সাদাকালো-ওষুধনীতির যথার্থ প্রয়োগ ক্রেতাস্বার্থে অত্যন্ত জরুরি by আহমদ রফিক
একটি দৈনিক সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম 'ওষুধের দাম হঠাৎ গলাকাটা'। একসময় ওষুধ খাতের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বলে বিষয়টা নিয়ে লেখার তাগিদ অনুভব করি। 'একসময়' কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়- কলমের টানে লেখা।
ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতির টানে এবং মুসলিম লীগ সরকারের দমননীতির চাপে ছাত্রজীবন বিপর্যস্ত হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট একাধিক কারণে জীবিকার অন্য পথ বেছে নিতে হয়। ভেষজবিজ্ঞান বিষয়টা ছাত্রাবস্থায় খুব প্রিয় ছিল। হয়তো সে টানেই জীবিকার ক্ষেত্রে ওষুধ শিল্পে আমার গতি এবং তা শেষ অবধি।
স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের উৎপাদনে, পণ্যের গুণগত মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে একধরনের নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি দেখা দেয়। পাকিস্তান আমলে ওষুধ শিল্প খাতে বিদেশি বহুজাতিক ওষুধ কম্পানিগুলোর ছিল একচেটিয়া রাজত্ব। সেই সঙ্গে একচেটিয়া মুনাফাবাজি। গুটিকয়েক বহুজাতিক কম্পানির হাতে ওষুধ শিল্পের সিংহভাগ বাজার, তাতে আপত্তি ছিল না, যদি তাদের মুনাফার দৌরাত্ম্য ভয়াবহ রকম না হতো।
তাই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে পর্যন্ত ওষুধ ঔপনিবেশিকতার বাস্তবতা মেনে নিতে হয় এবং ওই 'ড্রাগ কলোনিয়ালিজম' যে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশের গরিব মানুষকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে শোষণ করছে, তা অস্বীকারের উপায় ছিল না। এ নিয়ে ছিল ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এক টাকার উপাদানে তৈরি ওষুধ যদি ছয় টাকা বা আট টাকায় বিক্রি করা হয়, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না শোষণ কাকে বলে।
এসব নিয়ে একসময় বেশ লেখালেখি হয়, ওষুধ খাত ঘিরেও জাতীয়তাবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে। ছোট ছোট গুটিকয়েক দেশীয় ওষুধ কম্পানি, কতটুকুই-বা তাদের শক্তি; অর্থাৎ বহুজাতিক শক্তিমান বিদেশি কম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কতটুকুই-বা শক্তি তাদের। ওষুধ কম্পানিতে কাজ করা এবং ভেষজবিষয়ক তাত্তি্বক ও প্রায়োগিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুবাদে ওষুধবিষয়ক জাতীয় চেতনার পক্ষে তাত্তি্বক লড়াইয়ে যোগ দিয়ে বেশ কিছু লেখাও শেষ করি। বইও প্রকাশ পায়।
ওষুধ শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক মুনাফাবাজি বিষয়ে কয়েক অনুচ্ছেদে পূর্বকথা লেখার উদ্দেশ্য, এ লড়াইয়ের বিষয়টি আজ চিকিৎসা অঙ্গনের নবীনদের অনেকেরই হয়তো অজানা, আর প্রবীণরা হয়তো ভুলে গেছেন। দেশীয় ওষুধ শিল্পের ক্রমেই বিকাশ ঘটলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাদের বিকাশ গুণগত মানে আকাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের ছিল না।
দীর্ঘদিন পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কল্যাণে দেশীয় ওষুধনীতিমালা প্রবর্তন দেশীয় ওষুধ শিল্পের বিকাশে প্রবল উদ্দীপনা হয়ে ওঠে। আজ যে কয়টি দেশীয় ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান শীর্ষস্থানে দাঁড়ানো, তাদের সবটুকু সাফল্য ওই ওষুধনীতির কল্যাণে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জোর দিয়ে বলতে পারি এ জন্য যে এ উত্থানের ইতিকথার ওষুধনীতির সঙ্গে অনেকটা জড়িত ছিলাম। যেমন মূল প্রবক্তা ছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর প্রতিক্রিয়ায় মূল বিদেশি বহুজাতিক ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই ধীরে-সুস্থে এ দেশীয় বাজার থেকে প্রস্থান। দু-একটি অবশ্য দেশীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করেছে এবং পরে বাড়বাড়ন্তও ঘটিয়েছে।
বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি, মূলত দেশি ওষুধ শিল্পের যে সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তার ভিত্তি সম্ভবত দেশের জনসংখ্যার প্রবল বিস্ফোরণ। ওষুধ শিল্পের নিয়ন্ত্রণে একসময় গড়ে তোলা হয় সরকারি তরফে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ তথা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। শুরুতে ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য নির্ধারণে ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা ছিল বেশ ইতিবাচক। প্রথম দিকে আমার এক সহপাঠী এবং পরে ঘনিষ্ঠ দু-একজন ওই অধিদপ্তরের প্রশাসক হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে ওষুধ শিল্পের দেখভাল করেছেন।
তখন একটি ওষুধ তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদানসহ অন্যান্য খাতের ব্যয় ও যুক্তিসংগত লভ্যাংশের হিসাবসহ উৎপাদিত ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হতো। মনে আছে, তাতে উৎপাদকদের প্রতিনিধিত্বও থাকত, যাতে উৎপাদক ও ক্রেতা কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যেমন-তেমনভাবে যখন-তখন ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ ছিল না। মুনাফার একটি যুক্তিসংগত মাত্রা সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারিত হওয়াটাই ছিল রীতি। এমনটাই ছিল নীতি।
এরপর অবশ্য নানা উপলক্ষে দেখেছি, ওষুধ খাতে সুষ্ঠুনীতি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে যেমন সিদ্ধি লাভ হয় না, তেমনি হয় না অদক্ষতা বা উপেক্ষা, অবহেলা প্রাধান্য পেলে, যা উপমহাদেশের সরকারি ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। ওই যে কথায় বলে না- 'কম্পানিকা মাল দরিয়া মে ঢাল'- কম্পানির অর্থ স্বাধীন দেশে হচ্ছে সরকার। যে জন্য দেশের উন্নতি সর্বখাতে ব্যাহত হতে থাকে।
এবার মূল কথায় আসি। ওষুধের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির খবরটা তাই ভাবনার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন নিয়ে প্রায়ই দেখা যায়, অতিরঞ্জনের অভিযোগ, পাল্টা বিবৃতি, পরিশেষে প্রতিবেদকের বক্তব্য ইত্যাদি। তাই অভিযোগ যাচাই করতে কাছেই দু-একটা বড় ওষুধের দোকানে জিজ্ঞাসাবাদ করি। খুচরা ওষুধ বিক্রেতাদের 'দাঁও মারার' সুযোগ বড় একটা নেই। নির্দিষ্ট শতাংশ হারে তাঁরা লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন। তাই কারো পক্ষ টেনে তাঁদের কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বাজারে কোনো ওষুধের ঘাটতি দেখা দিলে দাম বাড়াতে তাঁদেরও বিবেকে বাধে না। আলোচ্য বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য : মার্চের শুরু থেকে হঠাৎ করেই কয়েকটি বড় কম্পানি বেশ কিছু ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই আকস্মিক বৃদ্ধি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ওযুধের দাম বাড়ার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে যার ইঙ্গিত আগে দেওয়া হয়েছে। ওষুধের উপকরণ মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করে একসঙ্গে এতটা বাড়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে উপাদানগুলোর আন্তর্জাতিক মূল্য জেনে নিতে পারলে এ লেখার যুক্তি আরো মজবুত হতো।
