আমিরাত থেকে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক ফিরেছেন- প্রবাসী শ্রমজীবীদের সমস্যা দূর হচ্ছে না কেন?
আরব আমিরাত থেকে অর্ধলক্ষাধিক বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। সে দেশে বাংলাদেশ কনসুলেটে প্রতিদিন ভিড় জমছে শত শত অভাবী শ্রমজীবীর।
ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ যাবৎ ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক খালি হাতে
দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন বলে দূতাবাস সূত্রে জানা যায়। আমিরাত
কর্তৃপক্ষের শর্ত মোতাবেক সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ ৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। এ
সময়ের মধ্যে যারা দেশে প্রত্যাবর্তনে ব্যর্থ হবেন, তাদের ৫ ফেব্রুয়ারি
থেকে দৈনিক ২৫ দিরহাম করে জরিমানা দিতে হবে সে দেশে বেআইনি অবস্থানের
কারণে।
গতকাল নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়Ñ ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা বলছেন, অনেকে বৈধ উপায়ে আমিরাতে আসা সত্ত্বেও এখন বেকার। আবার কোনো কোনো কোম্পানির মালিক চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করলেও বেতন আটকে রাখার ঘটনাও ঘটছে। অপর দিকে অবৈধ বিদেশী নাগরিকদের ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। প্রায় প্রতিদিন অবৈধ শ্রমিকেরা ধরা পড়ছেন। এমনকি, বাংলাদেশী অনেকের ওয়ার্ক পারমিট থাকার পরও পুলিশ তাদের আটক করছে। পরে জরিমানা করে তাদের পাঠানো হচ্ছে স্বদেশে। কত শ্রমিক ধরা পড়ে এখন কারাগারে আটক, তা বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন না। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ‘গোদের উপর বিষফোড়া’র মতো সমস্যা হলো বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে দালালদের দৌরাত্ম্য। দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এরা তৎপর বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় আমিরাতের পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ সর্বক্ষণ মনিটরিং ও নজরদারি করছে। আমিরাত প্রশাসন জানিয়েছে, অবৈধ প্রবাসী শ্রমজীবীরা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরলে ছয় মাস পরই আবার আমিরাতে আসার অনুমতি পাবেন। একটি সূত্র মতে, ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন করে ভিসা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কয়েক দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে আবার আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমিক রফতানি শুরু হবে। নয়া দিগন্তের রিপোর্টে একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, অন্তত দুই লাখ অবৈধ শ্রমিককে ফেরত পাঠাতে আমিরাত সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাস একমত হয়েছে। সেই হিসাবে ২৫ হাজার শ্রমিক এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায়। কোনো মালিক অবৈধ শ্রমিকদের কাজে রাখলে ৫০ হাজার দিরহাম জরিমানা দিতে হবে। কারাদণ্ডও হতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশের এই আয়ের দু’টি প্রধান খাত হলো জনশক্তি ও তৈরী পোশাক রফতানি। লাখ লাখ প্রবাসীর রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখছে। বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিছক আপদ নয়, মূলত সম্পদ। জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে জনসম্পদে উন্নীত করা হলে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশ বিপুল সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ থেকে বিগত সত্তরের দশকে জনশক্তি রফতানি শুরু হওয়ার পর থেকে আরব দেশগুলো এ খাতে আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। কিন্তু নানা কারণে সে বাজার অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে গেছে সাম্প্রতিক কালে। এ জন্য সরকারও অনেকটা দায়ী।
জনশক্তি রফতানির বাজার সঙ্কুচিত হওয়ার পেছনে প্রবাসী কর্মীদের অদক্ষতা, অবৈধভাবে যাওয়া কিংবা বেআইনিভাবে অবস্থান করা, সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি প্রভৃতি কারণ থাকে। তবে বিশেষ করে আরব দেশগুলো থেকে গত কয়েক বছরে যেভাবে হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমজীবী ফিরে আসছেন, তা নজিরবিহীন। এ জন্য আমাদের দূতাবাসগুলোর উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা তথা দায়িত্ববোধের অভাব কম দায়ী নয়। এর সাথে যোগ হয় সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। তবে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিজনিত ভুল পদক্ষেপকেও দায়ী করতে হয়। আমাদের সংবিধানে মুসলিম বিশ্বের সাথে ঘনিষ্ঠতার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার এর পরিবর্তন ঘটিয়ে আরব জগৎসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ভুল বার্তা পাঠিয়েছে। এ সব কিছু মিলে সামগ্রিক যে পরিস্থিতি বিদ্যমান, তার আলোকেই জনশক্তি রফতানির সঙ্কট এবং প্রবাসীদের দুর্ভোগের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
