নেকড়ে যখন বোকা by আবু সাঈদ জুবেরী
দুনিয়ার সবচেয়ে বোকা প্রাণী কোনটি? জানি, জানি। সবাই একবাক্যে বলবে, গাধা। কারণ কী? কারণ হচ্ছে গাধা খুব খাটতে পারে। মুখ বুজে সব কষ্ট সহ্য করে। আর কোনো প্রতিবাদ করতে জানে না। কী জানি! সব পশু কি প্রতিবাদের ভাষা জানে?
জানুক আর নাই জানুক, গাধা হচ্ছে গাধা। দুনিয়ার সেরা বোকা প্রাণী। বুদ্ধি-শুদ্ধি একেবারেই নেই। একেবারে গাধা। সেই গাধাকে সুযোগ পেলে সবাই হেনস্থা করবে। খাটাবে। অতি স্বাভাবিক ব্যাপার।
খেতে চাইলেও তো করার কিছু নেই। বেচারা। একদিন এ রকম একটি গাধা সবুজ ঘাসের মাঠ দেখে খুশি হয়ে উঠল। ‘বহু দিন এমন কচি ঘাস খাইনি’—গাধার লেজ নড়তে থাকল বারবার। জিবখানা লকলকিয়ে উঠল।
সে ভাবল, মালিক গেছেন দূরদেশে, অনেক দিন থাকবেন। এই ফাঁকে কচি ঘাস খেয়ে আমি তরতাজা হয়ে উঠব। আমার স্বাস্থ্য দেখে মালিক খুশি হয়ে যাবেন। সাবাসি দেবেন আমাকে। ভোরবেলা সে তাই চলে আসে সবুজ ঘাসের মাঠে। হেলেদুলে কচি ঘাস খায়। বিশ্রাম নেয়। জাবর কাটে। আবার খাওয়া-দাওয়ায় মন দেয়। গাধাটা ভাবতেও পারেনি, প্রথম দিনই সে নজরে পড়ে গিয়েছিল এক নেকড়ের। নেকড়েটি ছিল লোভী আর হিংস্র।
লোভী নেকড়ে প্রথম দিন আক্রমণ করেনি গাধাটাকে। ভেবেছিল, খাওয়া-দাওয়া করে একটু স্বাস্থ্যবান হোক, তারপর হামলা চালাবে। তখন খেতেও স্বাদ লাগবে গাধাটাকে। এভাবে দিন যায়। রাত যায়। নেকড়ে প্রতিদিন সকালে একবার গাধাটাকে দেখে, বিকেলে ঘরে ফেরার সময় আরেকবার নজর বুলিয়ে যায়। ‘আহারে, বড় নাদুস-নুদুস হচ্ছে গাধাটা। খেতে না-জানি কী মজা লাগবে।’ লোভী নেকড়ের জিবে পানি আসার জোগাড় হয়।
কিন্তু সময় তো কারও জন্য বসে থাকে না। দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছিল দিন। এক-দুই-তিন করে অনেক দিন।
এক সকালে নেকড়ের চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম—‘ওরে বাপরে, কী মোটা হয়ে গেছে গাধাটা! এখন তো ওর সঙ্গে পেরে ওঠাও মুশকিল। না, আর অপেক্ষা করা যায় না।’ নেকড়ে ভাবামাত্র গাধার পিছু নিল।
গাধা আর তত দিনে গাধা নেই। খেয়ে-দেয়ে তার বুদ্ধি-শুদ্ধিও বেশ বেড়েছে। সে নেকড়ের মতলব টের পেয়ে গেল।
গাধা খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটতে লাগল। নেকড়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ভায়া, পায়ে আবার হলো কী?’
খোঁড়াতে খাঁড়াতে গাধা উত্তর দিল, ‘আর বোলো না। পায়ে কাঁটা বিঁধেছে। হাঁটতে পারছি না।...তুমি যদি খুলে দিতে।’
নেকড়ে রেগে গেল, ‘তোমার সাহস তো কম নয়। সামান্য এক গাধা হয়ে দুর্ধর্ষ নেকড়েকে বলছ পায়ের কাঁটা খুলে দিতে। এর পরিণতি কী জানো?’
গাধা ঠান্ডা গলায় বলল, ‘পরিণতি আর কী? মারবে, তারপর আমাকে খেয়ে ফেলবে। এই তো?’ নেকড়ে এ কথায় ভারি খুশি। গদগদ হয়ে বলল, ‘কে বলে তুমি গাধা! আমি যে তোমাকে খেতে চাইছি, তা-ও টের পেয়ে গেছ তুমি। তোমার মতো বুদ্ধিমান প্রাণী আমি খুব কম দেখেছি।’
গাধাটা আরও নিশ্চিত হলো যে নেকড়ের মতলব মোটেও ভালো নয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সে হামলা চালাবে তার ওপর।
গাধা তড়িঘড়ি করে বলে উঠল, ‘তোমার মতো একটা প্রাণীর খাদ্য হতে আমার কোনো আপত্তি নেই। ধন্যই হব আমি। কিন্তু...।’ বলতে বলতে সে থেমে গেল।
নেকড়ের গলায় অধীর আগ্রহ, ‘কিন্তু বলে থেমে পড়লে যে? বলো না ভায়া, তোমার কথা শুনতে ভারি ভালো লাগছে।’
গাধা বলল, ‘না, ভাবছিলাম, পায়ে কাঁটা থাকলে তোমার খেতে কষ্ট হবে। আমার পায়ে ব্যথা হচ্ছে, কাঁটাসহ খেলে তোমার গলায়ও ব্যথা হবে।’ নেকড়ে ভাবল, ঠিকই তো।
সে বলল, ‘এসো ভায়া, কাছে এসো। পায়ের কাঁটাটা আমি খুলে দিচ্ছি।’ নেকড়ে গাধার এক ঠ্যাঙে কাঁটা খোঁজার জন্য মাথাটা যেই না বাড়িয়ে দিয়েছে, অমনি প্রচণ্ড এক লাথি। সেই লাথি গিয়ে লাগল নেকড়ের মুখ বরাবর। এমন প্রচণ্ড মার নেকড়ে জীবনেও খায়নি, তার সব কটি দাঁত ঝরঝরিয়ে পড়ে গেল মাটিতে।
লেজ উঁচিয়ে প্রাণভয়ে ছুটতে লাগল নেকড়ে।
খেতে চাইলেও তো করার কিছু নেই। বেচারা। একদিন এ রকম একটি গাধা সবুজ ঘাসের মাঠ দেখে খুশি হয়ে উঠল। ‘বহু দিন এমন কচি ঘাস খাইনি’—গাধার লেজ নড়তে থাকল বারবার। জিবখানা লকলকিয়ে উঠল।
সে ভাবল, মালিক গেছেন দূরদেশে, অনেক দিন থাকবেন। এই ফাঁকে কচি ঘাস খেয়ে আমি তরতাজা হয়ে উঠব। আমার স্বাস্থ্য দেখে মালিক খুশি হয়ে যাবেন। সাবাসি দেবেন আমাকে। ভোরবেলা সে তাই চলে আসে সবুজ ঘাসের মাঠে। হেলেদুলে কচি ঘাস খায়। বিশ্রাম নেয়। জাবর কাটে। আবার খাওয়া-দাওয়ায় মন দেয়। গাধাটা ভাবতেও পারেনি, প্রথম দিনই সে নজরে পড়ে গিয়েছিল এক নেকড়ের। নেকড়েটি ছিল লোভী আর হিংস্র।
লোভী নেকড়ে প্রথম দিন আক্রমণ করেনি গাধাটাকে। ভেবেছিল, খাওয়া-দাওয়া করে একটু স্বাস্থ্যবান হোক, তারপর হামলা চালাবে। তখন খেতেও স্বাদ লাগবে গাধাটাকে। এভাবে দিন যায়। রাত যায়। নেকড়ে প্রতিদিন সকালে একবার গাধাটাকে দেখে, বিকেলে ঘরে ফেরার সময় আরেকবার নজর বুলিয়ে যায়। ‘আহারে, বড় নাদুস-নুদুস হচ্ছে গাধাটা। খেতে না-জানি কী মজা লাগবে।’ লোভী নেকড়ের জিবে পানি আসার জোগাড় হয়।
কিন্তু সময় তো কারও জন্য বসে থাকে না। দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছিল দিন। এক-দুই-তিন করে অনেক দিন।
এক সকালে নেকড়ের চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম—‘ওরে বাপরে, কী মোটা হয়ে গেছে গাধাটা! এখন তো ওর সঙ্গে পেরে ওঠাও মুশকিল। না, আর অপেক্ষা করা যায় না।’ নেকড়ে ভাবামাত্র গাধার পিছু নিল।
গাধা আর তত দিনে গাধা নেই। খেয়ে-দেয়ে তার বুদ্ধি-শুদ্ধিও বেশ বেড়েছে। সে নেকড়ের মতলব টের পেয়ে গেল।
গাধা খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটতে লাগল। নেকড়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ভায়া, পায়ে আবার হলো কী?’
খোঁড়াতে খাঁড়াতে গাধা উত্তর দিল, ‘আর বোলো না। পায়ে কাঁটা বিঁধেছে। হাঁটতে পারছি না।...তুমি যদি খুলে দিতে।’
নেকড়ে রেগে গেল, ‘তোমার সাহস তো কম নয়। সামান্য এক গাধা হয়ে দুর্ধর্ষ নেকড়েকে বলছ পায়ের কাঁটা খুলে দিতে। এর পরিণতি কী জানো?’
গাধা ঠান্ডা গলায় বলল, ‘পরিণতি আর কী? মারবে, তারপর আমাকে খেয়ে ফেলবে। এই তো?’ নেকড়ে এ কথায় ভারি খুশি। গদগদ হয়ে বলল, ‘কে বলে তুমি গাধা! আমি যে তোমাকে খেতে চাইছি, তা-ও টের পেয়ে গেছ তুমি। তোমার মতো বুদ্ধিমান প্রাণী আমি খুব কম দেখেছি।’
গাধাটা আরও নিশ্চিত হলো যে নেকড়ের মতলব মোটেও ভালো নয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সে হামলা চালাবে তার ওপর।
গাধা তড়িঘড়ি করে বলে উঠল, ‘তোমার মতো একটা প্রাণীর খাদ্য হতে আমার কোনো আপত্তি নেই। ধন্যই হব আমি। কিন্তু...।’ বলতে বলতে সে থেমে গেল।
নেকড়ের গলায় অধীর আগ্রহ, ‘কিন্তু বলে থেমে পড়লে যে? বলো না ভায়া, তোমার কথা শুনতে ভারি ভালো লাগছে।’
গাধা বলল, ‘না, ভাবছিলাম, পায়ে কাঁটা থাকলে তোমার খেতে কষ্ট হবে। আমার পায়ে ব্যথা হচ্ছে, কাঁটাসহ খেলে তোমার গলায়ও ব্যথা হবে।’ নেকড়ে ভাবল, ঠিকই তো।
সে বলল, ‘এসো ভায়া, কাছে এসো। পায়ের কাঁটাটা আমি খুলে দিচ্ছি।’ নেকড়ে গাধার এক ঠ্যাঙে কাঁটা খোঁজার জন্য মাথাটা যেই না বাড়িয়ে দিয়েছে, অমনি প্রচণ্ড এক লাথি। সেই লাথি গিয়ে লাগল নেকড়ের মুখ বরাবর। এমন প্রচণ্ড মার নেকড়ে জীবনেও খায়নি, তার সব কটি দাঁত ঝরঝরিয়ে পড়ে গেল মাটিতে।
লেজ উঁচিয়ে প্রাণভয়ে ছুটতে লাগল নেকড়ে।
No comments