙ্কিত হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ। 'ধর্মনিরপেক্ষ' সংবিধান 'ধর্মীয়' সংবিধানে রূপান্তরিত হলো। রাষ্ট্রধর্ম সংযোজনের মধ্য দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে শুধু বিভাজনই টানা হলো না, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিকভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হলো। শুধু তা-ই নয়, 'শত্রু' বা 'অর্পিত' সম্পত্তি আইনকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভূমি থেকে উৎখাতের বা ভূমি নিয়ে হয়রানির ফলপ্রদ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলো, যার ভয়াল অভিশাপ থেকে আজও মুক্ত হতে পারল না এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
শুধু তা-ই নয়, হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হওয়ার কল্পিত অপরাধে ২০০১ সালের নির্বাচনপূর্ব ও উত্তর সময়কালে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নির্মম শাস্তি দিতেও পিছপা হয়নি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দল বিএনপি ও সরকার। জাতীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের গবেষক মোহাম্মদ রফি তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ঈধহ বি মবঃ ধষড়হম-এ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, 'ঠরড়ষবহপব ধমধরহংঃ ঃযব সরহড়ৎরঃরবং পধহ নব রহাবংঃরমধঃবফ নু ধ সড়ঃরাব ড়ভ বঃযহরপ পষবধহংরহম.' গবেষণাগ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের মাস অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২০টি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। ১৯০টি উপজেলায় তারা চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে। ১৩৭টি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ১২৮টি উপজেলায় তাদের সহায়-সম্পদ লুটের ঘটনা ঘটেছে। ১৬২টি উপজেলায় সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। ২০২টি উপজেলায় হিন্দুরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গবেষকদের ভাষায়, সরকার সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয় না, বরং নিষ্ঠুর ও নির্বিকার আচরণ করে।
মির্জা ফখরুল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, 'এ দেশের সাধারণ মানুষ অসাম্প্রদায়িক, সাম্প্রদায়িকতা তারা ঘটায়, যারা এটা থেকে ফায়দা লুটতে চায়।' তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তাঁর দলের বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি স্লোগান তুলে ধরে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে এ স্লোগানগুলো কি সাম্প্রদায়িক না অসাম্প্রদায়িক? 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশ ভারত হয়ে যাবে', 'মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে', 'হরে কৃষ্ণ হরে রাম শেখ হাসিনার অপর নাম', 'জয় বাংলা জয় হিন্দ, লুঙ্গি খুলে ধুতি পিন্দ', 'বিসমিল্লাহ কায়েম রাখো, ধানের শীষে সিল মারো', 'হিন্দুদের গোলামি রুখতে বিএনপিকে ভোট দিন' ইত্যাদি। আজ আওয়ামী লীগ যখন সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করে '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে চাইছে, তখন মির্জা আলমগীরের আজ বড় কষ্ট হচ্ছে। আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে বলব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তাঁর দল বিএনপি সংসদে গিয়ে ধর্মীয় সংবিধানের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রতিষ্ঠা, 'শত্রু' বা 'অর্পিত' সম্পত্তি প্রত্যাহার ও বিগত ৪০ বছরে স্বাধীন দেশে ঘটে যাওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে জোরালো প্রতিবাদ করে, তাহলে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তাঁর দলের পাশেই থাকবে। তিনি যতই বলুন না কেন, স্বাধীনতার পর এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো ঘটনা ঘটেনি_তা এ দেশের হিন্দুরা বিশ্বাস করবে না এবং তা হলো সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনাগুলো অস্বীকার করারই চেষ্টা মাত্র।
লেখক : কালের কণ্ঠের একজন পাঠক
শুধু তা-ই নয়, হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হওয়ার কল্পিত অপরাধে ২০০১ সালের নির্বাচনপূর্ব ও উত্তর সময়কালে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নির্মম শাস্তি দিতেও পিছপা হয়নি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দল বিএনপি ও সরকার। জাতীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের গবেষক মোহাম্মদ রফি তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ঈধহ বি মবঃ ধষড়হম-এ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, 'ঠরড়ষবহপব ধমধরহংঃ ঃযব সরহড়ৎরঃরবং পধহ নব রহাবংঃরমধঃবফ নু ধ সড়ঃরাব ড়ভ বঃযহরপ পষবধহংরহম.' গবেষণাগ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের মাস অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২০টি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। ১৯০টি উপজেলায় তারা চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে। ১৩৭টি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ১২৮টি উপজেলায় তাদের সহায়-সম্পদ লুটের ঘটনা ঘটেছে। ১৬২টি উপজেলায় সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। ২০২টি উপজেলায় হিন্দুরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গবেষকদের ভাষায়, সরকার সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয় না, বরং নিষ্ঠুর ও নির্বিকার আচরণ করে।
মির্জা ফখরুল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, 'এ দেশের সাধারণ মানুষ অসাম্প্রদায়িক, সাম্প্রদায়িকতা তারা ঘটায়, যারা এটা থেকে ফায়দা লুটতে চায়।' তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তাঁর দলের বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি স্লোগান তুলে ধরে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে এ স্লোগানগুলো কি সাম্প্রদায়িক না অসাম্প্রদায়িক? 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশ ভারত হয়ে যাবে', 'মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে', 'হরে কৃষ্ণ হরে রাম শেখ হাসিনার অপর নাম', 'জয় বাংলা জয় হিন্দ, লুঙ্গি খুলে ধুতি পিন্দ', 'বিসমিল্লাহ কায়েম রাখো, ধানের শীষে সিল মারো', 'হিন্দুদের গোলামি রুখতে বিএনপিকে ভোট দিন' ইত্যাদি। আজ আওয়ামী লীগ যখন সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করে '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে চাইছে, তখন মির্জা আলমগীরের আজ বড় কষ্ট হচ্ছে। আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে বলব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তাঁর দল বিএনপি সংসদে গিয়ে ধর্মীয় সংবিধানের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রতিষ্ঠা, 'শত্রু' বা 'অর্পিত' সম্পত্তি প্রত্যাহার ও বিগত ৪০ বছরে স্বাধীন দেশে ঘটে যাওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে জোরালো প্রতিবাদ করে, তাহলে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তাঁর দলের পাশেই থাকবে। তিনি যতই বলুন না কেন, স্বাধীনতার পর এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো ঘটনা ঘটেনি_তা এ দেশের হিন্দুরা বিশ্বাস করবে না এবং তা হলো সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনাগুলো অস্বীকার করারই চেষ্টা মাত্র।
লেখক : কালের কণ্ঠের একজন পাঠক
No comments