আমরা আশা করি, এ ক্ষেত্রে সরকার কার্যকর ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে তৎপর হবে অবিলম্বে। জনশক্তি প্রশিক্ষণ, এ খাতে অনিয়ম ও প্রতারণা রোধ এবং বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়াতেও সরকারের যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।
গতকাল নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়Ñ ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা বলছেন, অনেকে বৈধ উপায়ে আমিরাতে আসা সত্ত্বেও এখন বেকার। আবার কোনো কোনো কোম্পানির মালিক চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করলেও বেতন আটকে রাখার ঘটনাও ঘটছে। অপর দিকে অবৈধ বিদেশী নাগরিকদের ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। প্রায় প্রতিদিন অবৈধ শ্রমিকেরা ধরা পড়ছেন। এমনকি, বাংলাদেশী অনেকের ওয়ার্ক পারমিট থাকার পরও পুলিশ তাদের আটক করছে। পরে জরিমানা করে তাদের পাঠানো হচ্ছে স্বদেশে। কত শ্রমিক ধরা পড়ে এখন কারাগারে আটক, তা বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন না। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ‘গোদের উপর বিষফোড়া’র মতো সমস্যা হলো বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে দালালদের দৌরাত্ম্য। দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এরা তৎপর বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় আমিরাতের পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ সর্বক্ষণ মনিটরিং ও নজরদারি করছে। আমিরাত প্রশাসন জানিয়েছে, অবৈধ প্রবাসী শ্রমজীবীরা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরলে ছয় মাস পরই আবার আমিরাতে আসার অনুমতি পাবেন। একটি সূত্র মতে, ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন করে ভিসা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কয়েক দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে আবার আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমিক রফতানি শুরু হবে। নয়া দিগন্তের রিপোর্টে একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, অন্তত দুই লাখ অবৈধ শ্রমিককে ফেরত পাঠাতে আমিরাত সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাস একমত হয়েছে। সেই হিসাবে ২৫ হাজার শ্রমিক এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায়। কোনো মালিক অবৈধ শ্রমিকদের কাজে রাখলে ৫০ হাজার দিরহাম জরিমানা দিতে হবে। কারাদণ্ডও হতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশের এই আয়ের দু’টি প্রধান খাত হলো জনশক্তি ও তৈরী পোশাক রফতানি। লাখ লাখ প্রবাসীর রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখছে। বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিছক আপদ নয়, মূলত সম্পদ। জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে জনসম্পদে উন্নীত করা হলে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশ বিপুল সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ থেকে বিগত সত্তরের দশকে জনশক্তি রফতানি শুরু হওয়ার পর থেকে আরব দেশগুলো এ খাতে আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। কিন্তু নানা কারণে সে বাজার অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে গেছে সাম্প্রতিক কালে। এ জন্য সরকারও অনেকটা দায়ী।
জনশক্তি রফতানির বাজার সঙ্কুচিত হওয়ার পেছনে প্রবাসী কর্মীদের অদক্ষতা, অবৈধভাবে যাওয়া কিংবা বেআইনিভাবে অবস্থান করা, সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি প্রভৃতি কারণ থাকে। তবে বিশেষ করে আরব দেশগুলো থেকে গত কয়েক বছরে যেভাবে হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমজীবী ফিরে আসছেন, তা নজিরবিহীন। এ জন্য আমাদের দূতাবাসগুলোর উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা তথা দায়িত্ববোধের অভাব কম দায়ী নয়। এর সাথে যোগ হয় সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। তবে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিজনিত ভুল পদক্ষেপকেও দায়ী করতে হয়। আমাদের সংবিধানে মুসলিম বিশ্বের সাথে ঘনিষ্ঠতার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার এর পরিবর্তন ঘটিয়ে আরব জগৎসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ভুল বার্তা পাঠিয়েছে। এ সব কিছু মিলে সামগ্রিক যে পরিস্থিতি বিদ্যমান, তার আলোকেই জনশক্তি রফতানির সঙ্কট এবং প্রবাসীদের দুর্ভোগের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
আমরা আশা করি, এ ক্ষেত্রে সরকার কার্যকর ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে তৎপর হবে অবিলম্বে। জনশক্তি প্রশিক্ষণ, এ খাতে অনিয়ম ও প্রতারণা রোধ এবং বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়াতেও সরকারের যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।
No comments