পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী-পুলিশ নিরপেক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে
ব্যবহার করতে চাই না। সে কারণে তারা পেশাদারিত্বের সাথে আইনশৃঙ্খলা বজায়
রাখা, সন্ত্রাস দমন ও জনগণের জানমাল রায় নিরপে এবং কর্তব্যপরায়ণতার সাথে
কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৩ উদ্বোধনকালে
তিনি এ কথা বলেন। এ উপলে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের অংশগ্রহণে
আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ
পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন
ঘোষণা করেন। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ৬৭ জন সদস্যকে সাহসিকতা, কৃতিত্ব ও
সেবার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী শুক্রবারে
শেষ হবে পুলিশ সপ্তাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এখন বাংলা ভাইয়ের মতো সন্ত্রাসী ও জঙ্গিমুক্ত। এর
ফলে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারছে। পুলিশ বাহিনীর আন্তরিক
সেবার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। জনগণ আবার পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরে
পেয়েছে। আমরা পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে বিশ্বাসী
নই। পুলিশ বাহিনী আইন অনুযায়ী জননিরাপত্তা বিধানে কাজ করবে। আইন ভঙ্গকারী
যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনাই পুলিশের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা
মামলা ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার মতো বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলার তদন্তসহ
আইনশৃঙ্খলা রায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের
চার বছর পূর্ণ হয়েছে। এ সময় আমরা প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আর এতে
পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মতায়
এসে পুলিশের বাজেট ৬০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত
করেছিল। তা ছাড়া পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা, টিফিন ভাতা, কল্যাণ ভাতা,
রেশনের ব্যবস্থা, বিভিন্ন থানা, হাসপাতাল, ব্যারাক নির্মাণসহ বিভিন্ন সুযোগ
সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার বাইরে পুলিশ সদস্যদের জন্য আধুনিক ব্যারাক
নির্মাণ কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। সরকার পুলিশ বাহিনীর জন্য ২০১২ সাল থেকে
তিন বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনার আওতায় শিল্প পুলিশ
গঠন করা হবে এবং আরো দু’টি নিরাপত্তা ও সুরা ব্যাটালিয়ন শিগগিরই কাজ শুরু
করবে। প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় সম্প্রতি ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং
সেন্টারের মঞ্জুরি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমিসহ চারটি
পিটিসির জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিগগিরই পর্যটন পুলিশ, ক্যাম্পাস পুলিশ ও নৌপুলিশ গঠনের
প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ ছাড়া পুলিশ তদন্ত ব্যুরো গঠনের জন্য বরাদ্দ দেয়া
হয়েছে। বিমানবন্দরে আরো নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য পৃথক একটি সশস্ত্র পুলিশ
ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার
টেরোরিজম ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে এবং পুলিশ ব্যুরো অব
ইনভেস্টিগেশন গঠনে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর জন্য পাঁচটি
গ্রেড-ওয়ান পোস্ট সৃষ্টি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধী শনাক্তকরণ এবং ইনটেলিজেন্স সংগ্রহের
ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ই-পুলিশিং বাস্তবায়নে বিশেষ
দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীকে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের
লালন করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর, স্বরাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া মন্ত্রী,
প্রতিমন্ত্রী, কূনৈতিকবৃন্দ ও সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে
উপস্থিত ছিলেন।
No comments