'সবাইকে দেখতে পাচ্ছি' by আসিফ আহমেদ

কটি মেয়ে চোখে দেখে না, অপরের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না; কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য মনোবল তার। সে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা শুরু করেছে। জ্ঞানের জগতে বিচরণের জন্য তার আগ্রহের শেষ নেই। এমনটি শুনলে সবাই ধন্য ধন্য করে উঠবে। প্রশংসা করবে তার সংকল্পের। তার পাশে দাঁড়াতে সাধ্যমতো চেষ্টা করবে।


আর কিছু না হোক, অন্তত মৌখিক সহানুভূতি জানাবে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মনজুরের ক্ষেত্রে এমনটি বলা চলে না। তিনি মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তা না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ পেতেন না। ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় ছিলেন তিনি। সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মীদের কাছেও পেতেন গুরুত্ব ও মর্যাদা। কিন্তু গত ৫ জুন তার জীবনে নেমে এলো এক কালো দিন_ প্রকৃত অর্থেই নিকষ কালো দিন। তার চোখে আঘাত করল এমনই একজন, যার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করার কথা। স্বামীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে তার দুটি চোখই চিরতরে নষ্ট হয়ে গেল। বাংলাদেশ, ভারত ও কানাডায় সম্ভাব্য সব সুযোগ কাজে লাগিয়েও কিছু করা গেল না। তিনি আর প্রিয় মানুষদের দেখতে পাবেন না, বইয়ের পাতায় চোখ রাখতে পারবেন না। প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে পারবেন না। মানুষ মানুষের এমন ক্ষতি করতে পারে!
রুমানা মনজুরের মানসিক দৃঢ়তার প্রশংসা করতেই হয়। তিনি হাল ছেড়ে দেননি। এত বড় আঘাতের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে ওঠে তিনি ফিরে যেতে চেয়েছেন নিজের প্রিয় শিক্ষার জগতে। এ কাজ তার জন্য সহজ হয়নি, হবেও না। যারা জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন তাদের কাছে ব্রেইল পদ্ধতি বলতে যা বোঝায়, রুমানা মনজুরের ক্ষেত্রে মোটেই তা নয়। তিনি দেখেছেন নিজের চোখে। দৃষ্টিহীন হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা তার জন্য শক্তিশেলের মতোই। নতুন করে পড়াশোনার পদ্ধতি রপ্ত করতে গিয়ে তার প্রতিমুহূর্তে মনে পড়বে সেই অভিশপ্ত দিনটির কথা। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি যেভাবে পড়াশোনার পদ্ধতি রপ্ত করেছেন তা বিস্ময়ের। তিনি সফল হবেন, এটাই সবার প্রার্থনা। আমরা সবাই এখন সেই দিনটির অপেক্ষায় যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর দিয়ে হেঁটে যাবেন শ্রেণীকক্ষে, প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেবে এবং করে উঠবে আনন্দধ্বনি। তাদের পাশে পেয়ে তিনি ভুলে যাবেন যাবতীয় যন্ত্রণা ও কষ্টের দিনগুলোর কথা। ছাত্রছাত্রীদের প্রথম তিনি কী বলবেন? তোমরা ভালো তো, নাকি বলবেন, আমি তোমাদের সবাইকেই কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, তোমরা আমার কথা ভেবে যেন কষ্ট পেয়ো না! শুভকামনা তো করবেনই।
রুমানা মনজুর, আপনাকে স্বাগত জানাতে অনেকের কিন্তু অপেক্ষার প্রহর কিছুতেই শেষ হতে চায় না। আপনি ফিরে আসুন আপনার চেনাজানা পরিবেশে, এটাই কাম্য।
 

No comments

Powered by Blogger.