তবু বাজারের মূল্যমান প্রবণতা থেকে মনে হয়, প্রতিবেদনে উপস্থাপিত ও দোকানির বক্তব্যমাফিক মূল্যবৃদ্ধি সম্ভবত মুনাফাবাজির প্রবণতা থেকে। তাই যদি হয়, তা হলে মূল্যবৃদ্ধি ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে হয়েছে। অর্থাৎ তারা হিসাব-নিকাশ করে মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এ বিষয়ে যতটা জানা গেছে, তাতে দেখা যায় যে আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের উপাদানের দাম বাড়েনি। মুদ্রাস্ফীতি তথা বিদেশি মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় নাকি এ বিপত্তি।
বিষয়টা যদি এখানে শেষ হতো তাহলে ওষুধ ক্রেতার ক্ষোভের কারণ ঘটত না। কিন্তু হিসাব-নিকাশে দেখা যায়, এ কয়েক মাসে ডলারের মূল্য যতটা বেড়েছে তার তুলনায় ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত বেশি। তা হলে মানতে হয়, এসব ক্ষেত্রে উৎপাদকের মুনাফাবৃত্তির প্রবণতাই বড় কারণ। দীর্ঘ এ প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট অনেকের মতামত উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাতেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে।
তাতে মনে হয়, 'ডাল মে কুচ কালা হয়' এবং সে ডাল তৈরিতে একাধিক উৎসের ভূমিকা রয়েছে। আর ওষুধ প্রশাসনের তথ্য মেনে নিতে হলে অর্থাৎ অনেক ওষুধের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব প্রস্তুতকারক কম্পানির, তা হলে সরকারি নীতিকেও এ নৈরাজ্যের জন্য দায়ী করতে হয়। মূল ওষুধনীতিতে এ জাতীয় কোনো বিধান ছিল না। উৎপাদকের ওপর যদি মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তা হলে পুঁজিবাদের নিয়মমাফিক সে তার অপব্যবহার করবে- এটাই স্বাভাবিক।
আর সে জন্যই কোনো কোনো বহুল প্রচলিত ওষুধের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে। এ বাড়ার কারণ তাই বহুবিধ। তবে একটি মূল কারণ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কথিত সীমাবদ্ধ ক্ষমতা। এদিক থেকে ওষুধ প্রশাসন আর নিয়ন্ত্রকের (ড্রাগ কন্ট্রোলের) ভূমিকা নেই। এ ভূমিকা ওষুধ প্রশাসনকে ফিরিয়ে দিতে হবে, যেমনটা দেখেছি প্রাথমিক পর্যায়ে। অবশ্য একই সঙ্গে শর্ষের মধ্যে ভূতের আবির্ভাব যাতে না ঘটে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ এ ঘটনা আমাদের দেশে অনেক সচরাচর।
আর মুনাফাবৃত্তি? মাশাল্লাহ, এদিক থেকে সর্বখাতে বাংলাদেশ একক ও অনন্য। এ জন্যই আন্তর্জাতিক মহলে আমরা দুর্নীতিতে ভালোই নাম কিনেছি। সত্তরের দশকে যিনি দোকানি তিনি এক দশকেই বৃহৎ ব্যবসায়ী কিংবা বড়জোর দুই দশকে। একইভাবে ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন বিপুল সম্পদের অধিকারী শিল্পপতি। একটি দৈনিকের খবরে পড়েছি, নামি এক শিল্পপতির চার সদস্যের সংসারে বিলাসবহুল খাতে সাতটি গাড়ি; এক একটির দাম শুনলে ভিরমি খেতে হয়।
সে জন্যই সপ্তাহ কয় আগে লিখেছিলাম, যে দেশে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকেছে, সে দেশে কেন কোটি কোটি টাকা অঙ্কের বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করা হয়? কোন যুক্তিতে করা হয়? ক্রেতার নিজ টাকায় কেনা হলেও বিদেশি মুদ্রা তো সরবরাহ করতে হয় সরকারকে। কেন সরকার নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে চাইবে না। তুলনাটা কারো কারো অপছন্দের। কিন্তু সত্য অপ্রিয় হলেও সত্যই থেকে যায়। এই কিছু দিন আগেও অর্থনৈতিক বিচারে সমৃদ্ধ ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার প্রমুখ ব্যক্তি যদি সাধারণের ব্যবহৃত সাদামাটা 'অ্যামবাসাডার' গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন, তা হলে আমাদের শীর্ষ কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ীকুল কি এমনই অভিজাত যে তাদের বিএমডাবি্লউ বা মার্সিডিজ বেঞ্জ না হলে চলে না? তাতে দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় যতই নিচে নামুক। কোনো আসে-যায় না।
