বিবিরবাজার খালে বাঁধ by ইকবাল হোসেন

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিবিরবাজার খালে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছেন গোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আতিক উল্লাহ চৌধুরী। এতে খালের পশ্চিম দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে আশপাশের ১০ গ্রামের দুই সহস্রাধিক চাষি পড়েছেন বিপাকে। বেকার হয়ে গেছেন তিন শতাধিক জেলে।


স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান আতিক উল্লাহ গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকে বিবিরবাজার খালের বিবিরবাজার অংশে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করেন। এরপর তাঁর লোকজন খালটির প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশের পানি সেচে ফেলেন। এতে খালের উভয় পারের আলুকান্দা, ঘোষকান্দা, কোন্ডারচর, পাইনারচর, বক্তারচর, নোয়াদ্দা, নয়ামাটি, বীরবাঘৈরসহ ১০ গ্রামের কৃষকেরা পানির অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না।
কোন্ডারচর এলাকার আলুচাষি মো. ইসমাইল বলেন, ‘মাটি বিক্রির উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান আতিক উল্লাহ খালে বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে ফেলেছেন। পানির অভাবে আলুগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। বাঁধ দেওয়ার ফলে এখন আর খেতের কাছে নৌকা আনা যাচ্ছে না। এতে প্রতি বস্তা আলু পরিবহনে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে খরচ হবে। পানির অভাবে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় এবং খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার আমার মতো অনেক কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।’
কৃষক মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘খালে পানি না থাকায় এ বছর আমরা ইরি-বোরো ধানের চাষ করতে পারিনি। কৃষকের স্বার্থে অতিসত্বর খালের বাঁধ অপসারণ করা জরুরি।’
বাঁধের কারণে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এলাকার মাঝিরাও। কোন্ডারচরের মাঝি মো. আমির হোসেন (৩৫) বলেন, ‘পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে অন্যের খেতে দিনমজুরের কাজ করছি।’
বক্তারচর এলাকার মৎস্যজীবী মো. ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন এ খালে মাছ ধরে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতাম। এখন খালটি শুকিয়ে ফেলায় মাছ ধরা বন্ধ।’
কোন্ডা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. দুদু মিয়ার ভাষ্যমতে, খালটিতে বাঁধ দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালীরা বর্তমানে দুটি খননযন্ত্রের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন।’
যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান আতিক উল্লাহ চৌধুরী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিবিরবাজারের লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে খালে বাঁধ দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে। খালটি সংস্কার করে বাঁধ সরিয়ে ফেলা হবে। তখন পানির প্রবাহ সৃষ্টি করে খালটি আগের অবস্থায় আনা হবে। মাটি বিক্রির উদ্দেশ্যে খালে বাঁধ দেওয়া হয়নি।’
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিবিরবাজার খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। খালে বাঁধ দেওয়ার ঘটনা ঘটলে বাঁধ সরিয়ে নিতে চেয়ারম্যান আতিক উল্লাহকে চিঠি দেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.