গুজবে প্রাণ গেল তিন প্রতিবন্ধীর by গোলাম মর্তুজা ও মাসুদ রানা
ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মর্জিনা আক্তার (৩৫)। তাঁর সামনের পাটিতে দাঁত ছিল না। কথা বলতেন অস্পষ্ট উচ্চারণে। নাম-ঠিকানাও মনে রাখতে পারতেন না। থাকতেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চাচাতো বোনের বাসায়। ছেলেধরা সন্দেহে গত শনিবার এই নারীকে পিটিয়ে মেরে ফেলে গ্রামবাসী।
বাঁচাতে গিয়ে আহত হন তাঁর চাচাতো বোনও। ঘটনার এক দিন পর গত সোমবার কোনাবাড়ীতে পিটিয়ে মারা হয় নারীসহ আরও দুজনকে।
গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের কোনাবাড়ী, বাইমাইল, কালিয়াকৈর এলাকায় খোঁজ নিয়ে কারও শিশু হারানোর খবর মেলেনি। পুলিশের কাছেও নিখোঁজের কোনো তথ্য নেই। কেউ শিশু চুরির সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। মুখে মুখে ছড়িয়ে গুজব ডালপালা মেলেছে। আর এই গুজবই প্রাণ নিয়েছে তিনজনের। গুজব ছড়ানো বন্ধে এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে পুলিশ।
মর্জিনার চাচাতো বোন জ্যোৎস্না আক্তারের বাসা কালিয়াকৈরের খন্দকারবাড়ি এলাকায়। গতকাল সেখানে কথা হয় জ্যোৎস্নার স্বামী মো. শামীমের সঙ্গে। শামীম একটি কারখানার নিরাপত্তাকর্মী। তিনি প্রথম আলোকে জানান, কুড়িগ্রামের গ্রামের বাড়িতে মর্জিনাও তাঁদের সঙ্গে থাকতেন। তিন বছর আগে এই দম্পতি ঢাকায় এসে দুটি কারখানায় কাজ নেন। আর দেড় মাস আগে আসেন মর্জিনা। মাঝেমধ্যে তিনি আশপাশের গ্রামে ভিক্ষা করতে যেতেন।
খন্দকারবাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সিনাবহ গ্রাম। সেখানে গত শনিবার পিটিয়ে মারা হয় মর্জিনাকে। গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষ জানালেন, জামাল উদ্দীন নামে মাটিকাটা এক শ্রমিকের ঘরে ঢুকেছিলেন মর্জিনা। তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে মর্জিনাকে দেখে ভয় পেয়ে ছেলেধরা বলে চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। গতকাল জামাল উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ময়না অসুস্থ।
স্থানীয় দলিল উদ্দীন প্রথম আলোকে জানান, শনিবার সকাল নয়টার দিকে বাজারে যাওয়ার সময় ময়নার চিৎকার শোনেন। তিনি আরেকজনকে নিয়ে জামালের বাড়ির শৌচাগার থেকে মর্জিনাকে খুঁজে বের করেন। ততক্ষণে ময়নার চিৎকারে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে। তাঁরা মর্জিনাকে ধরে পেটাতে শুরু করেন।
জনতার সামনে মর্জিনাকে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এই নারী কোনোটিরই জবাব দিতে পারেননি। ভিড়ের ভেতর থেকে আবারও ‘মার মার, মাইরা ফালা’ বলে আবারও হুংকার আসে। এ সময় ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠেন, তিনি মর্জিনাকে চেনেন। তাঁকে মর্জিনার অভিভাবককে ডেকে আনতে বলা হয়। কিন্তু ভিড় ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। তখন স্থানীয় কালাম, আজাদ, জসীমসহ কয়েকজন ওই নারীকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ লোকজনকে আশ্বস্ত করতে না পেরে একপর্যায়ে তাঁরা মর্জিনাকে দলিল উদ্দীনের বাসায় নিয়ে যান। পিছে পিছে যায় গ্রামের মানুষ। ঘরের ভেতরে মর্জিনাকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা দেওয়া হয়। তখন আরও লোক জমতে শুরু করে।
দলিল উদ্দীন আরও জানান, একপর্যায়ে লোকজন তাঁর বাড়িতে লাঠি নিয়ে হামলার চেষ্টা করে। স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল কুদ্দুস ঘটনাস্থলে এলে তাঁর ওপরও চড়াও হয় লোকজন। বেলা একটার দিকে খবর পেয়ে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম পাঁচজন পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় মর্জিনার বোন জ্যোৎস্না তাঁকে বাঁচাতে এলে তাঁকেও মারধর করে লোকজন। তাঁকেও ঘরে ঢুকিয়ে রাখা হয়। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ মর্জিনাকে ঘর থেকে বের করে গাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে লোকজন পুলিশের ওপর চড়াও হয়। মর্জিনাকে ছিনিয়ে নিয়ে পেটাতে থাকে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ মর্জিনার বোনকে জনতার হাত থেকে বাঁচিয়ে গাড়িতে নিয়ে যায়।
