বাড়ি বাড়ি কবরের সারি by সত্যজিত্ ঘোষ
বাবার কাঁধে ছেলের লাশ, ভাইয়ের কাঁধে বোনের, স্বামীর কাঁধে স্ত্রীর। বাড়ি বাড়ি নতুন কবরের সারি আর স্বজন হারানোর বিলাপ। শরীয়পুরের তিন উপজেলার অনেক গ্রামের দৃশ্য এখন এমন। একসঙ্গে এত লাশ এর আগে কখনো দেখেনি ওই এলাকার মানুষ।
গত সোমবার রাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই শরীয়তপুরের নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও ডামুড্যা উপজেলার বাসিন্দা।
লঞ্চডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন ভেদরগঞ্জের কার্তিকপুর গ্রামের বাসিন্দা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের চিত্রগ্রাহক মাসুদ চৌধুরী (৩০), তাঁর স্ত্রী পান্না চৌধুরী (২৫), একমাত্র ছেলে আড়াই বছর বয়সী মাহিম চৌধুরী ও চাচাতো ভাই শিমুল চৌধুরী (১৬)। বুধবার লঞ্চটি তীরে তোলার পর কেবিনের দরজা ভেঙে পাওয়া যায় তাঁদের লাশ। বুধবার রাতেই গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে তাঁদের।
গতকাল কার্তিকপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদের বাবা ফজলে করিম চৌধুরী ও মা ছাকিয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে শোকে স্তব্ধ পুরো কার্তিকপুর গ্রাম।
একই গ্রামের মোহাম্মদ আলী ফকিরের ছেলে শামীম ফকির ও তাঁর স্ত্রী পলি বেগম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। দেশে এসেছিলেন বেড়াতে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে আরও চারজন স্বজন নিয়ে লঞ্চে করে যাচ্ছিলেন ঢাকায়। বুধবার লঞ্চের কেবিনের দরজা ভেঙে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের সাদেক মৃধা (৫০), তাঁর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪০), মেয়ে ইতি (১২) ও শ্যালক খালেক চৌকিদার (৩৫) ছিলেন ওই লঞ্চের যাত্রী। তাঁরা সবাই মারা গেছেন। মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয় সাদেকের লাশ। সাদেকের ছেলে সেলিম বলেন, ‘লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে বাবা আমাকে ফোন করেন। তিনি শুধু বলেন, “আমরা মারা যাচ্ছি। আমাদের জন্য দোয়া করো, আল্লাহ হাফেজ।”’
মাল তুলতে বাধা দিয়েছিল যাত্রীরা: দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া নড়িয়া উপজেলার গুলমাইজ গ্রামের মান্নান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুরেশ্বর ঘাট থেকে লঞ্চে যাত্রী উঠেছিল তিন শতাধিক। ঘণ্টা খানেক চলার পর কাচিকাটায় মাঝ নদীতে লঞ্চটি থেমে যায়। তখন দেখি, কয়েকটি ট্রলার থেকে মরিচের বস্তা ওঠানো হচ্ছে। প্রায় চার শতাধিক বস্তা ছিল ট্রলারগুলোতে। এত মাল তুলতে যাত্রীরা বাধা দিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।’
প্রিয় সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা: নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামের বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী ওলিউল ঢালী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার আগে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি লঞ্চে পানি উঠে গেছে। দুই ছেলে আমার গলা জড়িয়ে ধরেছে। ওদের নিয়ে তলিয়ে যাচ্ছি। ওদের বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। তখন পেছন থেকে কে যেন আমার বুক খামছে ধরেছে। তাকে ছাড়াতে গিয়ে এক ছেলে হাত থেকে ছুটে যায়। তাকে খুঁজতে আরেকজন ছুটে যায়। আমি ভেসে উঠি। পানির ভেতরে তাদের খুঁজতে থাকি। হঠাত্ ভাসমান বস্তা পেয়ে সেটি আঁকড়ে ধরি। ভাসতে ভাসতে অন্য একটি লঞ্চে উঠি। এভাবেই আমার হাত থেকে ছেলে দুটি হারিয়ে গেল। বাবা হয়ে সন্তানদের বাঁচাতে পারলাম না।’
লঞ্চডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন ভেদরগঞ্জের কার্তিকপুর গ্রামের বাসিন্দা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের চিত্রগ্রাহক মাসুদ চৌধুরী (৩০), তাঁর স্ত্রী পান্না চৌধুরী (২৫), একমাত্র ছেলে আড়াই বছর বয়সী মাহিম চৌধুরী ও চাচাতো ভাই শিমুল চৌধুরী (১৬)। বুধবার লঞ্চটি তীরে তোলার পর কেবিনের দরজা ভেঙে পাওয়া যায় তাঁদের লাশ। বুধবার রাতেই গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে তাঁদের।
গতকাল কার্তিকপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদের বাবা ফজলে করিম চৌধুরী ও মা ছাকিয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে শোকে স্তব্ধ পুরো কার্তিকপুর গ্রাম।
একই গ্রামের মোহাম্মদ আলী ফকিরের ছেলে শামীম ফকির ও তাঁর স্ত্রী পলি বেগম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। দেশে এসেছিলেন বেড়াতে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে আরও চারজন স্বজন নিয়ে লঞ্চে করে যাচ্ছিলেন ঢাকায়। বুধবার লঞ্চের কেবিনের দরজা ভেঙে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের সাদেক মৃধা (৫০), তাঁর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪০), মেয়ে ইতি (১২) ও শ্যালক খালেক চৌকিদার (৩৫) ছিলেন ওই লঞ্চের যাত্রী। তাঁরা সবাই মারা গেছেন। মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয় সাদেকের লাশ। সাদেকের ছেলে সেলিম বলেন, ‘লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে বাবা আমাকে ফোন করেন। তিনি শুধু বলেন, “আমরা মারা যাচ্ছি। আমাদের জন্য দোয়া করো, আল্লাহ হাফেজ।”’
মাল তুলতে বাধা দিয়েছিল যাত্রীরা: দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া নড়িয়া উপজেলার গুলমাইজ গ্রামের মান্নান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুরেশ্বর ঘাট থেকে লঞ্চে যাত্রী উঠেছিল তিন শতাধিক। ঘণ্টা খানেক চলার পর কাচিকাটায় মাঝ নদীতে লঞ্চটি থেমে যায়। তখন দেখি, কয়েকটি ট্রলার থেকে মরিচের বস্তা ওঠানো হচ্ছে। প্রায় চার শতাধিক বস্তা ছিল ট্রলারগুলোতে। এত মাল তুলতে যাত্রীরা বাধা দিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।’
প্রিয় সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা: নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামের বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী ওলিউল ঢালী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার আগে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি লঞ্চে পানি উঠে গেছে। দুই ছেলে আমার গলা জড়িয়ে ধরেছে। ওদের নিয়ে তলিয়ে যাচ্ছি। ওদের বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। তখন পেছন থেকে কে যেন আমার বুক খামছে ধরেছে। তাকে ছাড়াতে গিয়ে এক ছেলে হাত থেকে ছুটে যায়। তাকে খুঁজতে আরেকজন ছুটে যায়। আমি ভেসে উঠি। পানির ভেতরে তাদের খুঁজতে থাকি। হঠাত্ ভাসমান বস্তা পেয়ে সেটি আঁকড়ে ধরি। ভাসতে ভাসতে অন্য একটি লঞ্চে উঠি। এভাবেই আমার হাত থেকে ছেলে দুটি হারিয়ে গেল। বাবা হয়ে সন্তানদের বাঁচাতে পারলাম না।’
No comments