রাজনৈতিক ঝগড়াঝাঁটির মধ্যে কাজ করা কঠিন by নিয়াজ মোর্শেদ
মধ্য ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদকাল। তারপর দায়িত্ব নেবে নতুন কমিশন। বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুললেও নির্বাচন কমিশন মনে করে, আগামীতে যাকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন, আগে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান হতে হবে। তা না হলে এই ঝগড়াঝাঁটির মধ্যে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন কঠিন হবে। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা।
তিনি সমকালকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা যখন আসি তখন যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, এখনও তাই দেখছি। অস্থিরতা বাড়ছেই। তিনি নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার আগে রাজনৈতিক সমস্যার বিষয়গুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এখানে যারা আসবেন তারা তো রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। তাই রাজনৈতিক বিষয়গুলো তাদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তাদের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই রাজনৈতিক বার্নিং ইস্যুগুলোর সমাধান হতে হবে। তা না হলে কাজ করা খুবই দুরূহ হবে।বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে কমিশনের সংলাপে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না করা বা মতামত না দেওয়ায় হতাশ না হলেও তারা যে কারণ দেখিয়ে বর্জন করেছে তাতে হতাশ সিইসি। তিনি বলেন, আমরা কারও পক্ষ নিইনি, কিন্তু তারা বারবার একই দোষারোপ করছে। এটা ঠিক নয়। একটা সহজ টার্গেট ঠিক করে বারবার আক্রমণ করা উচিত নয়। তারা মিডিয়ার কাছে সহজেই যেতে পারে। কিন্তু আমরা তো তা পারি না।সিইসি বলেন, গত ৫ বছরে তাদের যে অর্জন তা ধরে রাখতে ভোটার তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ, তথ্যভাণ্ডারের সুষ্ঠু ব্যবহার, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নিয়মিত ব্যবহার, জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, জাতীয় নির্বাচনের আগে এলজিআরডি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির কর্তৃত্বে আনা প্রয়োজন। আবার রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নে দলগুলোর নিয়মিত কাউন্সিল অনুষ্ঠান, ছাত্র সংগঠন ও বিদেশে শাখা না রাখা, নারী নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে এবং দলের সঙ্গে অন্তত তিন বছর যুক্ত ছিল এমন ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া উচিত বলে মনে করেন। এসব বিষয় এখনও অর্জন না হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে এবং আগামীতে আরও হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিইসি। রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষে তিনি বলেন, নারীরা দলীয় কমিটির মধ্যে থাকলে রাজনীতির মধ্যে এই যে রূঢ়তা এবং একমুখিতা আছে তাতে প্রভাব পড়বে। দেশের রাজনীতি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। নারীদের অংশগ্রহণে বহুবিধ সুবিধা আছে। কিন্তু সে জিনিসটা অনুপস্থিত। আমরা শুরু করে গেলাম, আগামী কমিশনকে কাজ করতে হবে।সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার যদি সার্চ কমিটি করে তবে বলব, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটা আইন যদি হয়, তবে যাকে-তাকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। নির্বাচন ব্যবস্থায় এখনও কিছু সমস্যা আছে বলে ইঙ্গিত দিয়ে সিইসি বলেন, যেসব ত্রুটি আছে তা দূর করতে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। ইতিমধ্যে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশি করে ব্যবহার করে সবার আস্থা অর্জন করতে হবে। আর কমিশনকে তার সব কাজে স্বচ্ছ হতে হবে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ কমিশন কাজ করেছে বলেই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
No comments