এসআই সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, শত শত উত্তেজিত লোকের মধ্যে পুলিশের কিছু করার ছিল না। থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আসার আগেই জনতা হামলা চালিয়ে ওই নারীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ ৪০০-৫০০ লোকের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছে। মুঠোফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
গান গাওয়া সেই পাগল: সোমবার সকালে গাজীপুর সদরের কোনাবাড়ীর বাইমাইলে পিটিয়ে মারা লোকটির পরিচয় মেলেনি এখনো। রোববার রাতে স্থানীয় খালেক ভান্ডারীর বাড়িতে (ভান্ডারী শরিফ বলে পরিচিত) ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠানে লোকটিকে প্রথম দেখা যায়। সারা রাত গান শেষে ভোরের দিকে লোকটিকে ছেলেধরা সন্দেহে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কের পাশে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও জবাই করে মেরে ফেলে স্থানীয় লোকজন।
খালেক ভান্ডারীর স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম জানান, রাত নয়টার দিকে তাঁদের বাড়িতে গান শুরু হয়। রাত দুইটার দিকে তিনি ওই লোকটিকে ডাবগাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখেন। লোকটি মাথা ঝাঁকিয়ে গান গাচ্ছিলেন। আর মাঝেমধ্যে ওপরের দিকে তাকিয়ে ফুঁ দিচ্ছিলেন। তিনি গায়ের শার্ট খুলছিলেন আর পরছিলেন। তিনি (জ্যোৎস্না বেগম) লোকটিকে খাবার দেন। এ সময় লোকটি পলিথিনের একটি পুঁটলি জ্যোৎস্নার হাতে দিয়ে বলেন, ‘নিয়ে যা।’ পুঁটলিতে কিছু ছোট মাছ, শাক, বরই, কয়েকটি আঙুর আর লাল সুতো বাঁধা একটি চাবি ছিল। জ্যোৎস্না পুঁটলি থেকে চাবিটি বের করে আবার লোকটির হতে দেন। লোকটি তাঁর কাছে একটি পাঞ্জাবি চান। জ্যোৎস্না তাঁর স্বামীর একটি পুরোনো পাঞ্জাবি দেন।
জ্যোৎস্না বলেন, ঘুমাতে যাওয়ার পরে বাইরে থেকে কিছু লোক হইচই করছিল। সকালে উঠে তিনি শোনেন লোকজন লোকটিকে মেরে ফেলেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভান্ডারীর বাড়ি থেকে সরু গলি পেরিয়ে হুমায়ুন কবীরের বাড়িসংলগ্ন একটি মাঠে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। পরে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় আধা কিলোমিটার দূরের মহাসড়কের পাশে। মাঠে পড়ে ছিল তাঁর পরনের শার্ট আর জ্যোৎস্নার দেওয়া পাঞ্জাবি। মহসড়কে নিয়ে গেলে লোকজনের সঙ্গে যোগ দেন পাশের কারখানার শ্রমিকেরা। তাঁরা লোকটিকে পিটিয়ে আর চাকু দিয়ে গলা কেটে মেরে ফেলে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, লোকটির কাছেই চাকুটি ছিল। তবে জ্যোৎস্না বলেছেন, লোকটি গানের তালে তালে কাপড় খুলে ফেলেছিলেন। তাঁর কাছে কোনো চাকু তিনি দেখেননি।
সেই নারীরও পরিচয় মেলেনি: এই ঘটনার আধঘণ্টা পরেই এক কিলোমিটার দূরে কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে ছেলেধরা সন্দেহে ভাসমান এক নারীকে পিটিয়ে মারে এলাকাবাসী। মানসিক প্রতিবন্ধী এই নারী ওই এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। রাতে দোকানের সামনে বা রাস্তার পাশে ঘুমাতেন। ওই নারীকে পিটিয়ে মেরে শরীরে আগুন দেওয়া হয়।
নিছক গুজব: জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম জানান, তাঁদের কাছে শিশু নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে গত দুই মাসে কেউ অভিযোগ করেননি। তবুও গুজব ছড়াচ্ছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হবিবুর রহমান জানান, গতকাল তিনি সিনাবহ এলাকায় গিয়ে লোকজনকে গুজবে কান না দেওয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন। গণপিটুনিতে আহত জ্যোৎস্নার চিকিৎসার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের কোনাবাড়ী, বাইমাইল, কালিয়াকৈর এলাকায় খোঁজ নিয়ে কারও শিশু হারানোর খবর মেলেনি। পুলিশের কাছেও নিখোঁজের কোনো তথ্য নেই। কেউ শিশু চুরির সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। মুখে মুখে ছড়িয়ে গুজব ডালপালা মেলেছে। আর এই গুজবই প্রাণ নিয়েছে তিনজনের। গুজব ছড়ানো বন্ধে এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে পুলিশ।
মর্জিনার চাচাতো বোন জ্যোৎস্না আক্তারের বাসা কালিয়াকৈরের খন্দকারবাড়ি এলাকায়। গতকাল সেখানে কথা হয় জ্যোৎস্নার স্বামী মো. শামীমের সঙ্গে। শামীম একটি কারখানার নিরাপত্তাকর্মী। তিনি প্রথম আলোকে জানান, কুড়িগ্রামের গ্রামের বাড়িতে মর্জিনাও তাঁদের সঙ্গে থাকতেন। তিন বছর আগে এই দম্পতি ঢাকায় এসে দুটি কারখানায় কাজ নেন। আর দেড় মাস আগে আসেন মর্জিনা। মাঝেমধ্যে তিনি আশপাশের গ্রামে ভিক্ষা করতে যেতেন।
খন্দকারবাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সিনাবহ গ্রাম। সেখানে গত শনিবার পিটিয়ে মারা হয় মর্জিনাকে। গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষ জানালেন, জামাল উদ্দীন নামে মাটিকাটা এক শ্রমিকের ঘরে ঢুকেছিলেন মর্জিনা। তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে মর্জিনাকে দেখে ভয় পেয়ে ছেলেধরা বলে চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। গতকাল জামাল উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ময়না অসুস্থ।
স্থানীয় দলিল উদ্দীন প্রথম আলোকে জানান, শনিবার সকাল নয়টার দিকে বাজারে যাওয়ার সময় ময়নার চিৎকার শোনেন। তিনি আরেকজনকে নিয়ে জামালের বাড়ির শৌচাগার থেকে মর্জিনাকে খুঁজে বের করেন। ততক্ষণে ময়নার চিৎকারে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে। তাঁরা মর্জিনাকে ধরে পেটাতে শুরু করেন।
জনতার সামনে মর্জিনাকে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এই নারী কোনোটিরই জবাব দিতে পারেননি। ভিড়ের ভেতর থেকে আবারও ‘মার মার, মাইরা ফালা’ বলে আবারও হুংকার আসে। এ সময় ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠেন, তিনি মর্জিনাকে চেনেন। তাঁকে মর্জিনার অভিভাবককে ডেকে আনতে বলা হয়। কিন্তু ভিড় ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। তখন স্থানীয় কালাম, আজাদ, জসীমসহ কয়েকজন ওই নারীকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ লোকজনকে আশ্বস্ত করতে না পেরে একপর্যায়ে তাঁরা মর্জিনাকে দলিল উদ্দীনের বাসায় নিয়ে যান। পিছে পিছে যায় গ্রামের মানুষ। ঘরের ভেতরে মর্জিনাকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা দেওয়া হয়। তখন আরও লোক জমতে শুরু করে।
দলিল উদ্দীন আরও জানান, একপর্যায়ে লোকজন তাঁর বাড়িতে লাঠি নিয়ে হামলার চেষ্টা করে। স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল কুদ্দুস ঘটনাস্থলে এলে তাঁর ওপরও চড়াও হয় লোকজন। বেলা একটার দিকে খবর পেয়ে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম পাঁচজন পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় মর্জিনার বোন জ্যোৎস্না তাঁকে বাঁচাতে এলে তাঁকেও মারধর করে লোকজন। তাঁকেও ঘরে ঢুকিয়ে রাখা হয়। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ মর্জিনাকে ঘর থেকে বের করে গাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে লোকজন পুলিশের ওপর চড়াও হয়। মর্জিনাকে ছিনিয়ে নিয়ে পেটাতে থাকে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ মর্জিনার বোনকে জনতার হাত থেকে বাঁচিয়ে গাড়িতে নিয়ে যায়।