মনে হয়, সদাচার ও পরিমিতি বোধ, সংযম ও সাধ্যমাফিক ব্যয় আমাদের রক্তে নেই, মননশীলতার হিসেবে নেই। তাই প্রতি পদে অপচয়, অপরিমিত ব্যয়। তাতে দেশের অর্থনীতি চুলোয় যাক, কিছু আসে-যায় না। অথচ বিশ্ব আমাদের দরিদ্রতম দেশের একটি বলেই জানে এবং সেভাবেই আমাদের সঙ্গে ব্যবহার করে। তাতে আমাদের মর্যাদা বোধ আহত হয় না।
পরিশেষে ওষুধ প্রসঙ্গে ফিরি। আমাদের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসক-মন্ত্রীদের প্রতি অনুরোধ, দেশের রোগাক্রান্ত সাধারণ মানুষের, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে ওষুধ প্রশাসনের শক্তি বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা নিন, তাদের সততার সঙ্গে কাজ করতে সহযোগিতা করুন; যাতে অসাধু উপায়ে ওষুধের অসংগত মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ হয়। তদারকির জন্য সৎ কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়ন্ত্রক সেল গঠন করুন, যাতে সরকারি নীতি তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। যাতে ওষুধের যুক্তিহীন দাম বাড়ার পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়।
ওষুধনীতি সূত্রে আরো একটি কথা বলা প্রয়োজন বোধ করছি, শুধু বলা নয়, এটা দাবি। আমেরিকায় খাদ্য ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে 'ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি' সংক্ষেপে এফডিএ। সংগত বিচারে খাদ্যমানের বিষয়টিতে তারা অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ খাদ্য প্রতিদিনের প্রয়োজন, ওষুধ বিশেষ অবস্থায় কখনো কখনো। কিন্তু আমরা খাদ্যের মতো অত্যাবশ্যক বিষয়টিকে অবহেলা করেছি শুধু ওষুধনীতি প্রণয়ন করে। সে সময় বিষয়টা নিয়ে লিখেছিলাম, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তবু আবারও এ বিষয়ে শীর্ষ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে তারা আমাদের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে 'ফুড' শব্দটি যোগ করে দেশবাসীকে এন্তার ভেজাল খাদ্য ও বিষাক্ত খাদ্য খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক,
প্রাবন্ধিক, কবি
স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের উৎপাদনে, পণ্যের গুণগত মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে একধরনের নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি দেখা দেয়। পাকিস্তান আমলে ওষুধ শিল্প খাতে বিদেশি বহুজাতিক ওষুধ কম্পানিগুলোর ছিল একচেটিয়া রাজত্ব। সেই সঙ্গে একচেটিয়া মুনাফাবাজি। গুটিকয়েক বহুজাতিক কম্পানির হাতে ওষুধ শিল্পের সিংহভাগ বাজার, তাতে আপত্তি ছিল না, যদি তাদের মুনাফার দৌরাত্ম্য ভয়াবহ রকম না হতো।
তাই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে পর্যন্ত ওষুধ ঔপনিবেশিকতার বাস্তবতা মেনে নিতে হয় এবং ওই 'ড্রাগ কলোনিয়ালিজম' যে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশের গরিব মানুষকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে শোষণ করছে, তা অস্বীকারের উপায় ছিল না। এ নিয়ে ছিল ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এক টাকার উপাদানে তৈরি ওষুধ যদি ছয় টাকা বা আট টাকায় বিক্রি করা হয়, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না শোষণ কাকে বলে।
