গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদন- ১০ বছরে সোয়া লাখ কোটি টাকা পাচার by আসজাদুল কিবরিয়া
বাংলাদেশ থেকে গত এক দশকে অন্তত এক হাজার ৪০৬ কোটি ডলার বা এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে। ২০০১ থেকে ২০১০ সময়কালে এই পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ ও ২০১০ সালে।
বিশ্বের যে ১৪৩টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, সেই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
পাচারকৃত এই অর্থ চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার সমান এবং ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দ্বিগুণের বেশি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফরম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০১-২০১০’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গত সোমবার প্রকাশ করা করেছে, তাতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পাচার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে থাকে।
জিএফআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার ও অর্থনীতিবিদ সারাহ ফ্রেইটাস এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছেন। ডেভ কার এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনীতিবিদ ছিলেন।
এতে দেখা যায় যে আলোচ্য সময়কালে গড়ে প্রতিবছর ১৪০ কোটি ডলার বা ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার ৮০ টাকা ধরে) অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয়েছে। দুর্নীতি, কর ফাঁকি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা, ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, যার পরিমাণ ২৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার (২২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা)। পরের বছর ২০০৭ সালে তা সামান্য কমে হয় ২৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার (১৮ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা)। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তা অবশ্য নেমে আসে যথাক্রমে ৮৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার (ছয় হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা) ও ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারে (পাঁচ হাজার ১৯২ কোটি টাকা)। কিন্তু ২০১০ সালে তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারে (১৮ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা)।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ তসলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে বাইরে যে অর্থ চলে যাচ্ছে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা এর একটা কারণ। বিশেষ করে কোনো একটি সরকারের সময়ে যাঁরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন, তাঁরা সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে দেশের বাইরে অর্থ-সম্পদ সরিয়ে নেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অর্থ সরিয়ে নেন।’
এম এ তসলিম আরও বলেন, ‘উন্নত বিশ্বও এখন গরিব দেশ থেকে অর্থ-সম্পদ স্থানান্তর করতে নানাভাবে উৎসাহ জোগায়। একটা বাড়ি কিনলে বা বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করলে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়। আর তাই যাঁরা অভিবাসী হচ্ছেন, তাঁরাও অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে বড় অঙ্কের অর্থ-সম্পদ অন্যত্র স্থানান্তর করা যায় না, সেহেতু অবৈধ পথে স্থানান্তর বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সব যে কালো টাকা, তা নয়। বৈধ আয়ও অবৈধ পথে চলে যাচ্ছে।’
বৈশ্বিক চিত্র: জিএফআই বলছে, এক দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার কোটি ডলার অবৈধ পথে বেড়িয়ে গেছে। এরপর এসব অর্থ জমা হয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং করের সুখস্বর্গ (ট্যাক্স হেভেন) বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে। কেননা, এসব দেশ ও অঞ্চলের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সম্পদের ওপর কোনো ধরনের কর আরোপ করা হয় না বা হলেও তা নামমাত্র। সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা সিশেলস এ রকম দেশ এবং কেইম্যান আইল্যান্ড (যুক্তরাজ্য), বারমুডা (যুক্তরাজ্য) বা দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) এ রকম অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
জিএফআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ দুই লাখ ৭৪ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে মেক্সিকো (৪৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার)। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে নাম রয়েছে মালয়েশিয়া (২৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) ও সৌদি আরবের (২১ হাজার কোটি ডলার)। রাশিয়ার (১৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার) অবস্থান পঞ্চম।
পাচার হওয়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান অষ্টম। ১০ বছরে ভারত থেকে ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ অবৈধ পথে বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া আরও তিনটি দেশের নাম রয়েছে। নেপালের অবস্থান ৫৮তম। দেশটি থেকে ৮০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। পাকিস্তান (৯৪তম) থেকে ২৫০ কোটি ডলার এবং শ্রীলঙ্কা (১০৫তম) থেকে ১৫৩ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
পদ্ধতি: প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ পথে অর্থ স্থানান্তর বা টাকা পাচারের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে এর পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের হিসাব নির্ণয়ে একাধিক পদ্ধতি আছে। তাতে রক্ষণশীল প্রাক্কলন থেকে শুরু করে বিস্তৃত প্রাক্কলন করা সম্ভব। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখানো হয়েছে যে একটি দেশ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ হিসাব পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন: শুধু লেনদেনের ভারসাম্য থেকে হিসাব করা হলে ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৩৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে এটি অত্যন্ত রক্ষণশীল প্রাক্কলন।
এ প্রসঙ্গে জিএফআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার বলেন, ‘এসব পদ্ধতিতে যে হিসাব নির্ণয় করা হয়, তাতেও আসলে রক্ষণশীল পরিসংখ্যানই পাওয়া যায়। কেননা, সেবা খাতে বাণিজ্যের ভুল দর, চালানের মূল্য অবনমন, হাওলা লেনদেন ও বড় ধরনের নগদ লেনদেন উপেক্ষিত থেকে যায়। এর ফলে মাদক চোরাচালান, মানব পাচার ও অন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থের লেনদেনের বিষয়টি আর উঠে আসে না।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) নামে আরেক প্রতিষ্ঠান জুলাই মাসে ‘দ্য প্রাইস অব অফশোর রিভিজিটেড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছিল, ১৯৭৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অন্তত দুই হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০১০ সময়কালে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬০ কোটি ডলার (৫২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)। কিন্তু জিএফআইয়ের প্রাক্কলনে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া অর্থের পরিমাণ এর দ্বিগুণের বেশি।
