ভবন নির্মাণের অভিজ্ঞতা নিতে ইউরোপ-আমেরিকা সফর! by একরামুল হক
চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে সিডিএ স্কয়ার নামে ২০, ২২ ও ২৫ তলার তিনটি আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। বহুতল এই ভবন নির্মাণের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালি যাচ্ছেন আট কর্মকর্তা।
তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই ‘শিক্ষাসফরের’ জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭ লাখ টাকা।
‘ভাগ্যবান’ এই আট কর্মকর্তার মধ্যে চার কর্মকর্তা দুই মন্ত্রণালয়ের। বাকি চারজন সিডিএর প্রকৌশলী। এই চারজনের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা চলছে। মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তাসহ এই তিনজন প্রকল্পটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টও নন।
দেশে ২০ থেকে ২৫ তলা ভবনের সংখ্যা এখন অনেক। চট্টগ্রামেও এই উচ্চতার বেশ কটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বহুতল ভবন দেখতে ইউরোপ ও আমেরিকার তিন দেশ ঘোরা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইন্টারেস্টেড লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেশে ২০ তলার বেশি উচ্চতার বেশ কটি ভবন নির্মাণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আমরা ৩০ তলা উচ্চতার একটি ভবন নির্মাণ করছি। ঢাকায় আমাদের তৈরি এ রকম আরও কয়েকটি ভবন আছে।’ ২০ থেকে ২৫ তলা ভবন নির্মাণের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ইতালি সফরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো ঢাকাতেই এ ধরনের বহুতল ভবন নির্মাণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ আছে।’
সিডিএ স্কয়ার: এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। ২০১৩ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে প্রাথমিক নকশা করা হয়েছে। বর্তমানে নকশা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ২০ তলা ভবনটি নির্মাণের জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর দরপত্র নেওয়া হয়েছে ২২ তলা ভবনটির জন্য। তিনটি ভবনে ২০০ ফ্ল্যাট করে তা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করবে সংস্থাটি। ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে।
‘শিক্ষাসফরের’ জন্য যাঁরা মনোনীত হয়েছেন: পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান এস এম জহির খান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. খলিলুর রহমান এবং একই মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের উপপ্রধান মোহাম্মদ জালাল আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিশ্লেষক মোখলেছুজ্জামান। আর সিডিএর চার নির্বাহী প্রকৌশলী হলেন: মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, আহম্মদ মঈনুদ্দীন, মুহাম্মদ শাহাবুদ্দীন খালেদ ও মো. শামীম।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তার কোনো ভূমিকা থাকবে না।
সিডিএর চার প্রকৌশলীর মধ্যে মো. শামীম ওই প্রকল্পের পরিচালক। তিনি ছাড়া বাকি তিন প্রকৌশলী দুদকের মামলার আসামি। চাকরিবিধি অনুযায়ী, এই তিনজনের এখন সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) থাকার কথা। তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করার দায়িত্ব গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু তাঁরা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হয়েও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন।
এই ‘শিক্ষাসফরের’ বিষয়ে সম্প্রতি সরকারি আদেশ (জিও) জারি হয়েছে। আদেশে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আট কর্মকর্তার আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে শিক্ষাসফরের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সিডিএ স্কয়ার নামের প্রকল্পের আওতায় তাঁরা বিদেশ সফরে যাচ্ছেন।’
জানা গেছে, এই সফরের খরচ ধরা হয়েছে ৭৭ লাখ টাকা। চউকের গৃহ-আবাসন প্রকল্প থেকেই খরচের টাকা জোগান দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিডিএ স্কয়ার আসলে অনেক বড় প্রকল্প। ভবনগুলো নির্মাণের আগে কিছু অভিজ্ঞতা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।’
আর সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসিরউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে এই বিদেশ সফরের জন্য কারা অনুমতি পেয়েছেন এবং কীভাবে পেয়েছেন, তা আমি জানি না।’
দুদকের তিন আসামি
মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান: তিনি সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি কালুরঘাট-বহদ্দারহাট উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়ে হওয়া একটি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২৩ মে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলাটি হয়েছিল ২০১০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। এই মামলায় তিনিসহ ১১ জন আসামির বিরুদ্ধে ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৭ টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
মুহাম্মদ শাহাবুদ্দীন খালেদ: তিনিও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের তিনটি মামলা আছে। তদন্তে একটি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান। বাকি দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ২১ লাখ টাকার আর্থিক অনিয়মের কারণে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। উভয় মামলার তিনি বিচারাধীন আসামি।
আহম্মদ মঈনুদ্দীন: তিনি সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৭ টাকা।
‘ভাগ্যবান’ এই আট কর্মকর্তার মধ্যে চার কর্মকর্তা দুই মন্ত্রণালয়ের। বাকি চারজন সিডিএর প্রকৌশলী। এই চারজনের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা চলছে। মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তাসহ এই তিনজন প্রকল্পটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টও নন।
দেশে ২০ থেকে ২৫ তলা ভবনের সংখ্যা এখন অনেক। চট্টগ্রামেও এই উচ্চতার বেশ কটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বহুতল ভবন দেখতে ইউরোপ ও আমেরিকার তিন দেশ ঘোরা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইন্টারেস্টেড লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেশে ২০ তলার বেশি উচ্চতার বেশ কটি ভবন নির্মাণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আমরা ৩০ তলা উচ্চতার একটি ভবন নির্মাণ করছি। ঢাকায় আমাদের তৈরি এ রকম আরও কয়েকটি ভবন আছে।’ ২০ থেকে ২৫ তলা ভবন নির্মাণের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ইতালি সফরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো ঢাকাতেই এ ধরনের বহুতল ভবন নির্মাণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ আছে।’
সিডিএ স্কয়ার: এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। ২০১৩ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে প্রাথমিক নকশা করা হয়েছে। বর্তমানে নকশা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ২০ তলা ভবনটি নির্মাণের জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর দরপত্র নেওয়া হয়েছে ২২ তলা ভবনটির জন্য। তিনটি ভবনে ২০০ ফ্ল্যাট করে তা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করবে সংস্থাটি। ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে।
‘শিক্ষাসফরের’ জন্য যাঁরা মনোনীত হয়েছেন: পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান এস এম জহির খান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. খলিলুর রহমান এবং একই মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের উপপ্রধান মোহাম্মদ জালাল আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিশ্লেষক মোখলেছুজ্জামান। আর সিডিএর চার নির্বাহী প্রকৌশলী হলেন: মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, আহম্মদ মঈনুদ্দীন, মুহাম্মদ শাহাবুদ্দীন খালেদ ও মো. শামীম।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তার কোনো ভূমিকা থাকবে না।
সিডিএর চার প্রকৌশলীর মধ্যে মো. শামীম ওই প্রকল্পের পরিচালক। তিনি ছাড়া বাকি তিন প্রকৌশলী দুদকের মামলার আসামি। চাকরিবিধি অনুযায়ী, এই তিনজনের এখন সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) থাকার কথা। তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করার দায়িত্ব গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু তাঁরা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হয়েও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন।
এই ‘শিক্ষাসফরের’ বিষয়ে সম্প্রতি সরকারি আদেশ (জিও) জারি হয়েছে। আদেশে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আট কর্মকর্তার আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে শিক্ষাসফরের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সিডিএ স্কয়ার নামের প্রকল্পের আওতায় তাঁরা বিদেশ সফরে যাচ্ছেন।’
জানা গেছে, এই সফরের খরচ ধরা হয়েছে ৭৭ লাখ টাকা। চউকের গৃহ-আবাসন প্রকল্প থেকেই খরচের টাকা জোগান দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিডিএ স্কয়ার আসলে অনেক বড় প্রকল্প। ভবনগুলো নির্মাণের আগে কিছু অভিজ্ঞতা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।’
আর সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসিরউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে এই বিদেশ সফরের জন্য কারা অনুমতি পেয়েছেন এবং কীভাবে পেয়েছেন, তা আমি জানি না।’
দুদকের তিন আসামি
মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান: তিনি সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি কালুরঘাট-বহদ্দারহাট উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়ে হওয়া একটি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২৩ মে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলাটি হয়েছিল ২০১০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। এই মামলায় তিনিসহ ১১ জন আসামির বিরুদ্ধে ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৭ টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
মুহাম্মদ শাহাবুদ্দীন খালেদ: তিনিও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের তিনটি মামলা আছে। তদন্তে একটি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান। বাকি দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ২১ লাখ টাকার আর্থিক অনিয়মের কারণে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। উভয় মামলার তিনি বিচারাধীন আসামি।
আহম্মদ মঈনুদ্দীন: তিনি সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৭ টাকা।
No comments