বে অব বেঙ্গল কমিশন গঠন করা হোক by আশফাকুর রহমান
এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ মূলগতভাবে একটি মেরিটাইম নেশন। সমুদ্র নিয়ে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভাবতে হবে। বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমান শতাব্দী এশিয়ার_ এভাবেই বলা হচ্ছে
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাংলাদেশের জন্য সমুদ্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে। ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরেও আমরা বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় কর্তৃত্ব পেয়েছি। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সার্বিকভাবে সরকার এবং বিশেষভাবে অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনায় রেখেছে। তবে আমার মনে হয়, এ বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করার ভার 'বে অব বেঙ্গল কমিশন' গঠন করে তার ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো হবে। আমাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞরা এতে থাকবেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও সহায়তা নিতে সমস্যা নেই। তেল-গ্যাস-খনিজ-মৎস্যসম্পদের যে ভাণ্ডার ওই এলাকায় রয়েছে তার সর্বোত্তম ব্যবহারের রূপরেখা তারা উপস্থিত করবেন। এখনই তা করে ফেলতে হবে, এমন নয়। আমরা ভারতের সঙ্গে যে মামলা রয়েছে তার নিষ্পত্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি। তবে যে এলাকার ওপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নিরাপত্তার ইস্যুটি বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের কোস্টগার্ড রয়েছে কিন্তু বিশাল সমুদ্র এলাকার সুরক্ষা তাদের দিয়ে সম্ভব হবে না। এ দায়িত্ব দিতে হবে নৌবাহিনীকে। আমাদের স্থলভাগের জন্য যেমন সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে, তেমনি জলভাগে চাই নৌবাহিনী। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ মূলগতভাবে একটি মেরিটাইম নেশন। সমুদ্র নিয়ে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভাবতে হবে।
বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমান শতাব্দী এশিয়ার_ এভাবেই বলা হচ্ছে। এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উত্থান সবার নজরে রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ এলাকায় রয়েছে। এখানে আমাদের বলিষ্ঠ উপস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা নিয়ে যাওয়া এবং তাতে সাফল্য ছিনিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করতে হবে। এখন প্রস্তুতি ভারতের সঙ্গে মামলার জন্য। এজন্য কূটনৈতিক অঙ্গনে তৎপরতা বাড়াতে হবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের জন্যও সচেষ্ট হতে হবে। তারা সবকিছু হারিয়েছে_ এমন ভাবার কারণ নেই। বরং বলা উচিত উভয় পক্ষ জয়ী হয়েছে। দেশটি এখন উদারনীতি গ্রহণ করেছে। তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ রয়েছে। অন্যদের প্রতিও একই মনোভাব থাকা চাই। আমরা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সুবিধা আরও বাড়াতে পারি। বঙ্গোপসাগরে নতুন কয়েকটি বন্দর গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সমুদ্র এলাকা দিয়ে যাতে নানা দেশের জাহাজ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও আমাদের।
মিয়ানমার কিন্তু ইতিমধ্যে রায় মেনে নিয়েছে। এটা সদিচ্ছার নিদর্শন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি মিয়ানমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এখন নতুন প্রেক্ষাপটে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে 'বিমসটেক' একটি ভালো ফোরাম হতে পারে। কেউ কেউ মনে করতে পারেন, মিয়ানমারের যে সামরিক শক্তি তা সমুদ্রে কর্তৃত্ব বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি জোরালো করার জন্য অতীতে তাদের একাধিক সামরিক অভিযানের কথা উল্লেখ করা হয়। তাদের সেনাবাহিনী যুদ্ধে পরীক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এখন এ ধরনের কোনো শঙ্কা আছে বলে মনে হয় না। আমরা বরং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশি করে ভাবতে পারি। এ দায়িত্ব মূলত নেবে বে অব বেঙ্গল কমিশন। একই সঙ্গে আমরা নৌ-উপস্থিতি বাড়াব, কিন্তু যুদ্ধের সামান্যতম বাসনাও যেন না থাকে। যেসব কোম্পানি বঙ্গোপসাগরে সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের কাজে যুক্ত থাকবে তাদের নিরাপত্তার জন্য এটা করা চাই।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সমকালে 'কাছের দেশ থেকে সম্ভাবনার হাতছানি' শীর্ষক উপসম্পাদকীয় কলাম লিখেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে সামনে রেখে ব্যক্ত হয়েছিল এ আশাবাদ। এখন প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বাড়ানোর সুযোগ কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে।
