কৃপণতা উত্তম স্বভাব নয় by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুলুুম করা থেকে দূরে থাকো। কারণ অত্যাচার কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারে পরিণত হবে। আর কৃপণতা থেকেও দূরে থাকো। কারণ কৃপণতা ও সংকীর্ণতাই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে। এ কৃপণতাই তাদের নিজেদের রক্তপাত করতে ও হারামকে হালাল করে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল
খরচ না করে শুধু সঞ্চয় করতে চায়_ এমন লোককে কৃপণ বলা হয়। কোরআনুল কারিমে কার্পণ্যকে অমঙ্গলজনক ও শয়তানের প্ররোচিত কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কার্পণ্যের শরিয়ত নির্ধারিত সংজ্ঞা হলো_ যে ব্যয় নিজের দায়িত্বে ওয়াজিব ছিল, তা না করা। তদুপরি সম্পদ বৃদ্ধিকল্পে লোভের বশবর্তী হওয়া। এ কারণেই কার্পণ্যকে হারাম সাব্যস্ত করে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'যারা নিজেরাও কার্পণ্য করে এবং অন্যকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সেসব বিষয়, যা আল্লাহতায়ালা স্বীয় অনুগ্রহে তাদের দান করেছেন। আর অবিশ্বাসীদের জন্য তৈরি করে রেখেছি অপমানকর শাস্তি।' (সূরা নিসা : ৩৭)
উপরোক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে, একদল মানুষ প্রচুর অর্থ ও সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও নিজেরা দান-খয়রাত করে না, সে সঙ্গে অন্যরাও দান করুক তা চায় না। কৃপণতা এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মধ্যে এতই বিস্তৃত যে, তারা নিজেদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে না। কোরআনুল কারিমে এমন কৃপণতাকে ইমানের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে যেন তারা ধারণা না করে। বরং তা একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যা নিয়ে তারা কঞ্জুসি করে তা কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আকাশমণ্ডল ও জমিনের পরম স্বত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা করো; আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।' (সূরা আল ইমরান : ১৮০)
আসলে কৃপণতা এক ধরনের মানসিক রোগ। কৃপণ লোকেরা অন্যদের দয়া ও দান-খয়রাতের জন্য বাধা। অন্যদিকে কৃপণতার মনোভাব মানুষকে আল্লাহ ও পরকালের ওপর বিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। কারণ জাকাত দেওয়া ও দান-খয়রাত করা ইমানের জন্য জরুরি এবং যারা এই ফরজ পালনে বিরত থাকে তারা নিজেদের সম্পদকে আল্লাহর চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়। সাধারণত এ ধরনের লোক কোনো সময়ই তেমন কোনো দান-খয়রাত করে না। যদি কখনও দান-খয়রাত করেও থাকে, তা সামাজিক মর্যাদা বা সম্মান রক্ষার জন্য করে। তাই কৃপণতাকে একটি নিষিদ্ধ কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কৃপণতার ব্যাপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুলুুম করা থেকে দূরে থাকো। কারণ অত্যাচার কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারে পরিণত হবে। আর কৃপণতা থেকেও দূরে থাকো। কারণ কৃপণতা ও সংকীর্ণতাই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে। এ কৃপণতাই তাদের নিজেদের রক্তপাত করতে ও হারামকে হালাল করে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। (মুসলিম শরিফ)
অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আবুল আহওয়াস তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 'আমি হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এলাম। তখন আমার পরনে ছিল অতি নিম্নমানের পোশাক। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কী সম্পদ আছে? আমি বললাম, সব ধরনের সম্পদই আল্লাহ আমাকে দান করেছেন_ উট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, 'যখন আল্লাহতায়ালা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তখন তোমার ওপর তাঁর নিয়ামতের ছাপ থাকা চাই।' (আবু দাউদ ও নাসায়ি)
আসলে কৃপণ ব্যক্তিরা এমন এক গাধার মতো যার পীঠে থাকে মণি-মুক্তা আর ঐশ্বর্যের বোঝা এবং পেটে থাকে শুধু শুকনো খড়। যেমন ইতিহাস বিখ্যাত কৃপণ কারুন। তার সম্পদ তার কোনোই কাজে আসেনি। বরং অহংকার আর কৃপণতার প্রাবল্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সম্পদসহ মাটিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অপচয় ও কৃপণতা কোনোটাই ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষকে সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে, যুদ্ধক্ষেত্রে, শান্তি প্রতিষ্ঠায়, ইবাদত-বন্দেগিতে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন। ভারসাম্যপূর্ণ জীবন সম্পর্কে সূরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থি সম্প্রদায় করেছি, যাতে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্য এবং রাসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।' এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের ভারসাম্যপূর্ণ জাতি হিসেবে দেখতে চান। কোরআনের অন্য এক সূরায় আমরা দেখতে পাই, হজরত লোকমান (আ.) তাঁর ছেলেকে বলছেন, 'ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করো।' মিতব্যয় আর কৃপণতা কিন্তু এক নয়। মিতব্যয় হচ্ছে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যয় করা ও সম্পদের অপচয় না করা। আর কৃপণতা হলো, যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যয় না করা। এ কারণে ইসলামে অপচয় ও অপব্যয়ের মতো কৃপণতাও নিষিদ্ধ। কোরআনে কারিমে ও হাদিসে ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, অভাবগ্রস্তকে সাহায্য প্রদান, অনাথ-এতিমদের লালনপালন, নিঃস্ব ব্যক্তিদের উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করাকে মুসলমানদের কর্তব্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কৃপণরা তা করে না। এ কারণেই কৃপণতা মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সূরা আল মুদ্দাসসিরের ৪২, ৪৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'কী কারণে তোমাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না এবং আমরা অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না।' muftianaet@gmail.com
কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'যারা নিজেরাও কার্পণ্য করে এবং অন্যকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সেসব বিষয়, যা আল্লাহতায়ালা স্বীয় অনুগ্রহে তাদের দান করেছেন। আর অবিশ্বাসীদের জন্য তৈরি করে রেখেছি অপমানকর শাস্তি।' (সূরা নিসা : ৩৭)
উপরোক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে, একদল মানুষ প্রচুর অর্থ ও সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও নিজেরা দান-খয়রাত করে না, সে সঙ্গে অন্যরাও দান করুক তা চায় না। কৃপণতা এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মধ্যে এতই বিস্তৃত যে, তারা নিজেদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে না। কোরআনুল কারিমে এমন কৃপণতাকে ইমানের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে যেন তারা ধারণা না করে। বরং তা একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যা নিয়ে তারা কঞ্জুসি করে তা কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আকাশমণ্ডল ও জমিনের পরম স্বত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা করো; আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।' (সূরা আল ইমরান : ১৮০)
আসলে কৃপণতা এক ধরনের মানসিক রোগ। কৃপণ লোকেরা অন্যদের দয়া ও দান-খয়রাতের জন্য বাধা। অন্যদিকে কৃপণতার মনোভাব মানুষকে আল্লাহ ও পরকালের ওপর বিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। কারণ জাকাত দেওয়া ও দান-খয়রাত করা ইমানের জন্য জরুরি এবং যারা এই ফরজ পালনে বিরত থাকে তারা নিজেদের সম্পদকে আল্লাহর চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়। সাধারণত এ ধরনের লোক কোনো সময়ই তেমন কোনো দান-খয়রাত করে না। যদি কখনও দান-খয়রাত করেও থাকে, তা সামাজিক মর্যাদা বা সম্মান রক্ষার জন্য করে। তাই কৃপণতাকে একটি নিষিদ্ধ কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কৃপণতার ব্যাপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুলুুম করা থেকে দূরে থাকো। কারণ অত্যাচার কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারে পরিণত হবে। আর কৃপণতা থেকেও দূরে থাকো। কারণ কৃপণতা ও সংকীর্ণতাই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে। এ কৃপণতাই তাদের নিজেদের রক্তপাত করতে ও হারামকে হালাল করে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। (মুসলিম শরিফ)
অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আবুল আহওয়াস তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 'আমি হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এলাম। তখন আমার পরনে ছিল অতি নিম্নমানের পোশাক। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কী সম্পদ আছে? আমি বললাম, সব ধরনের সম্পদই আল্লাহ আমাকে দান করেছেন_ উট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, 'যখন আল্লাহতায়ালা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তখন তোমার ওপর তাঁর নিয়ামতের ছাপ থাকা চাই।' (আবু দাউদ ও নাসায়ি)
আসলে কৃপণ ব্যক্তিরা এমন এক গাধার মতো যার পীঠে থাকে মণি-মুক্তা আর ঐশ্বর্যের বোঝা এবং পেটে থাকে শুধু শুকনো খড়। যেমন ইতিহাস বিখ্যাত কৃপণ কারুন। তার সম্পদ তার কোনোই কাজে আসেনি। বরং অহংকার আর কৃপণতার প্রাবল্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সম্পদসহ মাটিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অপচয় ও কৃপণতা কোনোটাই ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষকে সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে, যুদ্ধক্ষেত্রে, শান্তি প্রতিষ্ঠায়, ইবাদত-বন্দেগিতে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন। ভারসাম্যপূর্ণ জীবন সম্পর্কে সূরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থি সম্প্রদায় করেছি, যাতে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্য এবং রাসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।' এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের ভারসাম্যপূর্ণ জাতি হিসেবে দেখতে চান। কোরআনের অন্য এক সূরায় আমরা দেখতে পাই, হজরত লোকমান (আ.) তাঁর ছেলেকে বলছেন, 'ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করো।' মিতব্যয় আর কৃপণতা কিন্তু এক নয়। মিতব্যয় হচ্ছে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যয় করা ও সম্পদের অপচয় না করা। আর কৃপণতা হলো, যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যয় না করা। এ কারণে ইসলামে অপচয় ও অপব্যয়ের মতো কৃপণতাও নিষিদ্ধ। কোরআনে কারিমে ও হাদিসে ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, অভাবগ্রস্তকে সাহায্য প্রদান, অনাথ-এতিমদের লালনপালন, নিঃস্ব ব্যক্তিদের উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করাকে মুসলমানদের কর্তব্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কৃপণরা তা করে না। এ কারণেই কৃপণতা মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সূরা আল মুদ্দাসসিরের ৪২, ৪৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'কী কারণে তোমাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না এবং আমরা অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না।' muftianaet@gmail.com
No comments