আমায় ক্ষমো হে-'সিএসআর' বা ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে বিভ্রান্তি by মামুন রশীদ
বাংলাদেশে সমসাময়িককালে 'করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি' বা 'ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা' (সিএসআর) একটি বহুল উচ্চারিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমরা প্রায়ই চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রম ও সিএসআরকে সমার্থক ভেবে গুলিয়ে ফেলি। এতে একধরনের বিভ্রান্তির ধূম্রজাল তৈরি হয়।
আমরা এখানে সিএসআর নয়, কিন্তু সিএসআরের নামে সংঘটিত হয় বা চালিয়ে দেওয়া হয় এমন কিছু কার্যক্রমও মেনে নেই। একবার আমি এক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) তাঁর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি সামাজিক ক্লাবের অনুষ্ঠানে 'ইন্ডিয়ান আইডল' নিয়ে আসার খরচ বহন বা পৃষ্ঠপোষকতা করাকে সিএসআর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলেও শুনেছি। আরেকবার অন্য এক সিইওকেও তাঁর প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিপালনীয় শর্তাবলিকে (কমপ্লায়েন্স) সিএসআর বলে চালিয়ে দেওয়ার কথা শুনেছি। একজন ব্যবসায়ী নেতা টিভি টকশোতে ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বসলেন যে তারা যাতে সিএসআর কার্যক্রমের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) দেওয়া ঋণের সুদহার কমায়। সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তি বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানরাও সংগীতানুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা বা গ্রামে ব্যাংকসেবা পৌঁছানোর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'সিএসআর' করার কথা বলেন।
আমাদের বুঝতে হবে, কম্পানির সামাজিক দায়িত্বশীলতা (সিএসআর) চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রমের চেয়েও বেশি কিছু। এটি শুধু ভালো কাজ বা দাতব্য সংগঠনে দান করাই নয়, বরং এটি হলো সমাজের জন্য কোনো কম্পানির সারা বছর ধরে দায়িত্বশীলতা পালন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই করপোরেট ভ্যালুজ বা কম্পানির মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ব্যবসায়িক কৌশল এবং ভবিষ্যতে টিকে থাকার প্রতিশ্রুতি প্রভৃতি বিষয় সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে সিএসআর হলো চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রমের চেয়েও বেশি কিছু, যার মাধ্যমে কোনো কম্পানি সমাজের জন্য অব্যাহতভাবে অবদান রাখে। এটি একটি স্বীকৃতিও বটে; যেখানে কোনো ব্র্যান্ড বা কম্পানিকে শুধু কোয়ালিটি বা গুণ, দাম ও বিশেষত্ব বা স্বকীয়তার ওপর নির্ভর করতে হয় না। সিএসআরে আরো কিছু বিবেচ্য আছে, যেমন- কম্পানি কর্তৃপক্ষ তার কর্মী থেকে শুরু করে কমিউনিটি বা সমাজ ও পরিবেশের প্রতি কোন ধরনের আচরণ করে থাকে।
প্রায়ই সিএসআরকে একটি নৈতিক দিক থেকে দেখা হয়। বিষয়টাকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বা বিবেচনা করলে তখন কিভাবে সিএসআরের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান ও পণ্যের উন্নয়ন করা যায়, তা বিবেচনা করতে হয়।
সিএসআর কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সফল উদ্ভাবন ও পরিকল্পনায় পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রবণতায় জোর দেওয়া উচিত। যাতে সুবিধা বাড়ানো যায়। কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিয়তই সামাজিক প্রবণতার ওপর নজর রাখার পাশাপাশি পরিবেশ এবং পণ্য ও ভোক্তার সম্পর্কের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
এমনকি আজকের দিনেও অনেকেই সিএসআরকে দাতব্য কার্যক্রমের অংশ মনে করে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীতটাই হওয়া উচিত। সিএসআরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রম। অর্থাৎ কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান- যে সমাজে ব্যবসা করে সেখানকার জন্য কিছু অবদান রাখা। যখন কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা কম্পানি তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশ ইস্যুকে বিবেচনায় নেয় এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে, তখনই সিএসআর পূর্ণ মাত্রা পায়।
তবে স্থানীয় কমিউনিটি বা সমাজে অবদান রাখার বিষয়ে কম্পানিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে। এটি সিএসআরের একটি অংশ হতে পারে কিংবা 'করপোরেট সিটিজেনশিপ' বা করপোরেট নাগরিকত্বের অংশ হতে পারে। অনেক বড় কম্পানির কাছে এ ধরনের কার্যক্রম হলো ব্যবসায়িক অংশীদার, কমিউনিটি বা সমাজ ও সরকারের প্রতি করপোরেট সিটিজেন বা করপোরেট নাগরিকের দায়িত্বশীলতা পালনের প্রতিশ্রুতি। সিএসআর কার্যক্রম অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ সাধনে অবদান রাখার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে পারে যে তারা বিশ্বজুড়ে জনগণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
সিএসআরের পাশাপাশি কম্পানিগুলোকে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়েও জোর দিতে হবে। কারণ সুশাসন নিশ্চিত হলে কম্পানিগুলো আইনের আওতায় থেকে তার ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। যা তাদের সম্পর্কে সার্বিকভাবে সমাজে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থাৎ ভালো একটি ভাবমূর্তি তৈরি হয়। সিএসআর কার্যক্রমের সংজ্ঞা, আওতা ও পরিধি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকলেও আমরা এর সত্যিকারের মান এবং মূল্যবোধ থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমরা প্রায়ই দেখি যে চমকানো বার্ষিক রিপোর্ট ও জনসংযোগকে কেউ কেউ সিএসআর বলে মনে করে। কারো কারো কাছে সিএসআর হলো, ব্যবসায়ের সুযোগ ও উন্নতমানের প্রতিযোগিতা বিশেষ। আবার অনেকেই এটাকে হুমকি ও ঝুঁকি বলে মনে করেন। কিন্তু একটি পরিকল্পিত সিএসআর কার্যক্রমের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো কী আছে?
অনেক ক্ষেত্রেই সিএসআর কার্যক্রম নির্ভর করে কম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যানদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। বহু প্রতিষ্ঠান তাদের অনন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও সম্পদ বিতরণের মাধ্যমে কাজটি করে থাকে। আবার দেশে এখনো এমন অনেক কম্পানি রয়েছে যেগুলো শুধু অর্থ দান করেই সিএসআর কার্যক্রম সেরে ফেলে।
কম্পানিগুলো যে উপায়েই সিএসআর কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুক না কেন, তাতে তাদের সত্যিকারের অবস্থা প্রতিফলিত হওয়া উচিত। তবে স্থানীয় ও বহুজাতিক নির্বিশেষে প্রতিটি কম্পানিরই অ্যাপ্রোচ বা উপস্থাপনা, চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে পার্থক্য থাকতে পারে। অনেক কম্পানিই 'সিএসআর' সম্পর্কে রিপোর্ট করার চেয়ে দায়সারাভাবে সিএসআর করার ওপরই বেশি জোর দেয়। আবার অনেক বড় কম্পানি রয়েছে, তারা 'সিএসআর' তো দূরের কথা, ঠিকমতো আয়কর থেকে শুরু করে কোনো ধরনের 'প্রদেয়' বা দায়িত্বশীলতা নিয়ে ভাবে না।
