ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের কারসাজিতে প্রথম শ্রেণী! by নুরে আলম দুর্জয়
পরীক্ষায় নম্বর কারসাজি (টেম্পারিং) এবং অস্বাভাবিক নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণী পাওয়া এক শিক্ষার্থীকে নম্বর কারসাজি করে দেওয়া হয়েছে প্রথম শ্রেণী।
আরেক শিক্ষার্থীকে অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষায় অস্বাভাবিক নম্বর দিয়ে প্রথম শ্রেণী পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ এই শিক্ষার্থীর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে প্রথম শ্রেণীর নম্বর ছিল না। বিভাগের একাডেমিক কমিটি এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর বিষয়টি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের উপকমিটিতে তদন্তাধীন।
২০০৩ সালের মাস্টার্স এবং ২০০৭ সালের অনার্স পরীক্ষায় এ অনিয়ম ঘটে বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি শৃঙ্খলা উপকমিটিতে গেছে। কমিটি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
শৃঙ্খলা বোর্ডের উপকমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা কয়েকটা সভায় মিলিত হয়েছি। সামনে আরো কয়েকজন শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এই কাজটি করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে না।' তিনি আরো বলেন, 'এরপর বিষয়টি প্রধান শৃঙ্খলা কমিটিতে যাবে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর সিন্ডিকেট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।'
জানা গেছে, নম্বর টেম্পারিং এবং অস্বাভাবিক নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তা পর্যালোচনার জন্য বিভাগের একাডেমিক কমিটি গত ১০ মার্চের সভায় একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে রাখা হয় অধ্যাপক নূরুর রহমান খান (আহ্বায়ক), অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, ড. সিরাজুল ইসলাম, ড. বায়তুল্লাহ্ কাদেরী ও হোসনে আরাকে। পরে ড. সৈয়দ আজিজুল হককেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরীক্ষা কমিটির কোনো কোনো সদস্যের অনৈতিকতা, কিছু শিক্ষকের ক্লাস-পারফরম্যান্স, কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া, প্রাইভেট টিউশনি প্রভৃতির মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব বিস্তার, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফল প্রকাশে বিলম্ব প্রভৃতি বিষয় পর্যালোচনার দায়িত্বও দেওয়া হয় ওই কমিটিকে।
এই কমিটি পর্যালোচনা করে একাডেমিক কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর সেটি পাঠানো হয় উচ্চপর্যায়ে। কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গুরুতর একটি অনিয়ম আমরা লক্ষ করেছি ২০০৩ সালের এমএ পরীক্ষার ফলবিন্যাসপত্রে। এ পরীক্ষায় যে পরীক্ষার্থীকে (রোল : ১৮১) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান প্রদান করা হয়, সে আসলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিল। মোট এক হাজার নম্বরের মধ্যে সে নম্বর পেয়েছিল ৫৯৫। এভাবে পুরো ফলবিন্যাসপত্রে সব পরীক্ষার্থীর স্থান (পজিশন) নির্ধারণ করা হয়েছিল।'
পর্যালোচনায় আরো বলা হয়, 'পরে ওই রোল নম্বরধারীর ৫০৩ নম্বর কোর্সের অনুশীলনী ও ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর কেটে উভয় ক্ষেত্রে এক নম্বর করে বাড়িয়ে তাকে ৫৯৭ প্রদান করে ৩ নম্বর গ্রেস দিয়ে প্রথম শ্রেণী প্রদান করা হয় এবং সে অনুযায়ী সব পরীক্ষার্থীর স্থান কেটে বদল করা হয়।'
পর্যালোচনা কমিটি মনে করে, 'উক্ত রোল নম্বরধারীর ৫০৩ নম্বর কোর্সের অনুশীলনী ও ইনকোর্স নম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রদান করা হয়। অন্যান্য কোর্সের অনুশীলনী ও ইনকোর্স নম্বরের তুলনায় ৫০৩ নম্বর কোর্সের নম্বর ছিল অস্বাভাবিক রকমের বেশি। এরপরও তা কেটে আবার বদল করা হয়।'
