তদন্ত নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আবারও অসন্তুষ্ট
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত নিয়ে আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার শুনানিতে তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অসন্তোষ জানান ট্রাইব্যুনাল।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিকে ট্রাইব্যুনালের জেরার মুখে পড়তে হয়।
এর আগে গত বুধবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানিতেও ট্রাইব্যুনাল তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারও আগে দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী হাজির করতে না পারায় একাধিকবার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ওই মামলায় ১৮ মার্চ সাক্ষী হাজির করার ‘শেষ সুযোগ’ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষকে। দলের সাবেক আমির গোলাম আযম ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষকে ফেরত দিয়ে পুনর্দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। অগোছালো অভিযোগপত্র দেওয়ায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গতকাল মতিউর রহমান নিজামীর মামলার শুনানিতে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের উদ্দেশে বলেন, তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আলবদর বাহিনীর হাতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অভিযোগে উল্লেখ নেই।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী এ সময় ট্রাইব্যুনালকে বলেন, অভিযোগ প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষের হাতে আছে। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে শুনানির প্রসঙ্গ টেনে ট্রাইব্যুনাল বলেন, কবি মেহেরুননিসাকে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগের পক্ষে শুধু শাহরিয়ার কবিরের লেখা একটি বই নথিপত্রের সাক্ষ্য হিসেবে দেওয়া আছে। অভিযোগ প্রমাণিত হবে কি হবে না, সেটা অন্য বিষয়, কিন্তু কবি মেহেরুননিসার বিষয়ে একাত্তরে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় হাজার হাজার লেখা পাওয়া যাবে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, মেহেরুননিসার বিষয়ে বাহাত্তর সালে প্রকাশিত বেগম, ললনা, দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় অসংখ্য লেখা রয়েছে। খেলাঘরে গেলেও তাঁর সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পাবেন। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ মাত্র একটা বই এনেছে।
গত বুধবার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এক থেকে চার নম্বর অভিযোগের সাক্ষ্য হিসেবে ভোরের কাগজ-এ প্রকাশিত সংবাদ ও শাহরিয়ার কবিরের লেখা একটি বই আছে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির মৌখিক সাক্ষ্য নেই।
ওই সময় ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, সাক্ষী তো অবশ্যই আছে, কিন্তু আপনারা আনতে পারেননি। শাহরিয়ার কবিরকে কেউ একজন ঘটনাটি বলেছেন। যে লোক তাঁকে ঘটনাটি বলেছেন, তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলতে পারবেন না? আপনারা কী করেছেন? বই পেয়ে মনে করেছেন, সব পেয়ে গেছি? তারপর সেখান থেকে ঘরে বসে লিখে এনেছেন?
ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের আইন ও বিধিতে কৌঁসুলিদের তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া আছে, তদন্তের উপাদান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু তা করেননি। তদন্ত প্রতিবেদনে যা পেয়েছেন, হুবহু তা তুলে দিয়েছেন।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উপস্থাপন করে। ১৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রথমে পাকিস্তানি সেনারা এবং পরে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। ওখান থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী আলবদর বাহিনী বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটায়। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও নিজামী সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং ষড়যন্ত্রে অংশ নিতেন।
অভিযোগ উপস্থাপন শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আলতাফ উদ্দিন আহমেদের কাছে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, ১৫ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে নিজামী নিয়মিত যেতেন এবং রাজাকারদের পরামর্শ দিতেন ও ষড়যন্ত্র করতেন। এখানে নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ’৭৩-এর ৩(২)(এ) ও ৩(২)(জি) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ৩(২)(এ) ধারা কেন আনা হলো? পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করে থাকলে কেন এই ধারা আসবে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২)(এ) ধারায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যেমন—হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ প্রভৃতি এবং ৩(২)(জি) ধারায় এসব অপরাধের সহযোগিতা বা ষড়যন্ত্রের কথা বলা আছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জবাবে বলেন, রাজাকার ক্যাম্পে গিয়ে নিজামী ষড়যন্ত্র করেছেন বলেই রাজাকাররা বিভিন্ন অপরাধ করেছে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, কিন্তু অভিযোগে কোথাও বলা হয়নি যে নিজামীর ষড়যন্ত্রের ফলে রাজাকাররা সেসব অপরাধ করেছে। ট্রাইব্যুনালের সামনে এগুলো স্পষ্ট করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এ বিষয়গুলো আছে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, কিন্তু সেটা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে উল্লেখ নেই। এটা কি ট্রাইব্যুনালের মাথায় রাখতে হবে? অবশ্যই এখানে উল্লেখ করতে হবে, ষড়যন্ত্রের ফলে এসব অপরাধ ঘটেছে। কারণ, প্রতিটি অভিযোগ স্বতন্ত্র।
পরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ শুনে মনে হয়েছে, নিজামীর বিরুদ্ধে মূলত দুই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আলবদরের ওপর নিজামীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল, তিনি ছাত্রসংঘের প্রধান হিসেবে ওকে মারতে বলেছেন, তাঁকে ধরতে বলেছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মূলত আইনের ৪(২) ধারায় ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় এবং ৩(২)(জি) ধারায় ষড়যন্ত্র বা সহযোগিতার দায় পড়ে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত সঠিক হচ্ছে না—ট্রাইব্যুনালের এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের মন্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করে প্রসিকিউশনকে (রাষ্ট্রপক্ষ) দেয়। প্রসিকিউশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তদন্ত প্রতিবেদনে ঘাটতি পেলে তা তদন্ত সংস্থাকে ফিরিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও তদন্ত করে ঘাটতি পূরণ করা হবে।’
তদন্ত নিয়ে ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তদন্ত সংস্থা ও রাষ্ট্রপক্ষকে যখন বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল, তখন এগুলো একাধিক সূত্র থেকে যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন দায়সারা তদন্ত করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের বেশির ভাগ কৌঁসুলি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা পরিচালনার মতো যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন নন। তাঁদের অনেকেই বাইরে ওকালতি করেন, ফলে এই মামলায় সময় দিতে পারেন না। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, এই কৌঁসুলিদের দিয়েই হবে।’ এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এই নেতা।
এর আগে গত বুধবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানিতেও ট্রাইব্যুনাল তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারও আগে দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী হাজির করতে না পারায় একাধিকবার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ওই মামলায় ১৮ মার্চ সাক্ষী হাজির করার ‘শেষ সুযোগ’ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষকে। দলের সাবেক আমির গোলাম আযম ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষকে ফেরত দিয়ে পুনর্দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। অগোছালো অভিযোগপত্র দেওয়ায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গতকাল মতিউর রহমান নিজামীর মামলার শুনানিতে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের উদ্দেশে বলেন, তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আলবদর বাহিনীর হাতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অভিযোগে উল্লেখ নেই।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী এ সময় ট্রাইব্যুনালকে বলেন, অভিযোগ প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষের হাতে আছে। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে শুনানির প্রসঙ্গ টেনে ট্রাইব্যুনাল বলেন, কবি মেহেরুননিসাকে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগের পক্ষে শুধু শাহরিয়ার কবিরের লেখা একটি বই নথিপত্রের সাক্ষ্য হিসেবে দেওয়া আছে। অভিযোগ প্রমাণিত হবে কি হবে না, সেটা অন্য বিষয়, কিন্তু কবি মেহেরুননিসার বিষয়ে একাত্তরে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় হাজার হাজার লেখা পাওয়া যাবে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, মেহেরুননিসার বিষয়ে বাহাত্তর সালে প্রকাশিত বেগম, ললনা, দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় অসংখ্য লেখা রয়েছে। খেলাঘরে গেলেও তাঁর সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পাবেন। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ মাত্র একটা বই এনেছে।
গত বুধবার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এক থেকে চার নম্বর অভিযোগের সাক্ষ্য হিসেবে ভোরের কাগজ-এ প্রকাশিত সংবাদ ও শাহরিয়ার কবিরের লেখা একটি বই আছে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির মৌখিক সাক্ষ্য নেই।
ওই সময় ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, সাক্ষী তো অবশ্যই আছে, কিন্তু আপনারা আনতে পারেননি। শাহরিয়ার কবিরকে কেউ একজন ঘটনাটি বলেছেন। যে লোক তাঁকে ঘটনাটি বলেছেন, তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলতে পারবেন না? আপনারা কী করেছেন? বই পেয়ে মনে করেছেন, সব পেয়ে গেছি? তারপর সেখান থেকে ঘরে বসে লিখে এনেছেন?
ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের আইন ও বিধিতে কৌঁসুলিদের তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া আছে, তদন্তের উপাদান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু তা করেননি। তদন্ত প্রতিবেদনে যা পেয়েছেন, হুবহু তা তুলে দিয়েছেন।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উপস্থাপন করে। ১৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রথমে পাকিস্তানি সেনারা এবং পরে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। ওখান থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী আলবদর বাহিনী বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটায়। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও নিজামী সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং ষড়যন্ত্রে অংশ নিতেন।
অভিযোগ উপস্থাপন শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আলতাফ উদ্দিন আহমেদের কাছে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, ১৫ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে নিজামী নিয়মিত যেতেন এবং রাজাকারদের পরামর্শ দিতেন ও ষড়যন্ত্র করতেন। এখানে নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ’৭৩-এর ৩(২)(এ) ও ৩(২)(জি) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ৩(২)(এ) ধারা কেন আনা হলো? পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করে থাকলে কেন এই ধারা আসবে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২)(এ) ধারায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যেমন—হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ প্রভৃতি এবং ৩(২)(জি) ধারায় এসব অপরাধের সহযোগিতা বা ষড়যন্ত্রের কথা বলা আছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জবাবে বলেন, রাজাকার ক্যাম্পে গিয়ে নিজামী ষড়যন্ত্র করেছেন বলেই রাজাকাররা বিভিন্ন অপরাধ করেছে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, কিন্তু অভিযোগে কোথাও বলা হয়নি যে নিজামীর ষড়যন্ত্রের ফলে রাজাকাররা সেসব অপরাধ করেছে। ট্রাইব্যুনালের সামনে এগুলো স্পষ্ট করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এ বিষয়গুলো আছে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, কিন্তু সেটা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে উল্লেখ নেই। এটা কি ট্রাইব্যুনালের মাথায় রাখতে হবে? অবশ্যই এখানে উল্লেখ করতে হবে, ষড়যন্ত্রের ফলে এসব অপরাধ ঘটেছে। কারণ, প্রতিটি অভিযোগ স্বতন্ত্র।
পরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ শুনে মনে হয়েছে, নিজামীর বিরুদ্ধে মূলত দুই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আলবদরের ওপর নিজামীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল, তিনি ছাত্রসংঘের প্রধান হিসেবে ওকে মারতে বলেছেন, তাঁকে ধরতে বলেছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মূলত আইনের ৪(২) ধারায় ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় এবং ৩(২)(জি) ধারায় ষড়যন্ত্র বা সহযোগিতার দায় পড়ে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত সঠিক হচ্ছে না—ট্রাইব্যুনালের এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের মন্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করে প্রসিকিউশনকে (রাষ্ট্রপক্ষ) দেয়। প্রসিকিউশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তদন্ত প্রতিবেদনে ঘাটতি পেলে তা তদন্ত সংস্থাকে ফিরিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও তদন্ত করে ঘাটতি পূরণ করা হবে।’
তদন্ত নিয়ে ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তদন্ত সংস্থা ও রাষ্ট্রপক্ষকে যখন বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল, তখন এগুলো একাধিক সূত্র থেকে যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন দায়সারা তদন্ত করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের বেশির ভাগ কৌঁসুলি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা পরিচালনার মতো যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন নন। তাঁদের অনেকেই বাইরে ওকালতি করেন, ফলে এই মামলায় সময় দিতে পারেন না। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, এই কৌঁসুলিদের দিয়েই হবে।’ এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এই নেতা।
No comments