দুর্গাপূজায় এক টুকরো মশালডাঙ্গা by অমর সাহা
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান
ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আর পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ধর্মীয় উৎসবও এই
দুর্গোৎসব। প্রতিবছরই এই দুর্গোৎসবকে ঘিরে মেতে ওঠে কলকাতাসহ গোটা
পশ্চিমবঙ্গ। তৈরি হয় নানা ভাবনার নানা পূজামণ্ডপ, নানা ধাঁচ আর
বৈচিত্র্যের প্রতিমা। চলে দুর্গাপ্রতিমা আর পূজামণ্ডপ তৈরিতে থিমের লড়াই।
লড়াই চলে সাবেকি পূজার সঙ্গে আধুনিক পূজারও।
প্রতিবছরই এই লড়াইয়ে মেতে ওঠে কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ। শুধু কি তাই, মোটকথা ভারতে যেখানে বাঙালির বাস, সেখানেই দেবীদুর্গার আরাধনা। ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, আসাম, মেঘালয়, ছত্তিশগড়, বিহার, মহারাষ্ট্র—সর্বত্রই যেন চলে এই দেবীর আরাধনা। থিমের লড়াই। কারণ, এসব রাজ্যে রয়েছে প্রচুর বাঙালির বাস।
এবার কলকাতার পূজায় দুটি পূজামণ্ডপ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। এর একটি ভারতের ভূখণ্ডে থাকা বাংলাদেশের সাবেক একটি ছিটমহলের জীবনধারাকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর অন্যটি এবার পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে নতুন ভাবনার সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ কলকাতার কসবার শক্তিসংঘ পল্লীবাসী দুর্গোৎসব কমিটি এবারের পূজামণ্ডপ করেছে কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার মধ্য মশালডাঙ্গা ছিটমহলের আদলে। ভারতের ভূখণ্ডে থাকা এই মধ্য মশালডাঙ্গা ছিটমহল ছিল বাংলাদেশের। গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পর মশালডাঙ্গা ছিটমহল অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় ভারতের ভূখণ্ডে। আর সেই এক টুকরো মশালডাঙ্গাকে এবার তুলে আনা হয়েছে কসবার শক্তিসংঘের পূজামণ্ডপে। একেবারে মশালডাঙ্গা ছিটমহলই যেন এখানে ঠাঁই পেয়েছে। সেই খড় ও বাঁশের তৈরি বাড়ি। বাঁশঝাড়, কলাবাগান, গোশালা, বাড়ির উঠোন—কী নেই এখানে। রয়েছে ছিটমহলের ঐতিহাসিক শিবমন্দিরও। হঠাৎ এই পূজামণ্ডপে ঢুকলে মনে হবে যেন আমরা চলে এসেছি কোনো একটি ছোট্ট গ্রামে। শুধু কি তাই, উদ্যোক্তারা এখানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে শোনাচ্ছে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের নানা জ্বালা-যন্ত্রণার কথা। আর এই এক টুকরো মশালডাঙ্গাকে দেখার জন্য ছুটে আসছে কলকাতার মানুষ।
আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও উঁচু দুর্গাপ্রতিমা গড়ে এবার রেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের দুর্গোৎসব কমিটি। বিশাল মাপের দুর্গা। মা দুর্গার মুখমণ্ডলই হলো ১২ ফুট লম্বা। ভাবা যায়! তবে পূজা কমিটির একজন বলেছেন, ৭০ থেকে ৮০ ফুট উঁচু এই দুর্গাপ্রতিমা। পূজা কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত কুমার বলেছেন, মণ্ডপ করা হয়েছে ১৬২ ফুট লম্বা ও ৯০ ফুট চওড়ার। দেবীকে দর্শন করা যাচ্ছে ৫০ ফুট দূর থেকে। এই পূজার সহযোগিতায় রয়েছে একটি সিমেন্ট কোম্পানি।
