পাকিস্তান-গিলানির ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে? by বি. রমন
নির্বাহী বিভাগ কিসের কারণে এতটা আস্থাবান হতে পারল, যাতে তারা বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করতে পারে এবং এ থেকে উদ্ভূত নেতিবাচক পরিণতি এড়িয়ে যেতে পারে। নির্বাহী বিভাগের পক্ষে তিনটি পয়েন্ট রয়েছে। প্রথমটি হলো, আসিফ আলি জারদারি ও ইউসুফ রাজা গিলানির মধ্যে সংহতি অব্যাহত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, জারদারি-গিলানির যৌথ নেতৃত্বে পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও জোট সঙ্গীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তৃতীয়ত, মোশাররফ বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করার সময় যেমন এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল, এখন বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ অগ্রাহ্য করায়
তেমন প্রতিক্রিয়া নেই
তথাকথিত মেমোগেট বিষয়ে সামরিক বাহিনীকে মোটামুটি সফলভাবে সম্মান করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকার এখন বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করার পথ বেছে নিয়েছে। সুইস ব্যাংকে আসিফ আলি জারদারি ও তার প্রয়াত স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর গোপন অ্যাকাউন্ট থাকার অভিযোগের বিষয়টি পুনর্তদন্ত করতে সুইস কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আদালত বলার পরও প্রধানমন্ত্রী ওই আদেশ সংবিধানের দোহাই দিয়ে মানতে অস্বীকৃতি জানান।
সুইস সরকারকে চিঠি লেখার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী ওই নির্দেশনা মেনে সুইস সরকারকে এ ব্যাপারে চিঠি লিখলে খুব সহজেই বিচার বিভাগের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে পারতেন। আর চিঠি লিখলেও সুইস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে দিতে সম্মত হতো বলে মনে হয় না। অথচ নির্বাহী বিভাগ চিঠিটি লিখলেই বিচার বিভাগের প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করার কোনো কারণ থাকত না।
অথচ এই সহজ পথটি গ্রহণ না করে গিলানি অধিকতর কঠিন ও জটিল পথটি গ্রহণ করলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জারদারি তদন্ত ও বিচার থেকে দায়মুক্ত_ সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে চিঠি লিখতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রধান নির্বাহীর অবাধ্যতা দেখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের বেঞ্চ গিলানির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ গঠন করেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতের এই আদেশের ফলে গিলানি এখন ক্রিমিনাল প্রসিকিউশনের খাঁড়ায় পড়ে গেলেন। তবে তিনি এখনও অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হননি। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা আদালতে প্রমাণ হতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তি হতে হবে। তাহলেই তার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়া বা তাকে গ্রেফতারের প্রশ্ন আসবে।
বিচারপূর্ব চার্জশিট গঠনের পর্যায়ে বিচার বিভাগের এই মামলা হ্যান্ডলিং করার ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতা বা নমনীয়তা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। আদালতের প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আবার গিলানিরও বিচারের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই। এখানে শাস্তি হওয়ার পর প্রেসিডেন্টর ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগের প্রশ্ন আসবে, তার আগে নয়।
প্রশ্ন হলো, নির্বাহী বিভাগ কিসের কারণে এতটা আস্থাবান হতে পারল, যাতে তারা বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করতে পারে এবং এ থেকে উদ্ভূত নেতিবাচক পরিণতি এড়িয়ে যেতে পারে। নির্বাহী বিভাগের পক্ষে তিনটি পয়েন্ট রয়েছে। প্রথমটি হলো, আসিফ আলি জারদারি ও ইউসুফ রাজা গিলানির মধ্যে সংহতি অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয়ত, জারদারি-গিলানির যৌথ নেতৃত্বে পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও জোট সঙ্গীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তৃতীয়ত, মোশাররফ বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করার সময় যেমন এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল, এখন বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ অগ্রাহ্য করায় তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। সে সময় মোশাররফ প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন।
আর একটি প্লাস পয়েন্ট হলো, পিপিপি দলের প্রখ্যাত আইনজীবী আইতাজ আহসান। এই আইনজীবী ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। তিনি জনগণের প্রতিরোধ কমিটি ও আইনজীবীদের কমিটির পুরোধা ছিলেন। আর এখন তিনি বিচার বিভাগের বিপক্ষে নির্বাহী বিভাগের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি গিলানিকে সমর্থন করছেন। তিনি দৃশ্যত, প্রধান বিচারপতির ওপর তার প্রভাব খুইয়েছেন। তবে যে বেঞ্চটি গিলানির বিচার করছেন সেখানকার অন্য বিচারকদের খুব সম্ভব তিনি এখনও প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন।
বিচারে সম্ভাব্য তিনটি দৃশ্যপটের উদ্ভব ঘটতে পারে : প্রথম দৃশ্যপটে বেঞ্চ সদস্যদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেওয়া ও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন গিলানির দিকে যেতে পারে। তখন একটা আপস অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
দ্বিতীয় দৃশ্যপট হতে পারে এ রকম_ বেঞ্চ ঐক্যবদ্ধ থেকে যেতে পারে এবং রায়ের ব্যাপারে সর্বসম্মত না হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন মিলতে পারে। গিলানি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন এবং এরপর জারদারি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
তৃতীয় দৃশ্যপট হতে পারে_ গিলানি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করতে পারেন এবং মাত্রাতিরিক্ত বিচারিক সক্রিয়তা প্রদর্শনের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্য সাজা খাটতে কারাগারে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করতে পারেন।
