মাহমুদ আব্বাস-বহুপ্রতীক্ষিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র
ষাট বছর আগে, ১৩ বছর বয়সের একটি ফিলিস্তিনি বালক বাধ্য হয়েছিল বাড়ি ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে সিরিয়ার গ্যালিলিয়ান শহর সফেদে চলে যেতে। সেখানে রিফিউজিদের জন্য ব্যবস্থা করা মোটা কাপড়ের একটি তাঁবুতে তার আশ্রয় হয়েছিল। যদিও সেই ছেলেটি এবং তার পরিবার যুগের পর যুগ বাড়িতে নিজের স্বদেশভূমিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে,
কিন্তু মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় এই শর্তটি লঙ্ঘন করে তাদের ফিরতে দেওয়া হয়নি। অনেক ফিলিস্তিনির মতো এই শিশুটির ইতিহাস আমার নিজের। এ বছর আমরা আরো একবার আমাদের বিতাড়িত হওয়ার সেই দিনটি স্মরণ করছি। যাকে আমরা বলি, নাকবা বা ধ্বংস। এ সময়ে ফিলিস্তিনের জনগণ আশা করছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসারে আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য অনুরোধ করব এবং আমাদের জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হবে।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ইসরায়েলের দখলদারি অব্যাহত থাকলে এ ধরনের স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের লাভ কী? আবার অনেকে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, শান্তি প্রচেষ্টাকে আমরা বিপদগ্রস্ত করে তুলছি। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, যেসব ফিলিস্তিনি মাতৃভূমিতে আছে, যারা নির্বাসনে আছে এবং যারা দখলদার এলাকায় আছে, তাদের সবার জন্য এর একটি বিশাল মূল্য আছে। এটা মনে রাখা দরকার, শেষবার যখন সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নটি উঠেছে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় যে আমাদের স্বদেশভূমি দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হবে কি না। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে এ ব্যাপারে সাধারণ পরিষদ ইতিবাচক সম্মতি প্রদান করে। কিন্তু তার পরপরই ইহুদি বাহিনী আবারও ফিলিস্তিনি আরবদের বিতাড়ন করে ভবিষ্যৎ ইসরায়েল রাষ্ট্রে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার জন্য। যুদ্ধ হয় এবং আবারও আমরা বিতাড়িত হই। সত্যিই গত রবিবার যারা প্রতীকীভাবে নিজের জন্মভূমিতে ফেরার চেষ্টা করে ইসরায়েলি সেনাদের গুলি খেয়েছে, আহত হয়েছে, তারা হলো ওই ফিলিস্তিনিদের উত্তরসূরি। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কয়েক মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই রয়ে গেছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিলে তা শুধু রাজনৈতিক নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ সংঘাত একটি সমস্যা হিসেবে দেখা যেত। ফলে আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, মানবাধিকার চুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলো এবং আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে নালিশ জানাতে পারতাম। আমাদের স্বীকৃতি চাওয়া কোনো অসংগত দাবি নয়। এ রকম রাজনৈতিক নাটকে আমাদের অসংখ্য নারী-পুরুষ প্রাণ দিয়েছে। আমাদের ইতিহাস থেকে বাস করা মাতৃভূমির মাত্র ২২ শতাংশ জায়গায় স্বাধীনভাবে বসবাস করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের কাছে ধরনা দিচ্ছি। গত ২০ বছর ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করছি, সে আলোচনায় আমাদের নিজেদের রাষ্ট্র সৃষ্টির বাস্তবতা তৈরি হয়নি। আমরা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না। ইসরায়েল অব্যাহতভাবে পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপন করে চলেছে এবং আমাদেরই ভূমি, পবিত্র স্থান বিশেষ করে জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জাতিসংঘের কোনো রাজনৈতিক চাপ বা কোনো পুরস্কারের প্রতিশ্রুতিই ইসরায়েলের বসতি স্থাপন প্রকল্প বন্ধ করতে পারছে না।
আমাদের প্রথম অপশন হলো আলোচনা। কিন্তু তা ব্যর্থতার কারণে আমরা বাধ্য হচ্ছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের জন্য। যাতে একটি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটে। এ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যা বলেছেন, মনে হচ্ছে একই কথা তিনি এ সপ্তাহের ওয়াশিংটন সফরের সময়ও বলবেন। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ঐক্য বা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি বড় প্রশ্ন নয়, প্রশ্নটি হলো দুটি রাষ্ট্রের সমাধান (টু স্টেট সলিউশন) অথবা বসতি-কলোনি। আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতিপুঞ্জের সদস্যপদের ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা মন্টে ভিডিও কনভেনশনের সব শর্ত পূরণ করেছি। ১৯৩৩ সালের সে অধিবেশনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারণ করা হয়। আমাদের ভূমির স্থায়ী বসবাসকারী হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণ। যাদের অধিকার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ২০০৪ সালে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আদালত দ্বারা একাধিকবার স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী আমাদের এলাকা স্বীকৃত। যদিও তা ইসরায়েল দখল করে রেখেছে।
আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম এবং ১০০-এর অধিক দূতাবাস ও মিশন আমাদের রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে যে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্র গঠন স্তরে উন্নীত হয়েছে। শুধু দখলদার শক্তি আমাদের পিছু টানছে। ফিলিস্তিন একটি শান্তিপ্রিয়, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে আইনের শাসন ও জাতিসংঘের চার্টারের নীতিগুলো মেনে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। একবার জাতিসংঘের দ্বারা স্বীকৃত হলে আমাদের রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সংঘাত এবং সংঘাতের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছে। আমাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য থাকবে সাধারণ পরিষদের ১৯৪৮ সালে অননুমোদিত ১৯৪ রেজুলেশন অনুসারে ফিলিস্তিনি রিফিউজি সমস্যার সমাধান করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ছয় দশক আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে রিফিউজি সমস্যার কার্যকরী সমাধান করে, তাহলে আমাদের জনগণের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ ও আশার ভবিষ্যৎ আসতে পারে।
