বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদঃ জাতীয়তাবাদী শক্তির সময়ের ঐক্য by মোঃ বেলায়েত হোসেন
জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সম্মিলিত শক্তি ‘জানান’ দেয়ার প্রয়োজন বাংলাদেশের মাটি এখন বেশি করে অনুভব করছে। করছে এই কারণে যে, বাংলাদেশের মাটির ওপর বিভিন্ন অপশক্তির লোলুপদৃষ্টি পড়েছে। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বাংলাদেশের মাটিকে এখন অত্যধিক মূল্যবান মনে করছে।
তারা তাদের একটি অনুগত সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড নিয়ে অত্যধিক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের হুশিয়ার করতেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সম্মিলিত শক্তি ‘জানান’ দেয়ার প্রয়োজন। বাংলাদেশের মাটির সঙ্গে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে বাংলাদেশের মাটি সব রকমের পৃষ্ঠপোষকতাই করেছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির সম্মিলিত শক্তির পরিমাপ করলে, জাতীয়তাবাদী শক্তি ৭০ শতাংশ রাজনৈতিক শক্তির অধিকারী। এই সম্মিলিত রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হলে, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটির ওপর হাত দেয়ার সাহস কোনো অপশক্তির হবে না। সব অপশক্তি ও তাদের এদেশীয় দোসররা লেজ গুটিয়ে ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাবে।আধুনিক, স্বনির্ভর ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরিতে এবং রাজনৈতিক চেতনা বিনির্মাণে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভূমিকাই উল্লেখযোগ্য। আজকের প্রজন্মের এ ভূমিকা জানা থাকা দরকার। জাতীয়তাবাদী শক্তির বদৌলতেই বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কল-কারখানা স্থাপন এবং শ্রম রফতানিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রীতিমত প্রতিযোগিতা করছে। বাংলাদেশ শত কোটি নয়, হাজার কোটি ডলারের স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহিশল্প স্থাপন, বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি; পোলিট্রি শিল্প ও দুগ্ধ শিল্পের প্রসার, গরু-ছাগল পালন, মাছ চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন; সর্বোপরি দারিদ্র্য মোচন ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং দেশব্যাপী ব্যাপকহারে রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্টসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ এসবই জাতীয়তাবাদী শক্তির ভূমিকার ফসল। এসব অর্জনের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী শক্তির শ্রম, ঘাম ও মেধা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
জাতীয়তাবাদী শক্তি বলতে বোঝায়, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারকবাহী রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। দেশের চলমান রাজনীতিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারকবাহী রাজনৈতিক দলের সংখ্যাই এখন অধিক বেশি কার্যত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল শক্তি বিএনপি : বিএনপিই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ‘ধারক’ ও ‘বাহক’। জাতীয়তাবাদী দলগুলোর সম্মিলিত রাজনৈতিক শক্তি প্রায় ৬৭ শতাংশ। আর আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দ দল মিলিয়ে বাকি ৩৩ শতাংশ রাজনৈতিক শক্তির অধিকারী। ৬৭+৩৩ = ১০০। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে আওয়ামী রাজনীতির এ ব্যবধান থাকাতেই তা ব্যালেন্স করার জন্য আওয়ামী রাজনীতির, জাতীয়তাবাদী শক্তির সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন এর সুস্পষ্ট উদাহরণ। জাতীয়তাবাদী শক্তির সাহায্য ও সমর্থন না থাকায় ওই নির্বাচনে সম্মিলিত আওয়ামী শক্তি মাত্র ৫৮টি আসন পেয়েছিল। সুতরাং দেশের চলমান রাজনীতির কঠিন হিসাব-নিকাশে জাতীয়তাবাদী শক্তির সাহায্য ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনোভাবেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষে এটা সম্ভব : বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী আদর্শে বিশ্বাসী শক্তির সাহায্যের প্রয়োজন নেই। ঠিক এই জায়গাটিতেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সার্থকতা লুক্কায়িত আছে। এটি আওয়ামী রাজনীতির জন্য বিরাট অন্তর জ্বালা। এ অন্তর জ্বালার কারণেই আওয়ামী নেতৃত্ব এখন জিয়ার নামের ওপর চড়াও হয়েছে। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা থেকে জিয়ার নাম মুছে দিচ্ছে। স্থাপনা থেকে জিয়ার নাম মুছে দিলে কি মানুষের অন্তরের বিশ্বাস থেকে জিয়ার নাম মুছে দেয়া যাবে? যাবে না। মানুষের বিশ্বাসে জিয়া আছে, থাকবে বরং যারা এই বিকৃত রাজনীতির চর্চা করছে তারাই একদিন মানুষের অন্তরের বিশ্বাস থেকে ও ইতিহাস থেকে মুছে যাবে।
বলাবাহুল্য, ’৭৫-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাবেক সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়া জাতি বিনির্মাণে, আলাদা জাতীয় পরিচয় তৈরিতে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন সংযোজন করেন। মাটি-মানুষ, জাতি-গোত্র, ধর্ম-বর্ণ ও ভাষা-সংস্কৃতির সন্নিবেশিত করে; শহীদ জিয়া এই রাজনৈতিক দর্শনের আবির্ভাব ঘটান। সেই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের চলমান রাজনীতিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনই উত্তরোত্তর বিকশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। ‘১৯৭৮ সাল থেকে অদ্য পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে তার প্রায় সবই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ধারণ করেছে। ভবিষ্যতেও হয়তো এ ধারা অব্যাহত থাকবে। থাকবে এ কারণে যে, এই রাজনৈতিক দর্শনে বেশকিছু মৌলিক বিষয়ের গ্রহণযোগ্য সমাধান আছে।
দেশের আগামী দিনের জাতীয় নেতৃত্বের যে কাঠামো তৈরি হচ্ছে, তাতে জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারকবাহী নেতৃত্বই চার ভাগের তিন ভাগ জায়গা দখল করে নিবে। দেশের আগামী দিনের রাজনীতিতে এই নেতৃত্ব দৃশ্যমান হবে; জাতীয় রাজনীতির চালকের আসনটিও দখল করে নেবে জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারকবাহী নেতৃত্ব।
শহীদ জিয়া একজন সৈনিক, স্বাধীনতার ঘোষক, সেক্টর কমান্ডার ও মাঠ পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনুধাবন করে ছিলেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন পটভূমিতে তৈরি করেছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা। যার প্রায় তিন দিক দিয়ে বেষ্টিত একটি বৃহত্ রাষ্ট্র ভারত। আর ভারত ও ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব চেতনাগতভাবেই আধিপত্যবাদী মনোভাব সম্পন্ন। ভারতের প্রশাসনিক কাঠামো ও ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে ‘অখণ্ড’ ভারত ‘থিউরিতে’। এ কারণেই ভারত আধিপত্যবাদী মনোভাব সম্পন্ন। এ আধিপত্যবাদের ছোবল থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত রাখতে, জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারকবাহী একটি মধ্যপন্থি টেকসই জাতি গঠন অপরিহার্য। আর এ টেকসই জাতি গঠনের লক্ষ্যে শহীদ জিয়া বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে সংযোজন করেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী । এর গঠন প্রণালীতেই সন্নিবেশিত আছে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য মধ্যপন্থি জাতি গঠনের বিস্ময়কর সব চেতনা ও উপাদান। এটি ব্যক্তিজীবনে ধারণ করে একজন মধ্যপন্থি, সহনশীল, উদার ও দেশপ্রেমিক মানুষ হওয়া যায়, একজন আদর্শবান রাজনৈতিক কর্মী ও আদর্শবান নেতা হওয়া যায়, সর্বোপরি একজন অনুকরণীয় মানুষ হওয়া যায়। যে মানুষের চেতনায় থাকবে না কোনো উগ্রতা, ধর্মান্ধতা ও ধর্মহীনতা, থাকবে না হিংসা-বিদ্বেষ ও অস্থিরতা, থাকবে না জাতিগত কোনো ভেদাভেদ। যে মানুষরা জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস নয়, শুধু গড়বে; বিভেদের রাজনীতি নয়, ঐক্যের রাজনীতি করবে, জাতিকে বিভক্ত করা নয় বরং সব বিভক্ত থেকে জনগণকে মুক্ত রাখবে। জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড নয় বরং সব কাজেই জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখবে। এরকম গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ তৈরি করার জন্যই শহীদ জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। আর এ জন্যই দেশে এই ‘দর্শন’ উত্তরোত্তর বিকশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
’৭০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে শহীদ জিয়া বিভিন্ন মতাদর্শে বিভক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকা তলে সমবেত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। একটি দিকনির্দেশনাহীন জাতি সঠিক দিক দর্শন পেয়েছিল। তত্কালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ব্যাপক বিস্তৃত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ নেতৃত্বের রূপরেখা ও কাঠামো। মাত্র কয়েক বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শহীদ জিয়া সর্বস্তরে ও সর্বমহলেই চিরঞ্জীব হয়ে আছেন। স্বল্প সময়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন কোটি কোটি মানুষের ধ্যানে-জ্ঞানে ও অন্তরে। পরিশুদ্ধ চেতনা, ব্যক্তিগত সততা ও সময়োপযোগী দিকদর্শনই শহীদ জিয়াকে স্বল্প সময়ে এত বিশাল খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। শহীদ জিয়ার এ স্বল্প সময়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ও গবেষকদের জন্য অনন্তকাল অবদি গভীর গবেষণার খোরাক হয়ে থাকবে।
শহীদ জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি বেগম জিয়া ’৮০-র দশকের শুরু থেকে, বেগম জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি উত্তরোত্তর বিকশিত হয়েছে। ’৮০-র দশকের যুব ও ছাত্রসমাজ জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে নিজেদের তৈরি করে নেয়ার মতো সব উপাদানই পেয়েছে। এক কথায় বলা যায়, ’৮০-র দশকটি ছিল জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য স্বর্ণযুগ। ’৮০-র দশকে দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলেই এর যৌক্তিকতা পাওয়া যাবে। ’৮০-র দশকের যুব ও ছাত্র সমাজ শহীদ জিয়ার সততা থেকে নিজে সত্ হওয়ার উপাদান পেয়েছিল। শহীদ জিয়া ও বেগম জিয়ার নেতৃত্ব থেকে নিজে নেতৃত্ব শেখার ও নেতৃত্ব দেয়ার উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা পেয়েছে, সর্বোপরি নিজেদের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে।
গণতন্ত্রের জন্য ‘কালে কালে’ দেশের সবাই অনেক কিছু দিয়েছে, আবার অনেকে সব কিছু দিয়েছে। এ দেয়ার বদৌলতেই বারবার দেশে গণতন্ত্র আলোর মুখ দেখেছে। এই নিকট অতীতেও মইন-ফখরুদ্দীনের জরুরি সরকার সাধারণ মানুষের সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ তাদের রুটি-রুজির সব উত্সই ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছিল। এছাড়াও আরও বিভিন্নভাবে দেশের সাধারণ মানুষ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, এগুলো দেশের সব মহলেরই জানা। ওই ক্ষতির রেশ দেশের সাধারণ মানুষ এখন পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ভয়ভীতি, আতঙ্ক ও দুঃখ-বেদনা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ ওই গণতন্ত্রহীন দিনগুলো অতিক্রম করে এসেছে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনা ও গণতন্ত্রের জন্য তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা বেগম জিয়া উপলব্ধি করেন বলেই এখনও সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন।
গত চৌদ্দ মাসে বেগম জিয়া এমন কোনো কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেননি, যা সরকারের জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। বরং বাংলাদেশের চিরাচরিত রাজনীতিকে বদলিয়ে দিয়ে দেশের বিরাজমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে ও দেশের সদ্যমুক্তি পাওয়া গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে, সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে ও শঙ্কামুক্ত রাখতে বেগম জিয়া সরকারকে সহযোগিতার একাধিক ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বেগম জিয়ার এই উদারতাকে প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রকার মূল্য দিয়েছেন বলে দেশের জনগণ মনে করে না। জনগণ মনে করে, সরকার নিজেই দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে দেশে নিত্যনতুন সমস্যার সৃষ্টি করছে। সরকার বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করতে মইন-ফখরুদ্দীনের পথই অনুসরণ করছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মইন-ফখরুদ্দীনের চেয়েও আরও বেশি করছে। এহেন অবস্থায় জাতীয়তাবাদী শক্তি চুপ করে ঘরে বসে থাকতে পারে না। জাতীয়তাবাদী শক্তি এলোমেলো, ঐক্যহীন ও যার যার মতো করে চলার কারণেই সরকার ও অপশক্তিগুলোর সাহস বেড়ে গেছে। এরা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে বিদেশি শক্তির সহায়তায় ক্ষমতার মসনদকে দির্ঘায়িত করার স্বপ্ন দেখছে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটা ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অহেতুক বিভেদ-বিভক্তি ও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। একটি পরিকল্পিত ‘ব্লু-প্রিন্ট’ অনুযায়ীই যে এগুলো করা হচ্ছে, এটি অত্যন্ত পরিষ্কার। চতুর্দিক দিয়ে বাংলাদেশের মাটিকে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান ও ইরাকের ন্যায় পরিস্থিতি সৃষ্টি করার প্রেক্ষাপট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে উত্তপ্ত করা হয়েছে। সেখানে সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ উন্মুখ করে দেয়া হয়েছে। সিলেট সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ চালিয়ে মানুষকে আহত-নিহত করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিদেশি সৈন্য প্রবেশ করানোর ‘উছিলা’ খোঁজা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে গভীর খাদে ফেলে দেয়ার সব প্রস্তুতি বোধহয় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আর কিছুদিন জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যহীনভাবে থাকলে সত্যিকারের বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া নাও যেতে পারে। এ অবস্থায় সব জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী দল ও সংগঠনকে অনৈক্য থেকে বের হয়ে এসে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দৃশ্যমান করতে হবে জাতীয়তাবাদী শক্তির সম্মিলিত নেতৃত্বের মাপকাঠি। সব জাতীয়তাবাদী শক্তি এক ‘প্লাটফর্মে’ ঐক্যবদ্ধ হলে জাতীয় রাজনীতির ৭০ শতাংশ শক্তির অধিকারী হওয়া সম্ভব। আর এই শক্তি দৃশ্যমান হলে দেশে সক্রিয় সব অপশক্তি ও তাদের দোসররা পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক
No comments