কসবা বা দেশপ্রিয় পার্কই নয়; এবার নানা ভাবনা আর নানা সৃষ্টিধর্মী মণ্ডপ এবং প্রতিমা তৈরি হয়েছে কলকাতাজুড়ে। দক্ষিণ কলকাতার বেহালার নতুন দল পূজা কমিটি এবার মণ্ডপ করেছে সেই পৌরাণিক কাহিনি সমুদ্র মন্থনের ধাঁচে। দেখানো হয়েছে অমৃতভান্ডের উত্থানকে। নিমতলা সর্বজনীন পূজা কমিটি পূজামণ্ডপে এবার এনেছে শ্রাবণধারা। বৃষ্টি। বৃষ্টিভেজা এক নতুন ভাবনার পূজামণ্ডপ। সোদপুরের শহীদ কলোনির পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে নেপালের সেই ভূমিকম্পের ধাঁচে। আর সোদপুরের উদয়ন সংঘ মন্দির নির্মাণ করেছে পৌরাণিকের হস্তিনাপুর ও কুরুক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে। এখানেই দেখানো হচ্ছে অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, কুরুপাণ্ডবদের পাশা খেলার দৃশ্যও। কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কয়ারে এবার পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে ঘুরন্ত মণ্ডপের ধাঁচে। কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের মণ্ডপ এবার ‘উড়ন্ত চাকি, ঘুরন্ত প্যান্ডেল’। কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কের পূজার ভাবনা এবার দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গল সাফারিকে ঘিরে। আমেরিকার পার্লামেন্ট ভবনের ধাঁচে এবার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে শিয়ালদহ অ্যাথলেটিক ক্লাবের, আর কলেজ স্কয়ার সর্বজনীন তাদের মণ্ডপ তৈরি করেছে হাঙ্গেরির পার্লামেন্টের আদলে। বারাসাতের চড়কডাঙ্গা পূজা কমিটি মণ্ডপ তৈরি করেছে থাইল্যান্ডের লোটাস টেম্পলের আদলে। আর্য সমিতি মণ্ডপ তৈরি করেছে বাউলদের বাদ্যযন্ত্র দিয়ে।
সেই গঙ্গা, যমুনা, কৃষ্ণা, গোদাবরী ও সরস্বতী—এই পঞ্চ নদীর সঙ্গম তুলে আনা হয়েছে খিদিরপুর পল্লী সমিতির দুর্গোৎসব। রাজডাঙ্গা নব উদয় সংঘ মন্দির তৈরি করেছে ইস্পাতের প্লেট দিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশকে ভাবনা করে মণ্ডপ তৈরি করেছে জগৎপুর জ্ঞানেন্দ্র পল্লীর অধিবাসীরা। আর দক্ষিণ কলকাতার সুরুচি সংঘ এবার পূজার থিম করেছে দক্ষিণ ভারতের তামিল স্থাপত্যকে নিয়ে। দাসপাড়া সর্বজনীন পূজার থিম এবার ‘লঙ্কেশ্বরের নরেশ’ বা লঙ্কার রাবণ। উত্তর কলকাতার পাতিপুকুর নতুন পল্লীর পূজামণ্ডপের এবারের ভাবনা তেভাগা আন্দোলন থেকে তেলেঙ্গানা আন্দোলন। আরও একটি আকর্ষণীয় পূজামণ্ডপ তৈরি করেছে গাঙ্গুলীবাগান রবীন্দ্র পল্লী দুর্গোৎসব কমিটি। এখানে বিশ্বের সেই সপ্তাশ্চর্যকে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের তাজমহল থেকে পেরুর ইনকা সভ্যতা, ব্রাজিলের আকাশছোঁয়া যিশু, জর্ডানের পেট্রা, ইতালির কলোসিয়াম, মেক্সিকোর চিচেন ইতজা আর চীনের ঐতিহাসিক প্রাচীর। এক অবিভক্ত বাংলার এক টুকরো ছবি তুলে এনেছে হরিদেবপুর বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব। অবিভক্ত বাংলার সেই মেলবন্ধনের ছবিকে তুলে ধরেছে উদ্যাপন কমিটি। আবার বৈষ্ণবঘাটায় ট্রামকে ভাবনা নিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে চিৎপুরের যাত্রা শুরু সংঘ। এখানেই তুলে ধরা হয়েছে চিৎপুরের যাত্রাপালার নানা দৃশ্যকে। উত্তরাখন্ডের সেই ঐতিহাসিক মন্দির কেদারনাথকে দেখা যাবে বারাসাতের কল্যাণকৃত পূজামণ্ডপে। কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর ভাবনা নিয়ে মেয়েবেলার গল্পকাহিনি নিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে কলকাতার কাশী বোস লেনের পূজা কমিটি। কলকাতার বাদামতলার আষাঢ় সংঘ মণ্ডপ তৈরি করেছে গুজরাটের সেই ডান্ডিয়া উৎসবকে সঙ্গী করে। আহিরীটোলার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে রুটি বেলার বেলন আর বসার পিঁড়ি দিয়ে। আর কলকাতার বিধাননগরের এফ ই বোলোকের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে দিল্লির বাহাই লোটাস টেম্পলের আদলে।