লেখক : পিএলও চেয়ারম্যান এবং ফিলিস্তিন জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট।
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে ভাষান্তর করেছেন মহসীন হাবিব
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ইসরায়েলের দখলদারি অব্যাহত থাকলে এ ধরনের স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের লাভ কী? আবার অনেকে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, শান্তি প্রচেষ্টাকে আমরা বিপদগ্রস্ত করে তুলছি। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, যেসব ফিলিস্তিনি মাতৃভূমিতে আছে, যারা নির্বাসনে আছে এবং যারা দখলদার এলাকায় আছে, তাদের সবার জন্য এর একটি বিশাল মূল্য আছে। এটা মনে রাখা দরকার, শেষবার যখন সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নটি উঠেছে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় যে আমাদের স্বদেশভূমি দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হবে কি না। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে এ ব্যাপারে সাধারণ পরিষদ ইতিবাচক সম্মতি প্রদান করে। কিন্তু তার পরপরই ইহুদি বাহিনী আবারও ফিলিস্তিনি আরবদের বিতাড়ন করে ভবিষ্যৎ ইসরায়েল রাষ্ট্রে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার জন্য। যুদ্ধ হয় এবং আবারও আমরা বিতাড়িত হই। সত্যিই গত রবিবার যারা প্রতীকীভাবে নিজের জন্মভূমিতে ফেরার চেষ্টা করে ইসরায়েলি সেনাদের গুলি খেয়েছে, আহত হয়েছে, তারা হলো ওই ফিলিস্তিনিদের উত্তরসূরি। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কয়েক মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই রয়ে গেছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিলে তা শুধু রাজনৈতিক নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ সংঘাত একটি সমস্যা হিসেবে দেখা যেত। ফলে আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, মানবাধিকার চুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলো এবং আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে নালিশ জানাতে পারতাম। আমাদের স্বীকৃতি চাওয়া কোনো অসংগত দাবি নয়। এ রকম রাজনৈতিক নাটকে আমাদের অসংখ্য নারী-পুরুষ প্রাণ দিয়েছে। আমাদের ইতিহাস থেকে বাস করা মাতৃভূমির মাত্র ২২ শতাংশ জায়গায় স্বাধীনভাবে বসবাস করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের কাছে ধরনা দিচ্ছি। গত ২০ বছর ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করছি, সে আলোচনায় আমাদের নিজেদের রাষ্ট্র সৃষ্টির বাস্তবতা তৈরি হয়নি। আমরা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না। ইসরায়েল অব্যাহতভাবে পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপন করে চলেছে এবং আমাদেরই ভূমি, পবিত্র স্থান বিশেষ করে জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জাতিসংঘের কোনো রাজনৈতিক চাপ বা কোনো পুরস্কারের প্রতিশ্রুতিই ইসরায়েলের বসতি স্থাপন প্রকল্প বন্ধ করতে পারছে না।
আমাদের প্রথম অপশন হলো আলোচনা। কিন্তু তা ব্যর্থতার কারণে আমরা বাধ্য হচ্ছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের জন্য। যাতে একটি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটে। এ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যা বলেছেন, মনে হচ্ছে একই কথা তিনি এ সপ্তাহের ওয়াশিংটন সফরের সময়ও বলবেন। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ঐক্য বা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি বড় প্রশ্ন নয়, প্রশ্নটি হলো দুটি রাষ্ট্রের সমাধান (টু স্টেট সলিউশন) অথবা বসতি-কলোনি। আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতিপুঞ্জের সদস্যপদের ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা মন্টে ভিডিও কনভেনশনের সব শর্ত পূরণ করেছি। ১৯৩৩ সালের সে অধিবেশনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারণ করা হয়। আমাদের ভূমির স্থায়ী বসবাসকারী হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণ। যাদের অধিকার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ২০০৪ সালে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আদালত দ্বারা একাধিকবার স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী আমাদের এলাকা স্বীকৃত। যদিও তা ইসরায়েল দখল করে রেখেছে।
আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম এবং ১০০-এর অধিক দূতাবাস ও মিশন আমাদের রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে যে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্র গঠন স্তরে উন্নীত হয়েছে। শুধু দখলদার শক্তি আমাদের পিছু টানছে। ফিলিস্তিন একটি শান্তিপ্রিয়, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে আইনের শাসন ও জাতিসংঘের চার্টারের নীতিগুলো মেনে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। একবার জাতিসংঘের দ্বারা স্বীকৃত হলে আমাদের রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সংঘাত এবং সংঘাতের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছে। আমাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য থাকবে সাধারণ পরিষদের ১৯৪৮ সালে অননুমোদিত ১৯৪ রেজুলেশন অনুসারে ফিলিস্তিনি রিফিউজি সমস্যার সমাধান করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ছয় দশক আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে রিফিউজি সমস্যার কার্যকরী সমাধান করে, তাহলে আমাদের জনগণের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ ও আশার ভবিষ্যৎ আসতে পারে।
লেখক : পিএলও চেয়ারম্যান এবং ফিলিস্তিন জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট।
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে ভাষান্তর করেছেন মহসীন হাবিব
No comments