স্কাইপ ডকুমেন্ট নিয়ে আইনি বিতর্ক by মেহেদী হাসান
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথন ডকুমেন্ট নিয়ে আইনি বিতর্ক
দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১
থেকে এক আদেশে বলা হয়েছে, হ্যাক করা ডকুমেন্ট অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এটি একটি অপরাধ। কখন কোন দেশ থেকে কারা এটি হ্যাক করেছে এবং অবৈধভাবে রেকর্ড করেছে তা না জানা পর্যন্ত এটিকে আমলে নেবেন না বলে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আসামিপক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে মর্মে কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউ হাজির করতে পারেনি। তা ছাড়া স্কাইপ কথোপকথন হ্যাক করে বা অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে কি না এবং এটি অবৈধ কি না তা বলার এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের নেই। ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী পরিচালিত কোনো কোর্ট বা তার ঊর্ধ্বতন কোর্ট সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে; ট্রাইব্যুনাল নয়।
ট্রাইব্যুনাল-১ হ্যাক করা ডকুমেন্টকে অবৈধ উপায়ে সংগৃহীত এবং অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে একে আমলে নিতে অস্বীকার করলেও ট্রাইব্যুনাল-২ স্কাইপ কথোপকথন বিষয়ে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে রুল ইস্যু করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছেন যে, এ রুলের মাধ্যমে বস্তুত ট্রাইব্যুনাল-২ বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। এর ফলে একই আইনের অধীনে পরিচালিত দু’টি ট্রাইব্যুনাল স্কাইপ বিষয়ে দুই রকম অবস্থান নিয়েছেন বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে মন্তব্য করেছেন শুনানির সময়। তাই স্কাইপ কথোপকথন নিয়ে ট্রাইব্যুনাল-২-এর ইস্যু করা রুলের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সব কার্যক্রম মুলতবি করার আবেদন জানানো হয়েছে ডিফেন্স থেকে ।
অন্য দিকে স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের কারণে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে যে রুল জারি হয়েছিল, তা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। তারই সূত্র ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, স্কাইপ কথোপকথন নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত স্টে অর্ডার দেয়ার ফলে এটি ব্যবহারে বাধা নেই।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার আবার শুরুর আবেদন করা হয়েছিল আসামিপক্ষ থেকে। শুনানি শেষে গত ৩ জানুয়ারি তিনটি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। আবেদন খারিজ করার পক্ষে ট্রাইব্যুনাল তাদের আদেশে বলেছেন, সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন অবৈধভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। তার ই-মেইল ডকুমেন্টও হ্যাকিং করে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসবই অপরাধ; অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ অপরাধ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, অবৈধভাবে সংগৃহীত এসব ডকুমেন্ট প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে কি-না সে বিষয়ে আসামিপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। আদেশে আরো বলা হয়েছে কে, কখন, কোন দেশ থেকে অবৈধভাবে এসব সংগ্রহ করেছে সে প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে এসব ডকুমেন্ট আমলে নেয়ার আগে।
খারিজ আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আবার আবেদন করা হয় আসামিপক্ষ থেকে। পুনরায় বিবেচনা বা রিভিউ আবেদন শুনানির সময় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গত ১৫ জানুয়ারি বলেন, স্কাইপ কথোপকথন হ্যাক করা হয়েছে কি না, এটি অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে কি না এবং বিষয়টি অপরাধের মধ্যে পড়ে কি না সেটা বলা এ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। ২০০৬ সালে যে তথ্যপ্রযুক্তি আইন হয়েছে সে আইনের অধীনে পরিচালিত কোনো কোর্টই কেবল সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে। তার আগে ট্রাইব্যুনাল এটিকে অবৈধ এবং হ্যাক করা ডকুমেন্ট বলতে পারেন না।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্কাইপ কথোপকথন অবৈধ উপায়ে সংগৃহীত কোনো ডকুমেন্ট নয়; বরং এটি সর্বজন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠিত এবং সত্য ডকুমেন্ট। এটি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এটি যে হ্যাক করা হয়েছে সে মর্মে কোনো প্রমাণ কেউ হাজির করেনি। আজ পর্যন্ত বিচারপতি নিজামুল হক, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন কেউই এটি অস্বীকার করেননি। বরং তারা এটি স্বীকারও করেছেন। স্কাইপ কথোপকথনে যাদের নাম এসেছে তারাও কেউ এটি অস্বীকার করেননি। কাজেই স্কাইপ কথোপকথন প্রতিষ্ঠিত সত্য ডকুমেন্ট।
গত ৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ স্কাইপ কেলেঙ্কারির বিষয়ে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। আদেশে বলা হয়েছে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনোভাবেই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অংশ নেয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্কাইপ সংলাপের ঘটনা সত্য না মিথ্যা তা আমরা জানি না। তবে সংলাপের ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে জিয়াউদ্দিনের এই উদ্যোগ ছিল বেআইনি ওই সংলাপের ঘটনা ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সুপারিশ। ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনর ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেছেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে। ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। এটা ট্রাইব্যুনাল ও ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের হেয় করেছে।