সত্যি কথা কি, এমন ধরনের নানা ভাবনা আর চিন্তা নিয়ে কলকাতাসহ গোটা ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছে দুর্গামণ্ডপ। বৈচিত্র্য আনা হয়েছে যেমন মণ্ডপ নির্মাণে, ঠিক তেমনি প্রতিমা নির্মাণ ও সাজসজ্জায়ও।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
প্রতিবছরই এই লড়াইয়ে মেতে ওঠে কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ। শুধু কি তাই, মোটকথা ভারতে যেখানে বাঙালির বাস, সেখানেই দেবীদুর্গার আরাধনা। ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, আসাম, মেঘালয়, ছত্তিশগড়, বিহার, মহারাষ্ট্র—সর্বত্রই যেন চলে এই দেবীর আরাধনা। থিমের লড়াই। কারণ, এসব রাজ্যে রয়েছে প্রচুর বাঙালির বাস।
এবার কলকাতার পূজায় দুটি পূজামণ্ডপ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। এর একটি ভারতের ভূখণ্ডে থাকা বাংলাদেশের সাবেক একটি ছিটমহলের জীবনধারাকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর অন্যটি এবার পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে নতুন ভাবনার সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ কলকাতার কসবার শক্তিসংঘ পল্লীবাসী দুর্গোৎসব কমিটি এবারের পূজামণ্ডপ করেছে কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার মধ্য মশালডাঙ্গা ছিটমহলের আদলে। ভারতের ভূখণ্ডে থাকা এই মধ্য মশালডাঙ্গা ছিটমহল ছিল বাংলাদেশের। গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পর মশালডাঙ্গা ছিটমহল অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় ভারতের ভূখণ্ডে। আর সেই এক টুকরো মশালডাঙ্গাকে এবার তুলে আনা হয়েছে কসবার শক্তিসংঘের পূজামণ্ডপে। একেবারে মশালডাঙ্গা ছিটমহলই যেন এখানে ঠাঁই পেয়েছে। সেই খড় ও বাঁশের তৈরি বাড়ি। বাঁশঝাড়, কলাবাগান, গোশালা, বাড়ির উঠোন—কী নেই এখানে। রয়েছে ছিটমহলের ঐতিহাসিক শিবমন্দিরও। হঠাৎ এই পূজামণ্ডপে ঢুকলে মনে হবে যেন আমরা চলে এসেছি কোনো একটি ছোট্ট গ্রামে। শুধু কি তাই, উদ্যোক্তারা এখানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে শোনাচ্ছে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের নানা জ্বালা-যন্ত্রণার কথা। আর এই এক টুকরো মশালডাঙ্গাকে দেখার জন্য ছুটে আসছে কলকাতার মানুষ।
আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও উঁচু দুর্গাপ্রতিমা গড়ে এবার রেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের দুর্গোৎসব কমিটি। বিশাল মাপের দুর্গা। মা দুর্গার মুখমণ্ডলই হলো ১২ ফুট লম্বা। ভাবা যায়! তবে পূজা কমিটির একজন বলেছেন, ৭০ থেকে ৮০ ফুট উঁচু এই দুর্গাপ্রতিমা। পূজা কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত কুমার বলেছেন, মণ্ডপ করা হয়েছে ১৬২ ফুট লম্বা ও ৯০ ফুট চওড়ার। দেবীকে দর্শন করা যাচ্ছে ৫০ ফুট দূর থেকে। এই পূজার সহযোগিতায় রয়েছে একটি সিমেন্ট কোম্পানি।
কসবা বা দেশপ্রিয় পার্কই নয়; এবার নানা ভাবনা আর নানা সৃষ্টিধর্মী মণ্ডপ এবং প্রতিমা তৈরি হয়েছে কলকাতাজুড়ে। দক্ষিণ কলকাতার বেহালার নতুন দল পূজা কমিটি এবার মণ্ডপ করেছে সেই পৌরাণিক কাহিনি সমুদ্র মন্থনের ধাঁচে। দেখানো হয়েছে অমৃতভান্ডের উত্থানকে। নিমতলা সর্বজনীন পূজা কমিটি পূজামণ্ডপে এবার এনেছে শ্রাবণধারা। বৃষ্টি। বৃষ্টিভেজা এক নতুন ভাবনার পূজামণ্ডপ। সোদপুরের শহীদ কলোনির পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে নেপালের সেই ভূমিকম্পের ধাঁচে। আর সোদপুরের উদয়ন সংঘ মন্দির নির্মাণ করেছে পৌরাণিকের হস্তিনাপুর ও