ছায়ানটের নৃত্য উৎসব by জোবায়েদা লাবণী
শাস্ত্রীয় নৃত্যরূপের রূপমাধুরী মেলে ধরা এবং নৃত্যচর্চাকারী ও নৃত্যরসগ্রাহীদের মধ্যে নিবিড়তর যোগসূত্র স্থাপন করার অভিপ্রায়ে ৫ ও ৬ কার্তিক ছায়ানট ভবনে আয়োজন করা হয়েছিল দুই দিনব্যাপী 'ছায়ানটের নৃত্য উৎসব ১৪১৮'-এর। উৎসবটিকে কেন্দ্র করে পুরো ভবনটি সেজে উঠেছিল এক ভিন্ন আমেজে। মাটির প্রদীপের স্নিগ্ধ আলো আর সজীব ফুলের সমারোহে তৈরি হয়েছিল এক স্বপি্নল আবহের। যদিও শাস্ত্রীয় নৃত্যকে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্যে
আয়োজন করা হয়েছিল এ উৎসবের। একশ্রেণীর দর্শকের কাছে এটি যে এরই মধ্যে অনেক বেশি জনপ্রিয়, সেটার প্রমাণ বহন করে দর্শকপূর্ণ মিলনায়তনটিই। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না কোথাও। শাস্ত্রীয় নৃত্যের ছন্দে অনুরণিত ছিল প্রতিটি দর্শক হৃদয়। মণিপুরি ও ভরতনাট্যম নৃত্যধারার মিশ্রণে দলীয় নৃত্য পুষ্পাঞ্জলি পরিবেশনের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় উৎসবটির। এরপর ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিলের স্বাগত কথনের পর শুরু মূল অনুষ্ঠানের। উৎসবে পরিবেশিত হয় উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় নৃত্যের জনপ্রিয় চারটি রূপ_মণিপুরি, ওড়িশি, ভরতনাট্যম এবং কত্থক নৃত্য। উৎসবে ছায়ানটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর শিল্পীদের একক ও দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হয়। দলীয় নৃত্যের পাশাপাশি একক নৃত্য পরিবেশন করেন সোনিয়া রশীদ, ফারহানা আহমদ, তামান্না রহমান, সানজানা হক, বেলায়েত হোসেন, শুক্লা সরকার, অর্পিতা সোম, তাহ্নীনা ইসলাম, পার্থ প্রতিম দাস, তাবাসসুম আহমেদ, শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, সামিনা হোসেন প্রেমা, সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা তাথৈ, প্রমা অবন্তী, আসিফ মোহাম্মদ, জেসিকা শারমিন রহমান, শুভ্রা সেনগুপ্তা, দীপ নারায়ণ রায়, সম্প্রতি রিজওয়ানা, মেহ্রাজ হক তুষার ও মুনমুন আহমেদ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ছায়ানট, নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র নৃত্যশ্রী, জাগো আর্ট সেন্টার, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, নটপালা, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার এবং নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীরা। এই চারটি নৃত্যের মাইবি জাগৈ, রাধানর্তন, ননীচুরি, তানুম্, কন্দুকখেল, পল্লবী, আলারিপু, নবরস, মঙ্গলম, কীর্তনম, যতিস্বরম, ঠুমরী, তারানা, ধামার, রাধারূপ বর্ণন, শুকসারী দ্বন্দ্ব, মৃদঙ্গ চোলম্ ও ঢোল চোলম্, পল্লবী, মোক্ষ, শিবাস্তুতি, যতিস্বরম্, শব্দম্, কীর্তনম্, তিলস্নানা, তারানা, ভজন, তিনতাল এবং নূপুর বিষয়ের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের ননীচুরি থেকে শুরু করে কন্দুকখেলা, নৃত্যরতা রাধা, রাধার রূপবর্ণন, হৃদয়ানুভূতির প্রধান ৯টি রস, সৃষ্টির মঙ্গলকামনা, শিবের স্তুতি, দেবতার বন্দনাসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রতিটি নৃত্যের শুরুতেই নৃত্য এবং নৃত্যশিল্পী ও দলগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমনা বিশ্বাস এবং কৃষ্টি হেফাজ। উৎসবটির সহযোগিতায় ছিল মুঠোফোন কম্পানি রবি।
No comments