সরকারের উচিত হবে এখনই নাকচ করা-ডিসিদের বিচারিক ক্ষমতার দাবি
ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) সম্মেলনে সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা চাওয়ার দাবি দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, এটি বিচার বিভাগ পৃথক্করণ ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে আমাদের অবশ্যই কার্যকর রূপ দিতে হবে। যিনি চোর ধরেন, তিনি শাস্তি দেবেন না—এই হলো পৃথক্করণের মূল দর্শন।
কিন্তু আমরা দেখি, আমলাতন্ত্রের একটি প্রভাবশালী অংশ তা মানতে নারাজ। তাদের মনোভঙ্গি এখনো ঔপনিবেশিক আমলের মতো রয়ে গেছে। তাদের চাপ ও তদবিরের কারণে মোবাইল কোর্ট নামে একটি প্রশাসনিক বিচারব্যবস্থা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থাটিও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন বিচারালয়ে নাগরিকের বিচার লাভের যে সংবিধানস্বীকৃত অধিকার, তার পরিপন্থী। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় বলা আছে, ‘ফৌজদারি অপরাধের দায়ে প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী হইবেন।’ অথচ সরকারনিয়ন্ত্রিত ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে দ্রুত বিচার দেওয়া হচ্ছে। সরকারনিয়ন্ত্রিত বিচার যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে পারে না, তা আমরা সম্প্রতি হরতালের কথিত পিকেটারদের পাইকারি জেল দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি।
বিদ্যমান ভ্রাম্যমাণ আদালত শতাধিক আইনের আওতায় সর্বোচ্চ তিন মাস জেল দিতে পারেন। এ জন্য কোনো সাক্ষ্য লাগে না। অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনজীবীর আশ্রয় নিতে পারেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তির ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ দোষ স্বীকারের ভিত্তিতেই রায় দেওয়া হয়। পুলিশের ভয়ে অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকারে বাধ্য হন। আমরা যখন এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি, এর মীমাংসা চাইছি, তখন ডিসিদের সম্মেলনে নতুন করে আরেক উৎপাতের জন্ম নিয়েছে।
প্রথম আলোর ২৭ জুলাইয়ের প্রতিবেদনমতে, ‘ডিসিদের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬০ ও ১৬২ ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়।’ প্রকৃতপক্ষে এটা হবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬০ ও ২৬২ ধারা। এই প্রস্তাব মানার অর্থ হবে নির্বাহী হাকিমেরা উল্লিখিত উপায়ে অভিযুক্তদের দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডাদেশ দিতে পারবেন। উদ্বেগজনক যে, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এর অপপ্রয়োগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। এমনকি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ও প্রশাসননিয়ন্ত্রিত ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাচনী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অনির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা করতে পারবেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনকে অসাংবিধানিক বলে চিহ্নিত করেছেন। ডিসিদের এখন এই ক্ষমতা দিলে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ আরও উসকে দেওয়া হবে।
আমরা আশা করব, ডিসিরা এই দাবি ত্যাগ করবেন। এবং সরকারের উচিত হবে বিষয়টি ঝুলিয়ে না রেখে এখনই এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া।
বিদ্যমান ভ্রাম্যমাণ আদালত শতাধিক আইনের আওতায় সর্বোচ্চ তিন মাস জেল দিতে পারেন। এ জন্য কোনো সাক্ষ্য লাগে না। অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনজীবীর আশ্রয় নিতে পারেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তির ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ দোষ স্বীকারের ভিত্তিতেই রায় দেওয়া হয়। পুলিশের ভয়ে অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকারে বাধ্য হন। আমরা যখন এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি, এর মীমাংসা চাইছি, তখন ডিসিদের সম্মেলনে নতুন করে আরেক উৎপাতের জন্ম নিয়েছে।
প্রথম আলোর ২৭ জুলাইয়ের প্রতিবেদনমতে, ‘ডিসিদের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬০ ও ১৬২ ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়।’ প্রকৃতপক্ষে এটা হবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬০ ও ২৬২ ধারা। এই প্রস্তাব মানার অর্থ হবে নির্বাহী হাকিমেরা উল্লিখিত উপায়ে অভিযুক্তদের দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডাদেশ দিতে পারবেন। উদ্বেগজনক যে, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এর অপপ্রয়োগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। এমনকি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ও প্রশাসননিয়ন্ত্রিত ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাচনী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অনির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা করতে পারবেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনকে অসাংবিধানিক বলে চিহ্নিত করেছেন। ডিসিদের এখন এই ক্ষমতা দিলে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ আরও উসকে দেওয়া হবে।
আমরা আশা করব, ডিসিরা এই দাবি ত্যাগ করবেন। এবং সরকারের উচিত হবে বিষয়টি ঝুলিয়ে না রেখে এখনই এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া।
No comments