কুরুক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে। এখানেই দেখানো হচ্ছে অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, কুরুপাণ্ডবদের পাশা খেলার দৃশ্যও। কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কয়ারে এবার পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে ঘুরন্ত মণ্ডপের ধাঁচে। কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের মণ্ডপ এবার ‘উড়ন্ত চাকি, ঘুরন্ত প্যান্ডেল’। কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কের পূজার ভাবনা এবার দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গল সাফারিকে ঘিরে। আমেরিকার পার্লামেন্ট ভবনের ধাঁচে এবার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে শিয়ালদহ অ্যাথলেটিক ক্লাবের, আর কলেজ স্কয়ার সর্বজনীন তাদের মণ্ডপ তৈরি করেছে হাঙ্গেরির পার্লামেন্টের আদলে। বারাসাতের চড়কডাঙ্গা পূজা কমিটি মণ্ডপ তৈরি করেছে থাইল্যান্ডের লোটাস টেম্পলের আদলে। আর্য সমিতি মণ্ডপ তৈরি করেছে বাউলদের বাদ্যযন্ত্র দিয়ে।
সেই গঙ্গা, যমুনা, কৃষ্ণা, গোদাবরী ও সরস্বতী—এই পঞ্চ নদীর সঙ্গম তুলে আনা হয়েছে খিদিরপুর পল্লী সমিতির দুর্গোৎসব। রাজডাঙ্গা নব উদয় সংঘ মন্দির তৈরি করেছে ইস্পাতের প্লেট দিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশকে ভাবনা করে মণ্ডপ তৈরি করেছে জগৎপুর জ্ঞানেন্দ্র পল্লীর অধিবাসীরা। আর দক্ষিণ কলকাতার সুরুচি সংঘ এবার পূজার থিম করেছে দক্ষিণ ভারতের তামিল স্থাপত্যকে নিয়ে। দাসপাড়া সর্বজনীন পূজার থিম এবার ‘লঙ্কেশ্বরের নরেশ’ বা লঙ্কার রাবণ। উত্তর কলকাতার পাতিপুকুর নতুন পল্লীর পূজামণ্ডপের এবারের ভাবনা তেভাগা আন্দোলন থেকে তেলেঙ্গানা আন্দোলন। আরও একটি আকর্ষণীয় পূজামণ্ডপ তৈরি করেছে গাঙ্গুলীবাগান রবীন্দ্র পল্লী দুর্গোৎসব কমিটি। এখানে বিশ্বের সেই সপ্তাশ্চর্যকে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের তাজমহল থেকে পেরুর ইনকা সভ্যতা, ব্রাজিলের আকাশছোঁয়া যিশু, জর্ডানের পেট্রা, ইতালির কলোসিয়াম, মেক্সিকোর চিচেন ইতজা আর চীনের ঐতিহাসিক প্রাচীর। এক অবিভক্ত বাংলার এক টুকরো ছবি তুলে এনেছে হরিদেবপুর বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব। অবিভক্ত বাংলার সেই মেলবন্ধনের ছবিকে তুলে ধরেছে উদ্যাপন কমিটি। আবার বৈষ্ণবঘাটায় ট্রামকে ভাবনা নিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে চিৎপুরের যাত্রা শুরু সংঘ। এখানেই তুলে ধরা হয়েছে চিৎপুরের যাত্রাপালার নানা দৃশ্যকে। উত্তরাখন্ডের সেই ঐতিহাসিক মন্দির কেদারনাথকে দেখা যাবে বারাসাতের কল্যাণকৃত পূজামণ্ডপে। কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর ভাবনা নিয়ে মেয়েবেলার গল্পকাহিনি নিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে কলকাতার কাশী বোস লেনের পূজা কমিটি। কলকাতার বাদামতলার আষাঢ় সংঘ মণ্ডপ তৈরি করেছে গুজরাটের সেই ডান্ডিয়া উৎসবকে সঙ্গী করে। আহিরীটোলার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে রুটি বেলার বেলন আর বসার পিঁড়ি দিয়ে। আর কলকাতার বিধাননগরের এফ ই বোলোকের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে দিল্লির বাহাই লোটাস টেম্পলের আদলে।
সত্যি কথা কি, এমন ধরনের নানা ভাবনা আর চিন্তা নিয়ে কলকাতাসহ গোটা ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছে দুর্গামণ্ডপ। বৈচিত্র্য আনা হয়েছে যেমন মণ্ডপ নির্মাণে, ঠিক তেমনি প্রতিমা নির্মাণ ও সাজসজ্জায়ও।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments