অভিযোগঃ বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে একতরফা সুবিধা নিচ্ছে ভারত by আবুল হাসান
ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ায়
দ্বিমুখীর পরিবর্তে একমুখী বাণিজ্যের মাধ্যমে একতরফা সুবিধা নিচ্ছে ভারত।
এ
ছাড়া ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একশ্রেণীর অসাধু রফতানিকারক ও কাস্টমস
কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অনুমোদিত পণ্যের চেয়ে কয়েকগুণ
বেশি পণ্য ভারতে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।জানা যায়, বাংলাদেশের রাস্তা, রেললাইন ও নদীপথ ব্যবহার করে ভারতের আসাম, ত্রিপুরাসহ দুর্গম সাতটি রাজ্যে স্বল্প সময় কম খরচে পণ্য পাঠাতে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় ট্রানজিট আদায়ের জোর চেষ্টা করছে ভারত। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ৪ অক্টোবর ভারতকে দেশের ১৭তম স্থলবন্দর হিসেবে বিলোনিয়া স্থলবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। শুরুতে ওই স্থলবন্দরের মাধ্যমে উভয়পক্ষ লাভবান হওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ভারতই একতরফা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বন্দর থেকে সুবিধা নিচ্ছে বলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। বিলোনিয়া স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনী পরশুরাম বিলোনিয়া সড়কও সংস্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত পিলার ২১৬০ এলাকায় বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবস্থান। অন্য দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে এর দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭ কোটি ৫৯ লাখ ২৬ হাজার ৮৯ টাকার পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে। এ থেকে দুই লাখ ২২ হাজার ৪৫০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।
গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় পরিত্যক্ত একটি ঘরে বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনের কাজ চলছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের নিজস্ব কোনো অফিস নেই। এখানে কোনো রকমে গড়ে তোলা হয়েছে বন্দরের মূল ভবন, শেড কেেটইনার টার্মিনাল, গুদাম, রাসায়নিক পরীক্ষাগার, স্টাফ কোয়ার্টার, নিরাপত্তারক্ষীদের ডরমিটরি, আর শুল্ক স্টেশনে রয়েছে জনবল সঙ্কট। সেখানে একজন ল্যান্ড কাস্টমস অফিসার, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুইজন সিপাহি দায়িত্ব পালন করছেন। নেই ওজন মাপার যন্ত্র। ভারতে রফতানিকৃত পণ্যের ওজন মাপতে না পারায় ওজনে গরমিল হচ্ছে। ইট, পাথর, রড ও সিমেন্টসহ রফতানিকৃত পণ্যের কাগজপত্রে ১০-১৫ টন লেখা থাকলেও বাস্তবে নেয়া হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি পণ্য। অতিরিক্ত এসব পণ্য থেকে বাংলাদেশ বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছে ভারত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন্দরের নানা সমস্যার অজুহাত ধরে ভারত পণ্য রফতানি করছে না বাংলাদেশে। অথচ বাংলাদেশ থেকে ভারতে এ বন্দর দিয়ে নিয়মিত পণ্য যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চরম ুব্ধ হয়ে উঠেছে। এভাবে একতরফা পণ্য রফতানি করে লোকসান দিতে হচ্ছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিনই ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড ও শুঁটকি রফতানি হচ্ছে ভারতে। প্রতি টন পাথর ৭০ থেকে ৮০ ডলার দিয়ে কিনতে হয়। ওই পাথর শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে সরকার ২৫ ডলার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। ২৫ ডলারের অতিরিক্ত ক্রয় মূল্য ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হুন্ডির মাধ্যমে বা হাতেহাতে নগদ প্রদান করে বলে জানা যায়। এতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা যেমন এক দিকে লোকসানে পড়ছেন, অন্য দিকে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। এ দিকে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। অপর দিকে ভারতে এখনো বন্দরের জন্য কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। ভারতের অংশে বন্দর ব্যবহারকারীদের কোনো লোক ঢুকতে দেয়া হয় না। বাংলাদেশের জমিসহ সব কিছুই ব্যবহার করছে ভারত। গত ১৪ ডিসেম্বর ভারতের সহহাইকমিশনার সমুনাথ ঘোষ বিলোনিয়া স্থলবন্দর এলাকা ও মুহুরীচর এলাকা ঘুরে গেছেন। এ সময় পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন সাজেল ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদারসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তার সাথে ছিলেন।
বিলোনিয়া স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, অনুমোদিতভাবে ভারতে পণ্য পাচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিলোনিয়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সেক্রেটারি জুলফিকার আলি ভুট্টু জানান, অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় পণ্য স্টক করা যাচ্ছে না। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পণ্য আমদানি-রফতানির মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় ভারত একতরফা বাণিজ্য সুবিধা নিচ্ছে। এতে দুই দেশের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে বিলোনিয়া স্থলবন্দর খুলে দেয়ায় ভারতের স্বার্থই বেশি রক্ষা পাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
No comments