পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধের উপায় কী? by এম এইচ খান
এইচএসসি-উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কোনো উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পছন্দের একটি বিষয়ে ভর্তি হতে পারা। এতে সফল হওয়ার ওপরই অনেকটা নির্ভর করে তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের ধারা। তাই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রচলিত ভর্তি-প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন, ভর্তি-কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হয় এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী সময়ে কিছু আসন শূন্য হয়ে যায়। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত তাঁর ‘দুঃখটাকে ভাগাভাগি করি’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, এক অভিভাবক তাঁদের দুর্ভোগের জন্য তাঁকে সরাসরি দায়ী করে বলেন, ‘আপনারা কেমন করে আমাদের এত কষ্ট দেন? আমি আমার মেয়েকে চুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় গিয়েছি পরদিন ঢাকা ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। ঢাকা ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা দিয়ে পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে এসেছি পরের দিন আপনাদের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। পর পর তিন রাত আমি আর আমার মেয়ে রাস্তায়। আমরা খাইনি, ঘুমাইনি, বিশ্রাম নিইনি। এভাবে কি চলতে পারে?’ আরেক নিবন্ধে মুনির হাসান (প্রথম আলো, ৭ নভেম্বর ২০১০) শিক্ষার্থীদের অনুরূপ দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে এ থেকে ছেলেমেয়েদের রেহাই দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে আকুল আবেদন জানান।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভর্তি-প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে তদানীন্তন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন। এই পদ্ধতি মেডিকেল কলেজে প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষার মতো। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একই ধরনের যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন পড়ে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিতভাবে একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা। এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সংখ্যা ও সময় কমে আসাসহ শিক্ষার্থীদের ব্যয় ও ভোগান্তি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। কিন্তু সেই আলোচনা সফল হয়নি। বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত বছর গুচ্ছ পদ্ধতি প্রবর্তনের লক্ষ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ উদ্যোগ কিছুটা অগ্রসর হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রচলিত এই নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা চলতেই থাকবে? এ দেশের কয়েক লাখ তরুণ শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা কি প্রতিবছর অসহায়ভাবে এই দুর্ভোগের শিকার হতেই থাকবেন? বাস্তবিক অর্থে, এসব শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা দাবি করেন না। তাঁরা শুধু জনগণের অর্থে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য তাঁদের মেধা যাচাই করাতে চান। সেই যাচাই-প্রক্রিয়াটি সহজ হওয়ার প্রত্যাশাটা কি খুবই বেশি? দেশের মেধাবী ও সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের ওপরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব অর্পিত। তাঁরা যদি নিজ দেশের ছেলেমেয়েদের দুর্ভোগ নিরসনে একটি দক্ষ ভর্তিব্যবস্থা প্রণয়নে আগ্রহী না হন, তাহলে কারা এ ধরনের সংস্কারে উদ্যোগী হবেন?
সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দে ইউজিসি ভর্তি পরীক্ষা থেকে সংগৃহীত অর্থের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহে খরচ করতে সুপারিশ করেছে। প্রচলিত ভর্তি-প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা এবং এ বিষয়ে একইভাবে সরকারের যে অবস্থান, ইউজিসির সুপারিশ তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফরমের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতে পারে। অধিক মূল্যে ফরম বিক্রি করে সাশ্রয়কৃত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বলে বিবেচনা করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। ন্যায়সংগতভাবে ভর্তি ফরমের মূল্য ততটাই হওয়া উচিত, যতটা শুধু এই কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজন। কেননা, এই ফরম যাঁরা কিনে থাকেন, তাঁদের সিংহভাগই ভর্তির সুযোগ পান না। যাঁরা লেখাপড়ার সুযোগ পেলেন না, তাঁদের কাছ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহে অর্থ সংগ্রহ করা কোনোভাবেই বৈধ বা যৌক্তিক হতে পারে না।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হলে তা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সহজ করতে আগ্রহী না হলে সরকার জনস্বার্থে এ বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করতে পারে।
এমনটি ভাবার কারণ নেই যে শিক্ষার্থী বাছাইয়ের কাজটি একান্তই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাপার। মূল বিষয়টি হলো, দেশের কয়েক লাখ ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে আসনসংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী বাছাই করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাগ করে দেওয়া। কাজটি দক্ষভাবে করতে হলে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিষয়ের শিক্ষার্থীদের আলাদা ইউনিটে ভাগ করে, কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা যায়। সব আগ্রহী শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়। সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মেডিকেল কলেজসহ) যত আসন রয়েছে, তার দ্বিগুণসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার সুযোগ দিলে তাঁদের সংখ্যা কোনো ইউনিটে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি হবে না। এই সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা সহজেই নেওয়া সম্ভব। আলোচিত গুচ্ছ পদ্ধতিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাছাই-প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা চলে। প্রাথমিকভাবে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করার পর দ্বিতীয় ধাপে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ আগের বছর এইচএসসি পাস করেছে এমন শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে আসছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী, যাঁরা আগের বছর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয়বারের মতো অধিক পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিশেষ করে মেডিকেল কলেজে) ভর্তির জন্য আবেদন করেন এবং সুযোগ পেয়ে সেখানে চলে যান। এসব শিক্ষার্থীর ছেড়ে আসা আসনগুলো আর কখনো পূরণ হয় না। এভাবে আসন খালি থাকায় ভর্তির সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্র—উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হলে এই সমস্যা থাকবে না। উল্লেখ্য, বুয়েট শুধু চলতি সালে পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকে। অন্যভাবে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ শুধু যেসব শিক্ষার্থী কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি, তাঁদের মধ্যে সীমিত রাখলেও এই সমস্যা দূর হবে। এতে কেউ যেমন সংগত কারণে প্রথমবার ভর্তি হতে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয়বার সুযোগ নিতে পারবেন, তেমনি কিছু শিক্ষার্থীর দুবার ভর্তির কারণে আসন শূন্য হওয়ার ঘটনা ঘটবে না। জাতীয় স্বার্থেই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
