চারদিক-গ্লুকোমাকে ভয় পাবেন না by অধ্যাপক এম নজরুল ইসলাম
‘ডাক্তার সাহেব, আমার চোখের প্রেসারটা কত?’ একটু অবাক হয়েই আমার এই চোখের রোগী কামাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনার চোখের প্রেসার ২২ এবং ২৫ মি.মি. মারকারি।’ ‘আমার কি গ্লুকোমা আছে?’ আরও একটু আগ্রহ নিয়ে কামাল সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘গ্লুকোমা রোগটি সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে কি?’
উনি বললেন, ‘আমার ভালো ধারণা নেই। তবে শুনেছি, কোনো উপসর্গ ছাড়াই চোখের প্রেসার বেড়ে চোখ অন্ধ হতে পারে, সেই রোগের নাম গ্লুকোমা।’
কামাল সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ। বাংলাদেশে মাত্র ১০ বছর আগেও শতকরা ৯৯ ভাগ লোকই গ্লুকোমা শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। এখন আমার বিশ্বাস, এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
কামাল সাহেবকে আরও পরীক্ষা করে দেখা গেল, তাঁর চোখের অপটিক নার্ভেরও পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর চোখের দৃষ্টির পরিসীমা বা ভিজুয়াল ফিল্ড অ্যানালাইসিস করিয়ে দেখলাম, তাঁর ফিল্ডে সামান্য পরিবর্তন এসেছে।
নার্ভের পরিবর্তন, ভিজুয়াল ফিল্ডের পরিবর্তন এবং চোখের প্রেসার বেশি হওয়ায় কামাল সাহেবকে গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় করে একটি চোখের ফোঁটা ওষুধ দিলাম।
কামাল সাহেব গ্লুকোমা হয়েছে শুনে একটু মন খারাপ করলেন। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, তাঁর চোখের গ্লুকোমাটি অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। তিনি বরং ভাগ্যবান, কারণ চোখের অনেক ক্ষতি হওয়ার আগেই তাঁর রোগ নির্ণয় হয়েছে। সময়মতো প্রতিদিন ওষুধ ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে গ্লুকোমা থেকে অন্ধ হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। শুধু তিন-চার মাস পর পর চোখের প্রেসার মাপার জন্য আসতে অনুরোধ করলাম।
নীরব অন্ধত্বের কারণ গ্লুকোমা বিষয়ে সচেতন করার জন্য বিশ্ব গ্লুকোমা সমিতি প্রতিবছরই আয়োজন করে থাকে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ এবং বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস।
আজ, ১৬ মার্চ ২০১২, বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস। ‘গ্লুকোমা—চিকিৎসা নিলে থাকবেন ভালো, নিভবে না জীবনের আলো’—এই হচ্ছে এ বছরের বিশ্ব গ্লুকোমা দিবসের স্লোগান বা প্রতিপাদ্য বিষয়। বিশ্ব গ্লুকোমা সমিতি প্রদত্ত এই স্লোগানে বোঝানো হয়েছে, গ্লুকোমা দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে গ্লুকোমা নিয়ে সারা জীবন ভালো থাকা যায়। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছরই মার্চ মাসে বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া গত ২০১০ সাল থেকে এক সপ্তাহব্যাপী বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এ বছর ১১-১৭ মার্চ ২০১২ বিশ্বব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ এবং ১৬ মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি ফ্রি গ্লুকোমা স্ক্রিনিং ক্যাম্প, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার বিতরণ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই সপ্তাহজুড়ে দিবসটি পালন করছে।
সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটি লোক গ্লুকোমা রোগে ভুগছেন। অতি সমপ্রতি বাংলাদেশে একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, অন্তত শতকরা ১০ ভাগ মানুষ এখন সামান্য হলেও এ রোগটি সম্পর্কে ধারণা রাখেন।
গ্লুকোমা সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা—গ্লুকোমা হলেই চোখ অন্ধ হয়ে যাবে এবং এর কোনো চিকিৎসা নেই। এই ধারণায় কিছু সত্যতা থাকলেও পুরোপুরি সত্য নয়। এটা সত্যি গ্লুকোমা চোখের একটি মারাত্মক অসুখ এবং চিকিৎসার পূর্ব পর্যন্ত যেটুকু দৃষ্টি কমে গেছে, সেটা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। তবে যেটুকু দৃষ্টি বিদ্যমান আছে, সেটুকু সুচিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো যায়।
গ্লুকোমার সফল অপারেশন হলে সারা জীবনের জন্য আর ড্রপ বা ট্যাবলেট ব্যবহারের প্রয়োজন নাও হতে পারে।
গ্লুকোমা নির্ণয়ের পর গ্লুকোমা রোগী মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন। যখন বুঝতে পারেন তাঁর চোখের রোগটি স্থায়ী এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি এবং দৃষ্টির পরিসীমা আর কখনো উন্নতি হবে না, তখন তাঁরা খুবই মানসিক চাপে থাকেন।
আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চোখের ওষুধ ব্যবহার করলে এবং চোখের চাপ স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে পারলে ভালো থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৮০-৯০ ভাগ। বেশির ভাগ গ্লুকোমা রোগীই চোখের ফোঁটা ওষুধ ব্যবহার করে ভালো থাকেন। তবে কোনো রোগী একটি ওষুধে আবার কেউ কেউ তিন-চারটি গ্লুকোমার ওষুধ ব্যবহার করে চোখের চাপ স্বাভাবিক রাখেন।
তবে কারও যদি ওষুধ দিয়ে চোখের চাপ স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে গ্লুকোমার শল্যচিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে। শল্যচিকিৎসার ঝুঁকি কিছু বেশি হলেও অন্ধত্ব বরণ করার চেয়ে অবশ্যই ভালো। এ বিষয়ে একজন চক্ষু ও গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে নেওয়াই কাম্য।
ছোট শিশুদের গ্লুকোমা হতে পারে। জন্মগত গ্লুকোমা থাকলে চোখের আকৃতি বিশেষ করে কর্নিয়া বা নেত্রস্বচ্ছের আয়তন বাড়তে পারে। চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে, চোখ ট্যারা হয়ে যেতে পারে। এসবের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। শিশুদের গ্লুকোমার চিকিৎসা ওষুধ দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় না, এ জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শল্যচিকিৎসা করতে হয় এবং শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এ চিকিৎসা সফল হয়।
গ্লুকোমা হলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে গ্লুকোমাকে সঙ্গে নিয়েই প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। আপনার দৃষ্টি যতটুকু ভালো আছে, এটা দিয়ে বাকি জীবন ভালোভাবেই বসবাস করতে পারবেন। তবে তার জন্য দরকার দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা।
অধ্যাপক এম নজরুল ইসলাম
চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা।
কামাল সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ। বাংলাদেশে মাত্র ১০ বছর আগেও শতকরা ৯৯ ভাগ লোকই গ্লুকোমা শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। এখন আমার বিশ্বাস, এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
কামাল সাহেবকে আরও পরীক্ষা করে দেখা গেল, তাঁর চোখের অপটিক নার্ভেরও পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর চোখের দৃষ্টির পরিসীমা বা ভিজুয়াল ফিল্ড অ্যানালাইসিস করিয়ে দেখলাম, তাঁর ফিল্ডে সামান্য পরিবর্তন এসেছে।
নার্ভের পরিবর্তন, ভিজুয়াল ফিল্ডের পরিবর্তন এবং চোখের প্রেসার বেশি হওয়ায় কামাল সাহেবকে গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় করে একটি চোখের ফোঁটা ওষুধ দিলাম।
কামাল সাহেব গ্লুকোমা হয়েছে শুনে একটু মন খারাপ করলেন। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, তাঁর চোখের গ্লুকোমাটি অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। তিনি বরং ভাগ্যবান, কারণ চোখের অনেক ক্ষতি হওয়ার আগেই তাঁর রোগ নির্ণয় হয়েছে। সময়মতো প্রতিদিন ওষুধ ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে গ্লুকোমা থেকে অন্ধ হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। শুধু তিন-চার মাস পর পর চোখের প্রেসার মাপার জন্য আসতে অনুরোধ করলাম।
নীরব অন্ধত্বের কারণ গ্লুকোমা বিষয়ে সচেতন করার জন্য বিশ্ব গ্লুকোমা সমিতি প্রতিবছরই আয়োজন করে থাকে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ এবং বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস।