জানা যায়, ওই পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন অধ্যাপক আহমদ কবির (সভাপতি), অধ্যাপক এস এম লুৎফর রহমান (সদস্য) ও মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন (সদস্য)। এক্সটার্নাল (বহিঃস্থ সদস্য) ছিলেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। পরীক্ষার ফলবিন্যাসের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক আহমদ কবির ও মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
পর্যালোচনায় আরো বলা হয়, ''দুটি ফল বিন্যাসপত্রেই লক্ষ করা যায়, বহিঃস্থ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু একটি ফলবিন্যাসপত্রে পরে 'অনুপস্থিত' কেটে বহিঃস্থ সদস্যের সই দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যটিতে অনুপস্থিত রয়েই গেছে।"
অস্বাভাবিক নম্বর দেওয়ার অভিযোগ : ফলবিন্যাসগত পর্যালোচনা প্রতিবেদনে আরেকটি অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়, '২০০৭ সালের বিএ অনার্স পরীক্ষায় যে পরীক্ষার্থী (রোল : ১৩৬) প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে, তার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, প্রথম থেকে তৃতীয়বর্ষ পর্যন্ত তার প্রথম শ্রেণীর নম্বর ছিল না। শুধু চতুর্থ বর্ষে সে এতই অতিরিক্ত নম্বর লাভ করে, যাতে ওই তিন বছরের ঘাটতি পূরণ করেও সে প্রথম শ্রেণী পায়। আরো লক্ষণীয় যে, দুটি কোর্সে (৪০৭ ও ৪০৮) সে অত্যধিক নম্বর লাভ করে এবং বিস্ময়কর ঘটনা হলো, ওই দুইকোর্সে সে প্রথম শ্রেণীর নম্বরের চেয়ে অতিরিক্ত ৪২ নম্বর লাভ করে, যা তার পূর্ববর্তী তিন বছরের প্রথম শ্রেণীর নম্বর পিছিয়ে থাকা নম্বরের সমপরিমাণ।'
জানা যায়, ৪০৭ নম্বর কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ শাজাহান মিয়া এবং ৪০৮ (সর্বাত্মক) কোর্সের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষক ছিলেন ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। এ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক এস এম লুৎফর রহমান, ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। ফলবিন্যাসকারী ছিলেন ড. মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও তারিক মনজুর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যালোচনা কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষক ড. গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে ২০০৩ সালের এমএ এবং ২০০৭ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফল বিন্যাস নিয়ে আলোচনা করে। তিনি অভিযোগ সম্পর্কে কোনো আপত্তি করেননি এবং কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি হন।
২০০৩ সালের মাস্টার্স এবং ২০০৭ সালের অনার্স পরীক্ষায় এ অনিয়ম ঘটে বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি শৃঙ্খলা উপকমিটিতে গেছে। কমিটি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
শৃঙ্খলা বোর্ডের উপকমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা কয়েকটা সভায় মিলিত হয়েছি। সামনে আরো কয়েকজন শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এই কাজটি করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে না।' তিনি আরো বলেন, 'এরপর বিষয়টি প্রধান শৃঙ্খলা কমিটিতে যাবে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর সিন্ডিকেট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।'
জানা গেছে, নম্বর টেম্পারিং এবং অস্বাভাবিক নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তা পর্যালোচনার জন্য বিভাগের একাডেমিক কমিটি গত ১০ মার্চের সভায় একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে রাখা হয় অধ্যাপক নূরুর রহমান খান (আহ্বায়ক), অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, ড. সিরাজুল ইসলাম, ড. বায়তুল্লাহ্ কাদেরী ও হোসনে আরাকে। পরে ড. সৈয়দ আজিজুল হককেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরীক্ষা কমিটির কোনো কোনো সদস্যের অনৈতিকতা, কিছু শিক্ষকের ক্লাস-পারফরম্যান্স, কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া, প্রাইভেট টিউশনি প্রভৃতির মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব বিস্তার, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফল প্রকাশে বিলম্ব প্রভৃতি বিষয় পর্যালোচনার দায়িত্বও দেওয়া হয় ওই কমিটিকে।