পাচারকৃত এই অর্থ চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার সমান এবং ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দ্বিগুণের বেশি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফরম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০১-২০১০’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গত সোমবার প্রকাশ করা করেছে, তাতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পাচার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে থাকে।
জিএফআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার ও অর্থনীতিবিদ সারাহ ফ্রেইটাস এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছেন। ডেভ কার এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনীতিবিদ ছিলেন।
এতে দেখা যায় যে আলোচ্য সময়কালে গড়ে প্রতিবছর ১৪০ কোটি ডলার বা ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার ৮০ টাকা ধরে) অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয়েছে। দুর্নীতি, কর ফাঁকি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা, ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, যার পরিমাণ ২৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার (২২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা)। পরের বছর ২০০৭ সালে তা সামান্য কমে হয় ২৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার (১৮ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা)। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তা অবশ্য নেমে আসে যথাক্রমে ৮৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার (ছয় হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা) ও ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারে (পাঁচ হাজার ১৯২ কোটি টাকা)। কিন্তু ২০১০ সালে তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারে (১৮ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা)।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ তসলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে বাইরে যে অর্থ চলে যাচ্ছে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা এর একটা কারণ। বিশেষ করে কোনো একটি সরকারের সময়ে যাঁরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন, তাঁরা সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে দেশের বাইরে অর্থ-সম্পদ সরিয়ে নেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অর্থ সরিয়ে নেন।’
এম এ তসলিম আরও বলেন, ‘উন্নত বিশ্বও এখন গরিব দেশ থেকে অর্থ-সম্পদ স্থানান্তর করতে নানাভাবে উৎসাহ জোগায়। একটা বাড়ি কিনলে বা বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করলে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়। আর তাই যাঁরা অভিবাসী হচ্ছেন, তাঁরাও অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে বড় অঙ্কের অর্থ-সম্পদ অন্যত্র স্থানান্তর করা যায় না, সেহেতু অবৈধ পথে স্থানান্তর বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সব যে কালো টাকা, তা নয়। বৈধ আয়ও অবৈধ পথে চলে যাচ্ছে।’
বৈশ্বিক চিত্র: জিএফআই বলছে, এক দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার কোটি ডলার অবৈধ পথে বেড়িয়ে গেছে। এরপর এসব অর্থ জমা হয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং করের সুখস্বর্গ (ট্যাক্স হেভেন) বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে। কেননা, এসব দেশ ও অঞ্চলের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সম্পদের ওপর কোনো ধরনের কর আরোপ করা হয় না বা হলেও তা নামমাত্র। সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা সিশেলস এ রকম দেশ এবং কেইম্যান আইল্যান্ড (যুক্তরাজ্য), বারমুডা (যুক্তরাজ্য) বা দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) এ রকম অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
জিএফআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ দুই লাখ ৭৪ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে মেক্সিকো (৪৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার)। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে নাম রয়েছে মালয়েশিয়া (২৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) ও সৌদি আরবের (২১ হাজার কোটি ডলার)। রাশিয়ার (১৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার) অবস্থান পঞ্চম।
পাচার হওয়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান অষ্টম। ১০ বছরে ভারত থেকে ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ অবৈধ পথে বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া আরও তিনটি দেশের নাম রয়েছে। নেপালের অবস্থান ৫৮তম। দেশটি থেকে ৮০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। পাকিস্তান (৯৪তম) থেকে ২৫০ কোটি ডলার এবং শ্রীলঙ্কা (১০৫তম) থেকে ১৫৩ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
পদ্ধতি: প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ পথে অর্থ স্থানান্তর বা টাকা পাচারের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে এর পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের হিসাব নির্ণয়ে একাধিক পদ্ধতি আছে। তাতে রক্ষণশীল প্রাক্কলন থেকে শুরু করে বিস্তৃত প্রাক্কলন করা সম্ভব। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখানো হয়েছে যে একটি দেশ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ হিসাব পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন: শুধু লেনদেনের ভারসাম্য থেকে হিসাব করা হলে ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৩৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে এটি অত্যন্ত রক্ষণশীল প্রাক্কলন।
এ প্রসঙ্গে জিএফআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার বলেন, ‘এসব পদ্ধতিতে যে হিসাব নির্ণয় করা হয়, তাতেও আসলে রক্ষণশীল পরিসংখ্যানই পাওয়া যায়। কেননা, সেবা খাতে বাণিজ্যের ভুল দর, চালানের মূল্য অবনমন, হাওলা লেনদেন ও বড় ধরনের নগদ লেনদেন উপেক্ষিত থেকে যায়। এর ফলে মাদক চোরাচালান, মানব পাচার ও অন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থের লেনদেনের বিষয়টি আর উঠে আসে না।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) নামে আরেক প্রতিষ্ঠান জুলাই মাসে ‘দ্য প্রাইস অব অফশোর রিভিজিটেড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছিল, ১৯৭৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অন্তত দুই হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০১০ সময়কালে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬০ কোটি ডলার (৫২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)। কিন্তু জিএফআইয়ের প্রাক্কলনে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া অর্থের পরিমাণ এর দ্বিগুণের বেশি।
No comments