ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন-বিশ্বজিতের শরীরে মাত্র একটি কোপ!
বিশ্বজিতের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর পিঠে মাত্র একটি বড় জখম ছিল। আর বাঁ পা থেঁতলে গিয়েছিল। মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণকে দায়ী করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তকারী অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্বজিতের পিঠের দিকের ওই কাটা জখম ছাড়া আর কোনো জখম পাওয়া যায়নি।'
গত ৯ ডিসেম্বর সকালে অবরোধের সময় বিশ্বজিৎকে চাপাতি, ছুরি দিয়ে কোপানো এবং রড দিয়ে আঘাত করার দৃশ্য গণমাধ্যমে বারবার প্রচারিত হয়। সে ক্ষেত্রে বিশ্বজিতের শরীরে মাত্র একটি জখম থাকাটা বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেছে স্বজনরা। বিশ্বজিতের ভাই উত্তম কুমার দাস বলেন, 'ওর (বিশ্বজিৎ) শরীরে অনেক কাটা জখম ছিল। চিকিৎসকরা আর পুলিশ তো এগুলো দেখেছে। এখন কেন একটি জখমের কথা বলছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।'
বিশ্বজিতের মৃত্যুর পর সুরতহাল প্রতিবেদনে তাঁর শরীরে তিন স্থানে বড় জখম আছে বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বজিৎকে যে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তিনিও বলেন, তিনটি বড় জখমসহ বিশ্বজিতের শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বজিতের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান শাকিল একটি চাপাতি বহন করছিল। রাজন তালুকদারের কাছে ছিল ছুরি। ওই ছুরি কয়েকজনের হাতবদল হয়। অন্যরা বিশ্বজিৎকে রড দিয়ে পেটায়। তাদের হাতে কমপক্ষে ১৫টি রড ছিল। আগের বিভিন্ন সংঘর্ষের সময় সংগ্রহ করা ধারালো ও সূচালো রডগুলো মারামারির জন্য সংরক্ষণ করে এই ক্যাডাররা। এসব অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে, পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎকে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর আট দিনের রিমান্ডে থাকা ছয় আসামি ডিবি পুলিশের কাছে বিশ্বজিৎকে দফায় দফায় এলোপাতাড়ি কোপানো এবং পিটিয়ে জখম করার কথা স্বীকার করেছে। তারা পুলিশকে জানিয়েছে, প্রথমে আঘাত করে শাকিল, রাজন, ইমদাদ এবং ইউনুসসহ তার গ্রুপের ক্যাডাররা। পরে হামলা চালায় লিমন, নাহিদ, তাহসিন, সৈকত, সোহেল, সজীবসহ অন্যরা। নাহিদ, শাকিল, শাওন, সাইফুল, কিবরিয়া ও টিপু পুলিশকে জানায়, শাকিলের কাছেই চাপাতি ছিল। ছুরি নিয়ে ভিক্টোরিয়া ক্লিনিকে ওঠে রাজন। সিঁড়িতে প্রথমে রাজনই বিশ্বজিৎকে ছুরিকাঘাত করে। পরে শাকিল কোপ দেয়। রাজনের ছুরিটি তার কাছ থেকে নিয়ে আরও দুই-একজন জখম করে বিশ্বজিৎকে। তবে এই হামলাকারীদের নাম বলতে পারেনি তারা। লিমন ও তাহসিন রড দিয়ে খোঁচায়। ইউনুস মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। নাহিদের হাতে ছিল একটি ধারালো রড। সম্প্রতি এক সংঘর্ষের সময় নাহিদ কবি নজরুল কলেজ থেকে ওই রডটি সংগ্রহ করে। শাওন, সোহেল, আল আমিন উজ্জল, আলাউদ্দিন, আজিজুল, মামুন, শিপলু, সুমনসহ অন্তত ১৫ জনের হাতে রড ছিল।
ময়নাতদন্তে যা আছে : গত শনিবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বিশ্বজিতের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে বলা হয়, বিশ্বজিতের পিঠের ডান পাশে বগলের নিচের অংশে তিন ইঞ্চি দীর্ঘ ও দেড় ইঞ্চি গভীর একটি জখম ছিল। তার বাঁ পায়ে একটি থেঁতলে যাওয়ার দাগ দেখা গেছে। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, 'রক্তশূন্যতা' অর্থাৎ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বজিতের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাকসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চার কারণে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। বগলের নিচে বড় জখম ছিল। তার ধমনি কাটা গেছে। সারা শরীরে আঘাতের কারণে তাঁর ভিসেরা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। হার্ট বা হৃদযন্ত্র রক্তশূন্য হয়ে পড়ে।'