আদেশে বলা হয়েছে জিয়াউদ্দিন বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে স্কাইপ সংলাপে অংশ নিয়েছেন কি না তা আমাদের জানা দরকার তার কাছ থেকে। এটা তিনি করে থাকলে তা অবশ্যই আদালত অবমাননা হবে। তিনি কোনোভাবেই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না।
ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদেশে আরো বলা হয়েছে, এই সংলাপের ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তা হলে দেখা যাচ্ছে যে, জিয়াউদ্দিন একজন তৃতীয় ব্যক্তি হয়েও ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন। তিনি কে এবং কে তাকে ট্রাইব্যুনালের বিচারককে অপসারণ করার এই কর্তৃত্ব দিলো। জিয়াউদ্দিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যানের সাথে সংলাপ করে ট্রাইব্যুনাল-২কে জড়িয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন তা ন্যূনতম সভ্যতা ও ভদ্রতা বিবর্জিত।
ট্রাইব্যুনাল-২ এর এই রুলের সূত্র ধরে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনাল-১ এ আবেদন করেন তাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য। আবেদনের ওপর শুনানিতে অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে রুল জারির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-২ স্কাইপ ডকুমেন্টকে বস্তুত আমলে নিয়েছেন। কাজেই বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখা উচিত। শুনানিতে তারা বলেন, স্কাইপ ডকুমেন্ট যে হ্যাক করা হয়েছে তার কোনো প্রমাণ কেউ কোর্টের সামনে আনেননি।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা দাবি করেন, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথনের কোনো রেকর্ড হ্যাক করা ডকুমেন্ট নয়। বরং কোন পক্ষ এটা সরবরাহ করেছে। হ্যাক করা হয়েছে এ মর্মে কোনো প্রমাণ হাজির ছাড়া বলা যাবে না এটা হ্যাকিং বা অবৈধ।
এর আগে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথনের বিবরণ প্রকাশের কারণে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন হ্যাকিং ও তা প্রকাশে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের হাইকোর্টের বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। তবে ২৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়ার আদালত আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে জারি করা রুল স্থগিত করে আদেশ দেন।
স্কাইপ সংলাপ বিষয়ে চেম্বার জজ আদালতের এ স্টে অর্ডারের বিষয়ে আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের অভিমত হলো এর ফলে ট্রাইব্যুনালে স্কাইপ ডকুমেন্ট ব্যবহারে আর বাধা নেই।
থেকে এক আদেশে বলা হয়েছে, হ্যাক করা ডকুমেন্ট অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এটি একটি অপরাধ। কখন কোন দেশ থেকে কারা এটি হ্যাক করেছে এবং অবৈধভাবে রেকর্ড করেছে তা না জানা পর্যন্ত এটিকে আমলে নেবেন না বলে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আসামিপক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে মর্মে কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউ হাজির করতে পারেনি। তা ছাড়া স্কাইপ কথোপকথন হ্যাক করে বা অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে কি না এবং এটি অবৈধ কি না তা বলার এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের নেই। ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী পরিচালিত কোনো কোর্ট বা তার ঊর্ধ্বতন কোর্ট সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে; ট্রাইব্যুনাল নয়।
ট্রাইব্যুনাল-১ হ্যাক করা ডকুমেন্টকে অবৈধ উপায়ে সংগৃহীত এবং অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে একে আমলে নিতে অস্বীকার করলেও ট্রাইব্যুনাল-২ স্কাইপ কথোপকথন বিষয়ে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে রুল ইস্যু করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছেন যে, এ রুলের মাধ্যমে বস্তুত ট্রাইব্যুনাল-২ বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। এর ফলে একই আইনের অধীনে পরিচালিত দু’টি ট্রাইব্যুনাল স্কাইপ বিষয়ে দুই রকম অবস্থান নিয়েছেন বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে মন্তব্য করেছেন শুনানির সময়। তাই স্কাইপ কথোপকথন নিয়ে ট্রাইব্যুনাল-২-এর ইস্যু করা রুলের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সব কার্যক্রম মুলতবি করার আবেদন জানানো হয়েছে ডিফেন্স থেকে ।
অন্য দিকে স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের কারণে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে যে রুল জারি হয়েছিল, তা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। তারই সূত্র ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, স্কাইপ কথোপকথন নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত স্টে অর্ডার দেয়ার ফলে এটি ব্যবহারে বাধা নেই।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার আবার শুরুর আবেদন করা হয়েছিল আসামিপক্ষ থেকে। শুনানি শেষে গত ৩ জানুয়ারি তিনটি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। আবেদন খারিজ করার পক্ষে ট্রাইব্যুনাল তাদের আদেশে বলেছেন, সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন অবৈধভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। তার ই-মেইল ডকুমেন্টও হ্যাকিং করে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসবই অপরাধ; অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ অপরাধ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, অবৈধভাবে সংগৃহীত এসব ডকুমেন্ট প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে কি-না সে বিষয়ে আসামিপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। আদেশে আরো বলা হয়েছে কে, কখন, কোন দেশ থেকে অবৈধভাবে এসব সংগ্রহ করেছে সে প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে এসব ডকুমেন্ট আমলে নেয়ার আগে।
