আজমল-জাদুতে বিবশ ইংল্যান্ড

প্রতীক্ষার অবসান হলো দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি। সাঈদ আজমলের হাত থেকে বেরোল ‘তিসরা’। খানিকটা রাউন্ড আর্ম অ্যাকশনে জোরের ওপর করা বল, যেটা পড়ে সোজা যায়। নিখুঁত ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এর পরও আরও দু-একটি করলেন, অন্তত প্রথম দর্শনে তেমন কিছু মনে হয়নি বহু আলোচিত তিসরাকে।


তবে ‘রহস্যময়’ ওই বলের কার্যকারিতার প্রয়োজন হয়নি। এমনিতেই তো আজমলের ঘূর্ণিজাদুতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকল ইংল্যান্ড! ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের কাছে তাঁর সব বলকেই মনে হলো রহস্যময়। এই রহস্যের জালে ঘুরপাক খেয়ে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা এক নম্বররা গুটিয়ে গেল ১৯২ রানেই। গত বছরের সেরা টেস্ট বোলার নতুন বছর শুরু করলেন ক্যারিয়ার-সেরা বোলিংয়ে। অনেকটা এগিয়ে গেলেন বিশ্বের সেরা স্পিনার নির্ধারণের অলিখিত লড়াইয়েও। শেষ বিকেলে ১৫ ওভার নিরাপদে কাটিয়ে দিনটাকে পুরোপুরিই পাকিস্তানের করে নিয়েছেন দুই ওপেনার।
প্রথম দিনেই আজমল অনেকটা এগিয়ে গেলেও গ্রায়েম সোয়ান কিন্তু হারেননি। আজমলের ২৪ বলে ৩টি চারসহ ১৫ করেছেন, উইকেটও দেননি প্রতিদ্বন্দ্বীকে। অষ্টম উইকেটে ম্যাট প্রিয়রের সঙ্গে সোয়ানের ৫৭ রানের জুটিই আরও বড় লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছে ইংল্যান্ডকে। ৯৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ইংলিশরা শঙ্কায় ছিল এক শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার। লোয়ার অর্ডারকে সঙ্গী করে রানটাকে দুই শর কাছাকাছি নিয়ে গেছেন প্রায়র।
প্রথম দিনে এক স্পিনারের ৭ উইকেট শুনলে যেমন মনে হয়, উইকেট কিন্তু ছিল তার উল্টো। নির্ভেজাল ব্যাটিং উইকেট। একটু মন্থর, এই যা। সত্যি বলতে, সারা দিনে বলার মতো টার্ন পাননি পাকিস্তানের তিন স্পিনারের কেউ। কিন্তু আজমলের সবচেয়ে বড় অস্ত্রই তো বৈচিত্র্য! সকালের সেশনে অসাধারণ বোলিং করলেন। আক্রমণে এসেছিলেন পঞ্চম বোলার হিসেবে, ১০ বল পর দেখা গেল নামের পাশে ১ রানে ৩ উইকেট! ‘আজমল-জুজু’ নয়, তিন উইকেটই দারুণ বোলিংয়ে। লেংথ না বুঝে পুল খেলতে গিয়ে বোল্ড স্ট্রাউস। অসাধারণ এক দুসরার শিকার বেল, পিটারসেনকে ফ্লাইটে বোকা বানিয়ে এলবিডব্লু। ইংল্যান্ড তখন ৫ উইকেটে ৪৩!
প্রথম ব্রেক থ্রু অবশ্য যথারীতি হাফিজের হাত ধরে। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এলেন, প্রথম ওভারেই কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড অ্যালিস্টার কুক (আরও এক বাঁহাতি!)। আইজাজ চিমার লেগ স্টাম্পে থাকা বলে কট বিহাইন্ড জোনাথন ট্রট। এর পরই স্পিনারদের চেপে বসা। লাঞ্চের সময় তিন স্পিনারের বোলিং বিশ্লেষণ—হাফিজ ৫-৩-৩-১, আজমল ৫-৩-৫-৩, রেহমান ৭-৪-৫-০! সব মিলিয়ে স্পিনে ৪৮.৩ ওভারে ৯ উইকেটে ১১২! আজমলের ৭ উইকেটের ৫টিই এলবিডব্লু, যৌথভাবে যেটি বিশ্বরেকর্ড! এলবিডব্লুর আবেদন হয়েছে আরও অসংখ্যবার। বিকেলে ইংলিশ বোলাররা আবার খুব একটা অস্বস্তিতেই ফেলতে পারেননি হাফিজ-উমর জুটিকে।
ফ্লাওয়ার-স্ট্রাউস জুটির প্রথম টেস্টে জ্যামাইকায় ৫১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। গত তিন বছরে টেস্টে এমন বাজে দিন আর আসেনি ইংলিশদের! তথ্যসূত্র: টেন ক্রিকেট ও ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.