একই মালিকানাধীন একটি ব্যাংক সিএসআরের আওতায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুদান হিসেবে একটি গাড়ি দেয় (সম্ভবত প্রতিষ্ঠানটি তাদের গ্রাহকও বটে)। এটি কোনোভাবেই সিএসআর হতে পারে না। একইভাবে 'পল্লী অর্থায়ন' এবং এমনকি 'ফিন্যানসিয়াল ইনক্লসিভনেস' বা 'আর্থিক অন্তর্ভুক্তকরণ'কেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সিএসআরের অংশ বলা যাবে না। সিএসআর এগুলোর চেয়ে অনেক বেশি কিছু। যে সমাজ থেকে অর্থ আয় করা হয়ে থাকে, সেই সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতিতে অর্থ ব্যয় করাই হলো সিএসআর।
বাংলাদেশে ধীরে ধীরে সিএসআর কার্যক্রমের যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটিও স্বীকার করতে হবে। তবে সিএসআর নিয়ে যে বিভ্রান্তি রয়েছে এবং যেভাবে সিএসআরের অপব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোরও অবসান হওয়া দরকার।
লেখক : ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
আমাদের বুঝতে হবে, কম্পানির সামাজিক দায়িত্বশীলতা (সিএসআর) চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রমের চেয়েও বেশি কিছু। এটি শুধু ভালো কাজ বা দাতব্য সংগঠনে দান করাই নয়, বরং এটি হলো সমাজের জন্য কোনো কম্পানির সারা বছর ধরে দায়িত্বশীলতা পালন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই করপোরেট ভ্যালুজ বা কম্পানির মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ব্যবসায়িক কৌশল এবং ভবিষ্যতে টিকে থাকার প্রতিশ্রুতি প্রভৃতি বিষয় সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে সিএসআর হলো চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রমের চেয়েও বেশি কিছু, যার মাধ্যমে কোনো কম্পানি সমাজের জন্য অব্যাহতভাবে অবদান রাখে। এটি একটি স্বীকৃতিও বটে; যেখানে কোনো ব্র্যান্ড বা কম্পানিকে শুধু কোয়ালিটি বা গুণ, দাম ও বিশেষত্ব বা স্বকীয়তার ওপর নির্ভর করতে হয় না। সিএসআরে আরো কিছু বিবেচ্য আছে, যেমন- কম্পানি কর্তৃপক্ষ তার কর্মী থেকে শুরু করে কমিউনিটি বা সমাজ ও পরিবেশের প্রতি কোন ধরনের আচরণ করে থাকে।
প্রায়ই সিএসআরকে একটি নৈতিক দিক থেকে দেখা হয়। বিষয়টাকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বা বিবেচনা করলে তখন কিভাবে সিএসআরের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান ও পণ্যের উন্নয়ন করা যায়, তা বিবেচনা করতে হয়।
সিএসআর কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সফল উদ্ভাবন ও পরিকল্পনায় পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রবণতায় জোর দেওয়া উচিত। যাতে সুবিধা বাড়ানো যায়। কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিয়তই সামাজিক প্রবণতার ওপর নজর রাখার পাশাপাশি পরিবেশ এবং পণ্য ও ভোক্তার সম্পর্কের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
এমনকি আজকের দিনেও অনেকেই সিএসআরকে দাতব্য কার্যক্রমের অংশ মনে করে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীতটাই হওয়া উচিত। সিএসআরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রম। অর্থাৎ কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান- যে সমাজে ব্যবসা করে সেখানকার জন্য কিছু অবদান রাখা। যখন কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা কম্পানি তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশ ইস্যুকে বিবেচনায় নেয় এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে, তখনই সিএসআর পূর্ণ মাত্রা পায়।