খারিজ আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আবার আবেদন করা হয় আসামিপক্ষ থেকে। পুনরায় বিবেচনা বা রিভিউ আবেদন শুনানির সময় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গত ১৫ জানুয়ারি বলেন, স্কাইপ কথোপকথন হ্যাক করা হয়েছে কি না, এটি অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে কি না এবং বিষয়টি অপরাধের মধ্যে পড়ে কি না সেটা বলা এ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। ২০০৬ সালে যে তথ্যপ্রযুক্তি আইন হয়েছে সে আইনের অধীনে পরিচালিত কোনো কোর্টই কেবল সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে। তার আগে ট্রাইব্যুনাল এটিকে অবৈধ এবং হ্যাক করা ডকুমেন্ট বলতে পারেন না।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্কাইপ কথোপকথন অবৈধ উপায়ে সংগৃহীত কোনো ডকুমেন্ট নয়; বরং এটি সর্বজন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠিত এবং সত্য ডকুমেন্ট। এটি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এটি যে হ্যাক করা হয়েছে সে মর্মে কোনো প্রমাণ কেউ হাজির করেনি। আজ পর্যন্ত বিচারপতি নিজামুল হক, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন কেউই এটি অস্বীকার করেননি। বরং তারা এটি স্বীকারও করেছেন। স্কাইপ কথোপকথনে যাদের নাম এসেছে তারাও কেউ এটি অস্বীকার করেননি। কাজেই স্কাইপ কথোপকথন প্রতিষ্ঠিত সত্য ডকুমেন্ট।
গত ৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ স্কাইপ কেলেঙ্কারির বিষয়ে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। আদেশে বলা হয়েছে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনোভাবেই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অংশ নেয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্কাইপ সংলাপের ঘটনা সত্য না মিথ্যা তা আমরা জানি না। তবে সংলাপের ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে জিয়াউদ্দিনের এই উদ্যোগ ছিল বেআইনি ওই সংলাপের ঘটনা ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সুপারিশ। ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনর ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেছেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে। ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। এটা ট্রাইব্যুনাল ও ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের হেয় করেছে।
আদেশে বলা হয়েছে জিয়াউদ্দিন বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে স্কাইপ সংলাপে অংশ নিয়েছেন কি না তা আমাদের জানা দরকার তার কাছ থেকে। এটা তিনি করে থাকলে তা অবশ্যই আদালত অবমাননা হবে। তিনি কোনোভাবেই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না।
ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদেশে আরো বলা হয়েছে, এই সংলাপের ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তা হলে দেখা যাচ্ছে যে, জিয়াউদ্দিন একজন তৃতীয় ব্যক্তি হয়েও ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন। তিনি কে এবং কে তাকে ট্রাইব্যুনালের বিচারককে অপসারণ করার এই কর্তৃত্ব দিলো। জিয়াউদ্দিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যানের সাথে সংলাপ করে ট্রাইব্যুনাল-২কে জড়িয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন তা ন্যূনতম সভ্যতা ও ভদ্রতা বিবর্জিত।
ট্রাইব্যুনাল-২ এর এই রুলের সূত্র ধরে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনাল-১ এ আবেদন করেন তাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য। আবেদনের ওপর শুনানিতে অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে রুল জারির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-২ স্কাইপ ডকুমেন্টকে বস্তুত আমলে নিয়েছেন। কাজেই বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখা উচিত। শুনানিতে তারা বলেন, স্কাইপ ডকুমেন্ট যে হ্যাক করা হয়েছে তার কোনো প্রমাণ কেউ কোর্টের সামনে আনেননি।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা দাবি করেন, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথনের কোনো রেকর্ড হ্যাক করা ডকুমেন্ট নয়। বরং কোন পক্ষ এটা সরবরাহ করেছে। হ্যাক করা হয়েছে এ মর্মে কোনো প্রমাণ হাজির ছাড়া বলা যাবে না এটা হ্যাকিং বা অবৈধ।
এর আগে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথনের বিবরণ প্রকাশের কারণে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন হ্যাকিং ও তা প্রকাশে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের হাইকোর্টের বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। তবে ২৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়ার আদালত আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে জারি করা রুল স্থগিত করে আদেশ দেন।
স্কাইপ সংলাপ বিষয়ে চেম্বার জজ আদালতের এ স্টে অর্ডারের বিষয়ে আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের অভিমত হলো এর ফলে ট্রাইব্যুনালে স্কাইপ ডকুমেন্ট ব্যবহারে আর বাধা নেই।
No comments