গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা

ন্নয়নশীল দেশগুলোতে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা একটি বড় ধরনের সমস্যা। এসব দেশে রক্তশূন্যতার হার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। আর গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা বেশি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যু এবং প্রসূতি মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে রক্তশূন্যতা।


রক্তশূন্যতা কী : রক্তে হিমোগেল্গাবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্তশূন্যতা হয়। এ সম্পর্কে ডা. উৎপলা মজুমদার (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, গাইনি) বলেন, গর্ভাবস্থায় বল্গাড ভলিউমের চাহিদা বেড়ে যায়। এর সঙ্গে আয়রনের চাহিদাও বাড়ে। ফলে এ সময় আয়রনের চাহিদা পর্যাপ্ত পরিমাণে পূরণ না হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
সাধারণত আয়রন, ফলিক এসিড, বি-১২, প্রোটিন_ এগুলোর ঘাটতি এবং পুষ্টিহীনতার কারণে রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কৃমির সংক্রমণ থাকলে কৃমি রক্ত খেয়ে ফেলে। এর ফলেও রক্তশূন্যতা হয়। আবার বিল্গডিং পাইলস থাকলেও রক্তশূন্যতা হতে পারে। এগুলো ছাড়া রক্তে থেলাসেমিয়ার সমস্যা, বোন ম্যারোতে সমস্যা, টিবি, যক্ষ্মা, কিডনিতে সমস্যা এবং কোনো ধরনের টিউমার থাকলে এসব সমস্যা থেকেও রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তক্ষরণ হলেও রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের বিল্গডিং হলে রক্তশূন্যতা হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় বমি হলে অ্যানিমিয়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের দেশে অধিকাংশ মা পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। এসব মা ঘন ঘন বাচ্চা নিলে তাদের এবং গর্ভস্থ শিশুর রক্তশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ১৮ বছরের নিচে দুটি বাচ্চা হলে অ্যানিমিয়া সবচেয়ে বেশি হয়।
কী কী সমস্যা হতে পারে : রক্তশূন্যতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। মাইল্ড মডারেট এবং সিভিয়ার। রক্তে হিমোগেল্গাবিনের পরিমাণ ৮ থেকে ১০ বা ৭ থেকে ৮ গ্রামের ভেতর থাকলে তাকে মাইল্ড মডারেট বলে। আর হিমোগেল্গাবিনের পরিমাণ যদি ৭-এর নিচে নেমে যায় তখন তাকে সিভিয়ার বলা হয়। সিভিয়ার হলে মায়ের প্রচণ্ড শরীর খারাপ থাকে। খেতে ইচ্ছে হয় না, হজমে কষ্ট হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, হাত-পা ফুলে যায় এবং চামড়া ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়া থাকলে মায়ের প্রি-একলামশিয়া বা খিঁচুনি হতে পারে। এ ছাড়া শরীরে ঘন ঘন ইনফেকশন হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতাজনিত কারণে মায়ের হার্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হয়। এ ছাড়া প্রিম্যাচিউর বেবির জন্ম হয়ে থাকে এবং বাচ্চার ওজন কম হয়। রক্তশূন্যতা থাকলে গর্ভে বাচ্চার অক্সিজেনের অভাব হয়। ফলে বাচ্চা দুর্বল হয়। অনেক সময় অক্সিজেনের অভাবে বাচ্চা পেটেই মারা যেতে পারে। আর মেয়ে বাচ্চা হলে তার জন্ম থেকেই আয়রনের ঘাটতি থেকে যায়। যার ফলে পরবর্তী সময়ে সে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
কী করণীয় :
রক্তশূন্যতা কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। রক্তশূন্যতার ফলে অনেক সময় বড় ধরনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই রক্তে হিমোগেল্গাবিনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত।
ষ প্রথম বাচ্চা থেকে দ্বিতীয় বাচ্চার মধ্যে দুই বছর গ্যাপ থাকতে হবে।
ষ তিন মাস অন্তর বাচ্চাদের কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
ষ আয়রনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
ষ গর্ভাবস্থায় কুসুম, কচুশাক, কাঁচকলা, কলিজা_ এ ধরনের যেসব খাবারে আয়রন আছে তা প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।
ষ গর্ভাবস্থায় তিন মাসের ভেতর আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া যায় না। বমি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মাকে এ সময়ে বেশি করে আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
ষ আয়রন জাতীয় খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে চা খাওয়া যাবে না। চা আয়রনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ষ বাচ্চা নেওয়ার আগে রক্তে হিমোগেল্গাবিনের পরিমাণ ঠিক আছে কি-না তা জানতে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। হিমোগেল্গাবিনের পরিমাণ কম থাকলে তা বাড়িয়ে বাচ্চা নিতে হবে।
ষ গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতাজনিত যে কোনো সমস্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

লেখা : ফারহানা ইমা

No comments

Powered by Blogger.