স আশফাকুর রহমান : সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সেন্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স স্টাডিজের প্রধান
এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নিরাপত্তার ইস্যুটি বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের কোস্টগার্ড রয়েছে কিন্তু বিশাল সমুদ্র এলাকার সুরক্ষা তাদের দিয়ে সম্ভব হবে না। এ দায়িত্ব দিতে হবে নৌবাহিনীকে। আমাদের স্থলভাগের জন্য যেমন সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে, তেমনি জলভাগে চাই নৌবাহিনী। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ মূলগতভাবে একটি মেরিটাইম নেশন। সমুদ্র নিয়ে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভাবতে হবে।
বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমান শতাব্দী এশিয়ার_ এভাবেই বলা হচ্ছে। এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উত্থান সবার নজরে রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ এলাকায় রয়েছে। এখানে আমাদের বলিষ্ঠ উপস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা নিয়ে যাওয়া এবং তাতে সাফল্য ছিনিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করতে হবে। এখন প্রস্তুতি ভারতের সঙ্গে মামলার জন্য। এজন্য কূটনৈতিক অঙ্গনে তৎপরতা বাড়াতে হবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের জন্যও সচেষ্ট হতে হবে। তারা সবকিছু হারিয়েছে_ এমন ভাবার কারণ নেই। বরং বলা উচিত উভয় পক্ষ জয়ী হয়েছে। দেশটি এখন উদারনীতি গ্রহণ করেছে। তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ রয়েছে। অন্যদের প্রতিও একই মনোভাব থাকা চাই। আমরা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সুবিধা আরও বাড়াতে পারি। বঙ্গোপসাগরে নতুন কয়েকটি বন্দর গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সমুদ্র এলাকা দিয়ে যাতে নানা দেশের জাহাজ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও আমাদের।
মিয়ানমার কিন্তু ইতিমধ্যে রায় মেনে নিয়েছে। এটা সদিচ্ছার নিদর্শন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি মিয়ানমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এখন নতুন প্রেক্ষাপটে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে 'বিমসটেক' একটি ভালো ফোরাম হতে পারে। কেউ কেউ মনে করতে পারেন, মিয়ানমারের যে সামরিক শক্তি তা সমুদ্রে কর্তৃত্ব বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি জোরালো করার জন্য অতীতে তাদের একাধিক সামরিক অভিযানের কথা উল্লেখ করা হয়। তাদের সেনাবাহিনী যুদ্ধে পরীক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এখন এ ধরনের কোনো শঙ্কা আছে বলে মনে হয় না। আমরা বরং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশি করে ভাবতে পারি। এ দায়িত্ব মূলত নেবে বে অব বেঙ্গল কমিশন। একই সঙ্গে আমরা নৌ-উপস্থিতি বাড়াব, কিন্তু যুদ্ধের সামান্যতম বাসনাও যেন না থাকে। যেসব কোম্পানি বঙ্গোপসাগরে সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের কাজে যুক্ত থাকবে তাদের নিরাপত্তার জন্য এটা করা চাই।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সমকালে 'কাছের দেশ থেকে সম্ভাবনার হাতছানি' শীর্ষক উপসম্পাদকীয় কলাম লিখেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে সামনে রেখে ব্যক্ত হয়েছিল এ আশাবাদ। এখন প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বাড়ানোর সুযোগ কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে।
স আশফাকুর রহমান : সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সেন্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স স্টাডিজের প্রধান
No comments