রিভিউর শুনানির তারিখ নির্ধারিত হবে আজ

স্টাফ রিপোর্টার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দ-িত দুই খুনী মেজর (অব) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)-এর দায়ের করা রিভিউ পিটিশনের শুনানির তারিখ আজ বুধবার নির্ধারণ করবে আপীল বিভাগের চেম্বার জজ।
মঙ্গলবার রাষ্ট্র পৰের প্রধান কেঁৗসুলি এ্যাডভোকেট আনিসুল হক দুই খুনীর রিভিউ আবেদনের ওপর দ্রম্নত শুনানির জন্য চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের আদালতে আবেদন করেন। বিচারপতি আবেদন গ্রহণ করে বুধবার তারিখ নির্ধারণ করবেন বলে জানান।
কারাগারে আটক ৫ খুনীর মধ্যে রায় রিভিউয়ের জন্য দুই খুনী মেজর (অব) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার) আবেদন করে। এর আগে এই দুই খুনীসহ ৩ খুনী রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিৰার আবেদন করেছে। প্রাণভিৰা চেয়ে আরেক খুনি লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছে। অপর দুই খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান ও লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিৰা চেয়ে আবেদন করেনি। দুই খুনী রিভিউ পিটিশন দাখিল করলেও এখন বাকি ৩ খুনী রিভিউ পিটিশন দাখিল করেনি। এ ব্যাপারে লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান ও লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি)-এর আইনজীবী খান সাইফুর রহমান এবং লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান জানিয়েছেন, তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করবেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি ১৯ নবেম্বর ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। ঐ রায়ে আসামিদের আপীল নাকচ করেছেন। ফলে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল থাকে। এরপর ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মোঃ আব্দুল আজিজ, বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বাৰর করেন। স্বাৰরের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ১৯ ডিসেম্বর ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। ২১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, এ্যাটর্নি জেনারেল অফিসসহ বিচারিক আদালতে প্রেরণ করা হয়। ২২ ডিসেম্বর রায়ের কপি মৃতু্যদ-প্রাপ্ত আসামিদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দু্লস্নাহ আল-মামুন, খান সাইফুর রহমান, আব্দুর রেজ্জাক খানকে দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিচারিক আদালত 'লাল খামে' মৃতু্য পরোয়ানা জারি করে তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর কথা। কিন্তু কিছু আইনী জটিলতার কারণে পাঠাতে দেরি হয়। অবশেষে ৩ জানুয়ারি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এম এ গফুর কারাগারে আটক পাঁচ আসামির নামে মৃতু্য পরোয়ানা জারি করেন। কারা কর্তৃপৰ ঐদিনই মৃতু্য পরোয়ানা খুনীদের পড়ে শোনান। জেল কোড অনুযায়ী মৃতু্য পরোয়ানা জারি হবার পর ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিৰার আবেদন করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে ৩ খুনী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিৰার আবেদন করেছে। অন্য ২ খুনী এখনও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিৰার আবেদন জানায়নি।
দীর্ঘ ৩৫ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যার ২১ বছর পর বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন খুনীকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃতু্যদ- প্রদান করেন। এই রায়ের বিরম্নদ্ধে আপীল ও মৃতু্যদ- নিশ্চিতকরণের শুনানি হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই মামলায় দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। পরে তৃতীয় বেঞ্চ ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ১২ জনের মৃতু্যদ- প্রদান করে। কারাগারে আটক পাঁচ খুনী এই রায়ের বিরম্নদ্ধে আপীল করে।
৫ অক্টোবর থেকে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শুরম্ন হয়। শুনানি শেষে ১৯ নবেম্বর ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করা হয়।
মৃতু্যদ-প্রাপ্ত ১২ খুনীর মধ্যে ৫ জন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। এরা হলো লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান, লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব) বজলুল হুদা। অন্যদিকে লে. কর্নেল (অব) খোন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব) শরীফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব) এএম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব) এনএইচএমবি নুর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ ও রিসলদার মোসলেম উদ্দিন বিদেশে পলাতক রয়েছে। লে. কর্নেল (অব) আজিজ পাশা ২০০১ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুইয়েতে মারা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.