তবে স্থানীয় কমিউনিটি বা সমাজে অবদান রাখার বিষয়ে কম্পানিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে। এটি সিএসআরের একটি অংশ হতে পারে কিংবা 'করপোরেট সিটিজেনশিপ' বা করপোরেট নাগরিকত্বের অংশ হতে পারে। অনেক বড় কম্পানির কাছে এ ধরনের কার্যক্রম হলো ব্যবসায়িক অংশীদার, কমিউনিটি বা সমাজ ও সরকারের প্রতি করপোরেট সিটিজেন বা করপোরেট নাগরিকের দায়িত্বশীলতা পালনের প্রতিশ্রুতি। সিএসআর কার্যক্রম অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ সাধনে অবদান রাখার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে পারে যে তারা বিশ্বজুড়ে জনগণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
সিএসআরের পাশাপাশি কম্পানিগুলোকে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়েও জোর দিতে হবে। কারণ সুশাসন নিশ্চিত হলে কম্পানিগুলো আইনের আওতায় থেকে তার ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। যা তাদের সম্পর্কে সার্বিকভাবে সমাজে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থাৎ ভালো একটি ভাবমূর্তি তৈরি হয়। সিএসআর কার্যক্রমের সংজ্ঞা, আওতা ও পরিধি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকলেও আমরা এর সত্যিকারের মান এবং মূল্যবোধ থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমরা প্রায়ই দেখি যে চমকানো বার্ষিক রিপোর্ট ও জনসংযোগকে কেউ কেউ সিএসআর বলে মনে করে। কারো কারো কাছে সিএসআর হলো, ব্যবসায়ের সুযোগ ও উন্নতমানের প্রতিযোগিতা বিশেষ। আবার অনেকেই এটাকে হুমকি ও ঝুঁকি বলে মনে করেন। কিন্তু একটি পরিকল্পিত সিএসআর কার্যক্রমের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো কী আছে?
অনেক ক্ষেত্রেই সিএসআর কার্যক্রম নির্ভর করে কম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যানদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। বহু প্রতিষ্ঠান তাদের অনন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও সম্পদ বিতরণের মাধ্যমে কাজটি করে থাকে। আবার দেশে এখনো এমন অনেক কম্পানি রয়েছে যেগুলো শুধু অর্থ দান করেই সিএসআর কার্যক্রম সেরে ফেলে।
কম্পানিগুলো যে উপায়েই সিএসআর কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুক না কেন, তাতে তাদের সত্যিকারের অবস্থা প্রতিফলিত হওয়া উচিত। তবে স্থানীয় ও বহুজাতিক নির্বিশেষে প্রতিটি কম্পানিরই অ্যাপ্রোচ বা উপস্থাপনা, চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে পার্থক্য থাকতে পারে। অনেক কম্পানিই 'সিএসআর' সম্পর্কে রিপোর্ট করার চেয়ে দায়সারাভাবে সিএসআর করার ওপরই বেশি জোর দেয়। আবার অনেক বড় কম্পানি রয়েছে, তারা 'সিএসআর' তো দূরের কথা, ঠিকমতো আয়কর থেকে শুরু করে কোনো ধরনের 'প্রদেয়' বা দায়িত্বশীলতা নিয়ে ভাবে না।
একই মালিকানাধীন একটি ব্যাংক সিএসআরের আওতায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুদান হিসেবে একটি গাড়ি দেয় (সম্ভবত প্রতিষ্ঠানটি তাদের গ্রাহকও বটে)। এটি কোনোভাবেই সিএসআর হতে পারে না। একইভাবে 'পল্লী অর্থায়ন' এবং এমনকি 'ফিন্যানসিয়াল ইনক্লসিভনেস' বা 'আর্থিক অন্তর্ভুক্তকরণ'কেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সিএসআরের অংশ বলা যাবে না। সিএসআর এগুলোর চেয়ে অনেক বেশি কিছু। যে সমাজ থেকে অর্থ আয় করা হয়ে থাকে, সেই সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতিতে অর্থ ব্যয় করাই হলো সিএসআর।
বাংলাদেশে ধীরে ধীরে সিএসআর কার্যক্রমের যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটিও স্বীকার করতে হবে। তবে সিএসআর নিয়ে যে বিভ্রান্তি রয়েছে এবং যেভাবে সিএসআরের অপব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোরও অবসান হওয়া দরকার।
লেখক : ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
No comments