এসব নিয়ে একসময় বেশ লেখালেখি হয়, ওষুধ খাত ঘিরেও জাতীয়তাবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে। ছোট ছোট গুটিকয়েক দেশীয় ওষুধ কম্পানি, কতটুকুই-বা তাদের শক্তি; অর্থাৎ বহুজাতিক শক্তিমান বিদেশি কম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কতটুকুই-বা শক্তি তাদের। ওষুধ কম্পানিতে কাজ করা এবং ভেষজবিষয়ক তাত্তি্বক ও প্রায়োগিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুবাদে ওষুধবিষয়ক জাতীয় চেতনার পক্ষে তাত্তি্বক লড়াইয়ে যোগ দিয়ে বেশ কিছু লেখাও শেষ করি। বইও প্রকাশ পায়।
ওষুধ শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক মুনাফাবাজি বিষয়ে কয়েক অনুচ্ছেদে পূর্বকথা লেখার উদ্দেশ্য, এ লড়াইয়ের বিষয়টি আজ চিকিৎসা অঙ্গনের নবীনদের অনেকেরই হয়তো অজানা, আর প্রবীণরা হয়তো ভুলে গেছেন। দেশীয় ওষুধ শিল্পের ক্রমেই বিকাশ ঘটলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাদের বিকাশ গুণগত মানে আকাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের ছিল না।
দীর্ঘদিন পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কল্যাণে দেশীয় ওষুধনীতিমালা প্রবর্তন দেশীয় ওষুধ শিল্পের বিকাশে প্রবল উদ্দীপনা হয়ে ওঠে। আজ যে কয়টি দেশীয় ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান শীর্ষস্থানে দাঁড়ানো, তাদের সবটুকু সাফল্য ওই ওষুধনীতির কল্যাণে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জোর দিয়ে বলতে পারি এ জন্য যে এ উত্থানের ইতিকথার ওষুধনীতির সঙ্গে অনেকটা জড়িত ছিলাম। যেমন মূল প্রবক্তা ছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর প্রতিক্রিয়ায় মূল বিদেশি বহুজাতিক ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই ধীরে-সুস্থে এ দেশীয় বাজার থেকে প্রস্থান। দু-একটি অবশ্য দেশীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করেছে এবং পরে বাড়বাড়ন্তও ঘটিয়েছে।
বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি, মূলত দেশি ওষুধ শিল্পের যে সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তার ভিত্তি সম্ভবত দেশের জনসংখ্যার প্রবল বিস্ফোরণ। ওষুধ শিল্পের নিয়ন্ত্রণে একসময় গড়ে তোলা হয় সরকারি তরফে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ তথা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। শুরুতে ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য নির্ধারণে ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা ছিল বেশ ইতিবাচক। প্রথম দিকে আমার এক সহপাঠী এবং পরে ঘনিষ্ঠ দু-একজন ওই অধিদপ্তরের প্রশাসক হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে ওষুধ শিল্পের দেখভাল করেছেন।
তখন একটি ওষুধ তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদানসহ অন্যান্য খাতের ব্যয় ও যুক্তিসংগত লভ্যাংশের হিসাবসহ উৎপাদিত ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হতো। মনে আছে, তাতে উৎপাদকদের প্রতিনিধিত্বও থাকত, যাতে উৎপাদক ও ক্রেতা কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যেমন-তেমনভাবে যখন-তখন ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ ছিল না। মুনাফার একটি যুক্তিসংগত মাত্রা সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারিত হওয়াটাই ছিল রীতি। এমনটাই ছিল নীতি।
এরপর অবশ্য নানা উপলক্ষে দেখেছি, ওষুধ খাতে সুষ্ঠুনীতি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে যেমন সিদ্ধি লাভ হয় না, তেমনি হয় না অদক্ষতা বা উপেক্ষা, অবহেলা প্রাধান্য পেলে, যা উপমহাদেশের সরকারি ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। ওই যে কথায় বলে না- 'কম্পানিকা মাল দরিয়া মে ঢাল'- কম্পানির অর্থ স্বাধীন দেশে হচ্ছে সরকার। যে জন্য দেশের উন্নতি সর্বখাতে ব্যাহত হতে থাকে।
