কাটছে সময় কেমন করে-এফডিসিতে যাওয়া হয় না

রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তাঁর শুরু। ১৯৫৯ সালে প্রথম ছবি 'সোনার কাজল'-এ অভিনয় করেন সুলতানা জামান ও সুমিতা দেবীর বিপরীতে। এরপর নিজেকে বারবার ভেঙেছেন তিনি। কখনো নায়ক, কখনো খলনায়ক, আবার কখনো চরিত্রাভিনেতা। সব ক্ষেত্রেই সফল অভিনেতা খলিলুল্লাহ খান খলিল। কেমন আছেন তিনি? জানাচ্ছেন শ্রাবণী হালদার।


একসময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অনর্গল সংলাপ বলে যেতে বেশ ভালো লাগত খলিলের। নিজেকে বিভিন্ন রূপে দর্শকদের সামনে তুলে ধরে বেশ আনন্দ পেতেন তিনি। তখন এমন কোনো দিন ছিল না, যেদিন শুটিং করেননি এই অভিনেতা। এমনো হয়েছে_খাওয়ার সময় নেই, ঘুমানোর সময় নেই; শুধু শুটিং আর শুটিং। কিন্তু জীবনের এই অন্তিম সময়ে এসে সেসব দিন যেন স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর জীবনে। খলিল সর্বশেষ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দুই বছর হয়ে গেল। অবশ্য 'বাপ বড় না শ্বশুর বড়' নামের সেই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গত বছর। এই বয়সে এসেও তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকদের বিমোহিত করেছে। কিন্তু হাতে নতুন কোনো কাজ নেই। প্রস্তাবও আসছে না। ফলে বেকার দিন কাটছে এই অভিনেতার। কিছুটা ক্ষোভ ও দুঃখ নিয়ে তাই মোহাম্মদপুরের বাড়িতে একাকী পরিবারের সঙ্গে দিন কাটছে তাঁর। বলেন, 'কখনো ভাবিনি, অভিনয়ই আমার পেশা হয়ে দাঁড়াবে। হঠাৎ চাকরিতে বরখাস্ত হওয়ার পর অর্থ সংকটের জন্যই এই পেশায় এসেছিলাম। কিন্তু ছবি মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকরা আমাকে যেভাবে গ্রহণ করলেন, তাঁদের কাছ থেকে যেভাবে সাড়া পেলাম, তাতে আর ফিরে যেতে পারলাম না। কিন্তু শেষ সময়ে এসে এমন চুপচাপ দিন কাটাতে হবে_এটা মানতে পারছি না।' চলচ্চিত্রে ব্যস্ততা কমে যাওয়ার পর খলিল মাঝখানে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেন। সম্প্রতি সেখান থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন এই অভিনেতা। তিনি বলেন, 'আমি আসলে বড় পর্দার মানুষ। ছোট পর্দায় সেভাবে খাপ খাওয়াতে পারি না। তা ছাড়া যে নাটকগুলোতে কাজ করেছি, সেখান থেকে খুব বেশি যে সাড়া পেয়েছি, তা-ও কিন্তু নয়। চলচ্চিত্রে যেমন শুক্রবার কোনো ছবি মুক্তি পেলে দর্শকদের কাছ থেকে সরাসরি মন্তব্য শুনতে পেতাম, এখানে তেমন সুযোগই নেই।' খলিলের প্রতিদিনের সময় এখন ছকে বাঁধা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ডাক্তারের পরামর্শে খানিকটা হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে নাশতা সারেন। বিকেলে কেউ এলে গল্প-গুজব করেন, নতুবা কাছের কোনো বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যান তিনি। আর রাতে টিভি দেখা। এভাবেই দিনগুলো কাটছে তাঁর। তবে মাঝেমধ্যে টিভিতে পুরনো দিনের সিনেমা দেখলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, 'আগের সময়টাকেই আমার চলচ্চিত্রের সোনালি দিন মনে হয়। তখন সাদাকালোর দিন ছিল; কিন্তু ক্যামেরার সেই কাজ, গল্পের ভিন্নতা, আলাদা আলাদা লোকেশন, নামি-দামি তারকা_কী ছিল না তখন! অথচ এখন? আমরা মাদ্রাজি একটি ছবি ভেঙে তিনটি করছি। লোকেশন বলতে এফডিসির সেই খাঁচা। আর তারকা? সেদিকে নাইবা গেলাম!' চলচ্চিত্রে আজকাল বেশ দলাদলি চোখে পড়ে খলিলের। এমনকি অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও নাকি সেসব দলে অন্তর্ভুক্ত। তা ছাড়া এখন নাকি কোনো পরিচালক ছবি শুরু করলে কলাকুশলী গোপনে ঠিক হয়ে যায়। প্রকাশ্যে কেউ জানতে পারে না। ফলে ৮০ শতাংশ শিল্পীর ভাগ্যেই কাজ জোটে না। এখন বেকার বসে আছেন তাঁরা। বিষয়টা খলিলের খুব খারাপ লাগে। তিনি বলেন, 'এখানে এমন কেন হবে? আমার কথা বাদই দিলাম। কিন্তু আরো যেসব শিল্পী রয়েছেন, যাঁদের এই পেশা দিয়ে জীবন চলে, তাঁদের কিভাবে দিন কাটছে_কেউ কি ভেবে দেখেছে?' অনেকদিন এফডিসিতে যাওয়া হয়নি খলিলের। যাওয়ার তেমন ইচ্ছাও করে না এখন। তবে সমসাময়িক যাঁরা এখনো বেঁচে আছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রায়ই ফোনে কথা হয় তাঁর। বিশেষ করে অভিনেতা রাজ্জাকের সঙ্গে বোঝাপড়াটা এখনো আগের মতো। রাজ্জাকের বাসাটাকেই এখনো তাঁর আসা-যাওয়ার অন্যতম স্থান মনে হয়। অবশ্য মাঝেমধ্যে দেশের বাইরেও যান খলিল। আমেরিকায় ছেলের পরিবার থাকে। বছরে একবার সেখানে যাওয়া পড়ে তাঁর। নাতি-নাতনিদের সঙ্গেও হাসিঠাট্টায় প্রবাসের সময়টা চলে যায়। কিন্তু চলচ্চিত্রের সোনালি জগৎ এখনো টানে তাঁকে। অপেক্ষায় থাকেন কারো ডাকের।

No comments

Powered by Blogger.