বিএনপির তীব্র প্রতিক্রিয়া-হাসিনারই উচিত পাকিস্তানে চলে যাওয়া
খালেদা জিয়ার পাকিস্তানে চলে যাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই সম্পর্ক বেশি। তিনি একসময় পাকিস্তানে গিয়ে মেডিক্যাল চেকআপ করিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে গিয়ে আত্মগোপন করেছেন। কাজেই তাঁরই (শেখ হাসিনা) পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে হান্নান শাহ এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের মহাসমাবেশ চলাকালে একুশে টিভি, বাংলাভিশন ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচারে বাধা এবং বিরোধী দলের কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে 'আমরা বাংলাদেশি' সংগঠন।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তোলা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চ্যালেঞ্জও ছোড়েন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেছেন, 'এর আগেও প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য আমরা এনজয় করি। আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, এ-সংক্রান্ত প্রমাণ থাকলে উপস্থাপন করুন।'
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের আরো বলেন, তাঁর এ বক্তব্য মূলত বুধবার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে ১৪ দল আয়োজিত গণজমায়েতে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব।
এদিকে মানববন্ধনে রাখা বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে হান্নান শাহ বলেন, 'র' ও 'আইএসআই'সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সহায়তায় আওয়ামী লীগ যে ক্ষমতায় এসেছে সেটা বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেই প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই 'দুই নম্বরি'র মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে একইভাবে বলেন, 'দুই নম্বর পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ইতিহাস বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগেরই আছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের জনসভায় রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত মিথ্যাচার করেছেন। তাঁর বক্তব্যের ভাষা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ রকম বক্তব্য চলমান সংকট উত্তরণে সাহায্য করবে না। বরং সংকট আরো জটিল হবে।'
১৪ দলের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আওয়ামী লীগ ১/১১-তে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। তাই পেছনের দরজা দিয়ে আমরা নই, আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসেছে। বিএনপি তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসেছে। কারো সহযোগিতায় নয়।'
খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে সম্পর্কে বলব- এই দেশটা কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। এই দেশে মানুষের থাকাটা তাদের জন্মগত অধিকার। কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার অধিকার দেশের জনগণ কাউকে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, অশ্লীল কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা কখনো বিদেশের কাছ থেকে টাকা বা সহায়তা নিইনি। বরং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ভারতের আশ্রয়ে ছিলেন। বিশ্বখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকা রিপোর্ট করেছে, গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ভারত থেকে বস্তা বস্তা টাকা এনে নির্বাচন করেছে। কিছুদিন আগে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাও লিখেছিল- সমস্যা হলে দিল্লি শেখ হাসিনার পাশে থাকবে। তাই কারা বিদেশ থেকে অর্থ নিয়ে নির্বাচন করেন, রাজনীতি করেন, তা দেশের মানুষ ভালো করেই জানে। প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার জনগণ বিশ্বাস করে না।'
সংসদে নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব বিএনপি দেবে না জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, 'আমাদের আসন ৩৫টি। আমরা কেন প্রস্তাব দেব? সরকারি দলকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিল উত্থাপন করতে হবে। পাসও তাদেরই করাতে হবে।' তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এখন কেবল বিএনপির নয়, জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) রায় বাংলাদেশের জন্য 'সুখবর' মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল বলেন, 'নিঃসন্দেহে এ রায় ঘোষণায় আমরা আনন্দিত। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা চিহ্নিত হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে আমাদের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার নিশ্চিত হলো। তাই এটা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুখবর।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'সালিসি আদালতে মামলার কাজে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করেছেন।' এ জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখানে সরকারের প্রশংসা পাওয়ার কিছু নেই। কাজটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। যাঁরা এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে ভালো কাজ করেছেন। প্রশংসা তাঁদের প্রাপ্য।'
এদিকে হান্নান শাহ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের এখনো শনাক্ত না করায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ বিষয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরও যদি খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে আমরা বুঝব- খুনিরা সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়ই আছে।' প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ তিনি আরো বলেন, 'পরে যখন এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে আপনিসহ (প্রধানমন্ত্রী) অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, তখন কোথায় যাবেন?'
