তাঁরা চারজন by ফারহানা মোবিন
অ্যানেস্থেসিয়া শব্দটির সঙ্গে অস্ত্রোপচারের যেন যোগ রয়েছে। আসলেই তাই। কেননা যেকোনো অস্ত্রোপচারের আগে দেহের যে অংশে কাটা, ছেঁড়া, সেলাই হবে সেই অংশটি অবশ করতে হয়। কখনো রোগীর নির্দিষ্ট অঙ্গ অবশ করতে হয়, কখনো পুরো শরীর।
আর এই গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজটি করেন যাঁরা, তাঁরা অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট। আমাদের দেশে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও সফলভাবে কাজ করছেন এ পেশায়। এ রকম চারজন নারী অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের কথা নিয়ে এই প্রতিবেদন।
১.
অধ্যাপক সায়েরা খাতুন। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে সিঙ্গাপুরের ট্যাংটং সেনজ হাসপাতাল থেকে নিউরো অ্যানেস্থেসিয়াতে ফেলোশিপ করেন। ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল, শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কাজ করেছেন তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে। বর্তমানে তিনি ঢাকার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান।
তিনি মনে করেন, পরিবারের সবার সমর্থনের জন্য তিনি আজকের অধ্যাপক সায়েরা খাতুন।
তিনি বলেন, স্বপ্ন হতে হবে পাহাড়সম উচ্চ। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। সৎ পরিশ্রমের সফলতাই পারে মানুষকে অবিস্মরণীয় সাফল্য দিতে। সফল হওয়ার জন্য সুখ-দুঃখকে নিতে হবে সহজভাবে। ‘আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে’—এই মনোভাব ধারণ করতে হবে হূদয়ে ও মনে। বাস্তবেও সেভাবেই কাজ করতে হবে।
২.
কখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, কখনো ঢাকা ডেন্টাল কলেজ কিংবা বিএমএর (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) বিভিন্ন প্রকল্পে রোগীদের অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি হাসিনা বেগম। অ্যানেস্থেসিয়া ক্লিনিক্যাল সার্জারির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট কাজ করেন পর্দার অন্তরালে থেকে। যেকোনো অপারেশনের জন্য এটি ভীষণ জরুরি বিষয়। ফলে তাঁদের দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। বললেন, ‘আমি আমার পরিবার থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। অনেকেই মনে করতেন, মেয়েরা এই পেশায় এলে ভালো করবেন কি না! কিন্তু এখন অনেক মেয়ে আসছেন। ভালোও করছেন তাঁরা।’
৩.
আরেকজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট অধ্যাপক মাহমুদা আকতার। বর্তমানে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে বড় বোনের উৎসাহে তিনি অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে পড়েন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যানেস্থেসিয়ায় নারীদের কাজ করার রয়েছে প্রচুর সুযোগ। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়ে পড়ার জন্য তাঁকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আজকের পর্যায়ে আসার জন্য সব সময় পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন। তাঁর মতে, শুধু অ্যানেস্থেসিয়া নয়, যেকোনো বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পড়াশোনা ও চর্চা। সে জন্য দরকার পারিবারিক সহযোগিতা।
৪.
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রুমঝুম ম্রং। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার এই নারী ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভীষণ মনোযোগী ছিলেন। ময়মনসিংহের স্কুল-কলেজেই তাঁর এসএসসি ও এইচএসসি। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। এমবিবিএস শেষ করার পর ২০০১ সালে নাটোর মিশন হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এরপর কয়েক বছর কাজ করেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জয়রামকুরা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতাল ও ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেসড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। কাজ করতে করতে হঠাৎ রুমা অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট হওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। কারণ, অনেক নারী রোগী চান তাঁদের অ্যানেস্থেসিয়ার কাজটি যেন কোনো নারীই করেন। কিন্তু এর জন্য তো আবার ডিপ্লোমা করতে হবে। ভর্তি হলেন অ্যানেস্থেসিয়ার ডিপ্লোমা কোর্সে। ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও কাজ করেন। এ বছর চলে আসেন ঢাকায়। যোগ দেন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই পর্যায়ে আসার জন্য করতে হয়েছে অনেক পরিশ্রম। আর উৎসাহ প্রেরণা হয়ে সব সময় পাশে থেকেছেন স্বামী, বাবা, মা, ভাইবোনসহ পুরো পরিবার।’
মানুষকে অজ্ঞান করার পর আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অনেক জটিল কাজ। অপারেশনের পর কারও জ্ঞান না ফেরা মানেই সর্বনাশ। অ্যানেস্থেসিয়াতে একজন চিকিৎসককে শুধু ইনজেকশন, ওষুধ বা গ্যাস দিয়ে অজ্ঞান বা অবশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে নখদর্পণে রাখতে হয় সবকিছু। অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট অজ্ঞান করানোর পরই সার্জন শুরু করেন অপারেশন। তাই এখানে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
১.