এসআই সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, শত শত উত্তেজিত লোকের মধ্যে পুলিশের কিছু করার ছিল না। থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আসার আগেই জনতা হামলা চালিয়ে ওই নারীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ ৪০০-৫০০ লোকের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছে। মুঠোফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
গান গাওয়া সেই পাগল: সোমবার সকালে গাজীপুর সদরের কোনাবাড়ীর বাইমাইলে পিটিয়ে মারা লোকটির পরিচয় মেলেনি এখনো। রোববার রাতে স্থানীয় খালেক ভান্ডারীর বাড়িতে (ভান্ডারী শরিফ বলে পরিচিত) ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠানে লোকটিকে প্রথম দেখা যায়। সারা রাত গান শেষে ভোরের দিকে লোকটিকে ছেলেধরা সন্দেহে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কের পাশে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও জবাই করে মেরে ফেলে স্থানীয় লোকজন।
খালেক ভান্ডারীর স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম জানান, রাত নয়টার দিকে তাঁদের বাড়িতে গান শুরু হয়। রাত দুইটার দিকে তিনি ওই লোকটিকে ডাবগাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখেন। লোকটি মাথা ঝাঁকিয়ে গান গাচ্ছিলেন। আর মাঝেমধ্যে ওপরের দিকে তাকিয়ে ফুঁ দিচ্ছিলেন। তিনি গায়ের শার্ট খুলছিলেন আর পরছিলেন। তিনি (জ্যোৎস্না বেগম) লোকটিকে খাবার দেন। এ সময় লোকটি পলিথিনের একটি পুঁটলি জ্যোৎস্নার হাতে দিয়ে বলেন, ‘নিয়ে যা।’ পুঁটলিতে কিছু ছোট মাছ, শাক, বরই, কয়েকটি আঙুর আর লাল সুতো বাঁধা একটি চাবি ছিল। জ্যোৎস্না পুঁটলি থেকে চাবিটি বের করে আবার লোকটির হতে দেন। লোকটি তাঁর কাছে একটি পাঞ্জাবি চান। জ্যোৎস্না তাঁর স্বামীর একটি পুরোনো পাঞ্জাবি দেন।
জ্যোৎস্না বলেন, ঘুমাতে যাওয়ার পরে বাইরে থেকে কিছু লোক হইচই করছিল। সকালে উঠে তিনি শোনেন লোকজন লোকটিকে মেরে ফেলেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভান্ডারীর বাড়ি থেকে সরু গলি পেরিয়ে হুমায়ুন কবীরের বাড়িসংলগ্ন একটি মাঠে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। পরে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় আধা কিলোমিটার দূরের মহাসড়কের পাশে। মাঠে পড়ে ছিল তাঁর পরনের শার্ট আর জ্যোৎস্নার দেওয়া পাঞ্জাবি। মহসড়কে নিয়ে গেলে লোকজনের সঙ্গে যোগ দেন পাশের কারখানার শ্রমিকেরা। তাঁরা লোকটিকে পিটিয়ে আর চাকু দিয়ে গলা কেটে মেরে ফেলে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, লোকটির কাছেই চাকুটি ছিল। তবে জ্যোৎস্না বলেছেন, লোকটি গানের তালে তালে কাপড় খুলে ফেলেছিলেন। তাঁর কাছে কোনো চাকু তিনি দেখেননি।
সেই নারীরও পরিচয় মেলেনি: এই ঘটনার আধঘণ্টা পরেই এক কিলোমিটার দূরে কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে ছেলেধরা সন্দেহে ভাসমান এক নারীকে পিটিয়ে মারে এলাকাবাসী। মানসিক প্রতিবন্ধী এই নারী ওই এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। রাতে দোকানের সামনে বা রাস্তার পাশে ঘুমাতেন। ওই নারীকে পিটিয়ে মেরে শরীরে আগুন দেওয়া হয়।
নিছক গুজব: জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম জানান, তাঁদের কাছে শিশু নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে গত দুই মাসে কেউ অভিযোগ করেননি। তবুও গুজব ছড়াচ্ছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হবিবুর রহমান জানান, গতকাল তিনি সিনাবহ এলাকায় গিয়ে লোকজনকে গুজবে কান না দেওয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন। গণপিটুনিতে আহত জ্যোৎস্নার চিকিৎসার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
No comments