টালমাটাল পাকিস্তানে পাঞ্জাবের- গভর্নর খুন
প্রধান শরিক দল সমর্থন প্রত্যাহার করায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বাধীন সরকার যখন গভীর সংকটে, ঠিক তখনই নিজের দেহরক্ষীর গুলিতে খুন হলেন পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির (৬৬)।
উগ্র ইসলামপন্থীদের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত এই পিপিপি নেতাকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদের একটি বিপণিবিতানের সামনে গুলি করা হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাসিরের হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরো ঘনীভূত করবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় পুলিশ জানায়, গতকাল ইসলামাবাদে নিজের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে এফ-৬ সেক্টরের কোহসার মার্কেটের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় সালমান তাসিরকে। নিজের গাড়ি থেকে নামার পরপরই একজন দেহরক্ষী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান আমির আহমেদ আলী জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর গভর্নর তাসিরের মৃত্যু হয়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক সাংবাদিকদের বলেন, �ঘটনার পরপরই ওই দেহরক্ষীকে আটক করেছে পুলিশ। সে অস্ত্র জমা দিয়ে হত্যার কথা স্বীকারও করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, ব্লাসফেমি আইনের বিরোধিতা করায় তাসিরকে হত্যা করেছে সে।�
ঘটনার সময় কোহসার মার্কেটে থাকা শওকত (২৮) নামের এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, �আমি মার্কেটে ছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ আর মাটিতে ধপ করে কারো পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই। বাঁচার তাগিদে ওখান থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি ইউনিফর্ম পরা এক লোককে পুলিশ জাপটে ধরে রেখেছে। পরে জানতে পারি, সেই নাকি গুলি চালিয়েছে।�
ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে ও মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, গুলির পর একটিমাত্র রুপালি রঙের টয়োটা গাড়ি মার্কেটের সামনে পার্ক করা ছিল। আশপাশে ছিল গুলির খোসা ছড়ানো। রাস্তায় অন্তত দুই জায়গায় রক্তের চিহ্ন দেখা গেছে।
সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন তিনি। এ ছাড়া তাসিরের পিপিপির পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহের শোক পালনের কথা জানানো হয়।
সংকট গভীরতর
করাচির প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ও সরকারের অন্যতম শরিক মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির দল পিপিপির দূরত্ব গত কিছুদিন ধরেই বাড়ছিল। গত সপ্তাহে এমকিউএম তাদের দুই মন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বিরোধ স্পষ্ট চেহারা নেয়। এরপর গত রবিবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনার প্রতিবাদে এমকিউএম সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় গিলানির সংখ্যালঘু সরকার। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব এড়াতে বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী গিলানি।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-নওয়াজ) ঘোষণায় হালে পানি পায় ক্ষমতাসীন দল। পার্লামেন্টে ৯০টি আসনের প্রতিনিধিত্বকারী মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান রাজা জাফর-উল হক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে গতকাল জানান, তাঁর দল মনে করে যে অনাস্থা ভোট সারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি না হলে পিপিপি সরকার হয়তো টিকে যাবে। কিন্তু পর্যাপ্ত সমর্থন জোগাড় করতে না পারলে গিলানির পক্ষে সরকার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
এমনই এক রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই গতকাল খুন হলেন পাকিস্তানের জনবহুল ও রাজনৈতিকভাবে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রদেশ পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির। পিপিপির এ প্রভাবশালী নেতা উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্লাসফেমি আইনসহ কট্টর ইসলামপন্থীদের বিরোধিতা করে জঙ্গিদের খেপিয়ে তুলেছিলেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৮ সালে বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানে এটাই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
ইসলামাবাদে বিবিসির সংবাদদাতা আলিম মকবুল বলেন, �তাসির ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একজন। তাঁর মৃত্যু দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।�
সালমান তাসির