অধ্যাপক সায়েরা খাতুন। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে সিঙ্গাপুরের ট্যাংটং সেনজ হাসপাতাল থেকে নিউরো অ্যানেস্থেসিয়াতে ফেলোশিপ করেন। ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল, শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কাজ করেছেন তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে। বর্তমানে তিনি ঢাকার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান।
তিনি মনে করেন, পরিবারের সবার সমর্থনের জন্য তিনি আজকের অধ্যাপক সায়েরা খাতুন।
তিনি বলেন, স্বপ্ন হতে হবে পাহাড়সম উচ্চ। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। সৎ পরিশ্রমের সফলতাই পারে মানুষকে অবিস্মরণীয় সাফল্য দিতে। সফল হওয়ার জন্য সুখ-দুঃখকে নিতে হবে সহজভাবে। ‘আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে’—এই মনোভাব ধারণ করতে হবে হূদয়ে ও মনে। বাস্তবেও সেভাবেই কাজ করতে হবে।
২.
কখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, কখনো ঢাকা ডেন্টাল কলেজ কিংবা বিএমএর (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) বিভিন্ন প্রকল্পে রোগীদের অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি হাসিনা বেগম। অ্যানেস্থেসিয়া ক্লিনিক্যাল সার্জারির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট কাজ করেন পর্দার অন্তরালে থেকে। যেকোনো অপারেশনের জন্য এটি ভীষণ জরুরি বিষয়। ফলে তাঁদের দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। বললেন, ‘আমি আমার পরিবার থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। অনেকেই মনে করতেন, মেয়েরা এই পেশায় এলে ভালো করবেন কি না! কিন্তু এখন অনেক মেয়ে আসছেন। ভালোও করছেন তাঁরা।’
৩.
আরেকজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট অধ্যাপক মাহমুদা আকতার। বর্তমানে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে বড় বোনের উৎসাহে তিনি অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে পড়েন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যানেস্থেসিয়ায় নারীদের কাজ করার রয়েছে প্রচুর সুযোগ। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়ে পড়ার জন্য তাঁকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আজকের পর্যায়ে আসার জন্য সব সময় পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন। তাঁর মতে, শুধু অ্যানেস্থেসিয়া নয়, যেকোনো বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পড়াশোনা ও চর্চা। সে জন্য দরকার পারিবারিক সহযোগিতা।
৪.
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রুমঝুম ম্রং। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার এই নারী ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভীষণ মনোযোগী ছিলেন। ময়মনসিংহের স্কুল-কলেজেই তাঁর এসএসসি ও এইচএসসি। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। এমবিবিএস শেষ করার পর ২০০১ সালে নাটোর মিশন হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এরপর কয়েক বছর কাজ করেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জয়রামকুরা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতাল ও ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেসড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। কাজ করতে করতে হঠাৎ রুমা অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট হওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। কারণ, অনেক নারী রোগী চান তাঁদের অ্যানেস্থেসিয়ার কাজটি যেন কোনো নারীই করেন। কিন্তু এর জন্য তো আবার ডিপ্লোমা করতে হবে। ভর্তি হলেন অ্যানেস্থেসিয়ার ডিপ্লোমা কোর্সে। ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও কাজ করেন। এ বছর চলে আসেন ঢাকায়। যোগ দেন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই পর্যায়ে আসার জন্য করতে হয়েছে অনেক পরিশ্রম। আর উৎসাহ প্রেরণা হয়ে সব সময় পাশে থেকেছেন স্বামী, বাবা, মা, ভাইবোনসহ পুরো পরিবার।’
মানুষকে অজ্ঞান করার পর আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অনেক জটিল কাজ। অপারেশনের পর কারও জ্ঞান না ফেরা মানেই সর্বনাশ। অ্যানেস্থেসিয়াতে একজন চিকিৎসককে শুধু ইনজেকশন, ওষুধ বা গ্যাস দিয়ে অজ্ঞান বা অবশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে নখদর্পণে রাখতে হয় সবকিছু। অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট অজ্ঞান করানোর পরই সার্জন শুরু করেন অপারেশন। তাই এখানে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
No comments