জারদারি যদি প্রেসিডেন্টের ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগ না করেন এবং গিলানি যদি কারাবাসকেই শ্রেয় মনে করেন তখন পাকিস্তানে গুরুতর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার নতুন পর্যায় দেখা দেবে।
বি. রমন :চেন্নাইয়ে ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল স্টাডিজের পরিচালক ও নয়াদিলি্লর একজন উচ্চপদস্থ সাবেক আমলা
আউটলুক থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
তেমন প্রতিক্রিয়া নেই
তথাকথিত মেমোগেট বিষয়ে সামরিক বাহিনীকে মোটামুটি সফলভাবে সম্মান করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকার এখন বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করার পথ বেছে নিয়েছে। সুইস ব্যাংকে আসিফ আলি জারদারি ও তার প্রয়াত স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর গোপন অ্যাকাউন্ট থাকার অভিযোগের বিষয়টি পুনর্তদন্ত করতে সুইস কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আদালত বলার পরও প্রধানমন্ত্রী ওই আদেশ সংবিধানের দোহাই দিয়ে মানতে অস্বীকৃতি জানান।
সুইস সরকারকে চিঠি লেখার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী ওই নির্দেশনা মেনে সুইস সরকারকে এ ব্যাপারে চিঠি লিখলে খুব সহজেই বিচার বিভাগের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে পারতেন। আর চিঠি লিখলেও সুইস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে দিতে সম্মত হতো বলে মনে হয় না। অথচ নির্বাহী বিভাগ চিঠিটি লিখলেই বিচার বিভাগের প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করার কোনো কারণ থাকত না।
অথচ এই সহজ পথটি গ্রহণ না করে গিলানি অধিকতর কঠিন ও জটিল পথটি গ্রহণ করলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জারদারি তদন্ত ও বিচার থেকে দায়মুক্ত_ সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে চিঠি লিখতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রধান নির্বাহীর অবাধ্যতা দেখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের বেঞ্চ গিলানির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ গঠন করেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতের এই আদেশের ফলে গিলানি এখন ক্রিমিনাল প্রসিকিউশনের খাঁড়ায় পড়ে গেলেন। তবে তিনি এখনও অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হননি। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা আদালতে প্রমাণ হতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তি হতে হবে। তাহলেই তার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়া বা তাকে গ্রেফতারের প্রশ্ন আসবে।
বিচারপূর্ব চার্জশিট গঠনের পর্যায়ে বিচার বিভাগের এই মামলা হ্যান্ডলিং করার ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতা বা নমনীয়তা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। আদালতের প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আবার গিলানিরও বিচারের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই। এখানে শাস্তি হওয়ার পর প্রেসিডেন্টর ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগের প্রশ্ন আসবে, তার আগে নয়।
প্রশ্ন হলো, নির্বাহী বিভাগ কিসের কারণে এতটা আস্থাবান হতে পারল, যাতে তারা বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করতে পারে এবং এ থেকে উদ্ভূত নেতিবাচক পরিণতি এড়িয়ে যেতে পারে। নির্বাহী বিভাগের পক্ষে তিনটি পয়েন্ট রয়েছে। প্রথমটি হলো, আসিফ আলি জারদারি ও ইউসুফ রাজা গিলানির মধ্যে সংহতি অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয়ত, জারদারি-গিলানির যৌথ নেতৃত্বে পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও জোট সঙ্গীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তৃতীয়ত, মোশাররফ বিচার বিভাগকে অগ্রাহ্য করার সময় যেমন এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল, এখন বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ অগ্রাহ্য করায় তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। সে সময় মোশাররফ প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন।
আর একটি প্লাস পয়েন্ট হলো, পিপিপি দলের প্রখ্যাত আইনজীবী আইতাজ আহসান। এই আইনজীবী ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। তিনি জনগণের প্রতিরোধ কমিটি ও আইনজীবীদের কমিটির পুরোধা ছিলেন। আর এখন তিনি বিচার বিভাগের বিপক্ষে নির্বাহী বিভাগের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি গিলানিকে সমর্থন করছেন। তিনি দৃশ্যত, প্রধান বিচারপতির ওপর তার প্রভাব খুইয়েছেন। তবে যে বেঞ্চটি গিলানির বিচার করছেন সেখানকার অন্য বিচারকদের খুব সম্ভব তিনি এখনও প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন।
বিচারে সম্ভাব্য তিনটি দৃশ্যপটের উদ্ভব ঘটতে পারে : প্রথম দৃশ্যপটে বেঞ্চ সদস্যদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেওয়া ও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন গিলানির দিকে যেতে পারে। তখন একটা আপস অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
দ্বিতীয় দৃশ্যপট হতে পারে এ রকম_ বেঞ্চ ঐক্যবদ্ধ থেকে যেতে পারে এবং রায়ের ব্যাপারে সর্বসম্মত না হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন মিলতে পারে। গিলানি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন এবং এরপর জারদারি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
তৃতীয় দৃশ্যপট হতে পারে_ গিলানি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করতে পারেন এবং মাত্রাতিরিক্ত বিচারিক সক্রিয়তা প্রদর্শনের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্য সাজা খাটতে কারাগারে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করতে পারেন।
জারদারি যদি প্রেসিডেন্টের ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগ না করেন এবং গিলানি যদি কারাবাসকেই শ্রেয় মনে করেন তখন পাকিস্তানে গুরুতর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার নতুন পর্যায় দেখা দেবে।
বি. রমন :চেন্নাইয়ে ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল স্টাডিজের পরিচালক ও নয়াদিলি্লর একজন উচ্চপদস্থ সাবেক আমলা
আউটলুক থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments