সম্ভাবনার নতুন যুগে বাংলাদেশ by হুমায়ুন কবির
ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার আগে দু'পক্ষই মুচলেকা দিয়েছিল যে, রায় যাই হোক না কেন তা মেনে নেওয়া হবে। এ কারণে মিয়ানমারের অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ রায়ে বিজয়ী পক্ষ হওয়ায় তার উদারতা দেখানোর সুযোগ বেশি
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিয়ে সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। তবে এটা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদৃষ্টি, পেশাগত দক্ষতা এবং নীতিগত ধারাবাহিকতার প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি এবং কৌশলের মধ্যে সমন্বয়ও গুরুত্বপূর্ণ।
সমুদ্রের এ এলাকা সম্পদে পূর্ণ বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজসম্পদ ছাড়াও রয়েছে অঢেল মাছ। এসব কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ_ অর্থ ও প্রযুক্তি উভয় সূত্রেই এটা হতে হবে। এ রায়ের মাধ্যমে আমরা সমুদ্রে অধিকার নিশ্চিত করেছি। এখন প্রয়োজন এ থেকে সৃষ্ট সুযোগ কাজে লাগানো।
ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার আগে দু'পক্ষই মুচলেকা দিয়েছিল যে, রায় যাই হোক না কেন তা মেনে নেওয়া হবে। এ কারণে মিয়ানমারের অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ রায়ে বিজয়ী পক্ষ হওয়ায় তার উদারতা দেখানোর সুযোগ বেশি। প্রতিবেশী এ দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক সহজ নয়, বরং জটিল পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির লক্ষণ রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সে দেশ সফর করেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় তাদের বিপক্ষে যাওয়ায় এ প্রক্রিয়া যেন থমকে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে পারে। কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিকভাবেও দুটি দেশের এ অঞ্চলে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্য মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে তাদের ওপর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। চীনের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পূর্বের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলে মিয়ানমার তাতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ভারতের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করবে বৈকি। এ রায়ে বাংলাদেশের পক্ষের যুক্তিগুলো ভারতের সঙ্গে বিরোধের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে। এ রায় বিশ্ব সম্প্রদায় ইতিবাচক হিসেবে দেখবে বলেই মনে হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সেটা কাজে লাগাতে তাদের সহায়তা পাওয়া এখন অপেক্ষাকৃত সহজ হবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর নিষ্পত্তি ঘটেছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। আমাদের এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ বিরাজ করলে প্রতিটি দেশই লাভবান হবে। এ বাস্তবতা বিবেচনায় উন্নত দেশগুলো এখানে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হবে বলেই আমার ধারণা। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আমাদের জাতীয় স্বার্থ পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণের জন্য রাজনীতি-অর্থনীতি-কূটনীতির অঙ্গনে দক্ষতা আরও বাড়িয়ে যেতে হবে।
মিয়ানমারের ভেতরে যে পরিবর্তন ঘটে চলেছে সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। দীর্ঘদিন সেখানে সামরিক শাসন চলেছে। এখন শুরু হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সংস্কার শুরু হয়েছে। বিরোধী নেত্রী অং সান সু চি মুক্তজীবনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তিনি সভা-সমাবেশ করছেন এবং তাতে বাধাহীনভাবে জনগণ উপস্থিত থাকতে পারছে। সমুদ্রসীমা ইস্যুতে আদালতে হেরে গিয়ে তারা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটাতে চাইবে বলে মনে হয় না। তাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলাটি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছে। এ থেকে সৃষ্ট সুযোগ কাজে লাগাতে হলেও চাই একই ধরনের দক্ষতা। তাদের কাজে পেশাদারিত্ব যত বাড়বে, তত বেশি সফলতা আসতে থাকবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ককে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতেও আমরা কাজে লাগাতে পারি। প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে প্রবেশদ্বার। বিশেষ করে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি হতে চলা চীনে সড়ক-রেলপথে পেঁৗছতে তাদের সরাসরি সহযোগিতার অবশ্যই প্রয়োজন।
স হুমায়ুন কবির : যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত
সমুদ্রের এ এলাকা সম্পদে পূর্ণ বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজসম্পদ ছাড়াও রয়েছে অঢেল মাছ। এসব কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ_ অর্থ ও প্রযুক্তি উভয় সূত্রেই এটা হতে হবে। এ রায়ের মাধ্যমে আমরা সমুদ্রে অধিকার নিশ্চিত করেছি। এখন প্রয়োজন এ থেকে সৃষ্ট সুযোগ কাজে লাগানো।
ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার আগে দু'পক্ষই মুচলেকা দিয়েছিল যে, রায় যাই হোক না কেন তা মেনে নেওয়া হবে। এ কারণে মিয়ানমারের অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ রায়ে বিজয়ী পক্ষ হওয়ায় তার উদারতা দেখানোর সুযোগ বেশি। প্রতিবেশী এ দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক সহজ নয়, বরং জটিল পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির লক্ষণ রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সে দেশ সফর করেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় তাদের বিপক্ষে যাওয়ায় এ প্রক্রিয়া যেন থমকে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে পারে। কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিকভাবেও দুটি দেশের এ অঞ্চলে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্য মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে তাদের ওপর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। চীনের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পূর্বের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলে মিয়ানমার তাতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ভারতের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করবে বৈকি। এ রায়ে বাংলাদেশের পক্ষের যুক্তিগুলো ভারতের সঙ্গে বিরোধের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে। এ রায় বিশ্ব সম্প্রদায় ইতিবাচক হিসেবে দেখবে বলেই মনে হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সেটা কাজে লাগাতে তাদের সহায়তা পাওয়া এখন অপেক্ষাকৃত সহজ হবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর নিষ্পত্তি ঘটেছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। আমাদের এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ বিরাজ করলে প্রতিটি দেশই লাভবান হবে। এ বাস্তবতা বিবেচনায় উন্নত দেশগুলো এখানে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হবে বলেই আমার ধারণা। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আমাদের জাতীয় স্বার্থ পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণের জন্য রাজনীতি-অর্থনীতি-কূটনীতির অঙ্গনে দক্ষতা আরও বাড়িয়ে যেতে হবে।
মিয়ানমারের ভেতরে যে পরিবর্তন ঘটে চলেছে সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। দীর্ঘদিন সেখানে সামরিক শাসন চলেছে। এখন শুরু হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সংস্কার শুরু হয়েছে। বিরোধী নেত্রী অং সান সু চি মুক্তজীবনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তিনি সভা-সমাবেশ করছেন এবং তাতে বাধাহীনভাবে জনগণ উপস্থিত থাকতে পারছে। সমুদ্রসীমা ইস্যুতে আদালতে হেরে গিয়ে তারা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটাতে চাইবে বলে মনে হয় না। তাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলাটি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছে। এ থেকে সৃষ্ট সুযোগ কাজে লাগাতে হলেও চাই একই ধরনের দক্ষতা। তাদের কাজে পেশাদারিত্ব যত বাড়বে, তত বেশি সফলতা আসতে থাকবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ককে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতেও আমরা কাজে লাগাতে পারি। প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে প্রবেশদ্বার। বিশেষ করে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি হতে চলা চীনে সড়ক-রেলপথে পেঁৗছতে তাদের সরাসরি সহযোগিতার অবশ্যই প্রয়োজন।
স হুমায়ুন কবির : যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত
No comments