আজ, ১৬ মার্চ ২০১২, বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস। ‘গ্লুকোমা—চিকিৎসা নিলে থাকবেন ভালো, নিভবে না জীবনের আলো’—এই হচ্ছে এ বছরের বিশ্ব গ্লুকোমা দিবসের স্লোগান বা প্রতিপাদ্য বিষয়। বিশ্ব গ্লুকোমা সমিতি প্রদত্ত এই স্লোগানে বোঝানো হয়েছে, গ্লুকোমা দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে গ্লুকোমা নিয়ে সারা জীবন ভালো থাকা যায়। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছরই মার্চ মাসে বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া গত ২০১০ সাল থেকে এক সপ্তাহব্যাপী বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এ বছর ১১-১৭ মার্চ ২০১২ বিশ্বব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ এবং ১৬ মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি ফ্রি গ্লুকোমা স্ক্রিনিং ক্যাম্প, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার বিতরণ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই সপ্তাহজুড়ে দিবসটি পালন করছে।
সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটি লোক গ্লুকোমা রোগে ভুগছেন। অতি সমপ্রতি বাংলাদেশে একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, অন্তত শতকরা ১০ ভাগ মানুষ এখন সামান্য হলেও এ রোগটি সম্পর্কে ধারণা রাখেন।
গ্লুকোমা সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা—গ্লুকোমা হলেই চোখ অন্ধ হয়ে যাবে এবং এর কোনো চিকিৎসা নেই। এই ধারণায় কিছু সত্যতা থাকলেও পুরোপুরি সত্য নয়। এটা সত্যি গ্লুকোমা চোখের একটি মারাত্মক অসুখ এবং চিকিৎসার পূর্ব পর্যন্ত যেটুকু দৃষ্টি কমে গেছে, সেটা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। তবে যেটুকু দৃষ্টি বিদ্যমান আছে, সেটুকু সুচিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো যায়।
গ্লুকোমার সফল অপারেশন হলে সারা জীবনের জন্য আর ড্রপ বা ট্যাবলেট ব্যবহারের প্রয়োজন নাও হতে পারে।
গ্লুকোমা নির্ণয়ের পর গ্লুকোমা রোগী মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন। যখন বুঝতে পারেন তাঁর চোখের রোগটি স্থায়ী এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি এবং দৃষ্টির পরিসীমা আর কখনো উন্নতি হবে না, তখন তাঁরা খুবই মানসিক চাপে থাকেন।
আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চোখের ওষুধ ব্যবহার করলে এবং চোখের চাপ স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে পারলে ভালো থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৮০-৯০ ভাগ। বেশির ভাগ গ্লুকোমা রোগীই চোখের ফোঁটা ওষুধ ব্যবহার করে ভালো থাকেন। তবে কোনো রোগী একটি ওষুধে আবার কেউ কেউ তিন-চারটি গ্লুকোমার ওষুধ ব্যবহার করে চোখের চাপ স্বাভাবিক রাখেন।
তবে কারও যদি ওষুধ দিয়ে চোখের চাপ স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে গ্লুকোমার শল্যচিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে। শল্যচিকিৎসার ঝুঁকি কিছু বেশি হলেও অন্ধত্ব বরণ করার চেয়ে অবশ্যই ভালো। এ বিষয়ে একজন চক্ষু ও গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে নেওয়াই কাম্য।
ছোট শিশুদের গ্লুকোমা হতে পারে। জন্মগত গ্লুকোমা থাকলে চোখের আকৃতি বিশেষ করে কর্নিয়া বা নেত্রস্বচ্ছের আয়তন বাড়তে পারে। চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে, চোখ ট্যারা হয়ে যেতে পারে। এসবের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। শিশুদের গ্লুকোমার চিকিৎসা ওষুধ দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় না, এ জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শল্যচিকিৎসা করতে হয় এবং শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এ চিকিৎসা সফল হয়।
গ্লুকোমা হলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে গ্লুকোমাকে সঙ্গে নিয়েই প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। আপনার দৃষ্টি যতটুকু ভালো আছে, এটা দিয়ে বাকি জীবন ভালোভাবেই বসবাস করতে পারবেন। তবে তার জন্য দরকার দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা।
অধ্যাপক এম নজরুল ইসলাম
চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা।
No comments