সুরতহাল রিপোর্ট ও চিকিৎসকদের বক্তব্য : বিশ্বজিতের মৃত্যুর পর সূত্রাপুর থানার এসআই জাহিদুল হক তাঁর সুরাতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বজিতের পিঠে ফোলা জখম আছে। ডান হাতের নিচে পেছন দিকে কাটা জখম আছে। বাম পায়ের হাঁটুর নিচে ছোলা জখম। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার বাদী সূত্রাপুর থানার এসআই জালাল উদ্দিনও বলেন, 'লাশটি ময়নাতদন্ত করতে পাঠানোর সময় উল্লেখ করা হয়, নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে।'
বিশ্বজিৎকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক সাহাদেব রাজবংশী তাঁকে কার্ডিওলোজি বিভাগে স্থানান্তর করেন। সেখানে ডাক্তার তানভীর সিদ্দিকসহ ছয়জন চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তানভীর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে পিঠের জখমটি বড় ছিল।' ময়নাতদন্তে মাত্র একটি জখম পাওয়া গেছে শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
ফাঁসানো হচ্ছে নিরপরাধ ব্যক্তিদের : ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্বজিৎ হত্যায় যারা জড়িত, গণমাধ্যমের ছবি ও গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যে আমরা তাদের শনাক্ত করেছি। অভিযুক্তদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।' তবে অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের আটক করছে না। আর গত ১১ ডিসেম্বর অন্য মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে ফাঁসানো হয়েছে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে। সূত্র জানায়, ছবিতে শনাক্ত হওয়া আসামি আলাউদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। গত সোমবার সে সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ কোতোয়ালি থানা পুলিশকে জানালেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ নেয়নি।
গত ১১ ডিসেম্বর আদালতপাড়া এলাকায় 'সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির' অভিযোগে আটজনকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এদের চারজনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামুন অর রশীদ (২৪), ফারুক হোসেন (২৩), মোসলেহ উদ্দিন ওরফে মোসলেম (৪০) ও কাজী নাহিদুজ্জামান ওরফে তুহিন (৩২) নামে অন্য চারজনকে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার আসামি করা হয়। একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং পরবর্তী সময়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হওয়া এদের ১২ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। রাজধানীর দক্ষিণখানের মধুবাগের পূর্বপাড়ার হারুনুর রশিদের ছেলে মামুন। পূর্বপাড়ারই এয়ারপোর্ট লেনের ২ নম্বর বাড়ির ওয়াকিলউদ্দিনের ছেলে ফারুক। ডেমরার সারুলিয়ার টেংরা এলাকার শামছুজ্জামানের ছেলে নাহিদুজ্জামান তুহিন। মোসলেহউদ্দিনের বাসা মধ্য বাড্ডায়। তার বাবার নাম মজিবুল হক।
এ প্রতিবেদক মামুনের বাসায় গেলে তার মা ঝিনু আক্তার অভিযোগ করেন, উত্তরায় মামুন ও ফারুক মিলে কাপড়ের দোকান চালায়। ১১ ডিসেম্বর সকালে তারা এক আত্মীয়ের জামিন হবে বলে আদালত এলাকায় যায়। সেখান থেকে পুলিশ তাদের আটক করে। মোসলেহ উদ্দিনের স্ত্রী পারভীন আক্তার জানান, তাঁর স্বামী মধ্য বাড্ডার লিংক রোডে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন। ১১ ডিসেম্বর নবাবপুর থেকে বৈদ্যুতিক সামগ্রী কিনতে গিয়েছিলেন তিনি।
গত ৯ ডিসেম্বর সকালে অবরোধের সময় বিশ্বজিৎকে চাপাতি, ছুরি দিয়ে কোপানো এবং রড দিয়ে আঘাত করার দৃশ্য গণমাধ্যমে বারবার প্রচারিত হয়। সে ক্ষেত্রে বিশ্বজিতের শরীরে মাত্র একটি জখম থাকাটা বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেছে স্বজনরা। বিশ্বজিতের ভাই উত্তম কুমার দাস বলেন, 'ওর (বিশ্বজিৎ) শরীরে অনেক কাটা জখম ছিল। চিকিৎসকরা আর পুলিশ তো এগুলো দেখেছে। এখন কেন একটি জখমের কথা বলছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।'
বিশ্বজিতের মৃত্যুর পর সুরতহাল প্রতিবেদনে তাঁর শরীরে তিন স্থানে বড় জখম আছে বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বজিৎকে যে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তিনিও বলেন, তিনটি বড় জখমসহ বিশ্বজিতের শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বজিতের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান শাকিল একটি চাপাতি বহন করছিল। রাজন তালুকদারের কাছে ছিল ছুরি। ওই ছুরি কয়েকজনের হাতবদল হয়। অন্যরা বিশ্বজিৎকে রড দিয়ে পেটায়। তাদের হাতে কমপক্ষে ১৫টি রড ছিল। আগের বিভিন্ন সংঘর্ষের সময় সংগ্রহ করা ধারালো ও সূচালো রডগুলো মারামারির জন্য সংরক্ষণ করে এই ক্যাডাররা। এসব অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে, পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎকে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর আট দিনের রিমান্ডে থাকা ছয় আসামি ডিবি পুলিশের কাছে বিশ্বজিৎকে দফায় দফায় এলোপাতাড়ি কোপানো এবং পিটিয়ে জখম করার কথা স্বীকার করেছে। তারা পুলিশকে জানিয়েছে, প্রথমে আঘাত করে শাকিল, রাজন, ইমদাদ এবং ইউনুসসহ তার গ্রুপের ক্যাডাররা। পরে হামলা চালায় লিমন, নাহিদ, তাহসিন, সৈকত, সোহেল, সজীবসহ অন্যরা। নাহিদ, শাকিল, শাওন, সাইফুল, কিবরিয়া ও টিপু পুলিশকে জানায়, শাকিলের কাছেই চাপাতি ছিল। ছুরি নিয়ে ভিক্টোরিয়া ক্লিনিকে ওঠে রাজন। সিঁড়িতে প্রথমে রাজনই বিশ্বজিৎকে ছুরিকাঘাত করে। পরে শাকিল কোপ দেয়। রাজনের ছুরিটি তার কাছ থেকে নিয়ে আরও দুই-একজন জখম করে বিশ্বজিৎকে। তবে এই হামলাকারীদের নাম বলতে পারেনি তারা। লিমন ও তাহসিন রড দিয়ে খোঁচায়। ইউনুস মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। নাহিদের হাতে ছিল একটি ধারালো রড। সম্প্রতি এক সংঘর্ষের সময় নাহিদ কবি নজরুল কলেজ থেকে ওই রডটি সংগ্রহ করে। শাওন, সোহেল, আল আমিন উজ্জল, আলাউদ্দিন, আজিজুল, মামুন, শিপলু, সুমনসহ অন্তত ১৫ জনের হাতে রড ছিল।
ময়নাতদন্তে যা আছে : গত শনিবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বিশ্বজিতের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে বলা হয়, বিশ্বজিতের পিঠের ডান পাশে বগলের নিচের অংশে তিন ইঞ্চি দীর্ঘ ও দেড় ইঞ্চি গভীর একটি জখম ছিল। তার বাঁ পায়ে একটি থেঁতলে যাওয়ার দাগ দেখা গেছে। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, 'রক্তশূন্যতা' অর্থাৎ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বজিতের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাকসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চার কারণে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। বগলের নিচে বড় জখম ছিল। তার ধমনি কাটা গেছে। সারা শরীরে আঘাতের কারণে তাঁর ভিসেরা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। হার্ট বা হৃদযন্ত্র রক্তশূন্য হয়ে পড়ে।'