এবার মূল কথায় আসি। ওষুধের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির খবরটা তাই ভাবনার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন নিয়ে প্রায়ই দেখা যায়, অতিরঞ্জনের অভিযোগ, পাল্টা বিবৃতি, পরিশেষে প্রতিবেদকের বক্তব্য ইত্যাদি। তাই অভিযোগ যাচাই করতে কাছেই দু-একটা বড় ওষুধের দোকানে জিজ্ঞাসাবাদ করি। খুচরা ওষুধ বিক্রেতাদের 'দাঁও মারার' সুযোগ বড় একটা নেই। নির্দিষ্ট শতাংশ হারে তাঁরা লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন। তাই কারো পক্ষ টেনে তাঁদের কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বাজারে কোনো ওষুধের ঘাটতি দেখা দিলে দাম বাড়াতে তাঁদেরও বিবেকে বাধে না। আলোচ্য বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য : মার্চের শুরু থেকে হঠাৎ করেই কয়েকটি বড় কম্পানি বেশ কিছু ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই আকস্মিক বৃদ্ধি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ওযুধের দাম বাড়ার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে যার ইঙ্গিত আগে দেওয়া হয়েছে। ওষুধের উপকরণ মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করে একসঙ্গে এতটা বাড়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে উপাদানগুলোর আন্তর্জাতিক মূল্য জেনে নিতে পারলে এ লেখার যুক্তি আরো মজবুত হতো।
তবু বাজারের মূল্যমান প্রবণতা থেকে মনে হয়, প্রতিবেদনে উপস্থাপিত ও দোকানির বক্তব্যমাফিক মূল্যবৃদ্ধি সম্ভবত মুনাফাবাজির প্রবণতা থেকে। তাই যদি হয়, তা হলে মূল্যবৃদ্ধি ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে হয়েছে। অর্থাৎ তারা হিসাব-নিকাশ করে মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এ বিষয়ে যতটা জানা গেছে, তাতে দেখা যায় যে আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের উপাদানের দাম বাড়েনি। মুদ্রাস্ফীতি তথা বিদেশি মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় নাকি এ বিপত্তি।
বিষয়টা যদি এখানে শেষ হতো তাহলে ওষুধ ক্রেতার ক্ষোভের কারণ ঘটত না। কিন্তু হিসাব-নিকাশে দেখা যায়, এ কয়েক মাসে ডলারের মূল্য যতটা বেড়েছে তার তুলনায় ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত বেশি। তা হলে মানতে হয়, এসব ক্ষেত্রে উৎপাদকের মুনাফাবৃত্তির প্রবণতাই বড় কারণ। দীর্ঘ এ প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট অনেকের মতামত উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাতেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে।
তাতে মনে হয়, 'ডাল মে কুচ কালা হয়' এবং সে ডাল তৈরিতে একাধিক উৎসের ভূমিকা রয়েছে। আর ওষুধ প্রশাসনের তথ্য মেনে নিতে হলে অর্থাৎ অনেক ওষুধের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব প্রস্তুতকারক কম্পানির, তা হলে সরকারি নীতিকেও এ নৈরাজ্যের জন্য দায়ী করতে হয়। মূল ওষুধনীতিতে এ জাতীয় কোনো বিধান ছিল না। উৎপাদকের ওপর যদি মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তা হলে পুঁজিবাদের নিয়মমাফিক সে তার অপব্যবহার করবে- এটাই স্বাভাবিক।
আর সে জন্যই কোনো কোনো বহুল প্রচলিত ওষুধের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে। এ বাড়ার কারণ তাই বহুবিধ। তবে একটি মূল কারণ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কথিত সীমাবদ্ধ ক্ষমতা। এদিক থেকে ওষুধ প্রশাসন আর নিয়ন্ত্রকের (ড্রাগ কন্ট্রোলের) ভূমিকা নেই। এ ভূমিকা ওষুধ প্রশাসনকে ফিরিয়ে দিতে হবে, যেমনটা দেখেছি প্রাথমিক পর্যায়ে। অবশ্য একই সঙ্গে শর্ষের মধ্যে ভূতের আবির্ভাব যাতে না ঘটে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ এ ঘটনা আমাদের দেশে অনেক সচরাচর।
