ব্যাংকে অলস ৩০ হাজার কোটি টাকা by হামিদ বিশ্বাস
খুঁড়িয়ে
চলছে বিনিয়োগ। উল্লেখযোগ্য কোন গতি নেই। এক মাসে বাড়ে, অন্য মাসে কমে।
বাড়লেও পরিমাণ খুব সামান্য। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের অভাবে বর্তমানে ব্যাংকে
প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য জমা পড়ে আছে।
এরইমধ্যে একেবারে অলস পড়ে আছে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। তবে এ টাকা যাতে
অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে না পারে, সেজন্য গত ২৩শে
জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হারও (সিআরআর)
বাড়িয়েছে। সিআরআর বাড়ানোর পর থেকে দৈনিক গড়ে ৩ হাজার ২১৪ কোটি টাকা বেশি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এরপরও ব্যাংকগুলোর কাছে অলস অর্থ
থাকায় বিভিন্ন ব্যাংক দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা রিভার্স
রেপোতে খাটাচ্ছে। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষেও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ
কম ছিল, প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে এর আগের দুই অর্থবছরে
২০১১-১২ সালে ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে হয়েছিল ২৫ দশমিক ৮৪
শতাংশ।
এরই প্রভাবে কমছে সুদের হার। মেয়াদি ও স্থায়ী আমানতের সুদহার কমিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সমপ্রতি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) বিভিন্ন মেয়াদি ও স্থায়ী আমানতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার কমিয়েছে। সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক নতুন সুদহার ১লা অক্টোবর থেকে কার্যকর করেছে। ১১ই অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএলের নতুন সুদহার। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঋণের সুদহার কমানোর লক্ষ্যে আমানতের সুদহার কমানো হয়েছে।
ব্যাংকগুলো সর্বশেষ ৩ মাস এবং তার বেশি তবে ৬ মাসের কম মেয়াদি আমানতের সুদহার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করে। ৬ মাস বা তার বেশি তবে এক বছরের কম সময়ের আমানতের সুদহার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং এক বছর বা তার বেশি সময়ের আমানতের সুদ হার ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আর বিশেষ আমানতের (স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট-এসএনডি) বেলায় আমানতের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার কম হলে সুদহার ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা এর আগে ছিল ৫ শতাংশ। তবে ১০ কোটি টাকার বেশি তবে ১০০ কোটি টাকার কম হলে সেই আমানতের সুদহার ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এই হার ছিল ৫ শতাংশ। ১০০ কোটি টাকার বেশি আমানত হলে সেক্ষেত্রে সুদহার আগের মতো অর্থাৎ ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়ী আমানতের সুদহারও ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়ে না। কিন্তু বিনিয়োগ বর্তমানে স্থবির। আবার অধিক খেলাপি ঋণের কারণে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে আমানতে সুদের হার কমছে না। যদিও সরকারি ব্যাংকগুলোতে কিছুটা কমছে। কারণ তাদের ব্যাকআপ আছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকে টাকা জমছে। বেসরকারি পর্যায়ে টাকা খরচের ক্ষেত্র কিংবা পরিবেশ এখনও পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন তিনি।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, বর্তমানে এক ধরনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বিনিয়োগ কিছুটা স্থবির। তবে এটি সাময়িক। সরকারের বড় প্রকল্পগুলো গতি পেলে সমস্যা আর থাকবে না। সব ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। আমানতের সুদহার কমানোর মাধ্যমে প্রধানত ঋণের সুদ হার কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ঋণ গ্রহণে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পুরো ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য জমা আছে। এর মধ্যে বাজারে (বেসরকারি খাতে) বিনিয়োগের সুযোগ না পেয়ে সরকারের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর। আর একেবারে অলস পড়ে আছে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। দেশে ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কাজ করছে। এসব ব্যাংকের সাড়ে ৯ হাজার শাখা রয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন এই ব্যাংকগুলোর সাড়ে ৩ হাজারের বেশি শাখা রয়েছে সারা দেশে। অতিরিক্ত তারল্য থাকার কারণে গত কয়েক মাস ধরে পুরো ব্যাংকখাতে আমানতের সুদ হার কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক আমানতের ভারিত গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসে মে মাসে। ওই মাসে গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে গড় সুদহার। জুন মাসে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, জুলাই মাসে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও আগস্ট মাসে তা আরও কমে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ঋণের সুদ হারও কমেছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা বাড়লেও নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে সরকারি খাত। চলতি বছরের আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে এ সময়ে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্বক (-) ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গত অর্থবছর শেষে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি এক দশমিক শূন্য সাত শতাংশ হলেও চলতি অর্থবছর তা কমে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি না। মুদ্রানীতিতে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হলে তা আরও অনেক বেশি বাড়াতে হবে। ঋণপ্রবাহ কিছুটা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তো ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকাল হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। এ পরিস্থিতিতে তারা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসাবান্ধব দেশ। এদেশের ব্যবসায়ীরা যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ব্যবসা করবেন। এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক। তাই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করলে