সুরতহাল রিপোর্ট ও চিকিৎসকদের বক্তব্য : বিশ্বজিতের মৃত্যুর পর সূত্রাপুর থানার এসআই জাহিদুল হক তাঁর সুরাতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বজিতের পিঠে ফোলা জখম আছে। ডান হাতের নিচে পেছন দিকে কাটা জখম আছে। বাম পায়ের হাঁটুর নিচে ছোলা জখম। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার বাদী সূত্রাপুর থানার এসআই জালাল উদ্দিনও বলেন, 'লাশটি ময়নাতদন্ত করতে পাঠানোর সময় উল্লেখ করা হয়, নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে।'
বিশ্বজিৎকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক সাহাদেব রাজবংশী তাঁকে কার্ডিওলোজি বিভাগে স্থানান্তর করেন। সেখানে ডাক্তার তানভীর সিদ্দিকসহ ছয়জন চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তানভীর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে পিঠের জখমটি বড় ছিল।' ময়নাতদন্তে মাত্র একটি জখম পাওয়া গেছে শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
ফাঁসানো হচ্ছে নিরপরাধ ব্যক্তিদের : ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্বজিৎ হত্যায় যারা জড়িত, গণমাধ্যমের ছবি ও গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যে আমরা তাদের শনাক্ত করেছি। অভিযুক্তদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।' তবে অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের আটক করছে না। আর গত ১১ ডিসেম্বর অন্য মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে ফাঁসানো হয়েছে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে। সূত্র জানায়, ছবিতে শনাক্ত হওয়া আসামি আলাউদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। গত সোমবার সে সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ কোতোয়ালি থানা পুলিশকে জানালেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ নেয়নি।
গত ১১ ডিসেম্বর আদালতপাড়া এলাকায় 'সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির' অভিযোগে আটজনকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এদের চারজনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামুন অর রশীদ (২৪), ফারুক হোসেন (২৩), মোসলেহ উদ্দিন ওরফে মোসলেম (৪০) ও কাজী নাহিদুজ্জামান ওরফে তুহিন (৩২) নামে অন্য চারজনকে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার আসামি করা হয়। একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং পরবর্তী সময়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হওয়া এদের ১২ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। রাজধানীর দক্ষিণখানের মধুবাগের পূর্বপাড়ার হারুনুর রশিদের ছেলে মামুন। পূর্বপাড়ারই এয়ারপোর্ট লেনের ২ নম্বর বাড়ির ওয়াকিলউদ্দিনের ছেলে ফারুক। ডেমরার সারুলিয়ার টেংরা এলাকার শামছুজ্জামানের ছেলে নাহিদুজ্জামান তুহিন। মোসলেহউদ্দিনের বাসা মধ্য বাড্ডায়। তার বাবার নাম মজিবুল হক।
এ প্রতিবেদক মামুনের বাসায় গেলে তার মা ঝিনু আক্তার অভিযোগ করেন, উত্তরায় মামুন ও ফারুক মিলে কাপড়ের দোকান চালায়। ১১ ডিসেম্বর সকালে তারা এক আত্মীয়ের জামিন হবে বলে আদালত এলাকায় যায়। সেখান থেকে পুলিশ তাদের আটক করে। মোসলেহ উদ্দিনের স্ত্রী পারভীন আক্তার জানান, তাঁর স্বামী মধ্য বাড্ডার লিংক রোডে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন। ১১ ডিসেম্বর নবাবপুর থেকে বৈদ্যুতিক সামগ্রী কিনতে গিয়েছিলেন তিনি।
No comments