আর মুনাফাবৃত্তি? মাশাল্লাহ, এদিক থেকে সর্বখাতে বাংলাদেশ একক ও অনন্য। এ জন্যই আন্তর্জাতিক মহলে আমরা দুর্নীতিতে ভালোই নাম কিনেছি। সত্তরের দশকে যিনি দোকানি তিনি এক দশকেই বৃহৎ ব্যবসায়ী কিংবা বড়জোর দুই দশকে। একইভাবে ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন বিপুল সম্পদের অধিকারী শিল্পপতি। একটি দৈনিকের খবরে পড়েছি, নামি এক শিল্পপতির চার সদস্যের সংসারে বিলাসবহুল খাতে সাতটি গাড়ি; এক একটির দাম শুনলে ভিরমি খেতে হয়।
সে জন্যই সপ্তাহ কয় আগে লিখেছিলাম, যে দেশে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকেছে, সে দেশে কেন কোটি কোটি টাকা অঙ্কের বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করা হয়? কোন যুক্তিতে করা হয়? ক্রেতার নিজ টাকায় কেনা হলেও বিদেশি মুদ্রা তো সরবরাহ করতে হয় সরকারকে। কেন সরকার নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে চাইবে না। তুলনাটা কারো কারো অপছন্দের। কিন্তু সত্য অপ্রিয় হলেও সত্যই থেকে যায়। এই কিছু দিন আগেও অর্থনৈতিক বিচারে সমৃদ্ধ ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার প্রমুখ ব্যক্তি যদি সাধারণের ব্যবহৃত সাদামাটা 'অ্যামবাসাডার' গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন, তা হলে আমাদের শীর্ষ কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ীকুল কি এমনই অভিজাত যে তাদের বিএমডাবি্লউ বা মার্সিডিজ বেঞ্জ না হলে চলে না? তাতে দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় যতই নিচে নামুক। কোনো আসে-যায় না।
মনে হয়, সদাচার ও পরিমিতি বোধ, সংযম ও সাধ্যমাফিক ব্যয় আমাদের রক্তে নেই, মননশীলতার হিসেবে নেই। তাই প্রতি পদে অপচয়, অপরিমিত ব্যয়। তাতে দেশের অর্থনীতি চুলোয় যাক, কিছু আসে-যায় না। অথচ বিশ্ব আমাদের দরিদ্রতম দেশের একটি বলেই জানে এবং সেভাবেই আমাদের সঙ্গে ব্যবহার করে। তাতে আমাদের মর্যাদা বোধ আহত হয় না।
পরিশেষে ওষুধ প্রসঙ্গে ফিরি। আমাদের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসক-মন্ত্রীদের প্রতি অনুরোধ, দেশের রোগাক্রান্ত সাধারণ মানুষের, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে ওষুধ প্রশাসনের শক্তি বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা নিন, তাদের সততার সঙ্গে কাজ করতে সহযোগিতা করুন; যাতে অসাধু উপায়ে ওষুধের অসংগত মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ হয়। তদারকির জন্য সৎ কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়ন্ত্রক সেল গঠন করুন, যাতে সরকারি নীতি তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। যাতে ওষুধের যুক্তিহীন দাম বাড়ার পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়।
ওষুধনীতি সূত্রে আরো একটি কথা বলা প্রয়োজন বোধ করছি, শুধু বলা নয়, এটা দাবি। আমেরিকায় খাদ্য ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে 'ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি' সংক্ষেপে এফডিএ। সংগত বিচারে খাদ্যমানের বিষয়টিতে তারা অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ খাদ্য প্রতিদিনের প্রয়োজন, ওষুধ বিশেষ অবস্থায় কখনো কখনো। কিন্তু আমরা খাদ্যের মতো অত্যাবশ্যক বিষয়টিকে অবহেলা করেছি শুধু ওষুধনীতি প্রণয়ন করে। সে সময় বিষয়টা নিয়ে লিখেছিলাম, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তবু আবারও এ বিষয়ে শীর্ষ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে তারা আমাদের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে 'ফুড' শব্দটি যোগ করে দেশবাসীকে এন্তার ভেজাল খাদ্য ও বিষাক্ত খাদ্য খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক,
প্রাবন্ধিক, কবি
No comments