রাজনীতিতে আসার আগে সালমান তাসির পেশায় ছিলেন একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। একই সঙ্গে পরামর্শক কেন্দ্র, ব্রোকারেজ হাউস, টেলিযোগাযোগ, মিডিয়া, বীমা ও আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন তিনি। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর দীর্ঘদিন পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের সময়ে তিনি পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে পিপিপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে পাঞ্জাবের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ডন অনলাইন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় পুলিশ জানায়, গতকাল ইসলামাবাদে নিজের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে এফ-৬ সেক্টরের কোহসার মার্কেটের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় সালমান তাসিরকে। নিজের গাড়ি থেকে নামার পরপরই একজন দেহরক্ষী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান আমির আহমেদ আলী জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর গভর্নর তাসিরের মৃত্যু হয়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক সাংবাদিকদের বলেন, �ঘটনার পরপরই ওই দেহরক্ষীকে আটক করেছে পুলিশ। সে অস্ত্র জমা দিয়ে হত্যার কথা স্বীকারও করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, ব্লাসফেমি আইনের বিরোধিতা করায় তাসিরকে হত্যা করেছে সে।�
ঘটনার সময় কোহসার মার্কেটে থাকা শওকত (২৮) নামের এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, �আমি মার্কেটে ছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ আর মাটিতে ধপ করে কারো পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই। বাঁচার তাগিদে ওখান থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি ইউনিফর্ম পরা এক লোককে পুলিশ জাপটে ধরে রেখেছে। পরে জানতে পারি, সেই নাকি গুলি চালিয়েছে।�
ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে ও মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, গুলির পর একটিমাত্র রুপালি রঙের টয়োটা গাড়ি মার্কেটের সামনে পার্ক করা ছিল। আশপাশে ছিল গুলির খোসা ছড়ানো। রাস্তায় অন্তত দুই জায়গায় রক্তের চিহ্ন দেখা গেছে।
সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন তিনি। এ ছাড়া তাসিরের পিপিপির পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহের শোক পালনের কথা জানানো হয়।
সংকট গভীরতর
করাচির প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ও সরকারের অন্যতম শরিক মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির দল পিপিপির দূরত্ব গত কিছুদিন ধরেই বাড়ছিল। গত সপ্তাহে এমকিউএম তাদের দুই মন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বিরোধ স্পষ্ট চেহারা নেয়। এরপর গত রবিবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনার প্রতিবাদে এমকিউএম সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় গিলানির সংখ্যালঘু সরকার। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব এড়াতে বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী গিলানি।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-নওয়াজ) ঘোষণায় হালে পানি পায় ক্ষমতাসীন দল। পার্লামেন্টে ৯০টি আসনের প্রতিনিধিত্বকারী মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান রাজা জাফর-উল হক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে গতকাল জানান, তাঁর দল মনে করে যে অনাস্থা ভোট সারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি না হলে পিপিপি সরকার হয়তো টিকে যাবে। কিন্তু পর্যাপ্ত সমর্থন জোগাড় করতে না পারলে গিলানির পক্ষে সরকার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
এমনই এক রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই গতকাল খুন হলেন পাকিস্তানের জনবহুল ও রাজনৈতিকভাবে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রদেশ পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির। পিপিপির এ প্রভাবশালী নেতা উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্লাসফেমি আইনসহ কট্টর ইসলামপন্থীদের বিরোধিতা করে জঙ্গিদের খেপিয়ে তুলেছিলেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৮ সালে বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানে এটাই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
ইসলামাবাদে বিবিসির সংবাদদাতা আলিম মকবুল বলেন, �তাসির ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একজন। তাঁর মৃত্যু দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।�
সালমান তাসির
রাজনীতিতে আসার আগে সালমান তাসির পেশায় ছিলেন একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। একই সঙ্গে পরামর্শক কেন্দ্র, ব্রোকারেজ হাউস, টেলিযোগাযোগ, মিডিয়া, বীমা ও আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন তিনি। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর দীর্ঘদিন পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের সময়ে তিনি পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে পিপিপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে পাঞ্জাবের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ডন অনলাইন।
No comments