১২ মার্চের মহাসমাবেশে কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সমালোচনা করে মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, 'আমাদের সমাবেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার হওয়ার সময় টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তাদের সমাবেশ ঠিকই বিটিভিসহ বেসরকারি চ্যানেলকে সম্প্রচার করতে বাধ্য করেছে।' পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ডিএমপির দেওয়া ১১টি শর্ত বিএনপি পালন করে মহাসমাবেশ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ডিএমপিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শর্ত ভঙ্গ করেছে।
বিএনপির মহাসমাবেশের দিন কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা এবং সমাবেশে আসার পথে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরাকরি দলের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনটির আয়োজন করে 'আমরা বাংলাদেশি' সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি ইরফান আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সময় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
'ছোট করে দেখবেন না' : গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে 'সীমান্ত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৪ দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'দেশের মানুষকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না।' এ অনুষ্ঠানেও ১৪ দলের জনসভায় দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কড়া সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
১৪ দলের জনসভায় দেওয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের '৯০ দিন কেন ৯০০ দিনেও খালেদার স্বপ্ন পূরণ হবে না' শীর্ষক বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, '১২ মার্চের মহাসমাবেশে তরুণদের মধ্যে আবার সেই উচ্ছ্বাস দেখতে পেয়েছি, যে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তরুণরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা টেকনাফ ও তেঁতুলিয়া থেকে ছুটে এসেছে। রাতে খবরের কাগজ বিছিয়ে গলিতে গলিতে শুয়ে থেকেছে মানুষ। স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না করেছে। আমরা আশান্বিত হয়েছি। সুতরাং এই তরুণদের, এই জনগণের সংগ্রামকে ছোট করে দেখবেন না।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশের বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তোলা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চ্যালেঞ্জও ছোড়েন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেছেন, 'এর আগেও প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য আমরা এনজয় করি। আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, এ-সংক্রান্ত প্রমাণ থাকলে উপস্থাপন করুন।'
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের আরো বলেন, তাঁর এ বক্তব্য মূলত বুধবার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে ১৪ দল আয়োজিত গণজমায়েতে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব।
এদিকে মানববন্ধনে রাখা বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে হান্নান শাহ বলেন, 'র' ও 'আইএসআই'সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সহায়তায় আওয়ামী লীগ যে ক্ষমতায় এসেছে সেটা বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেই প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই 'দুই নম্বরি'র মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে একইভাবে বলেন, 'দুই নম্বর পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ইতিহাস বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগেরই আছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের জনসভায় রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত মিথ্যাচার করেছেন। তাঁর বক্তব্যের ভাষা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ রকম বক্তব্য চলমান সংকট উত্তরণে সাহায্য করবে না। বরং সংকট আরো জটিল হবে।'
১৪ দলের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আওয়ামী লীগ ১/১১-তে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। তাই পেছনের দরজা দিয়ে আমরা নই, আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসেছে। বিএনপি তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসেছে। কারো সহযোগিতায় নয়।'
খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে সম্পর্কে বলব- এই দেশটা কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। এই দেশে মানুষের থাকাটা তাদের জন্মগত অধিকার। কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার অধিকার দেশের জনগণ কাউকে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, অশ্লীল কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা কখনো বিদেশের কাছ থেকে টাকা বা সহায়তা নিইনি। বরং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ভারতের আশ্রয়ে ছিলেন। বিশ্বখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকা রিপোর্ট করেছে, গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ভারত থেকে বস্তা বস্তা টাকা এনে নির্বাচন করেছে। কিছুদিন আগে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাও লিখেছিল- সমস্যা হলে দিল্লি শেখ হাসিনার পাশে থাকবে। তাই কারা বিদেশ থেকে অর্থ নিয়ে নির্বাচন করেন, রাজনীতি করেন, তা দেশের মানুষ ভালো করেই জানে। প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার জনগণ বিশ্বাস করে না।'
সংসদে নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব বিএনপি দেবে না জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, 'আমাদের আসন ৩৫টি। আমরা কেন প্রস্তাব দেব? সরকারি দলকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিল উত্থাপন করতে হবে। পাসও তাদেরই করাতে হবে।' তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এখন কেবল বিএনপির নয়, জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) রায় বাংলাদেশের জন্য 'সুখবর' মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল বলেন, 'নিঃসন্দেহে এ রায় ঘোষণায় আমরা আনন্দিত। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা চিহ্নিত হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে আমাদের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার নিশ্চিত হলো। তাই এটা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুখবর।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'সালিসি আদালতে মামলার কাজে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করেছেন।' এ জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখানে সরকারের প্রশংসা পাওয়ার কিছু নেই। কাজটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। যাঁরা এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে ভালো কাজ করেছেন। প্রশংসা তাঁদের প্রাপ্য।'
এদিকে হান্নান শাহ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের এখনো শনাক্ত না করায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ বিষয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরও যদি খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে আমরা বুঝব- খুনিরা সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়ই আছে।' প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ তিনি আরো বলেন, 'পরে যখন এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে আপনিসহ (প্রধানমন্ত্রী) অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, তখন কোথায় যাবেন?'
১২ মার্চের মহাসমাবেশে কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সমালোচনা করে মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, 'আমাদের সমাবেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার হওয়ার সময় টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তাদের সমাবেশ ঠিকই বিটিভিসহ বেসরকারি চ্যানেলকে সম্প্রচার করতে বাধ্য করেছে।' পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ডিএমপির দেওয়া ১১টি শর্ত বিএনপি পালন করে মহাসমাবেশ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ডিএমপিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শর্ত ভঙ্গ করেছে।
বিএনপির মহাসমাবেশের দিন কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা এবং সমাবেশে আসার পথে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরাকরি দলের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনটির আয়োজন করে 'আমরা বাংলাদেশি' সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি ইরফান আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সময় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
'ছোট করে দেখবেন না' : গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে 'সীমান্ত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৪ দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'দেশের মানুষকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না।' এ অনুষ্ঠানেও ১৪ দলের জনসভায় দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কড়া সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
১৪ দলের জনসভায় দেওয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের '৯০ দিন কেন ৯০০ দিনেও খালেদার স্বপ্ন পূরণ হবে না' শীর্ষক বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, '১২ মার্চের মহাসমাবেশে তরুণদের মধ্যে আবার সেই উচ্ছ্বাস দেখতে পেয়েছি, যে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তরুণরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা টেকনাফ ও তেঁতুলিয়া থেকে ছুটে এসেছে। রাতে খবরের কাগজ বিছিয়ে গলিতে গলিতে শুয়ে থেকেছে মানুষ। স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না করেছে। আমরা আশান্বিত হয়েছি। সুতরাং এই তরুণদের, এই জনগণের সংগ্রামকে ছোট করে দেখবেন না।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশের বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান।
No comments