শিকলে বেঁধে দীন শিক্ষা নয় by ফরহাদ জাকারিয়া
দীনি শিক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য খোদাভীতি অর্জনের পরিবর্তে তারা বিপথগামী হচ্ছে। বৃহৎভাবে চিন্তা করলে বলা যায়, তাতে লাভের তুলনায় ক্ষতিই হচ্ছে বেশি দেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসা ছড়িয়ে আছে। দীনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের খবর মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় দেখা যায়। পড়াশোনায় অমনোযোগী কিংবা মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায় এমন শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের চিত্র দেখে বিবেকবান যে কারও মন কেঁদে ওঠে।
শাস্তি হিসেবে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অথবা অন্য উপায়ে শারীরিক নির্যাতনের যে কয়টি খবর পত্রিকায় আসে, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও আরও বেশি ভয়াবহ বলে শিক্ষার্থীদের কাছে শোনা যায়।
এ ধরনের মাদ্রাসাগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সাধারণত কোমলমতি শিশু। অল্প বয়সে তাদের বুদ্ধি-বিবেক যখন কাঁচা তখনই তাদের পাঠানো হয় দীনি জ্ঞান অর্জন করার জন্য। পরকালের মুক্তি লাভের আশায় বাবা-মা তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠান। কিন্তু দেখা যায় সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। আর তাই অনেকেই মাদ্রাসা থেকে পালায়। আর তখনই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
কিন্তু তারা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয় কেন অথবা পালায় কেন_ এ প্রশ্ন কেউ করে না। যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠান তারাও কখনও এর কারণ খতিয়ে দেখেন না। তাদের মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল থাকে, ছেলে হাফেজ বা বড় মাওলানা হলে তাদের বেহেশত নিশ্চিত করবে। এ কারণেই শিক্ষকদের নির্যাতন তারা নিদ্বর্িধায় মেনে নেন।
বাস্তবতা হলো, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের আনন্দপূর্ণ পরিবেশ থাকা উচিত মাদ্রাসাগুলোতে সে ধরনের ব্যবস্থা নেই। তাদের বিনোদন এবং খেলাধুলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তারা যে ধরনের ঘরে থাকে তাও স্বাস্থ্যকর নয়। যে ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় তাও পুষ্টিকর নয়। তাই দেখা যায়, অপুষ্টির কারণে এবং খেলাধুলার সুব্যবস্থা না থাকার কারণে তাদের শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে তাদের মানসিক বিকাশও ঘটে না। আর হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোয় পড়াশোনার ভাষা মাতৃভাষা না হওয়ায় যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে শিক্ষার্থীরা তা আয়ত্ত করতে পারে না। এসব মাদ্রাসায় যারা পড়ান তাদেরও প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কী রকম আচরণ করতে হবে, কী উপায়ে তারা ভালো পড়াশোনা করবে সেটাও তাদের অজ্ঞাত। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে যে আত্মিক সম্পর্ক থাকা উচিত তাও তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে না। এসবের প্রতিকারের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সেসব করা তো হয়ই না বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন।
শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে বিকশিত করা। আর দীনি শিক্ষার উদ্দেশ্য আরও মহৎ_ মানুষের মধ্যে খোদাভীতি জাগ্রত করে দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি হাসিল করা। তাই শিক্ষার পরিবেশ হওয়া উচিত আনন্দপূর্ণ। কিন্তু এ কথাও তো ঠিক, ভীতিকর পরিবেশে শিক্ষা কখনও আনন্দপূর্ণ হয় না। আর আনন্দবর্জিত পরিবেশে অর্জিত শিক্ষা মানুষকে বিকশিত করে না। বরং শিক্ষার প্রতি তার বিরাগ তৈরি করে। তাই এ ধরনের মাদ্রাসাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার পর একজন শিক্ষার্থীর পুরোপুরি পাল্টে যাওয়ার উদাহরণও বিরল নয়।
ছোটদের প্রতি স্নেহপূর্ণ আচরণ করার জন্য পবিত্র হাদিসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ এবং বড়দের সম্মান করে না সে আমার দলভুক্ত নয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শাসন করার সময় শিক্ষকরা যদি এই হাদিসটি মনে রাখেন, তাহলে তাদের আচরণ এত নিষ্ঠুর হওয়ার কথা নয়।
হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই সরকারি কোনো নিয়মনীতিরও তোয়াক্কা করা হয় না। বিধি মোতাবেকও বিদ্যালয়ে শারীরিক নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দেশের হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে যেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার চেয়ে অশিক্ষাই হচ্ছে বেশি। এ ধরনের নির্মম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পঙ্গু হচ্ছে। তাতে দীনি শিক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য, খোদাভীতি অর্জনের পরিবর্তে তারা বিপথগামী হচ্ছে। বৃহৎভাবে চিন্তা করলে বলা যায়, তাতে লাভের তুলনায় ক্ষতিই হচ্ছে বেশি।
fzakariabd@gmail.com
এ ধরনের মাদ্রাসাগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সাধারণত কোমলমতি শিশু। অল্প বয়সে তাদের বুদ্ধি-বিবেক যখন কাঁচা তখনই তাদের পাঠানো হয় দীনি জ্ঞান অর্জন করার জন্য। পরকালের মুক্তি লাভের আশায় বাবা-মা তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠান। কিন্তু দেখা যায় সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। আর তাই অনেকেই মাদ্রাসা থেকে পালায়। আর তখনই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
কিন্তু তারা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয় কেন অথবা পালায় কেন_ এ প্রশ্ন কেউ করে না। যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠান তারাও কখনও এর কারণ খতিয়ে দেখেন না। তাদের মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল থাকে, ছেলে হাফেজ বা বড় মাওলানা হলে তাদের বেহেশত নিশ্চিত করবে। এ কারণেই শিক্ষকদের নির্যাতন তারা নিদ্বর্িধায় মেনে নেন।
বাস্তবতা হলো, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের আনন্দপূর্ণ পরিবেশ থাকা উচিত মাদ্রাসাগুলোতে সে ধরনের ব্যবস্থা নেই। তাদের বিনোদন এবং খেলাধুলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তারা যে ধরনের ঘরে থাকে তাও স্বাস্থ্যকর নয়। যে ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় তাও পুষ্টিকর নয়। তাই দেখা যায়, অপুষ্টির কারণে এবং খেলাধুলার সুব্যবস্থা না থাকার কারণে তাদের শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে তাদের মানসিক বিকাশও ঘটে না। আর হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোয় পড়াশোনার ভাষা মাতৃভাষা না হওয়ায় যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে শিক্ষার্থীরা তা আয়ত্ত করতে পারে না। এসব মাদ্রাসায় যারা পড়ান তাদেরও প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কী রকম আচরণ করতে হবে, কী উপায়ে তারা ভালো পড়াশোনা করবে সেটাও তাদের অজ্ঞাত। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে যে আত্মিক সম্পর্ক থাকা উচিত তাও তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে না। এসবের প্রতিকারের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সেসব করা তো হয়ই না বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন।
শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে বিকশিত করা। আর দীনি শিক্ষার উদ্দেশ্য আরও মহৎ_ মানুষের মধ্যে খোদাভীতি জাগ্রত করে দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি হাসিল করা। তাই শিক্ষার পরিবেশ হওয়া উচিত আনন্দপূর্ণ। কিন্তু এ কথাও তো ঠিক, ভীতিকর পরিবেশে শিক্ষা কখনও আনন্দপূর্ণ হয় না। আর আনন্দবর্জিত পরিবেশে অর্জিত শিক্ষা মানুষকে বিকশিত করে না। বরং শিক্ষার প্রতি তার বিরাগ তৈরি করে। তাই এ ধরনের মাদ্রাসাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার পর একজন শিক্ষার্থীর পুরোপুরি পাল্টে যাওয়ার উদাহরণও বিরল নয়।
ছোটদের প্রতি স্নেহপূর্ণ আচরণ করার জন্য পবিত্র হাদিসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ এবং বড়দের সম্মান করে না সে আমার দলভুক্ত নয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শাসন করার সময় শিক্ষকরা যদি এই হাদিসটি মনে রাখেন, তাহলে তাদের আচরণ এত নিষ্ঠুর হওয়ার কথা নয়।
হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই সরকারি কোনো নিয়মনীতিরও তোয়াক্কা করা হয় না। বিধি মোতাবেকও বিদ্যালয়ে শারীরিক নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দেশের হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে যেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার চেয়ে অশিক্ষাই হচ্ছে বেশি। এ ধরনের নির্মম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পঙ্গু হচ্ছে। তাতে দীনি শিক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য, খোদাভীতি অর্জনের পরিবর্তে তারা বিপথগামী হচ্ছে। বৃহৎভাবে চিন্তা করলে বলা যায়, তাতে লাভের তুলনায় ক্ষতিই হচ্ছে বেশি।
fzakariabd@gmail.com
No comments