এই কমিটি পর্যালোচনা করে একাডেমিক কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর সেটি পাঠানো হয় উচ্চপর্যায়ে। কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গুরুতর একটি অনিয়ম আমরা লক্ষ করেছি ২০০৩ সালের এমএ পরীক্ষার ফলবিন্যাসপত্রে। এ পরীক্ষায় যে পরীক্ষার্থীকে (রোল : ১৮১) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান প্রদান করা হয়, সে আসলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিল। মোট এক হাজার নম্বরের মধ্যে সে নম্বর পেয়েছিল ৫৯৫। এভাবে পুরো ফলবিন্যাসপত্রে সব পরীক্ষার্থীর স্থান (পজিশন) নির্ধারণ করা হয়েছিল।'
পর্যালোচনায় আরো বলা হয়, 'পরে ওই রোল নম্বরধারীর ৫০৩ নম্বর কোর্সের অনুশীলনী ও ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর কেটে উভয় ক্ষেত্রে এক নম্বর করে বাড়িয়ে তাকে ৫৯৭ প্রদান করে ৩ নম্বর গ্রেস দিয়ে প্রথম শ্রেণী প্রদান করা হয় এবং সে অনুযায়ী সব পরীক্ষার্থীর স্থান কেটে বদল করা হয়।'
পর্যালোচনা কমিটি মনে করে, 'উক্ত রোল নম্বরধারীর ৫০৩ নম্বর কোর্সের অনুশীলনী ও ইনকোর্স নম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রদান করা হয়। অন্যান্য কোর্সের অনুশীলনী ও ইনকোর্স নম্বরের তুলনায় ৫০৩ নম্বর কোর্সের নম্বর ছিল অস্বাভাবিক রকমের বেশি। এরপরও তা কেটে আবার বদল করা হয়।'
জানা যায়, ওই পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন অধ্যাপক আহমদ কবির (সভাপতি), অধ্যাপক এস এম লুৎফর রহমান (সদস্য) ও মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন (সদস্য)। এক্সটার্নাল (বহিঃস্থ সদস্য) ছিলেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। পরীক্ষার ফলবিন্যাসের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক আহমদ কবির ও মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
পর্যালোচনায় আরো বলা হয়, ''দুটি ফল বিন্যাসপত্রেই লক্ষ করা যায়, বহিঃস্থ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু একটি ফলবিন্যাসপত্রে পরে 'অনুপস্থিত' কেটে বহিঃস্থ সদস্যের সই দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যটিতে অনুপস্থিত রয়েই গেছে।"
অস্বাভাবিক নম্বর দেওয়ার অভিযোগ : ফলবিন্যাসগত পর্যালোচনা প্রতিবেদনে আরেকটি অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়, '২০০৭ সালের বিএ অনার্স পরীক্ষায় যে পরীক্ষার্থী (রোল : ১৩৬) প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে, তার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, প্রথম থেকে তৃতীয়বর্ষ পর্যন্ত তার প্রথম শ্রেণীর নম্বর ছিল না। শুধু চতুর্থ বর্ষে সে এতই অতিরিক্ত নম্বর লাভ করে, যাতে ওই তিন বছরের ঘাটতি পূরণ করেও সে প্রথম শ্রেণী পায়। আরো লক্ষণীয় যে, দুটি কোর্সে (৪০৭ ও ৪০৮) সে অত্যধিক নম্বর লাভ করে এবং বিস্ময়কর ঘটনা হলো, ওই দুইকোর্সে সে প্রথম শ্রেণীর নম্বরের চেয়ে অতিরিক্ত ৪২ নম্বর লাভ করে, যা তার পূর্ববর্তী তিন বছরের প্রথম শ্রেণীর নম্বর পিছিয়ে থাকা নম্বরের সমপরিমাণ।'
জানা যায়, ৪০৭ নম্বর কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ শাজাহান মিয়া এবং ৪০৮ (সর্বাত্মক) কোর্সের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষক ছিলেন ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। এ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক এস এম লুৎফর রহমান, ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। ফলবিন্যাসকারী ছিলেন ড. মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও তারিক মনজুর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যালোচনা কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষক ড. গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে ২০০৩ সালের এমএ এবং ২০০৭ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফল বিন্যাস নিয়ে আলোচনা করে। তিনি অভিযোগ সম্পর্কে কোনো আপত্তি করেননি এবং কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি হন।
No comments