একটি অদক্ষ ব্যবস্থা অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ভর্তি-প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেটি যত দ্রুত কার্যকর হয়, ততই মঙ্গল।
এম এইচ খান: অধ্যাপক, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভর্তি-প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে তদানীন্তন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন। এই পদ্ধতি মেডিকেল কলেজে প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষার মতো। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একই ধরনের যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন পড়ে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিতভাবে একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা। এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সংখ্যা ও সময় কমে আসাসহ শিক্ষার্থীদের ব্যয় ও ভোগান্তি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। কিন্তু সেই আলোচনা সফল হয়নি। বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত বছর গুচ্ছ পদ্ধতি প্রবর্তনের লক্ষ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ উদ্যোগ কিছুটা অগ্রসর হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রচলিত এই নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা চলতেই থাকবে? এ দেশের কয়েক লাখ তরুণ শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা কি প্রতিবছর অসহায়ভাবে এই দুর্ভোগের শিকার হতেই থাকবেন? বাস্তবিক অর্থে, এসব শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা দাবি করেন না। তাঁরা শুধু জনগণের অর্থে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য তাঁদের মেধা যাচাই করাতে চান। সেই যাচাই-প্রক্রিয়াটি সহজ হওয়ার প্রত্যাশাটা কি খুবই বেশি? দেশের মেধাবী ও সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের ওপরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব অর্পিত। তাঁরা যদি নিজ দেশের ছেলেমেয়েদের দুর্ভোগ নিরসনে একটি দক্ষ ভর্তিব্যবস্থা প্রণয়নে আগ্রহী না হন, তাহলে কারা এ ধরনের সংস্কারে উদ্যোগী হবেন?
সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দে ইউজিসি ভর্তি পরীক্ষা থেকে সংগৃহীত অর্থের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহে খরচ করতে সুপারিশ করেছে। প্রচলিত ভর্তি-প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা এবং এ বিষয়ে একইভাবে সরকারের যে অবস্থান, ইউজিসির সুপারিশ তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফরমের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতে পারে। অধিক মূল্যে ফরম বিক্রি করে সাশ্রয়কৃত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বলে বিবেচনা করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। ন্যায়সংগতভাবে ভর্তি ফরমের মূল্য ততটাই হওয়া উচিত, যতটা শুধু এই কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজন। কেননা, এই ফরম যাঁরা কিনে থাকেন, তাঁদের সিংহভাগই ভর্তির সুযোগ পান না। যাঁরা লেখাপড়ার সুযোগ পেলেন না, তাঁদের কাছ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহে অর্থ সংগ্রহ করা কোনোভাবেই বৈধ বা যৌক্তিক হতে পারে না।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হলে তা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সহজ করতে আগ্রহী না হলে সরকার জনস্বার্থে এ বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করতে পারে।
এমনটি ভাবার কারণ নেই যে শিক্ষার্থী বাছাইয়ের কাজটি একান্তই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাপার। মূল বিষয়টি হলো, দেশের কয়েক লাখ ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে আসনসংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী বাছাই করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাগ করে দেওয়া। কাজটি দক্ষভাবে করতে হলে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিষয়ের শিক্ষার্থীদের আলাদা ইউনিটে ভাগ করে, কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা যায়। সব আগ্রহী শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়। সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মেডিকেল কলেজসহ) যত আসন রয়েছে, তার দ্বিগুণসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার সুযোগ দিলে তাঁদের সংখ্যা কোনো ইউনিটে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি হবে না। এই সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা সহজেই নেওয়া সম্ভব। আলোচিত গুচ্ছ পদ্ধতিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাছাই-প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা চলে। প্রাথমিকভাবে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করার পর দ্বিতীয় ধাপে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ আগের বছর এইচএসসি পাস করেছে এমন শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে আসছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী, যাঁরা আগের বছর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয়বারের মতো অধিক পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিশেষ করে মেডিকেল কলেজে) ভর্তির জন্য আবেদন করেন এবং সুযোগ পেয়ে সেখানে চলে যান। এসব শিক্ষার্থীর ছেড়ে আসা আসনগুলো আর কখনো পূরণ হয় না। এভাবে আসন খালি থাকায় ভর্তির সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্র—উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হলে এই সমস্যা থাকবে না। উল্লেখ্য, বুয়েট শুধু চলতি সালে পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকে। অন্যভাবে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ শুধু যেসব শিক্ষার্থী কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি, তাঁদের মধ্যে সীমিত রাখলেও এই সমস্যা দূর হবে। এতে কেউ যেমন সংগত কারণে প্রথমবার ভর্তি হতে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয়বার সুযোগ নিতে পারবেন, তেমনি কিছু শিক্ষার্থীর দুবার ভর্তির কারণে আসন শূন্য হওয়ার ঘটনা ঘটবে না। জাতীয় স্বার্থেই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
একটি অদক্ষ ব্যবস্থা অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ভর্তি-প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেটি যত দ্রুত কার্যকর হয়, ততই মঙ্গল।
এম এইচ খান: অধ্যাপক, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
No comments