যে কারণে ক্ষমতা দখল করছে না পাক সেনাবাহিনী
সমকাল ডেস্কসাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটকাল পার করছে পাকিস্তান। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ সমস্যায় জর্জরিত দেশটি বর্তমানে বেসামরিক সরকার, সামরিক বাহিনী এবং দেশটির সর্বোচ্চ আদালত_ ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে আক্রান্ত। ১৯৪৭ সালে গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে দেশটি স্বাধীন হলেও বারবার বেসামরিক সরকারগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী।
সম্প্রতি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে আবারও অভ্যুত্থানের পথে পাক সেনাবাহিনী। তবে এবারের সংকটে সামরিক বাহিনী এখনও ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারছে না সেনাবাহিনী। বিশ্লেষকদের মতে, তাদের সামনে যে পাঁচটি প্রধান বাধা রয়েছে, তার অন্যতম জনগণের বিমুখতা।সরকারের সঙ্গে নজিরবিহীন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেও সামরিক সরকারের প্রতি জনগণের নূ্যনতম সমর্থন না থাকা দেশটির সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের প্রধান বাধা। কারণ এর আগে বারবার ক্ষমতা গ্রহণ করেও দেশটির সংকট দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে সেনাশাসকরা। জেনারেল আইয়ুব খান, জিয়াউল হক এবং অতি সাম্প্রতিক পারভেজ মোশাররফসহ সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সুবিধাভোগের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ইসলামাবাদভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর লিগারলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির প্রধান আহমেদ বিলাল মাহবুব বলেন, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সামরিক শাসকদের প্রতি জনগণের বিমুখতা। পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে এখন সেনাশাসকবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত পাক মেজর জেনারেল আয়াজ খান বলেন, মানুষ এ মুহূর্তে এ সরকারের প্রতি বিরক্ত কিন্তু তারা এর জবাবে সামরিক শাসন চায় না। সংবাদমাধ্যম : পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। সামরিক সরকারের প্রতি বিমুখতা এবং গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের পক্ষেই কথা বলছে তারা। বিশেষত দেশটিতে বেশ কয়েকটি ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল রয়েছে। যারা দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলে তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে পাক সংবাদমাধ্যম। বিলাল মাহবুব বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের স্বাধীন গণমাধ্যম সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি এখন থেকেই গণমাধ্যমগুলো সেনাবাহিনীর নেওয়া বেশ কিছু কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা : এর আগে পাকিস্তানে সংঘটিত প্রতিটি অভ্যুত্থানেই দেখা গেছে সেনাশাসকরা দেশটির বিচার ব্যবস্থার সমর্থন নিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু দেশটির বর্তমান বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি সেনাশাসনের বিরোধী। যেখানে প্রধান বিচারপতি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী মোশাররফের আমলে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন এবং সরাসরি তার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনিই মূলত সেনাশাসনের বিরোধিতা করবেন। এ বিষয়ে মাহবুব বলেন, এর আগে সেনাশাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন কিন্তু ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগ বর্তমানে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। মিত্রদের সমর্থন : পাকিস্তানে আরেকটি সেনা অভ্যুত্থান হোক তা চাইছে না পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলো। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মতো দেশ সেনাশাসনকে সমর্থন করছে না। আর পাকিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে এসব দেশের প্রবল প্রভাব রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এদের সমর্থন ছাড়া পাকিস্তানে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান হতে পারে না। থিঙ্কট্যাঙ্ক মাহবুব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনও চায় না পাকিস্তানে আরেকজন সেনাশাসক বসিয়ে এ অঞ্চলে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক। বিকল্প ব্যবস্থা : এ মুহূর্তে অভ্যুত্থানের চেয়েও বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে পাক সেনাবাহিনীর হাতে। সেনা কমকর্তারা জারদারিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান। আর এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এ কারণেই অভ্যুত্থানের চেয়ে পাক আদালতের চাপেই জারদারি ক্ষমতাচ্যুত হবেন_ এমন বিকল্প ব্যবস্থা থাকায় অভ্যুত্থানের দিকে খুব বেশি নজর দিচ্ছেন না সেনা কর্মকর্তরা। ইতিমধ্যে জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা শুরু এবং মেমোগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে আদালতের তোপের মুখে রয়েছেন জারদারি-গিলানি সরকার। সূত্র :সিএনএন।
No comments