নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন-তারাই হবেন জনপ্রতিনিধি!
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতি দৃষ্টি এখন গোটা দেশের। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মেয়র পদের প্রার্থী হিসেবে দলীয় অনুমোদনের ঘোষণা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সর্বশেষ মেয়রও এ পদে প্রার্থী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বিধান বাতিল হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের জন্য নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতাসীন দল কি নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহার করবে এবং ভোটাররা কি নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে_ এসব প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। তবে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান এ পর্যন্ত কঠোর বলেই প্রতীয়মান হয়। তারা মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের ব্যয় কমিয়ে রাখা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং প্রশাসন নিরপেক্ষ রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও শঙ্কা অনেক প্রার্থীর পরিচয় নিয়েই। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সন্ত্রাসমুক্ত নগর ও ওয়ার্ড গড়ে তোলার অঙ্গীকার করছেন। উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে তারা যে আমলনামা জমা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে, তা বলছে ভিন্ন কথা। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল :'বেশিরভাগ প্রার্থীই এইট-নাইন পাস'। এতে বলা হয়, কাউন্সিলর পদে ২৭ ওয়ার্ডে ২৭৮ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২৬ জন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস। বাকিরা কলেজেই যাননি। ভোটারদের অভিযোগ, অনেক প্রার্থী উন্নয়নের অগ্রাধিকার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দুটি প্রধান দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অন্তত একশ' কাউন্সলর বিভিন্ন মামলার আসামি। অন্তত ২০ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগে খুনের মামলা ছিল, এখনও ৭ প্রার্থীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা চলমান। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কীভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে_ তার জবাব কে দেবে? যে আইনের ফাঁকফোকর বের করে তারা জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে নেমেছে তা বদলানোর দায় অবশ্যই জাতীয় সংসদের। নির্বাচন কমিশন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনকে নির্দলীয় রাখার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো নানা কৌশলে প্রার্থীদের দলীয় পরিচয়কেই সামনে নিয়ে আসছে। এ অবস্থায় যেসব প্রার্থী সম্পর্কে সন্ত্রাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকার অভিযোগ রয়েছে, তার দায় তারা কীভাবে এড়াবে? ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত এমনকি খুন-ধর্ষণের অভিযোগে যাদের নামে চার্জশিট হয়েছে তারা কীভাবে দলীয় সমর্থন লাভ করতে পারে_ সে জন্য তাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। তারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে 'নির্বাচিত' হলে অপরাধকর্মের মাত্রা আরও বাড়বে_ তাতে সন্দেহ করা চলে না। দশের জন্য নয়, বরং বেশি ব্যস্ত থাকবে নিজের আখের আরও ভালোভাবে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল সবাই বলছে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার কথা। তাদের হাতে আরও ক্ষমতা প্রদানের জন্য সওয়াল করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের বেশিরভাগের যে আমলনামা, তারা জয়ী হলে তাদের বাড়তি ক্ষমতা এলাকা এবং তার জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে_ তার বিন্দুমাত্র
নিশ্চয়তা আছে কি?
নিশ্চয়তা আছে কি?
No comments