আগামীতে ঋণপ্রবাহ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। তবে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের আগস্টে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহের স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চলতি বছরের আগস্টে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯ হাজার ৫৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া আগস্ট মাস শেষে সরকারি ঋণ ছাড়া অন্যসব সংস্থায় ১৫ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ হাজার ৬৪৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এরই প্রভাবে কমছে সুদের হার। মেয়াদি ও স্থায়ী আমানতের সুদহার কমিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সমপ্রতি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) বিভিন্ন মেয়াদি ও স্থায়ী আমানতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার কমিয়েছে। সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক নতুন সুদহার ১লা অক্টোবর থেকে কার্যকর করেছে। ১১ই অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএলের নতুন সুদহার। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঋণের সুদহার কমানোর লক্ষ্যে আমানতের সুদহার কমানো হয়েছে।
ব্যাংকগুলো সর্বশেষ ৩ মাস এবং তার বেশি তবে ৬ মাসের কম মেয়াদি আমানতের সুদহার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করে। ৬ মাস বা তার বেশি তবে এক বছরের কম সময়ের আমানতের সুদহার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং এক বছর বা তার বেশি সময়ের আমানতের সুদ হার ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আর বিশেষ আমানতের (স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট-এসএনডি) বেলায় আমানতের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার কম হলে সুদহার ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা এর আগে ছিল ৫ শতাংশ। তবে ১০ কোটি টাকার বেশি তবে ১০০ কোটি টাকার কম হলে সেই আমানতের সুদহার ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এই হার ছিল ৫ শতাংশ। ১০০ কোটি টাকার বেশি আমানত হলে সেক্ষেত্রে সুদহার আগের মতো অর্থাৎ ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়ী আমানতের সুদহারও ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়ে না। কিন্তু বিনিয়োগ বর্তমানে স্থবির। আবার অধিক খেলাপি ঋণের কারণে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে আমানতে সুদের হার কমছে না। যদিও সরকারি ব্যাংকগুলোতে কিছুটা কমছে। কারণ তাদের ব্যাকআপ আছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকে টাকা জমছে। বেসরকারি পর্যায়ে টাকা খরচের ক্ষেত্র কিংবা পরিবেশ এখনও পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন তিনি।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, বর্তমানে এক ধরনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বিনিয়োগ কিছুটা স্থবির। তবে এটি সাময়িক। সরকারের বড় প্রকল্পগুলো গতি পেলে সমস্যা আর থাকবে না। সব ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। আমানতের সুদহার কমানোর মাধ্যমে প্রধানত ঋণের সুদ হার কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ঋণ গ্রহণে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পুরো ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য জমা আছে। এর মধ্যে বাজারে (বেসরকারি খাতে) বিনিয়োগের সুযোগ না পেয়ে সরকারের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর। আর একেবারে অলস পড়ে আছে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। দেশে ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কাজ করছে। এসব ব্যাংকের সাড়ে ৯ হাজার শাখা রয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন এই ব্যাংকগুলোর সাড়ে ৩ হাজারের বেশি শাখা রয়েছে সারা দেশে। অতিরিক্ত তারল্য থাকার কারণে গত কয়েক মাস ধরে পুরো ব্যাংকখাতে আমানতের সুদ হার কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক আমানতের ভারিত গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসে মে মাসে। ওই মাসে গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে গড় সুদহার। জুন মাসে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, জুলাই মাসে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও আগস্ট মাসে তা আরও কমে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ঋণের সুদ হারও কমেছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা বাড়লেও নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে সরকারি খাত। চলতি বছরের আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে এ সময়ে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্বক (-) ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গত অর্থবছর শেষে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি এক দশমিক শূন্য সাত শতাংশ হলেও চলতি অর্থবছর তা কমে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি না। মুদ্রানীতিতে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হলে তা আরও অনেক বেশি বাড়াতে হবে। ঋণপ্রবাহ কিছুটা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তো ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকাল হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। এ পরিস্থিতিতে তারা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসাবান্ধব দেশ। এদেশের ব্যবসায়ীরা যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ব্যবসা করবেন। এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক। তাই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করলে আগামীতে ঋণপ্রবাহ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। তবে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের আগস্টে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহের স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চলতি বছরের আগস্টে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯ হাজার ৫৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া আগস্ট মাস শেষে সরকারি ঋণ ছাড়া অন্যসব সংস্থায় ১৫ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ হাজার ৬৪৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
No comments